সহকর্মীদের কাছে তিনি ‘শক্তির ভান্ডার’! ২৫ বছর ধরে অগ্নি ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে কাজ করছেন ‘দিব্য পুত্রী’
গত কয়েক বছরে অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন শিনা। দৌড়ে বেড়িয়েছেন পরীক্ষাগারের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত। সংসারও সামলেছেন। সহকর্মীদের কাছে ‘পাওয়ারহাউস অফ এনার্জি’ (শক্তির ভান্ডার) নামেও পরিচিত ৫৭ বছর বয়সি বিজ্ঞানী।
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৪ ১৬:৪০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ হয়েছে রবিবার। দেশীয় প্রযুক্তিতে উন্নত সমরাস্ত্র তৈরির যে সরকারি প্রকল্প, সেই ‘মিশন দিব্যাস্ত্র’-র অঙ্গ হিসাবেই এই পরীক্ষা হয়। অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণের পর ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও-র বিজ্ঞানীদের প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
০২১৮
অগ্নি-৫-এর সাফল্য নিয়ে দেশ জুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। কিন্তু ‘মিশন দিব্যাস্ত্র’ প্রকল্পের নেতৃত্বে যিনি ছিলেন, তাঁর সম্পর্কে জানেন না অনেকেই।
০৩১৮
‘মিশন দিব্যাস্ত্র’ প্রকল্পের নেতৃত্বে ছিলেন এক জন মহিলা বিজ্ঞানী। তাঁর নাম শিনা রানি। ১৯৯৯ সাল থেকে অগ্নি ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে কাজ করছেন তিনি।
০৪১৮
ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণায় ‘মাল্টিপল ইন্ডিপেন্ডেন্টলি টার্গেটেবল রি-এন্ট্রি ভেহিকল (এমআইআরভি)’ প্রযুক্তি এবং অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের সাফল্যকে অনেকেই শিনার ২৫ বছরের তপস্যার ফল বলে মনে করছেন। ‘মিশন দিব্যাস্ত্র’-র নেতৃত্বে থাকা শিনাকে ‘দিব্য পুত্রী’ নামেও অভিহিত করতে শুরু করেছেন অনেকে।
০৫১৮
তবে ‘দিব্য পুত্রী’ নিজে কী বলছেন? সংবাদমাধ্যমে শিনা বলেছেন, ‘‘আমি ডিআরডিও-র এক জন গর্বিত সদস্য। ডিআরডিও দীর্ঘ দিন ধরে ভারতকে রক্ষা করে আসছে।’’
০৬১৮
শিনা এ-ও জানিয়েছেন, তিনি ভারতের কিংবদন্তি ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিবিদ টেসি টমাস তথা ‘অগ্নি পুত্রী’র পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। টেসি ভারতের অগ্নি ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
০৭১৮
শিনা হায়দরাবাদের ডিআরডিও-র ‘অ্যাডভান্সড সিস্টেম ল্যাবরেটরি’র অন্যতম বিজ্ঞানী।
০৮১৮
গত কয়েক বছরে অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন শিনা। দৌড়ে বেড়িয়েছেন পরীক্ষাগারের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত। সংসারও সামলেছেন। সহকর্মীদের কাছে ‘পাওয়ারহাউস অফ এনার্জি (শক্তির ভান্ডার)’ নামেও পরিচিত ৫৭ বছর বয়সি বিজ্ঞানী।
০৯১৮
কম্পিউটার বিজ্ঞানে দক্ষ শিনা বৈদ্যুতিন এবং যোগাযোগ (ইলেকট্রনিক্স এবং কমিউনিকেশন) বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন তিরুঅনন্তপুরম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে থেকে। এর পর বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারে (ভিএসএসসি) আট বছর কাজ করেছেন তিনি।
১০১৮
১৯৯৮ সালের পোখরান পরমাণু পরীক্ষার পর শিনা ডিআরডিও-তে যোগ দেন। ১৯৯৯ থেকে অগ্নি ক্ষেপণাস্ত্রের ‘লঞ্চ কন্ট্রোল সিস্টেমে’ কাজ করছেন তিনি।
১১১৮
ভারতের ‘মিসাইল ম্যান’ তথা দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এবং ডিআরডিও-র প্রাক্তন প্রধান এপিজে আব্দুল কালামের প্রত্যক্ষ সান্নিধ্য পেয়েছেন শিনা। অনুপ্রেরণাও পেয়েছেন তাঁর কাছে।
১২১৮
ঘটনাচক্রে আব্দুল কালামও কর্মজীবন শুরু করেছিলেন বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টার থেকে। পরে ‘ইন্টিগ্রেটেড গাইডেড মিসাইল ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তিনি ডিআরডিও-তে যোগ দেন।
১৩১৮
আরও এক জন বিজ্ঞানীর প্রভাব রয়েছে শিনার জীবনে। তিনি ডিআরডিও-র ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিবিদ অবিনাশ চন্দ্র।
১৪১৮
শিনার স্বামী পিএসআরএস শাস্ত্রীও ডিআরডিও-র ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির সঙ্গে যুক্ত। ২০১৯ সালে ভারতীয় গবেষণা সংস্থা ইসরোর ‘কৌটিল্য’ উপগ্রহ উৎক্ষেপণের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি।
১৫১৮
ডিআরডিও নিশ্চিত করেছে, অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্র দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি। ‘মিশন দিব্যাস্ত্র’ প্রকল্পের আওতায় ওড়িশার এপিজে আব্দুল কালাম দ্বীপ থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হয়।
১৬১৮
ডিআরডিও সূত্রে খবর, এই ক্ষেপণাস্ত্রে এমন সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে যার জন্য যে কোনও সময় নিখুঁত লক্ষ্যে আক্রমণ হানতে পারে অগ্নি-৫।
১৭১৮
জানা গিয়েছে, অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রে এমন প্রযুক্তি (এমআইআরভি) ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে যুদ্ধক্ষেত্রে একাধিক অভিমুখে সেটিকে ব্যবহার করা যায়। বিশ্বের খুব কম দেশের কাছেই এই সামরিক প্রযুক্তি আছে। এ বার উন্নত সেই দেশগুলির সঙ্গে একই বন্ধনীতে ঢুকে গেল ভারতও। ভারতের আগে এত দিন আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়া, ফ্রান্স এবং চিনের কাছে এই প্রযুক্তি ছিল।
১৮১৮
অগ্নি-৫-এর সাফল্য নিয়ে নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি লেখেন, “মিশন দিব্যাস্ত্রের জন্য ডিআরডিও-র বিজ্ঞানীদের ধন্যবাদ। আমরা গর্বিত।”