Mohenjo Daro ruins under threat amid massive rain in Pakistan cause flood situation dgtl
Mohenjo Daro
মহেঞ্জোদড়ো ধ্বংসের কারণ কি আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা? পাকিস্তানের ভয়াবহ বন্যায় কি মুছে যাবে ধ্বংসাবশেষ
বন্যার এমন ভয়াবহ তাণ্ডব দেখেনি পাকিস্তান। পরিস্থিতি এমনই যে, প্রশ্নচিহ্ন উঠে গিয়েছে হরপ্পা-মহেঞ্জোদড়োর ধ্বংসাবশেষ নিয়েও। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় কি মুছে যাবে ইতিহাসের এমন সম্ভার?
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:৫৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
ভয়াবহ বন্যায় বানভাসি পাকিস্তান। দেশের বেশির ভাগ অংশে এখনও দগদগে ক্ষতের মতো কাদা আর পলি। মাইলের পর মাইল কৃষিজমি এখনও জলের তলায়। স্মরণাতীত কালের মধ্যে বন্যার এমন ভয়াবহ তাণ্ডব দেখেনি পাকিস্তান। পরিস্থিতি এমনই যে, বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন উঠে গিয়েছে হরপ্পা-মহেঞ্জোদড়োর ধ্বংসাবশেষ নিয়েও। আবহাওয়ার এমন খামখেয়ালিপনায় কি ধুয়েমুছে সাফ হতে বসেছে ইতিহাসের এমন সম্ভার?
০২১৭
সিন্ধু নদের তীরে, দক্ষিণ সিন্ধ প্রদেশে রয়েছে মহেঞ্জোদড়োর ধ্বংসাবশেষ। যা ইউনেস্কোর ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ হিসেবে মনোনীত। ইতিহাসের পাতায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। দক্ষিণ এশিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ নগর জীবনের সংরক্ষিত ধ্বংসাবশেষ এই মহেঞ্জোদড়ো।
০৩১৭
মহেঞ্জোদড়ো একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। পাকিস্তানের শুক্কর শহর থেকে যার দূরত্ব ৮০ কিলোমিটারের সামান্য বেশি। সিন্ধু সভ্যতার একটি যদি হয় মহেঞ্জোদড়ো, তাহলে অপরটি অবশ্যই হরপ্পা। যা পাক-পঞ্জাবের ৬৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে।
০৪১৭
ঠিক কতটা এলাকা জুড়ে ছিল এই সভ্যতা? ইতিহাসবিদরা জানাচ্ছেন, পূর্ব-পশ্চিমে হরিয়ানার হিসারের রাখিগড়হি থেকে পাকিস্তান-ইরান সীমান্তের কাছে বালুচিস্তানের সুতকাগের ডোর পর্যন্ত। উত্তর-দক্ষিণে জম্মুর মান্দা থেকে মহারাষ্ট্রের দাইমাবাদ পর্যন্ত। এই বিস্তীর্ণ এলাকার বিভিন্ন জায়গায় আবিষ্কৃত হয়েছে নগরসভ্যতার ধ্বংসাবশেষ।
০৫১৭
বাঙালি প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯২০ সাল নাগাদ স্থানটি পরিদর্শন করেন। বুঝতে পারেন, তলায় চাপা পড়ে আছে জলজ্যান্ত ইতিহাস। জরিপের কাজ শেষ করে শুরু হয় খনন। ১৯৬৪-৬৫ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে চলতে থাকে খননকাজ। ধুলোর আবরণ সরিয়ে আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসতে থাকে প্রাচীন নগর সভ্যতার কঙ্কাল।
০৬১৭
১৯২১-এ হরপ্পা আবিষ্কারের এক বছর পর, এই স্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্য বিশ্ব জুড়ে স্বীকৃত হয়। নতুন অধ্যায় যুক্ত হয় মানবজাতির চলমান ইতিহাসের পাতায়।
০৭১৭
মহেঞ্জোদড়ো অনন্য তার জটিল শহর পরিকল্পনার জন্য। চওড়া রাজপথ, ইটবাঁধানো ফুটপাথ, উন্নত পানীয় জল সরবরাহ এবং নিকাশি, আচ্ছাদিত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, শৌচালয়-সহ বসতবাড়ি দেখলে সহজেই বোঝা যায় কী সুযোগ-সুবিধা ছিল সেই প্রাচীন নগরীতে।
০৮১৭
