Mystery Of Ghost Ship Mary Celeste Full Of Food But Nobody Onboard Found In The Middle Of Atlantic Ocean dgtl
Ghost Ship Mary Celeste
মাঝসমুদ্র থেকে গায়েব ক্যাপ্টেন-সহ ১০! ‘অভিশপ্ত’ জাহাজে ঘটে নানা অলৌকিক কাণ্ড, মৃত্যুও
মাঝসমুদ্রে জাহাজ থেকে আচমকা উধাও সস্ত্রীক ক্যাপ্টেন-সহ ১০ জন। কোথায় গেলেন তাঁরা? কী ঘটেছিল? অতীতে অনেক মৃত্যুর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে এই জাহাজের নাম।
সংবাদ সংস্থা
নিউ ইয়র্কশেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৩ ১৫:৫২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
মাঝসমুদ্রে ভাসছিল জাহাজ। কিন্তু সেখানে ক্যাপ্টেন, ক্রু সদস্য কেউ ছিলেন না। গভীর সমুদ্রে কী ভাবে আপনা থেকেই ভেসে বেড়াচ্ছিল জাহাজ? কোথায় গেলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন, ক্রু সদস্যরা? সেই রহস্যের কিনারা এখনও হয়নি। এই জাহাজের ছত্রে ছত্রে রয়েছে রহস্য। রয়েছে নানা অলৌকিক কাহিনিও। অনেকে এই জাহাজকে বলেন ‘ভূতুড়ে’। আবার কেউ কেউ ডাকেন ‘অভিশপ্ত জাহাজ’ নামে।
০২২০
জাহাজের নাম মেরি সিলেস্টা। ১৮৭২ সালের কথা। সেই বছর ৭ নভেম্বর প্রচুর পরিমাণে মদ নিয়ে নিউ ইয়র্ক বন্দর থেকে ইটালির জেনেভার উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিল ওই জাহাজ।
০৩২০
জাহাজটির ক্যাপ্টেন ছিলেন বেঞ্জামিন ব্রিগস। জাহাজে ছিলেন ক্যাপ্টেনের স্ত্রী সারা, শিশুকন্যা সোফিয়া। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ৭ জন ক্রু সদস্য।
০৪২০
ওই বছরই জিব্রাল্টারের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিল আর একটি জাহাজ। তার নাম দেই গ্রেশিয়া। আটলান্টিক মহাসাগর দিয়ে যাওয়ার সময় দূর থেকে মেরি সিলেস্টাকে দেখতে পেয়েছিলেন দেই গ্রেশিয়ার নাবিকরা। পথে সিলেস্টাকে দেখতে পেয়ে অবাকই হয়েছিলেন গ্রেশিয়ার ক্যাপ্টেন। কারণ, দুই জাহাজের যাত্রাপথ ছিল আলাদা।
০৫২০
দেই গ্রেশিয়ার নাবিকরা সিলেস্টার নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেন। সঙ্কেত পাঠান। কিন্তু দেখেন যে, সিলেস্টা থেকে কোনও সঙ্কেতই পাওয়া যাচ্ছে না। যার জেরে সন্দেহ বাড়ে। সিলেস্টায় কী হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে নিজের দুই ক্রু সদস্যকে পাঠান গ্রেশিয়ার ক্যাপ্টেন ম্যুরহাউজ়।
০৬২০
সেই মতো সিলেস্টায় যান গ্রেশিয়ার ক্রু সদস্যরা। সেখানে গিয়ে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় তাঁদের। দেখেন চারদিকে এক গা ছমছমে পরিবেশ। জাহাজের কোথাও কেউ নেই। জিনিসপত্র এমন ভাবে রাখা রয়েছে, যা দেখে বোঝার উপায় নেই যে সেখানে কেউ নেই। ক্যাপ্টেন, তাঁর স্ত্রী, কন্যা এবং ৭ ক্রু সদস্য তা হলে গেলেন কোথায়?
