Murder of Amarjit Chohan and his family in England is very painful and terrible dgtl
murder case
Murder Mystery: ‘আ স্টাডি ইন স্কারলেট’! এক ফোঁটা শুকনো রক্ত থেকে কিনারা হয় অন্যতম ভয়ানক হত্যাকাণ্ডের
আট সপ্তাহের শিশু থেকে শুরু করে ৫১ বছর বয়সি বৃদ্ধা। রাতারাতি বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায় লন্ডনে বসবাসকারী ভারতীয় প্রবাসী অমরজিৎ চৌহানের পরিবার।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২২ ০৯:১০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
যেন শার্লক হোমসের ‘আ স্টাডি ইন স্কারলেট’-এর গল্প। যেখানে রক্তের দাগ থেকে অপরাধীকে ধরেন হোমস। আট সপ্তাহের শিশু থেকে শুরু করে ৫১ বছর বয়সি বৃদ্ধা। রাতারাতি বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায় লন্ডনে বসবাসকারী ভারতীয় প্রবাসী অমরজিৎ চৌহানের পরিবার। তবে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, জঘন্য চক্রান্ত এবং অপরাধের শিকার একই পরিবারের তিন প্রজন্ম। একই সঙ্গে এটি ব্রিটেনের সবচেয়ে ভয় ধরানো অপরাধের ঘটনাগুলির মধ্যেও অন্যতম বলে মনে করা হয়।
০২২৩
অমরজিৎ, তাঁর স্ত্রী ন্যান্সি চৌহান, তাঁদের দুই ছেলে রবিন্দর ও দেবিন্দর এবং ন্যান্সির মা চরণজিৎ কৌর পশ্চিম লন্ডনের বাড়িতে থাকতেন। রবিন্দর আট সপ্তাহ এবং দেবিন্দর ১৮ মাসের শিশু ছিল। এই পরিবারের সবাকেই নির্মম ভাবে খুন করা হয়।
০৩২৩
অমরজিৎ ‘শিবা’ নামক একটি পরিবহণ সংস্থার মালিক ছিলেন। আততায়ীরা এই পরিবহণ সংস্থা হাতিয়ে নিয়ে মাদক পাচার করার পরিকল্পনা করেছিল বলে তদন্তে উঠে আসে। কিন্তু অমরজিৎ রাজি না হওয়ায় প্রথমে তাঁকে খুন করে আততায়ীরা। পরে যাতে এই পরিবহণ সংস্থার কোনও দাবিদার না থাকে, তার জন্য পুরো পরিবারকে খুন করা হয়।
০৪২৩
অমরজিৎ এবং তাঁর পুরো পরিবারকে খুন করার পর তা ঢাকতে ভয়ঙ্কর মিথ্যার জালও বোনেন আততায়ীরা।
০৫২৩
২০০৩-এর ফেব্রুয়ারিতে অমরজিতের পরিবার যখন হঠাৎ করে অদৃশ্য হয়ে যায়, তখন তাঁর সংস্থার কর্মীরা প্রাথমিক ভাবে মনে করেন যে, অমরজিৎ তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। প্রতিবেশীদের মধ্যেও ধারণা তৈরি হয় যে, আর্থিক অনটনের মুখে পড়ে অমরজিৎ পালিয়ে গিয়েছেন।
০৬২৩
পুরো পরিবারের নিখোঁজ হওয়ার এক মাস পরে ন্যান্সির ভাই ওঙ্কার বর্মা, তাঁর মা, বোন এবং বোনের পরিবারের খোঁজে নিউজিল্যান্ড থেকে লন্ডন আসেন। আর এর পরই জট খুলতে থাকে এই হাড়হিম করা অপরাধের ঘটনার।
০৭২৩