‘বৃহৎ শস্যাগার’ এবং ‘বৃহৎ স্নানাগার’-এর মতো প্রত্ন-কাঠামোর ধ্বংসাবশেষ এক উন্নততর নগরজীবনের পরিচয় দেয়। এই সভ্যতার পূর্ণ বিকাশের কালে মহেঞ্জোদড়োর জনসংখ্যা ছিল ৩০ হাজার থেকে ৬০ হাজার।
০৯১৭
সিন্ধু সভ্যতার অন্যতম প্রধান শহর হরপ্পা ও মহেঞ্জোদড়ো ছিল ব্রোঞ্জ যুগের নগরসভ্যতা। ৩৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে যা বিকশিত হয়। ২৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ— এই সময় এই নগরসভ্যতা বিকাশের চূড়ান্ত পর্যায়ে উন্নীত হয়। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের মাঝামাঝি কোনও সময় এই সভ্যতার পতন ঘটে।
১০১৭
ঐতিহাসিকদের মতে, আবহাওয়ার চরম খামখেয়ালিপনা হরপ্পা-মহেঞ্জোদড়োর পতনের অন্যতম অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে। পাকিস্তানে হালফিলের ভয়াবহ বন্যার পর অনেকেই সেই কারণে এই সভ্যতার পতন ঘটে বলে জানাচ্ছেন।
১১১৭
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৬ থেকে ২৬ অগস্ট পর্যন্ত মহেঞ্জোদড়োর প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষে ৭৭৯.৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এত বৃষ্টি সহ্য করতে পারেনি সাড়ে চার হাজার বছর আগের নগর সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ। প্রবল বৃষ্টিতে একাধিক গম্বুজ ও প্রত্ননিদর্শনের ক্ষতি হয়েছে। গম্বুজের সুরক্ষা দেওয়াল-সহ বেশ কয়েকটি দেওয়াল আংশিক ধসে পড়েছে।
১২১৭
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটির কিউরেটর গত ২৯ অগস্ট সংস্কৃতি, প্রত্নতাত্ত্বিক ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পরিচালককে একটি চিঠিতে জানিয়েছিলেন, তাঁরা নিজেদের সীমিত সংস্থান দিয়ে ঐতিহাসিক স্থানটি রক্ষা করার যথাসাধ্য চেষ্টা জারি রেখেছেন।
১৩১৭
ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষে জল জমার সমস্যার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে ওই চিঠিতে। স্থানীয় কিছু সমস্যার কারণে যে ঐতিহাসিক স্থান থেকে জল নিষ্কাশনের পরিপূর্ণ বন্দোবস্ত করা যায়নি। এর জেরে ব্যাপক বৃষ্টিতে জল জমে রয়েছে ওই এলাকায়।
১৪১৭
এ ছাড়া সিন্ধু নদের জলস্তর ক্রমাগত বেড়ে যাওয়াও সমস্যার কারণ হয়ে উঠেছিল। কারণ, স্থানীয় ভাবে বৃষ্টিপাত হলেও জল নিষ্কাশন পদ্ধতি ঠিকঠাক কাজ করলে সেই জল নদীতে নিয়ে গিয়ে ফেলা যায়। কিন্তু নদীর জলস্তর বেড়ে গেলে তা উল্টো কাজ করে। নদীর জলই হু হু করে ঢুকতে থাকে উল্টোমুখে।
১৫১৭
বর্তমানে সিন্ধুর জলস্তর ক্রমশ নামছে। এই পরিস্থিতিতে মহেঞ্জোদড়ো কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সেচ বিভাগের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এখনও কেউ আসেনি। ফলে করা যায়নি পরিস্থিতির সামগ্রিক মূল্যায়নও।
১৬১৭
পাক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আধিকারিক ভেঙে পড়া বাঁধ মেরামতি, ভাঙা খাল সংস্কার এবং অস্থায়ী নির্মাণ যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে সরাতে সেচ ও সড়ক বিভাগের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ প্রার্থনা করেছেন।
১৭১৭
মহেঞ্জোদড়োর কিউরেটর অতি বৃষ্টির জেরে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক মূল্যায়নের জন্য বিশেষজ্ঞদের পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আধিকারিকরা বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত ঐতিহাসিক কাঠামোগুলো মেরামত করার চেষ্টা করছেন।