Natwarlal is considered to be the greatest con man in Indian history, who sold the Taj Mahal dgtl
Natwarlal
তিন বার তাজমহল বিক্রি করেন! বার বার বোকা বানান পুলিশকে, মৃত্যুকেও ধোঁকা দেন ‘গরিবের রবিনহুড’
ভারতের সবচেয়ে বড় কনম্যান বলা হয় তাঁকে। মানুষ ঠকানোয় তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। তাঁর চরিত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে সিনেমাও তৈরি হয়েছে বলিপাড়ায়।
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৩ ১২:১৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
মানুষ ঠকানোয় তিনি ‘পিএইচডি’ করে ফেলেছিলেন। প্রতারণার কারবারে এতটাই পটু ছিলেন যে, তিন-তিন বার তাজমহল পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছিলেন। ভারতের অন্যতম বড় কনম্যান বলা হয় তাঁকে। তাঁর মৃত্যু ঘিরে এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি। তিনি নটবরলাল।
০২২১
তখনও দেশ স্বাধীন হয়নি। ব্রিটিশ শাসনে জর্জরিত ভারত। স্বাধীনতা আন্দোলন জারি রয়েছে। এই সময়ই বিহারের সিওয়ান জেলার বাংরায় জন্মেছিলেন মিথিলেশ শ্রীবাস্তব। সেটা ১৯১২ সাল। এই মিথিলেশই কী ভাবে নটবরলাল হয়ে উঠলেন, সেই কাহিনিই তুলে ধরা হল এখানে।
০৩২১
মিথিলেশ নামে কেউই প্রায় চেনেন না এই কনম্যানকে। সকলে তাঁকে চেনেন নটবরলাল নামেই। কেন তাঁর নাম মিথিলেশ থেকে নটবরলাল হল, সেই কাহিনি না হয় একটু বাদে বলা যাক। তার আগে জেনে নেওয়া যাক নটবরলালের ইতিবৃত্ত।
০৪২১
নটবরলালেরা দুই ভাই ছিলেন। তিনিই ছিলেন বড়। তাঁর বাবা ছিলেন স্টেশনমাস্টার। ছোটবেলায় একটা চুরির পরই জালিয়াতের কারবারে ঝুঁকেছিলেন তিনি। ব্যাঙ্কের একটি ড্রাফ্ট জমা দিতে নটবরলালকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাঁর এক পড়শি।
০৫২১
পড়শির ব্যাঙ্কের ড্রাফ্টটি দেখেই জালিয়াতির ছক কষে ফেলেন নটবরলাল। দেখলেন, সহজেই তিনি প্রতিবেশীর সই জাল করে ওই ড্রাফ্ট ভাঙিয়ে টাকা তুলে নিতে পারবেন। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। প্রতিবেশীর সই জাল করে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে সেই সময় হাজার টাকা তুলে নিয়েছিলেন নটবরলাল।
০৬২১
ব্যাপারটি প্রতিবেশীর নজরে আসতে বেশি দিন সময় লাগেনি। জানাজানি হতেই এলাকা ছাড়েন নটবরলাল। শোনা যায়, সেই সময় বিহার থেকে পালিয়ে কলকাতায় এসেছিলেন তিনি। কলকাতায় শাড়ির ব্যবসা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সফল হননি।
০৭২১
বাণিজ্যের ছাত্র ছিলেন নটবরলাল। কাজ করেছিলেন স্টক ব্রোকার হিসাবেও। ফলে ব্যাঙ্কের নিয়মকানুন সম্পর্কে অবগত ছিলেন তিনি। আর এই বিদ্যাকেই কাজে লাগিয়েছিলেন জালিয়াতির কারবারে। সহজেই বিভিন্ন নথি, সই জাল করার কাজে পটু হয়ে উঠেছিলেন নটবরলাল।
০৮২১
প্রথম বার নটবরলালকে নিয়ে চর্চা শুরু হয় ১৯৩৭ সালে। সেই সময় ৯ টন লোহা চুরির অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। শোনা যায়, সেই অপরাধে ৬ মাসের কারাদণ্ড হয়েছিল তাঁর।
০৯২১
জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর প্রতারণার নতুন কারবারে জড়ান নটবরলাল। রোজ যৌনপল্লিতে যাতায়াত শুরু করেন তিনি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল যে, যৌনপল্লিতে গিয়ে মহিলাদের মদ খাইয়ে বেহুঁশ করে তাঁদের কাছ থেকে টাকা, সোনা চুরি করে পালাতেন নটবরলাল। ধরা পড়েছিলেন তিনি। শুরু হয়েছিল মামলা। কিন্তু সেই সময় নটবরলালকে যে যৌনকর্মী চিহ্নিত করেছিলেন, মামলার সময় তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। ফলে ছাড়া পেয়ে যান নটবরলাল।
