সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মুম্বইবাসীর চাহিদা বদলেছে। ভাল লাগা বদলেছে। বড়র বদলে ছোটতেই খুশি তাঁরা। কেন বদলে গেলেন মুম্বইবাসী? কেন বদলাল তাঁদের স্বপ্ন?
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
মুম্বইশেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২৩ ১৩:৫০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
সারা দিনের কাজের শেষে রাতে এক চিলতে ঘর, এক টুকরো রান্নাঘর আর বারান্দা— এটুকুতেই এখন খুশি বেশির ভাগ মুম্বইবাসী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের চাহিদা বদলেছে। ভাল লাগা বদলেছে। বড়র বদলে ছোটতেই খুশি তাঁরা। কেন বদলে গেলেন মুম্বইবাসী? কেন বদলাল তাঁদের স্বপ্ন?
০২১৮
একটা বা দু’টো বেডরুম। লাগোয়া ছোট্ট বারান্দা। সঙ্গে রান্নাঘর, বাথরুম। মুম্বইয়ের বুকে এ রকম একটা ফ্ল্যাটে জীবনযাপন! সাধ তো থাকে সকলেরই। কিন্তু সাধ্য হয় না। তাই সাধপূরণের জন্য বাধ্য হয়েই মুম্বইয়ের উপকণ্ঠের শহরতলিতে ফ্ল্যাট কিনে বা ভাড়া নিয়ে থাকেন বহু মানুষ।
০৩১৮
ক্রমে সেই ছবি পাল্টাচ্ছে। হাত-পা ছড়িয়ে কাটানোর জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেন, বাস চেপে বড় বাড়িতে আর যেতে চাইছেন নতুন প্রজন্মের মুম্বইবাসী। সারা দিনের কাজের পর যাতায়াতে এত সময় আর দিতে চাইছেন না তাঁরা। বদলে শহরের ভিতরেই থিতু হতে চাইছেন।
০৪১৮
খাস মুম্বই শহরের ভিতর ঠাঁই খোঁজা সহজ নয়। পকেটে রেস্ত থাকা দরকার। আবার এই রেস্তর জন্য আটকে থাকাও নাপসন্দ নতুন প্রজন্মের। তাই তারা নিজেদের সাধে লাগাম পরাচ্ছেন। মুম্বইয়ের ভিতরে এক কামরা বা স্টুডিয়ো অ্যাপার্টমেন্টেই এখন খুশি তাঁরা।
০৫১৮
নতুন এই প্রজন্মের দলে পড়েন মল্লিকা কামোডিয়া। পেশায় কুকুরদের প্রশিক্ষক তিনি। গ্রান্ট রোডে এক কামরার ফ্ল্যাটে বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ভাড়া থাকেন তিনি। মল্লিকার কথায়, ‘‘আমি এবং আমার বয়ফ্রেন্ডের জন্য এক কামরার ফ্ল্যাটই যথেষ্ট।’’
০৬১৮
মল্লিকা সাফ জানিয়েছেন, সারা দিনের কাজ শেষে দু’ঘণ্টা যাতায়াত করে বাড়ি ফেরা সমস্যার। তাই শহরের বুকেই ছোট্ট ঠিকানা খুঁজে নিয়েছেন তিনি। আরও জানিয়েছেন, যে হেতু মা-বাবার সঙ্গে থাকেন না, সন্তানও নেই, তাই এক কামরার ফ্ল্যাটই তাঁদের জন্য যথেষ্ট।
০৭১৮
মল্লিকা এখন যেখানে থাকেন, তার কাছেই মেরিন ড্রাইভ। সেখানেই থাকেন তাঁর বাবা-মা। ইচ্ছা হলেই চট করে দেখা করতে যেতে পারেন। রাস্তার কিছু কুকুরকে রোজ খাওয়ান মল্লিকা। তারাও থাকে তাঁর ফ্ল্যাটের কাছেই।
০৮১৮
চার দেওয়ালের মধ্যেই শোওয়া, খাওয়া, রান্না, বসার জায়গা। এই স্টুডিয়ো অ্যাপার্টমেন্টই এখন বেশি জনপ্রিয় মুম্বইতে। একটি আবাসন সংস্থার প্রধান আয়ুষী আশার জানিয়েছেন, নিউ ইয়র্ক শহরেই প্রথম এই স্টুডিয়োর চল শুরু হয়। সেখানে জায়গা এতটাই মূল্যবান যে, স্টুডিয়োতে একটা বিছানা আর একটা প্লেট রাখার জায়গা থাকে।
০৯১৮