২০০৩-এর ১৪ ফেব্রুয়ারি তাঁর ২৫ বছর বয়সি বোন ন্যান্সির কাছ থেকে ফোন পান ওঙ্কার। ন্যান্সি ফোনে ওঙ্কারকে জানান, অমরজিৎ দু’দিন ধরে বাড়ি ফেরেননি বলে তিনি চিন্তিত। ন্যান্সি ফোনে এ-ও জানান, অমরজিতের সংস্থার কর্মীরা তাঁকে জানিয়েছেন যে, অমরজিৎ কর্মসূত্রে হল্যান্ড গিয়েছেন। এই শুনে আরও চিন্তা বাড়ে ন্যান্সির। কারণ অমরজিতের পাসপোর্ট একটি সরকারি দফতরে জমা রাখা ছিল। একই সঙ্গে অমরজিৎ তাঁর জন্য যে বার্তা রেকর্ড করে গিয়েছেন, তাতে তিনি ইংরেজিতে কথা বলেছেন। কিন্তু তাঁর স্বামী কোনও বার্তা দিলে সব সময় পঞ্জাবিতে কথা বলতেন বলেও ন্যান্সি তাঁর দাদাকে জানান।
০৮২৩
দাদার সঙ্গে কথা হওয়ার ঠিক পর দিনই উধাও হয়ে যান ন্যান্সি, তাঁর দুই ছেলে এবং মা।
০৯২৩
মার্চের শেষে ওঙ্কারের অনুরোধে পুলিশ অমরজিতের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। তবে বিশেষ কিছু লাভ হয়নি। তবে বাড়ির টেবিলে মা চরণজিতের একটি গ্রন্থসাহিব দেখে সন্দেহ দানা বাঁধে ওঙ্কারের মনে। তিনি জানতেন যে, তাঁর মা এই বই ছেড়ে কোথাও যেতেন না। তাই পুলিশ জোর দিলেও পুরো পরিবারের ভারত চলে যাওয়ার তত্ত্ব মেনে নেননি ওঙ্কার।
১০২৩
এরই মধ্যে ‘শিবা’র কর্মীদের কাছে অমরজিতের নামে লেখা একটি টাইপরাইটারে টাইপ করা চিঠি পাঠানো হয়। এতে লেখা ছিল যে, ইংল্যান্ডে থাকতে থাকতে তিনি বিরক্ত এবং পরিবারকে নিয়ে ভারতে ফিরে গিয়েছেন। তবে এই চিঠি নিয়েও জল্পনা বাড়তে থাকে। কারণ অমরজিৎকে এর আগে তাঁর অফিসের কোনও কর্মী টাইপ করা চিঠি লিখতে দেখেননি। হাতে চিঠি লিখতেই বেশি স্বচ্ছন্দ অমরজিৎ।
১১২৩
২০০৩ সালের ২১ মার্চ ওঙ্কারের চেষ্টায় এই মামলাটি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড নিজের হাতে তুলে নেয়। অমরজিতের পুরো পরিবারকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছিল বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ওঙ্কার। চৌহান পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে থাকা টাকায় হাত না পরায় খুনের ধারণা আরও স্পষ্ট হতে থাকে।
১২২৩
এর পর এপ্রিল, জুলাই এবং নভেম্বর মাসে বোর্নেমাউথ পিয়ারের কাছে সমুদ্রে অমরজিতের মৃতদেহ ভেসে ওঠে। এর পর ভেসে ওঠে ন্যান্সি এবং তাঁর মা চরণজিতের মৃতদেহও।
১৩২৩
ময়নাতদন্তে উঠে আসে, অমরজিতকে প্রথমে মাদক খাওয়ানো হয় এবং শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। ন্যান্সির মাথার খুলি একটি হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়। চরণজিতের শরীর খুব খারাপ ভাবে পচে যাওয়ায় মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্তে উঠে আসেনি। রবিন্দর ও দেবিন্দরের মৃতদেহ উদ্ধার করা যায়নি।
১৪২৩
