Member of Scindia Dynasty Jyotiraditya Scindia Paved His New Innings In Politics dgtl
madhyapradesh
হার্ভার্ডের অর্থনীতির স্নাতক, স্ট্যানফোর্ডের এমবিএ থেকে অন্যতম ধনী মন্ত্রী হন জ্যোতিরাদিত্য
গ্বালিয়রের শেষ মহারাজা জিবাজিরাও সিন্ধিয়ার নাতি জ্যোতিরাদিত্য ছিলেন ইউপিএ সরকারের ধনীতম মন্ত্রীদের মধ্যে অন্যতম।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২০ ১০:৩১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
অতীতের মরাঠা সাম্রাজ্যের অন্তর্গত গ্বালিয়রের রাজপরিবারে সোনার চামচ মুখে নিয়েই জন্ম তাঁর। কিন্তু শুধু রাজ ঐতিহ্যের ছায়াতেই থাকতে চাননি। তৈরি করেছেন স্বতন্ত্র পরিচয়। ভারতীয় রাজনীতিতে আভিজাত্য ও তারুণ্যের যুগলবন্দির অন্যতম নিদর্শন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া।
০২২০
মাধবরাও সিন্ধিয়া ও মাধবী রাজে সিন্ধিয়ার ছেলে জ্যোতিরাদিত্যর জন্ম ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি। গ্বালিয়রের ক্যাম্পিয়ন স্কুলের পরে তাঁর পড়াশোনা দুন স্কুলে। পরবর্তী গন্তব্য বিদেশ।
০৩২০
১৯৯৩ সালে তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক হন হার্ভার্ড কলেজ থেকে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালের অধীনস্থ এই কলেজ বিশ্বের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম। ২০০১ সালে তিনি এমবিএ করেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
০৪২০
বাবা মাধবরাওয়ের পথ অনুসরণ করে রাজনীতিতে পা রাখেন ছেলেও। তবে তাঁর রাজনীতিতে আগমন মাধবরাওয়ের মৃ্ত্যুর পরে। ২০০১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর উত্তরপ্রদেশে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা তৎকালীন কংগ্রেস সাংসদ মাধবরাও সিন্ধিয়া।
০৫২০
২০০১-এর ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিক ভাবে কংগ্রেসে যোগ দেন জ্যোতিরাদিত্য। এক মাস পরেই তাঁর বাবার নির্বাচনী কেন্দ্র মধ্যপ্রদেশের গুনা থেকে উপনির্বাচনে জয়ী হন তিনি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি-র দেশরাজ সিংহ যাদবকে পরাজিত করেন সাড়ে চার লক্ষের বেশি ভোটে।
০৬২০
২০০৪ সালে একই কেন্দ্র থেকে পুনর্নিবার্চিত হন জ্যোতিরাদিত্য। ২০০৭ সালে প্রথম বার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় পদার্পণ। যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। ২০০৯ সালে আবার তিনি জয়ী হন গুনা কেন্দ্র থেকে। এ বার তিনি বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হন।
০৭২০
২০১২-য় মন্ত্রিসভায় রদবদলের পরে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া শক্তি মন্ত্রকের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৪-তেও লোকসভা নির্বাচনে তিনি জয়ী হন গুনা থেকে।
০৮২০
দীর্ঘ ১৭ বছর গুনা থেকে নির্বাচিত হওয়ার পরে তাল কাটল ২০১৯-এ। সে বছর লোকসভা ভোটে জ্যোতিরাদিত্য পরাজিত হন বিজেপি-র কৃষ্ণপাল সিংহ যাদবের কাছে।
০৯২০
১৫ মাস আগে কমল নাথ মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসার পর থেকেই প্রদেশ কংগ্রেসে বিবাদ শুরু। জ্যোতিরাদিত্য নিজের জন্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ ও তাঁর প্রতিনিধিকে উপ-মুখ্যমন্ত্রী করার দাবি তুললেও কমল নাথ এক ইঞ্চি জমি ছাড়েননি।
১০২০
লোকসভা ভোটের পরে রাহুল গাঁধী কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ানোয় কমল নাথ-দিগ্বিজয় সিংহের মতো প্রবীণদের হাতেই ফের কংগ্রেসের রাশ চলে যায়। সিন্ধিয়া, সচিন পায়লটের মতো নবীন নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে।
