Mystery of Egyptian screaming mummy solved in recent studies dgtl
screaming mummy
যন্ত্রণায় বিকৃত মুখ নিয়ে হাজার হাজার বছর শুয়ে রাজকন্যা! কোন যন্ত্রণায় মৃত্যু? সমাধান হল রহস্যের
দেইর-আল-বাহারি সমাধিক্ষেত্র এক ব্যাতিক্রমী মমির সন্ধান মেলে। আর পাঁচটা সাধারণ মমির মতো চেহারা নয়। মুখ হাঁ করা। মমিটির সর্বাঙ্গে যন্ত্রণার ছাপ স্পষ্ট।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৪ ১৩:৩৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
চিররহস্যে ঢাকা মিশর। মিশরের কথা উঠলেই প্রসঙ্গ এসে পড়ে পিরামিড এবং মমির। ইতিহাসের ঘটনাবলি যেন প্রতিটি মমির সঙ্গে শায়িত। এই শতাব্দীপ্রাচীন মমিগুলি মিশরীয় রহস্য রোমাঞ্চের খনি।
০২১৭
উঁচু উঁচু পিরামিডের নীচে লুকোনো সাদা কাপড়ে জড়ানো মৃতদেহ। মৃত্যুর পরেও হাজার হাজার বছর ধরে টিকিয়ে রাখা মৃতদেহগুলির মধ্যে কী রহস্য লুকিয়ে রয়েছে, তা জানতে বছরের পর বছর নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে আসছেন প্রত্নতত্ত্ববিদ ও নৃতত্ত্ববিদেরা।
০৩১৭
সেই গবেষণা চালাতে গিয়ে ১৯৩৫ সালে এক প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযানে দেইর-আল-বাহারি সমাধিক্ষেত্রে এক ব্যাতিক্রমী মমির সন্ধান মেলে। আর পাঁচটা সাধারণ মমির মতো চেহারা নয়। মমিটির সর্বাঙ্গে যন্ত্রণার ছাপ স্পষ্ট, হাঁ করা মুখ।
০৪১৭
যেন মারা যাওয়ার আগে চিৎকার করছিল মৃতা। তাই প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এই মমির নাম রেখেছিলেন ‘স্ক্রিমিং মমি’। মিশরীয় মমির এই ভয়াল চেহারা গবেষকদের দীর্ঘ দিন ধরে বিভ্রান্ত করেছে।
০৫১৭
মূল্যবান বস্ত্র, সুগন্ধি দিয়ে সাজানো মমিটির মুখের দিকে তাকালে হৃৎকম্প হতে বাধ্য। যেন ভয়ানক চিৎকার করে উঠতে চাইছে সে। হাঁ করা মুখের ভিতর দিয়ে দৃশ্যমান দাঁতের সারি। চোখের কোটরে কোনও অব্যক্ত যন্ত্রণার অসহায় আর্তি ফুটে উঠেছে।
০৬১৭
প্রথমে এই মমির পরিচয় সঠিক ভাবে নির্ধারণ করে উঠতে পারেননি গবেষকেরা। তার শরীরকে আবৃত করে রাখা লিনেনে সাঙ্কেতিক ভাষায় লেখা ছিল ‘রাজকন্যা ও রাজ পরিবারের বোন মেরিতামুন’।
০৭১৭
কিন্তু ওই একই নামে বহু মিশরীয় রাজকন্যার কথা জানা যায়। ফলে এই রাজকন্যা কোন রাজবংশের, তা শনাক্ত করে ওঠা যায়নি বহু দিন।
০৮১৭
প্রত্নতাত্ত্বিকদের প্রাথমিক ধারণা ছিল, হৃদ্রোগ বা আক্রমণে মৃত্যু হয় মেরিতামুনের।
০৯১৭
তবে সম্প্রতি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিয়োলজিস্ট সাহার সেলিম এবং মিশরীয় পর্যটন ও পুরাকীর্তি মন্ত্রকের নৃতত্ত্ববিদ সামিয়া এল-মেরঘানির সাম্প্রতিক গবেষণা ‘স্ক্রিমিং মমি’ রহস্যের উপর নতুন ভাবে আলোকপাত করেছে।
১০১৭
এই মমি আবিষ্কারের পর মনে করা হয়েছিল, খুব দ্রুততার সঙ্গে দেহ সংরক্ষণ করার ফলে এটি মুখব্যাদান করে আছে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে নয়া তথ্য।
১১১৭
যান্ত্রিক শবব্যবচ্ছেদ পদ্ধতির জন্য সিটি স্ক্যান ব্যবহার করার পরে গবেষকেরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন, তাঁর মুখের পেশি শক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে বেশ যন্ত্রণায় তিনি মারা গিয়েছেন। একে চিকিৎসা পরিভাষায় ‘ক্যাডেভারিক স্প্যাজ়ম’ বলা হয়ে থাকে।
১২১৭
সমাধিতে জমকালো একটি কাঠের কফিনে রাখা ছিল এই মমিটি। অন্ত্যেষ্টির সময় তাঁকে দামি পোশাক পরানো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। মমির সঙ্গে সোনা ও রুপোর তৈরি দু’টি দামি আংটি এবং খেজুরের তন্তু থেকে তৈরি একটি লম্বা পরচুলা পাওয়া গিয়েছে।
১৩১৭
রেডিয়োলজির অধ্যাপক সাহার সেলিম জানিয়েছেন, রাজপরিবারের এই মহিলা মারা যাওয়ার সময় তার বয়স ছিল প্রায় ৪৮ বছর। তিনি মেরুদণ্ডের সমস্যায় ভুগছিলেন। মারা যাওয়ার আগে কয়েকটি দাঁত হারিয়েছিলেন তিনি।
১৪১৭
মিশরের রানি হাটশেপসুটের প্রেমিক ছিলেন সেনমুট নামে একজন উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী। তিনি একাধারে রাজস্থপতি এবং রাজকীয় তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। তাঁর সমাধি খননের সময় ‘স্ক্রিমিং মমি’র সমাধিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
১৫১৭
পরিচয় নির্ধারণ করা সম্ভব না হলেও তাঁর সমাধিতে পাওয়া দামি গয়না, রত্ন সযত্নে সংরক্ষণ করার ধরন দেখে গবেষকেরা অনুমান করেছেন, তিনি সম্ভবত রাজপরিবারের একজন ঘনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন।
১৬১৭
গবেষণায় তার পরচুলার বিবরণ প্রকাশ করা হয়েছে। সর্পিল বিনুনিগুলিকে কোয়ার্ৎজ়, ম্যাগনেটাইট এবং অ্যালবাইট খনিজ দিয়ে শক্ত করে কালো রং করা হয়েছিল। তবে মমির নিজস্ব চুল প্রাকৃতিক রং এবং জুনিপার তেল দিয়ে রাঙানো ছিল।
১৭১৭
ওই বিচিত্র মুখভঙ্গিই মমিটিকে ‘বিশেষ’ করে তুলেছে। আর কোন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে তিন হাজার বছরের পুরনো এই মমিটিকে ঘিরে, তা আজও ভাবতে বাধ্য করে আমাদের।