Old woman of America expects a ‘fair price’ for a painting she believed to be Jackson Pollock original dgtl
america
Art: খুশি নন ৬৭ কোটিতে, ৩০০ টাকায় কেনা ছবির জন্য ৩৭৩ কোটি চাইছেন বৃদ্ধা!
লাখো লাখো ডলার নিয়ে ক্রেতারা এগিয়ে এলেও তাঁদের হাতে সেটি তুলে দিতে রাজি নন ৮৫ বছরের ওই বৃদ্ধা।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৫:২৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
নিজেকে অর্থলোভী ভাবতে রাজি নন। শুধু তাঁর কেনা পেন্টিংয়ের ‘সঠিক’ মূল্য চান। আমেরিকার বাসিন্দা টেরি হর্টনের দাবি, এ যে-সে পেন্টিং নয়। আমেরিকার খ্যাতনামী শিল্পী জ্যাকসন পোলকের আসল শিল্পকর্ম! ফলে লাখো লাখো ডলার নিয়ে ক্রেতারা এগিয়ে এলেও তাঁদের হাতে সেটি তুলে দিতে রাজি নন ৮৫ বছরের ওই বৃদ্ধা। অন্তত পাঁচ কোটি ডলারে সেই পেন্টিং বিক্রি করতে চান তিনি। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৩৭৩ কোটি টাকা।
০২১৬
টেরির এ দাবিতে আমেরিকার শিল্পজগতে বেশ হইচই পড়ে গিয়েছে। ওই পেন্টিংটি যে অ্যাবস্ট্র্যাক্ট এক্সপ্রেশনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম শিল্পী জ্যাকসন পোলকের আসল শিল্পকর্ম, তা নিয়েও নানা মুনির নানা মত রয়েছে। যদিও নিজের দাবিতে অন়ড় টেরি।
০৩১৬
প্রথাগত শিক্ষা বেশি দূর নয়। টেনেটুনে অষ্টম শ্রেণির গণ্ডি পার করেছেন। প্রচলিত অর্থে শিল্পরসিকও নন। এ হেন টেরির হাতে জ্যাকসন পোলকের আসল শিল্পকর্ম কী করে এল?
০৪১৬
এককালে পেশায় ট্রাকচালক টেরি জানিয়েছেন, ১৯৮৭ সালে একটি পথদুর্ঘটনার পর ২০ বছরের চাকরিজীবন থেকে অবসর নেন তিনি। তার পর বিভিন্ন জায়গায় ‘অমূল্য রতন’ খুঁজে বেড়াতেন। কখনও পুরনো জিনিসপত্রের দোকানে, কখনও বা আবর্জনার ভ্যাট— এমন কোনও ফেলে দেওয়া জিনিস যদি পাওয়া যায়, যার আর্থিক মূল্য আসলে অনেক বেশি। যা বিক্রি করে বেশ কিছু আয় করা যাবে। এক বার সান বার্নার্ডিনোর একটি সুলভ মূল্যের দোকানে ৬৬x৪৮ ইঞ্চির ওই পেন্টিংটি চোখে পড়ে। বন্ধুকে উপহার দেওয়ার জন্য মাত্র পাঁচ ডলার দিয়ে তা কিনে ফেলেন টেরি। সেটি ১৯৯২ সাল।
০৫১৬
পেন্টিংটি কিনলেও তা বন্ধুকে উপহার দিতে পারেননি টেরি। তাঁর বন্ধুর ট্রেলরের দরজা এতই ছোট যে তা দিয়ে ওই উপহারটি গলানো যায়নি। নিরাশ হয়ে ‘ইয়ার্ড সেল’-এ পেন্টিংটি চড়িয়ে দেন টেরি। সে সময়ই ওই পেন্টিংয়ের সম্পর্কে জানতে পারেন তিনি। ক্যালিফোর্নিয়ার কোস্তা মেসা অঞ্চলের বাসিন্দা টেরির এক পড়শি তথা আর্টের শিক্ষক তাঁকে জানান, এই পেন্টিংটি জ্যাকসন পোলকের আসল শিল্পকর্ম হতে পারে।
০৬১৬