১১২০
শেষে সব জল্পনার অবসান করে প্রয়াত পিতা মাধবরাও সিন্ধিয়ার ৭৫তম জন্মবার্ষিকীর দিন, ১০ মার্চ অমিত শাহের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে যান জ্যোতিরাদিত্য। পৌনে এক ঘণ্টা পরে বেরিয়ে খানিক পরেই প্রকাশ করে দিলেন ‘ডিয়ার মিসেস গাঁধীজি’-কে পাঠানো তাঁর পদত্যাগপত্র। বস্তুত, সোমবারেই কংগ্রেস ছাড়ার সেই চিঠি লিখে ফেলেছিলেন তিনি।
১২২০
সনিয়াকে চিঠিতে জ্যোতিরাদিত্য লিখেছেন, ‘‘১৮ বছর কংগ্রেসে থাকার পরে এখন দল ছাড়ার সময়। আপনি জানেন, গত এক বছরের বেশি সময় ধরে এই পথ নিজেই তৈরি হয়েছে।’’
১৩২০
তবে কংগ্রেসের সিন্ধিয়া-বিরোধী নেতাদের মতে, জ্যোতিরাদিত্য কংগ্রেসের থেকে যা পেয়েছেন, তার তুলনায় দেননি প্রায় কিছুই। গত লোকসভা ভোটে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। সেখানে কিছু করে দেখানো তো দূরস্থান, মধ্যপ্রদেশে নিজের আসনই ধরে রাখতে পারেননি তিনি।
১৪২০
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে হিংসার সময়ে টুইট করে বিজেপি নেতাদের ঘৃণা ছড়ানোর রাজনীতি বন্ধ করার ‘পরামর্শ’ দিয়েছিলেন জ্যোতিরাদিত্য। হিংসার জন্য সমান দায়ী করেছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারকেও। তার দু’সপ্তাহের মধ্যেই কী করে তিনি বিজেপির ঘরে ঢুকে পড়লেন, সেই বিস্ময়ও কাটছে না।
১৫২০
এ দিকে মধ্যপ্রদেশে ১৫ বছর পরে ক্ষমতায় ফেরা কংগ্রেস সরকারের পতন ঠেকাতে কমল নাথ শেষ চেষ্টা শুরু করেছেন। কমল নাথ নিজেই গদি না ছাড়লে আগামী সপ্তাহে শুরু হতে চলা বাজেট অধিবেশনে অনাস্থা প্রস্তাব আনবে বিজেপি।
১৬২০
কমল নাথের হার নিশ্চিত করতে এসপি, বিএসপির বিধায়কদের সঙ্গেও শিবরাজ দেখা করেন। কংগ্রেস যাতে দল ভাঙাতে না পারে, সে জন্য আজ দলের সব বিধায়ককে রাজ্যের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে বিজেপি।
১৭২০
গ্বালিয়রের শেষ মহারাজা জিবাজিরাও সিন্ধিয়ার নাতি জ্যোতিরাদিত্য ছিলেন ইউপিএ সরকারের ধনীতম মন্ত্রীদের মধ্যে অন্যতম। পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ থাকলেও জ্যোতিরাদিত্যর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তাঁর দুই পিসি, বিজেপি নেত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া এবং যশোধরা রাজে সিন্ধিয়া।
১৮২০
যশোধরার বক্তব্য, “রাজমাতার রক্ত রাষ্ট্রের কল্যাণে এই সিদ্ধান্ত নিল। জ্যোতিরাদিত্যর কংগ্রেস ছাড়ার সিদ্ধান্তকে মন থেকে স্বাগত জানাচ্ছি।” বিজয়ারাজের আর এক কন্যা বসুন্ধরা রাজেও বিজেপিতে। রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরার পুত্র দুষ্মন্তও বিজেপি সাংসদ। কিন্তু জ্যোতিরাদিত্য এত দিন কংগ্রেসে থেকে গিয়েছিলেন। পরিবারে ফাটলও থেকে গিয়েছিল। যশোধরার মন্তব্য, “এ বার সব দূরত্ব ঘুচে গেল”।
১৯২০
রাজনৈতিক যাত্রাপথে জ্যোতিরাদিত্যর যোগ্য সঙ্গী তাঁর স্ত্রী প্রিয়দর্শিনী। প্রচারের আড়ালে থাকা প্রিয়দর্শিনী নিজেও রাজপরিবারের কন্যা। গুজরাতের গায়কোয়াড় বংশে তাঁর জন্ম। তিন বছর প্রেমপর্বের পরে তাঁদের বিয়ে হয় ১৯৯৪ সালে। দুই সন্তান নিয়ে নিটোল সংসার জ্যোতিরাদিত্য ও প্রিয়দর্শিনীর।
২০২০
প্রতি বারই নির্বাচনের দিন ক্ষণ ঘোষণার আগে থেকেই স্বামীর জন্য মাঠে নেমে পড়েন প্রিয়দর্শিনী। একেবারে তৃণমূল স্তরে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করেন। স্ত্রী ও বৃহত্তর পরিবারের বাকি সদস্যদের পাশে নিয়েই রাজনীতিতে নতুন ইনিংসের পথে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। (ছবি: আর্কাইভ)