০৭২০
সিলেস্টা গ্রেশিয়ার ক্রু সদস্যরা এটাও দেখেন যে, জাহাজে কোনও আক্রমণের ঘটনা, অগ্নিকাণ্ডের চিহ্ন ছিল না। এমনকি, জাহাজে খাবার, পানীয়ের প্রচুর রসদ মজুত ছিল। অন্য সামগ্রীও সেখানে রাখা ছিল। অথচ জাহাজ একদম ফাঁকা!
০৮২০
সিলেস্টায় একটি লাইফবোট রাখা ছিল। সেটারও হদিস পাওয়া যায়নি। মদভর্তি ব্যারেলগুলিও খালি ছিল। যা আরও রহস্য বাড়িয়েছে। পরিত্যক্ত অবস্থায় সিলেস্টাকে উদ্ধারের পর গ্রেশিয়ার সঙ্গে সেই জাহাজকে নিয়ে জিব্রাল্টার যান ম্যুরহাউজ়।
০৯২০
সিলেস্টার ক্যাপ্টেন বেঞ্জামিনের বন্ধু ছিলেন ম্যুরহাউজ়। জাহাজ নিয়ে সমুদ্রে পাড়ি দেওয়ার আগে নিউ ইয়র্কে একসঙ্গে নৈশভোজও সেরেছিলেন তাঁরা। তাই সমুদ্রপথে সিলেস্টাকে দেখে বাড়তি তৎপরতা দেখিয়েছিলেন ম্যুরহাউজ়। পরিত্যক্ত সিলেস্টাকে জিব্রাল্টারে নিয়ে যান তিনি।
১০২০
‘ল্য অফ স্যালভেজ’-এর জন্যই সিলেস্টাকে উদ্ধার করে সেখানে নিয়েছিলেন গ্রেশিয়ার ক্যাপ্টেন। ওই আইনে বলা ছিল, কোনও জাহাজ যিনি প্রথম উদ্ধার করবেন, সেই জাহাজের যা দাম, তার একটা অংশ পাবেন উদ্ধারকর্তা। এর পরই সিলেস্টারের কাহিনি প্রকাশ্যে আসে।
১১২০
সিলেস্টা জাহাজে ঠিক কী ঘটেছিল? ক্যাপ্টেন বেঞ্জামিন-সহ ১০ জন কোথায় গেলেন? এই নিয়ে নানা মুনির নানা মত। নানা তত্ত্বের কথা উঠে এসেছিল। কেউ বলেছিলেন, কোনও সামুদ্রিক হিংস্র প্রাণীর কবলে পড়েছিলেন সিলেস্টা সদস্যরা। আবার কেউ বলেছিলেন, জলদস্যুরা আক্রমণ করেছিলেন। এ-ও শোনা যায় যে, ‘ল্য অফ সালভেজ’-এ ফায়দা তোলার জন্য ম্যুরহাউজ়ই সিলেস্টায় আক্রমণ করেন। এই নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল আদালতও। সেই কারণে সিলেস্টা উদ্ধারের পরও পুরো টাকা পাননি ম্যুরহাউজ়।
১২২০
অনেকে দাবি করেন যে, সিলেস্টার ক্যাপ্টেন বেঞ্জামিন ধর্মীয় কারণে নিজের স্ত্রী, কন্যা এবং ৭ ক্রু সদস্যকে খুন করে আত্মঘাতী হন। তবে এই দাবিরও সত্যতা যাচাই করা যায়নি।
১৩২০
অনেকে বলেন, সমুদ্রে ভূমিকম্প বা টর্নেডোর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সিলেস্টা। যার জেরে জাহাজে রাখা মদের ব্যারেলগুলি লিক করে। জাহাজের নীচের অংশে জলও ঢুকে গিয়েছিল। মদ লিক করায় জাহাজে যে কোনও মুহূর্তে বিস্ফোরণ ঘটতে পারত, তাই প্রাণ বাঁচাতে লাইফবোটে করে জাহাজ থেকে পালিয়েছিলেন বেঞ্জামিনরা। কিন্তু সেই সময় জাহাজ এবং লাইফবোটের মধ্যে দড়ি ছিঁড়ে গিয়েছিল। পরে সিলেস্টা থেকে ছেঁড়া দড়ি উদ্ধার করা হয়েছিল। তাই বেঞ্জামিনদের গায়েব হওয়ার ঘটনার নেপথ্যে এই কারণ থাকতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। যদিও এরও কোনও সত্যতা এখনও পর্যন্ত যাচাই করা যায়নি।