‘হু দ্য #$&% ইজ জ্যাকসন পোলক?’ ওই আর্টের শিক্ষকের কাছে টেরির প্রথম প্রশ্নই ছিল এটি। শিল্পচর্চা থেকে বহু যোজন দূরে থাকা টেরি এ বার জ্যাকসন পোলকের সম্পর্কে পড়াশোনা শুরু করেন। ওই পেন্টিংটি আসল কি না, তা জানতে টেরির ছেলে বিল পেজ এক জন ফরেন্সিক আর্ট বিশেষজ্ঞকে নিযুক্ত করেন। পল বিরো নামে কানাডার ওই বিশেষজ্ঞ এ বার পেন্টিংটি যাচাইয়ের কাজ শুরু করেন।
০৭১৬
ট্রিপল ফিঙ্গারপ্রিন্ট রেকগনিশন পদ্ধতির মাধ্যমে যাচাই করার পর পল জানান, এটি জ্যাকসন পোলকের আঁকা ‘নম্বর ৫, ১৯৪৮’। এবং এটি আসল পেন্টিং! পোলকের স্টুডিও থেকে রং ছেটানোর যন্ত্রপাতির পরীক্ষানিরীক্ষা করেছিলেন তিনি। এমনকি, যাচাইয়ের সময় ওই পেন্টিংটি ‘নম্বর ৫, ১৯৪৮’-এর সঙ্গে পাশাপাশি রেখেও দেখা হয়েছিল। এত কিছুর পর পল নিশ্চিত, এটিই আসল শিল্পকর্ম। এ বার ক্রেতার খোঁজ শুরু করেন টেরি।
০৮১৬
কিন্তু পোলকের ‘নম্বর ৫, ১৯৪৮’ নামের পেন্টিংটি তো ২০০৬ সালেই ১৪ কোটি ডলারে বিক্রি হয়েছিল। তবে এই বহুমূল্য পেন্টিংটি কী ভাবে আসল হয়?
০৯১৬
বেশ কিছু দিন পড়াশোনার পর অ্যাবস্ট্র্যাক্ট এক্সপ্রেশনিস্ট আন্দোলন সম্পর্কেও জানতে পারেন টেরি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শিল্পজগতে নতুন চিন্তার আমদানি করেন আমেরিকার একঝাঁক শিল্পী। চল্লিশের দশকে মূলত নিউ ইয়র্ককে কেন্দ্র করে তাঁদের শিল্পভাবনা বিশ্বের দরবারে পেশ করেন। কোনও বস্তু বা ব্যক্তির অবয়ব প্রকাশ নয়, বরং শিল্পকর্মে নিজেদের তাৎক্ষণিক আবেগ ফুটিয়ে তোলেন ওই শিল্পী, স্থপতি বা চিত্রকরেরা। অনেকটা চোখ বুজে একটি কাগজের উপর পেন্সিল চালিয়ে দেওয়ার মতো। পেন্সিলের আঁকিবুকিতে ফুটে ওঠা রেখাগুলিই এক একটি শিল্পকর্মের রূপ নেয়। অ্যাবস্ট্র্যাক্ট এক্সপ্রেশনিস্ট হিসাবে নিজস্ব ভাবনার পরিচয় দিয়েছিলেন মিউরাল শিল্পী পোলক। বিশালাকায় ক্যানভাসে এলোমেলো ভাবে রং ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতেন তিনি। তাঁর ‘ড্রিপ অ্যান্ড স্প্ল্যাশ’ স্টাইলের মাধ্যমে শিল্পরসিকদের মধ্যে নিজের জায়গা গড়ে নেন পোলক।
১০১৬
পলের দাবি সত্ত্বেও ওই পেন্টিংটিকে আসল বলে মেনে নিতে রাজি নন শিল্পরসিকদের একাংশ এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর আর্ট রিসার্চ (আইএফএআর)। প্রথমত, একটি সুলভ মূল্যের দোকান থেকে তা কেনা। দ্বিতীয়ত, তাতে পোলকের স্বাক্ষর নেই। এবং পেন্টিংটি ওই দোকানে কী ভাবে এল, সে সম্পর্কেও বিশেষ তথ্য জানা যায় না। ওই দোকানের মালিকও প্রয়াত। দোকানটিরও এখন আর অস্তিত্ব নেই। যদিও পোলক নিজের বহু পেন্টিং ফেলে-ছড়িয়ে রেখেছিলেন। তবে তার কোনটি কোথায় গিয়েছে, সে নিয়েও তথ্য নেই।
১১১৬
