One Nation One Election know the history how it will work dgtl
One Nation One Vote
৫৭ বছর আগে হয়েছিল শেষ বার! ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ কী? কার্যকর হলে কোন কোন ভোট একসঙ্গে হবে?
‘এক দেশ এক নির্বাচন’ চালু করার অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। ২০২৯ সালের মধ্যে এই প্রক্রিয়া মেনে ভোট হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৫৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
এ বার ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ চালু করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সরকারের দাবি, ২০২৯ সালের মধ্যেই চালু হবে ‘এক দেশ এক ভোট’। অর্থাৎ, নিয়ম কার্যকর হলে সারা দেশে একসঙ্গে লোকসভা, বিধানসভা, পঞ্চায়েত ও পুরসভা নির্বাচনের আয়োজন করবে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।
০২১৮
চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর, ১০০ দিনে পা দিয়েছে তৃতীয় মোদী সরকার। ওই দিনই ‘এক দেশ এক ভোট’ নিয়ে বড় ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এই সরকারের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ চালু হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
০৩১৮
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, শেষ তিনটি লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ইস্তাহারে ‘এক দেশ এক ভোট’-এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের পথে কেন্দ্র এগিয়ে চলেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
০৪১৮
২০১৯ সালে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ চালু করার পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালে এই ইস্যুতে সমাধানসূত্র পেতে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে কেন্দ্র। যার নেতৃত্বে ছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
০৫১৮
চলতি বছরের মার্চে লোকসভা নির্বাচনের মুখে ‘এক দেশ এক ভোট’ নিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে রিপোর্ট জমা করে রামনাথ কোবিন্দের কমিটি। সূত্রের খবর, ওই রিপোর্টে ‘এক দেশ এক ভোট’ চালু করতে একাধিক সাংবিধানিক সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে। সরকারি তরফে যা নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি।
০৬১৮
সূত্রের খবর কোবিন্দ কমিটির রিপোর্টে দু’দফায় ‘এক দেশ এক ভোট’ করার কথা বলা হয়েছে। সুপারিশ অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচন কমিশন প্রথমে লোকসভা ও সমস্ত বিধানসভার ভোট একসঙ্গে করবে। দ্বিতীয় দফায় হবে পঞ্চায়েত ও পুরসভাগুলির নির্বাচন। তবে তা লোকসভা ও বিধানসভা ভোট শেষ হওয়ার ১০০ দিনের মধ্যে করতে হবে।
০৭১৮
উল্লেখ্য, লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে পঞ্চায়েত এবং পুরসভার ভোট করতে হলে ৫০ শতাংশের কম রাজ্যের সম্মতি প্রয়োজন। যা পাওয়া মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
০৮১৮
এ বছরের লোকসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। ভোটে বিজেপির পাওয়া আসনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪০। ফলে তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি), জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ) ও লোকজনশক্তি পার্টির (রামবিলাস) সমর্থনে সরকার গঠন করেছেন মোদী-শাহেরা। ‘এক দেশ এক ভোট’-এর পরিকল্পনাকে এই দলগুলি কতটা সমর্থন করবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে রয়েছে প্রশ্ন।
০৯১৮
যদিও ‘এক দেশ এক নির্বাচন’-এর জন্য পাটিগণিতের হিসাবকে গুরুত্ব দিতে নারাজ পদ্মশিবির। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, ভোটের সংস্কার প্রক্রিয়ায় কেউ বাধা হবেন না। অন্য দিকে বিরোধীদের মধ্যে আম আদমি পার্টি-সহ একাধিক রাজনৈতিক দল এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হওয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সুর চড়াতে শুরু করেছে।
১০১৮
বিশেষজ্ঞদের দাবি, ২০২৯ সালের মধ্যে ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ চালু করতে হলে, সেই প্রক্রিয়া এখন থেকে শুরু করতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রথমে লোকসভা ও বিধানসভার সময়কাল সংক্রান্ত যে সাংবিধানিক রীতিনীতি রয়েছে, তার সংশোধন করতে হবে। তার পর বেশ কয়েকটি বিধানসভাকে কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে দিতে হবে।
১১১৮
২০২৩ সালে ১০টি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল। সেগুলি হল, হিমাচল প্রদেশ, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, কর্নাটক, তেলঙ্গানা, মিজোরাম, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় ও রাজস্থান। এই রাজ্যগুলিকে ২০২৮ সালে পরবর্তী ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। অন্য দিকে, ২০২৬ সালে বাংলা, অসম, তামিলনাড়ু ও কেরল এবং ২০২৭ সালে উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত ও পঞ্জাবে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।
১২১৮
কোবিন্দ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, ‘এক দেশ এক ভোট’ করতে হলে এই রাজ্যগুলির বিধানসভা কিছুটা আগে ভেঙে দিয়ে সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন চালু করতে হবে। অথবা, এই সমস্ত রাজ্যগুলির বিধানসভার কার্যকালের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে হবে। দ্বিতীয় রাস্তা নিলে ২০২৯ সাল পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে পারবে বর্তমান সরকার।
১৩১৮
তবে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনও পন্থা অবলম্বনের কথা বলেনি কোবিন্দ কমিটি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ৮৩ ও ১৭২ নম্বর অনুচ্ছেদে যথাক্রমে লোকসভা ও বিধানসভার কার্যকালের মেয়াদের কথা বলা হয়েছে। ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ চালুর জন্য সেখানে সংশোধনের সুপারিশ করেছে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বাধীন কমিটি।
১৪১৮
প্রসঙ্গত, স্বাধীন হওয়ার পর এ দেশে প্রথম ভোট হয়েছিল ১৯৫১ সালে। ওই সময় লোকসভা ও বিধানসভা ভোট একসঙ্গেই করেছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সেই ভোটের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক ছিলেন একজন বাঙালি। নাম ছিল, সুকুমার সেন।
১৫১৮
১৯৫১ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত একসঙ্গেই লোকসভা ও বিধানসভা ভোট করিয়েছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। ১৯৬৭ সালের চতুর্থ লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রে কংগ্রেস ক্ষমতায় ফিরলেও ন’টি রাজ্যে ক্ষমতা হারায় দেশের সবচেয়ে প্রাচীন দল। সেই তালিকায় ছিল সাতটি বড় রাজ্য। সেগুলি হল, গুজরাত, মাদ্রাজ (বর্তমান তামিলনাড়ু), ওড়িশা, রাজস্থান, বাংলা, কেরল ও দিল্লি।
১৬১৮
অন্য দিকে, ১৯৬৭ সালের ভোটের পর বেশ কয়েকটি রাজ্য সরকার বেশি দিন টেকেনি। কংগ্রেসকে হারিয়ে বাংলা-সহ কয়েকটি রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিল বিরোধী জোট। কিন্তু অধিকাংশ জায়গাতেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে না পারায় সেগুলির পতন হয়।
১৭১৮
এ দিকে আবার ১৯৭০ সালে লোকসভা ভেঙে দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ফলে একসঙ্গে ভোটের চক্রটি ওলটপালট হয়ে যায়। ১৯৬৭ সালের পর থেকে আর কখনওই একসঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন হয়নি।
১৮১৮
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, বর্তমানে ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ চালু করতে হলে সংবিধানে মোট ১৮টি সংশোধন করতে হবে। যার অনেকগুলিতেই রাজ্য বিধানসভার সম্মতির প্রয়োজন। ফলে ২০২৯ সালের মধ্যে এই প্রক্রিয়া আদৌ চালু করা যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান ওয়াকিবহাল মহল।