১৪২০
তবে এই ঘটনাই প্রথম নয়। জন্মলগ্ন থেকেই মেরি সিলেস্টার সঙ্গে একের পর এক অঘটন জুড়ে রয়েছে। ‘অভিশপ্ত’ ওই জাহাজের নাম প্রথমে ‘মেরি সিলেস্টা’ ছিল না।
১৫২০
১৮৬১ সালের কথা। সে বছর স্পেনসার্স দ্বীপে তৈরি করা হয়েছিল ১০০ ফুট লম্বা, ২৫ ফুট চওড়া একটি জাহাজ। যার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অ্যামাজ়ন’। কিন্তু এই জাহাজটি কেউই কিনতে চাইতেন না। কারণ এটি নাকি ছিল ‘অভিশপ্ত’।
১৬২০
জাহাজটি প্রথম যাত্রার সময়ই অঘটন ঘটে। যাত্রার সময় প্রথম ক্যাপ্টেন ম্যাকলেলান আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। জাহাজেই ছিলেন তিনি। তাঁর শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি ঘটতে থাকে। শেষে স্পেনসার্স আইল্যান্ডে যাওয়ার পথে ১৮৬১ সালের ১৯ জুন তাঁর মৃত্যু হয়।
১৭২০
এর পর থেকে জাহাজটি একের পর এক বিপাকে পড়তে থাকে। যাত্রাপথে মাছ ধরার সরঞ্জামের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ক্ষতি হয়েছিল জাহাজটির। মেরামতির জন্য জাহাজটিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল একটি শিপইয়ার্ডে। কিন্তু জাহাজটি ঢুকতেই ওই শিপইয়ার্ডে নাকি আচমকা আগুন ধরে যায়। অথচ অ্যামাজ়ন জাহাজে আগুনের আঁচ পর্যন্ত লাগেনি। তার পর যিনিই কিনেছিলেন এই জাহাজ, তিনি ব্যাপক লোকসানের মুখোমুখি হন।
১৮২০
১৮৬৭ সালে ঝড়ের কবলে পড়ে সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়েছিল অ্যামাজ়ন জাহাজ। এতটাই ক্ষতি হয়েছিল যে, জাহাজটির মালিক পরিত্যক্ত অবস্থায় কেপ ব্রেটন দ্বীপে সেটি রেখে পালিয়ে গিয়েছিলেন। এর পর, অ্যামাজ়নের সেই ক্ষতিগ্রস্ত অংশ উদ্ধার করেন আলেকজ়ান্ডার ম্যাকবিন।
১৯২০
তিনিই নতুন করে জাহাজটি আবার তৈরি করেন। নাম দেন মেরি সিলেস্টা। এর পর বহু বার সিলেস্টার মালিকানা বদল হয়েছে। শোনা যায়, যিনিই এই জাহাজটি কিনেছেন, হয় তাঁর ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে, নয়তো কোনও না কোনও ভাবে বিপাকে পড়েছেন।
২০২০
শেষে এই জাহাজটির মালিক হন বেঞ্জামিন। কিন্তু তাঁর পরিণতিও হয় ভয়ঙ্কর। জাহাজ থেকে আচমকা উধাও হয়ে যান অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেন বেঞ্জামিন। তার পর কী হল? সেই উত্তর এখনও মেলেনি। এখনও রহস্যের মোড়কেই রয়েছে এই জাহাজ।