Mumbai Bungalow that was home for three superstars, all lost stardom for ‘curse’ dgtl
Mumbai Curse Bungalow
‘আশীর্বাদ’ কি ‘অভিশপ্ত’? বাংলোয় প্রবেশ করে কেরিয়ার ডোবে তিন তারকার, তালিকায় ছিলেন রাজেশ খন্নাও
১৯৫০-এর দশকে মূলত পার্সি এবং অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের আধিপত্য ছিল কার্টার রোডে। এলাকার বড় বড় বাংলোগুলি ধনী পার্সি এবং অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের দখলে ছিল।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৪৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৪
মুম্বইয়ের কার্টার রোড। বাণিজ্য নগরীর অন্যতম সুন্দর এবং বিলাসবহুল এলাকা। এক সময় বলিউডের একাধিক তারকার বাস ছিল এই কার্টার রোডে। যার স্মৃতিচিহ্ন এখনও বহন করে নিয়ে চলেছে কার্টার রোডের একাধিক বাংলো।
০২২৪
১৯৫০-এর দশকে মূলত পার্সি এবং অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের আধিপত্য ছিল কার্টার রোডে। এলাকার বড় বড় বাংলোগুলি ধনী পার্সি এবং অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের দখলে ছিল।
০৩২৪
কিন্তু সেই সময় কার্টার রোডে দু’টি বাংলো ছিল যেখানে বলিউড তারকারা বসবাস করতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলোগুলির মালিকানা বদল হলেও মূলত বলিউডের সঙ্গে যুক্ত থাকা নামীদামি ব্যক্তিত্বরাই থাকতেন সেখানে।
০৪২৪
কার্টার রোডের এই বাংলো দু’টির নাম ছিল ‘আশিয়ানা’ এবং ‘আশীর্বাদ’। ‘আশিয়ানা’র মালিক ছিলেন বলিউড সুরকার নওশাদ। অন্য দিকে, বার বার মালিকানা বদল হয়েছে ‘আশীর্বাদ’ বাংলোটির। যদিও বাংলোটির নাম প্রথম থেকেই ‘আশীর্বাদ’ ছিল না। মালিক বদলের মতো একাধিক বার নামও বদলেছে বাংলোটির।
০৫২৪
‘আশীর্বাদ’ বাংলো নিয়ে বহু দিন ধরে বহু গল্প প্রচলিত রয়েছে। অনেকের মতে সেই বাংলো ছিল ‘অভিশপ্ত’। আবার অনেকের কাছে বাংলোটির বদনাম ছিল ‘ভূতূড়ে’ বলে।
০৬২৪
সমুদ্রের ধারে দোতলা সেই বাংলোটির প্রথম মালিক ছিলেন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান এক ব্যবসায়ী। ১৯৫০-এর দশকের গোড়ার দিকে, অভিনেতা ভারত ভূষণ সেই বাংলো কিনে নেন।
০৭২৪
ভারতই ছিলেন সেই বাংলোটির প্রথম বলিউডি তারকা মালিক। পঞ্চাশের দশকে ‘বৈজু বাওরা’, ‘মির্জা গালিব’, ‘গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া’, ‘বরসাত কি রাত’-এর মতো সফল ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন ভারত। এর পরেই তিনি ওই বাংলো কেনেন।
০৮২৪
কিন্তু বাংলোয় থাকতে শুরু করার কিছু দিন পর থেকেই নাকি ভারতের কেরিয়ার ডুবতে শুরু করে। পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে, ভারতের একের পর এক ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েন তিনি।
০৯২৪
ঋণের ভারে ডুবে গিয়ে শখের বাংলোটি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন ভারত। তখনই বলিউডে গুজব ওঠে, বাংলোটি ‘অভিশপ্ত’ হওয়ার কারণেই ভরাডুবি হয়েছে অভিনেতার। এমন গুঞ্জনও ওঠে যে, যিনিই বাংলোটিতে বাস করবেন তাঁর জীবনেই দুর্ভাগ্যের কালো ছায়া নেমে আসবে।
১০২৪
ষাটের দশকে বাংলোটির মালিকানা যায় অভিনেতা রাজেন্দ্র কুমারের কাছে। ৬০ হাজার টাকায় বাংলোটি কিনে নেন তিনি। বাংলোটি তাঁর এতটাই পছন্দ হয়ে গিয়েছিল যে, বাংলো কেনার টাকা জোগাড় করতে এক প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে তিনটি ছবিতে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন রাজেন্দ্র।