১০২১
এর পর নটবরলাল ঠিক করেন যে, এ সব আর করবেন না। এর থেকে মানুষ ঠকানোর কাজই করবেন, কিন্তু ‘সৎ পথে’। সেই মতো আবার সই, নথি জাল করে ঠকানোর কাজে মন দিলেন। এ ভাবে বহু মানুষকে ঠকিয়েছেন তিনি।
১১২১
মানুষ ঠকাতে তাজমহল পর্যন্ত ‘বিক্রি’ করে দিয়েছিলেন নটবরলাল! সরকারি আধিকারিক সেজে কয়েক জন বিদেশি পর্যটককে ঠকিয়ে তাজমহল ‘বিক্রি’ করে দিয়েছিলেন। তবে এক বার নয়, তিন তিন বার তাজমহল ‘বিক্রি’ করেছিলেন তিনি।
১২২১
শুধু তাজমহল নয়, লালকেল্লা, রাষ্ট্রপতি ভবনও একই কায়দায় বিক্রি করেছিলেন নটবরলাল। যা জেনে সেই সময় তাজ্জব বনে গিয়েছিলেন তদন্তকারীরা।
১৩২১
মিথিলেশ থেকে তাঁর নটরবলাল হওয়ার ঘটনাও চমকপ্রদ। শোনা যায়, এক সরকারি আধিকারিকের বেশ ধারণ করেছিলেন তিনি। সেই সময় তাঁর এক গুজরাতি শাগরেদ ছিলেন। যাঁর নাম ছিল নটবরলাল।
১৪২১
তাঁরা দু’জনে মিলে তখন জালিয়াতির কারবার করতেন। এই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু কোনও ভাবে পালিয়ে যান সেই গুজরাতি শাগরেদ। মিথিলেশকেই নটবরলাল ভেবে নেয় পুলিশ। সেই থেকেই মিথিলেশ হয়ে যান নটবরলাল।
১৫২১
তবে তিনি জালিয়াতির কারবার করলেও তাঁর গ্রামের মানুষের কাছে তিনি হয়ে উঠেছিলেন রবিনহুড। এক বাংরায় মহাভোজের আয়োজন করেছিলেন তিনি। সেই সময় গ্রামের প্রত্যেক গরিব মানুষকে ১০০ টাকা করে দিয়েছিলেন।
১৬২১
একাধিক জালিয়াতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল নটবরলালকে। ১১৩ বছরের কারাদণ্ডের সাজা হয়েছিল তাঁর। কিন্তু, শোনা যায়, মাত্র ২০ বছর জেলের সাজা ভোগ করেছেন। কারণ, অত্যন্ত ধুরন্ধর নটবরলাল প্রায়ই জেল থেকে পালিয়ে যেতেন।
১৭২১
১৯৫৭ সালে কানপুর জেল থেকে এক বার পালিয়ে গিয়েছিলেন নটবরলাল। সে বার কারারক্ষীকে ঘুষ হিসাবে এক স্যুটকেস টাকা দিয়েছিলেন। তার পর পুলিশের পোশাক পরে জেলের মূল ফটক দিয়ে হেঁটে চম্পট দিয়েছিলেন। মজার কথা হল, ওই স্যুটকেসে আদৌ কোনও টাকা ছিল না। সংবাদপত্র রাখা ছিল তাতে।
১৮২১
শেষ বার ১৯৯৬ সালে গ্রেফতার করা হয়েছিল নটবরলালকে। তখন তাঁর বয়স ছিল ৮৪। হুইলচেয়ার ব্যবহার করতেন তিনি। ওই বয়সেও পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে চম্পট দিয়েছিলেন তিনি।
১৯২১
অসুস্থ নটবরলালকে চিকিৎসার জন্য কানপুর জেল থেকে দিল্লির এমসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। নয়াদিল্লি স্টেশনে পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে চম্পট দেন নটবরলাল। তার পর থেকে তাঁকে আর কখনও দেখা যায়নি।
২০২১
২০০৯ সালে আবার নটবরলালকে নিয়ে চর্চা শুরু হয়। তাঁর আইনজীবী দাবি করেন যে, তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে ১০০টিরও বেশি মামলা ঝুলে রয়েছে, সেগুলি তুলে নেওয়া হোক। তিনি এ-ও দাবি করেন যে, ২০০৯ সালের ২৫ জুলাই মৃত্যু হয়েছে নটবরলালের। যদিও নটবরলালের ভাই দাবি করেছিলেন যে, ১৯৯৬ সালেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। তাই নটবরলালের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। শোনা যায়, নটবরলালের দুই স্ত্রী রয়েছেন। তাঁর এক কন্যাসন্তানও রয়েছে।
২১২১
নটবরলালের চরিত্র জায়গা করে নিয়েছিল রুপোলি পর্দায়। ১৯৭৯ সালে মুক্তি পেয়েছিল অমিতাভ বচ্চন, রেখা অভিনীত ‘মিস্টার নটবরলাল’। পরে ২০১৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল আরও একটি ছবি। যার নাম ‘রাজা নটবরলাল’। যে ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ইমরান হাশমি।