এ সবেও নিরাশ হননি টেরি। বৈজ্ঞানিক প্রমাণকে হাতিয়ার করে ক্রেতার খোঁজ চালিয়ে যান। এ বার আর্ট ডিলার এবং মার্কেটিয়ার টড ভলপেকে পারিশ্রমিক দিয়ে পেন্টিংয়ের বিক্রেতার খোঁজ করতে বলেন। ক্রেতাও পেয়ে যান। তাঁদের এক জন ২০ লাখ ডলার, আর এক জন তো ৯০ লাখ ডলার (প্রায় ৬৭ কোটি টাকা) পর্যন্ত দিতে রাজি। তবে এত কম মূল্যে বিক্রি করতে রাজি নন টেরি। তাঁর সাফ কথা, ‘‘এই পেন্টিংয়ের মূল্য আমি জানি। কমপক্ষে পাঁচ কোটি ডলারের নীচে আমি এটা বিক্রি করব না।’’
১২১৬
কষ্টেসৃষ্টে মোবাইল ভ্যানে দিন কাটানো টেরির এই নাছোড় মনোভাবই তাঁকে ‘তারকা’ করে তুলেছে। ২০০৬ সালে তাঁকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও তৈরি করেছেন হ্যারি মোজেস। নাম— ‘হু দ্য #$&% ইজ জ্যাকসন পোলক?’ পেন্টিংটি সম্পর্কে জানার পর এই কথাটিই তো প্রথম বার বলেছিলেন টেরি। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ একটি সাক্ষাৎকারে হ্যারি বলেন, ‘‘পেন্টিংটি আসল না নকল, তা আমার তথ্যচিত্রের বিষয়বস্তু নয়। বরং শিল্পজগতের মানুষজন একযোগে যে ভাবে এই ক্লাস এইট পাশ করা বৃদ্ধাকে খাটো নজরে দেখছেন, তা দেখানোই আমার লক্ষ্য।’’ তথ্যচিত্র ছাড়াও টক শো বা হামেশাই শিরোনামে উঠে এসেছেন টেরি।
১৩১৬
এই পেন্টিংটি জ্যাকসন পোলকের আসল পেন্টিং— এটি প্রমাণ করাই যেন টেরির জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন বলেছেন টেরির ছেলে বিল। তাঁর কথায়, ‘‘খুব বেশি লোকজন এ ভাবে লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন না। সে জন্য তাঁর কৃতিত্ব প্রাপ্য। প্রথম দিন থেকে কখনও হাল ছাড়েননি। নিজেকে প্রমাণ করার জন্য দিনেরাত লাগাতার চেষ্টা করে গিয়েছেন।’’
১৪১৬
পেন্টিংটি যে আসল, তা প্রমাণ করতে নতুন তথ্য তুলে ধরেছেন বিল। পোলক-বিশেষজ্ঞ প্রয়াত নিকোলাস ক্যারোনকে উদ্ধৃত করে ২০১২ সালে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল আমেরিকার ফাইন আর্ট ইনভেস্টিগেশন। তাতে ক্যারোন স্বীকার করেন, ওই পেন্টিংটি আসল। তবে প্রকাশ্যে এটি বলতে সাহস পান না।
১৫১৬
চালর্স ওয়াং নামে এক গবেষকেরও দাবি, এটি পোলকের হারিয়ে যাওয়া পেন্টিংয়ের একটি।আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, পোলকের ‘নম্বর ৫, ১৯৪৮’ নামের পেন্টিংটি আগে বিক্রি হয়েছিল বটে। তবে টেরির কাছে থাকা পেন্টিংটি আসলে ‘নম্বর ৫, ১৯৪৮’-এর আদি সংস্করণ। এটি কোনও ভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তা মেরামতির জন্য পোলককে ফেরত দেওয়া হয়েছিল। তবে মেরামতির বদলে একটি নতুন পেন্টিং করেন পোলক। সেই ‘নম্বর ৫, ১৯৪৮’-ই পরে ১৪ কোটি ডলারে বিক্রি হয়েছিল।
১৬১৬
এত বছর ধরে একটিই লক্ষ্য নিয়ে বেঁচে থাকা টেরি বলেন, ‘‘আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি যে পোলকের থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছি... কখনও হাল ছেড়ো না!’’