১১২৪
বাংলোটির ‘অভিশপ্ত’ হওয়ার বিষয়ে রাজেন্দ্রকে অনেকেই নাকি সাবধান করেছিলেন। তবে তিনি সেই বারণ শোনেননি।
১২২৪
মেয়ের নাম অনুযায়ী রাজেন্দ্র বাংলোটির নাম রাখেন ‘ডিম্পল’। অভিনেতা বন্ধু মনোজ কুমারের পরামর্শে, বাড়ির ‘অভিশাপ’ দূর করার জন্য পুজোর ব্যবস্থাও করেন তিনি।
১৩২৪
বাড়িতে পুজো দেওয়ার পর পরই নাকি ভাগ্য ফেরে রাজেন্দ্রের। তাঁর অভিনীত একের পর এক ছবি বক্স অফিসে সফল হয়। শীঘ্রই ‘জুবিলি কুমার’-এর তকমা জোটে তাঁর।
১৪২৪
তবে রাজেন্দ্র কুমারে ভাগ্য বেশি দিন সহায় হয়নি। তাঁর জীবনে ফিরে আসে বাংলোর ‘অভিশাপ’। ১৯৬৮ সালের পর থেকে রাজেন্দ্রর অনেকগুলি ছবি সাফল্যের মুখ দেখতে ব্যর্থ হয়।
১৫২৪
একের পর এক ছবি ‘ফ্লপ’ করায় আর্থিক অনটনের মধ্যে পড়তে হয়েছিল রাজেন্দ্রকে। রাতারাতি নায়কের তকমা হারান অভিনেতা। বাধ্য হয়ে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করা শুরু করেন। চরম আর্থিক অনটনের মধ্যে পড়ে প্রিয় বাংলোটিও বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন তিনি।
১৬২৪
সত্তরের দশকে আবার বাড়ির মালিকানা বদল হয়। এক-দু’হাত ঘুরে বাড়িটি আসে বলিউডের সেই সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা রাজেশ খন্নার কাছে।
১৭২৪
বাংলোয় প্রবেশ করার পর পরেই রাজেন্দ্রের মতো রাজেশেরও ভাগ্য ফেরে। খুব শীঘ্রই, বলিউডের প্রথম ‘সুপারস্টার’-এর তকমা পান অভিনেতা।
১৮২৪
সেই সময় রাজেশের টানা ১৭টি সিনেমা হিট করে। রাতারাতি বলিউডের বৈগ্রাহিক অভিনেতা হয়ে ওঠেন রাজেশ।
১৯২৪
রাজেশই সেই বাংলোর নাম রেখেছিলেন ‘আশীর্বাদ’। মুম্বইয়ের মানুষদের কাছে বাংলোটি অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছিল সেই সময়। আশীর্বাদের বাইরে সব সময় অনুরাগীদের ভিড় লেগে থাকত।
২০২৪
রাজেশকে ঘিরে মহিলা অনুরাগীদের যে উন্মাদনা ছিল তা অন্য কোনও অভিনেতার ক্ষেত্রে লক্ষ করা যেত না। সত্তর থেকে আশির দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ উপার্জনকারী বলি অভিনেতাদের তালিকায় শীর্ষে ছিলেন রাজেশ।
২১২৪
কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই ভারত ভূষণ এবং রাজেন্দ্র কুমারের মতোই অবস্থা হয় রাজেশের। সত্তরের দশকের শেষের দিক থেকে রাজেশের ছবিগুলি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। ‘সুপারস্টার’-এর তকমাও হারান তিনি।
২২২৪
রাজেশকে সরিয়ে সেই সময় বলিউডের এক নম্বর তারকা হয়ে ওঠেন অমিতাভ বচ্চন। সন্তানদেরও সঙ্গে নিয়ে স্ত্রী ডিম্পল কপাডিয়াও তাঁকে ছেড়ে চলে যান।
২৩২৪
রাজেশের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, তাঁর সঙ্গে কোনও পরিচালকই কাজ করতে রাজি ছিলেন না। স্ত্রী-সন্তানদের ছেড়ে ফাঁকা বাংলোয় থাকতে ভাল লাগত না রাজেশের। লিঙ্কিং রোডের অফিসেই বেশি সময় কাটাতে শুরু করেন অভিনেতা।
২৪২৪
তবে ভারত বা রাজেন্দ্রর মতো বাংলোটি বিক্রি করেননি রাজেশ। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ওই বাংলোতেই ছিলেন তিনি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০১২ সালে মৃত্যু হয় রাজেশের। ২০১৪ বাংলোটি ৯০ কোটি টাকায় এক শিল্পপতির কাছে বিক্রি হয়ে যায়। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বহুতল নির্মাণের জন্য সেই বাংলোটি ভেঙে ফেলেন তিনি।