যখন অমরজিতের মৃতদেহ সমুদ্র থেকে উদ্ধার করা হয়, তখন ময়নাতদন্তকারীরা তার একটি পায়ের মোজার মধ্যে একটি কাগজের টুকরো খুঁজে পান। এই কাগজে লেখা ছিল যে অমরজিৎ, কেনেথ রেগান নামে এক জনকে তাঁর সংস্থার মালিকানা দিয়ে যাচ্ছেন। তদন্তকারীরা জানতে পারেন কেনেথ ‘শিবা’ সংস্থারই এক কর্মী।
১৫২৩
. তদন্তে নেমে অনেক জিজ্ঞাসাবাদের পর কেনেথের বাড়ি থেকে এক ফোঁটা শুকনো রক্তের সন্ধান পায় পুলিশ। ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা হয়, এই রক্ত অমরজিতের ছেলে দেবিন্দরের। এর পরই গ্রেফতার করা হয় কেনেথকে।
১৬২৩
গ্রেফতার করা হয় উইলিয়াম হর্নবি এবং পিটার রিস নামে আরও দু’জনকে। উইলিয়াম এবং পিটারের সঙ্গে জোট বেঁধে পুরো সিংহ পরিবারকে খুন করার অভিযোগ ওঠে কেনেথের বিরুদ্ধে।
১৭২৩
কেনেথ ২০০২ সাল থেকে অমরজিতের পরিবহণ সংস্থায় যোগ দেয়। তবে এর পিছনে তার ভয়ঙ্কর এক উদ্দেশ্য লুকিয়ে ছিল।
১৮২৩
আসলে কেনেথ ছিল এক জন কুখ্যাত অপরাধী। প্রায় ১০ বছর ধরে ‘ক্যাপ্টেন ক্যাশ’ নামে সে মাদক চোরাচালান, অর্থ পাচার এবং নকল পাসপোর্ট তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিল। অপরাধের জন্য জেলও খাটতে হয়েছিল রেগানকে।
১৯২৩
. জেল থেকে বেরিয়ে পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে নতুন ফন্দি আঁটে কেনেথ। তার নজরে পড়ে অমরজিতের পরিবহণ সংস্থা ‘শিবা’। পরিবহণ সংস্থার আড়ালে মাদক পাচার করায় কেনেথের আসল উদ্দেশ্য ছিল। সে মনে করেছিল, এই সংস্থার আড়ালে মাদক পাচার করে সে বাকি জীবন আরাম করে পাঠাবে।
২০২৩
প্রথমে অন্য নামে এই সংস্থা কেনার চেষ্টা করলেও অমরজিৎ তাঁর সংস্থা বিক্রি করতে রাজি হননি। তাই সংস্থার হাল-হকিকত জানতে কর্মী হিসাবে নিজেই সংস্থায় ঢুকে পড়ে।
২১২৩
এর পর সময় সুযোগ বুঝে অমরজিৎকে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত প্রত্নাবশেষ স্টোনহেঞ্জের কাছে ডেকে পাঠায় কেনেথ। সেখানে তাঁকে মাদক খাইয়ে একটি কাগজে স্বাক্ষর করার জন্য নির্যাতন করা হয়। কাগজে লেখা ছিল, অমরজিৎ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন এবং সংস্থা কেনেথের হাতে তুলে দিচ্ছেন।
২২২৩
স্বাক্ষর করিয়ে অমরজিতকে শ্বাসরোধ করে খুন করে কেনেথ এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা। এই বার এই কাগজটি অমরজিতের মোজায় গুঁজে দিয়ে তাঁর মৃতদেহ সমুদ্রে এমন ভাবে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, যাতে সেই দেহ কয়েক মাসেই ভেসে ওঠে এবং এই কাগজ পুলিশের হাতে পড়ার পর তার উপর যাতে সন্দেহ না হয় এবং সহজেই সে সংস্থার মালিকানা পায়।
২৩২৩
এর পর কেনেথ তার বোনা অপরাধের জালকে বিশ্বাসযোগ্য করতে অমরজিতের পুরো পরিবারকেও খুন করে। তবে শেষরক্ষা হয়নি। কেনেথের বাড়ির বাইরে এক ফোঁটা রক্ত ধরিয়ে দেয় তাকে এবং তার দুই সঙ্গীকে।