আশার মনে করেন, মু্ম্বইবাসী সেই তুলনায় ভাগ্যবান। সেখানে রান্না এবং শোওয়ার জায়গা আলাদা থাকে।
১০১৮
মল্লিকা জানালেন, তাঁর ফ্ল্যাটে রয়েছে একটি বিছানা, একটি আলমারি, একটি পড়ার টেবিল, একটি ফ্রিজ। ছোট্ট একটা রান্নাঘরও রয়েছে। তবে মল্লিকা এবং তাঁর বয়ফ্রেন্ড জলখাবার ছাড়া অন্য কিছু বাড়িতে রান্না করেন না। ডাব্বাওয়ালাদের থেকে কিনে খান।
১১১৮
পেশায় স্ট্র্যাটেজি অ্যানালিস্ট শ্রেয়সী সরকারের লক্ষ্য ছিল, ৩০ বছরের আগেই নিজের একটা ফ্ল্যাট কেনা। এক কোটি টাকা দিয়ে গত বছর মুম্বইতেই এক বেডরুম বিশিষ্ট একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি।
১২১৮
৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট এখন সাজানোর কাজ চলছে। শীঘ্রই সেখানে থাকতে শুরু করবেন শ্রেয়সী। আগে কান্দিভলিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। ২০১৬ সালে ঠাণেতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে চলে যান।
১৩১৮
যদিও ওই এলাকা পছন্দ হয়নি শ্রেয়সীর। ২০২২ সালে আবার কান্দিভলিতে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে চলে যান। ওই বছরই ভারসোভা মেট্রো স্টেশনের কাছে নির্মীয়মাণ একটি ফ্ল্যাট বুক করেন শ্রেয়সী।
১৪১৮
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অতিমারির পর থেকে মুম্বইবাসী চাইছে দফতরের কাছেই হোক অফিস। অতিমারির পর বেশির ভাগ কর্পোরেট সংস্থা বাড়ি থেকে কাজ করার ব্যবস্থা চালু করেছে। যদিও কর্মীদের অনেকেই চাইছেন ‘হাইব্রিড ব্যবস্থা’। অর্থাৎ সপ্তাহে কয়েক দিন বাড়ি থেকে কাজ, বাকি দিন অফিসে গিয়ে কাজ। আর সে কারণেই কর্মীরা চাইছেন, অফিসের কাছেই হোক বাড়ি।
১৫১৮
যদিও মুম্বইয়ের সব নির্মাণ সংস্থা স্টুডিয়ো অ্যাপার্টমেন্ট তৈরিতে আগ্রহী নয়। অর্থনীতিবিদদের মতে, স্টুডিয়ো অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রিতে তেমন লাভ নেই সংস্থাগুলির। কারণ একটি ৩০০-৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট তৈরি করতে ৭০০-৮০০ বর্গফুট ফ্ল্যাটের মতোই খরচ পড়ে। অথচ তেমন লাভ হয় না। সে কারণে নির্মাণ সংস্থাগুলি স্টুডিয়ো অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করতে চাইছে না।
১৬১৮
একটি সমীক্ষা বলছে, ২০২১ থেকে বেঙ্গালুরু, মুম্বই, এনসিআর, হায়দরাবাদ, পুণে, চেন্নাইতে ১,০৬৯টি নতুন আবাসন প্রকল্প চলছে। তার মধ্যে মাত্র ৯১টিতে স্টুডিয়ো অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।
১৭১৮
যদিও একটি নির্মাণ সংস্থার প্রধান নিরঞ্জন হিরানন্দানির মতে, ভবিষ্যতে দেশের সব শহরেই স্টুডিয়ো অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের চল বাড়বে। কারণ বড় শহরগুলিতে থাকার খরচ ক্রমেই বাড়ছে। তাই নতুন প্রজন্ম এখন স্টুডিয়োর দিকেই ঝুঁকছেন।
১৮১৮
শ্রেয়সী বা মল্লিকা, দু’জনেরই ইচ্ছা ভবিষ্যতে বড় কোনও ফ্ল্যাটে যাবেন। কিন্তু আপাতত এক কামরার ফ্ল্যাটেই খুশি তাঁরা এবং তাঁদের মতো তরুণ মুম্বইবাসীর।