‘মহীরুহ’ তাণ্ডবের প্রহর গুনছিল বাংলাদেশ! কে নাম দিয়েছিল? কোথায় কতটা প্রভাব ফেলল ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’?
গত মাসেই বাংলাদেশের উপর আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’। যদিও এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বাংলায় সে ভাবে পড়েনি। বাংলাদেশেও খুব বেশি তাণ্ডব চালাতে পারেনি সেই ঝড়।
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:০৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
বাংলাদেশে আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’। বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় শুক্রবার বিকালে সর্বশক্তি দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়েছে। বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় মিধিলির গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৫ কিলোমিটার।
০২২০
গত মাসেই মায়নমার উপকূলে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’। যদিও এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বাংলায় সে ভাবে পড়েনি। বাংলাদেশেও খুব বেশি তাণ্ডব চালাতে পারেনি সেই ঝড়।
০৩২০
তার এক মাস পেরোতে না পেরোতেই আবার বাংলাদেশের শিয়রে ঘূর্ণিঝড়। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের বুকে ‘জন্ম’ নিয়ে মিধিলি ‘রওনা’ দিয়েছিল বাংলাদেশের উদ্দেশে।
০৪২০
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাওয়া অফিসের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘূর্ণিঝড়ের কোনও নাম ঘোষণা করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, সাগরে তৈরি কোনও ঘূর্ণাবর্ত ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে তবেই আনুষ্ঠানিক ভাবে নাম ঘোষণা করা হয়। সেই মতো শুক্রবার ভোরে গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পরেই নামকরণ হয়েছে সেই ঝড়ের।
০৫২০
‘মিধিলি’ নামটি মলদ্বীপের দেওয়া। উচ্চারণ অনুযায়ীও ঘূর্ণিঝড়ের নাম মিধিলি-ই।
০৬২০
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিধিলি নামের অর্থ হল বিশাল গাছ, অর্থাৎ মহীরুহ।
০৭২০
২০২০ সালে মৌসম ভবনের তালিকাভুক্ত ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে একটির নাম দেওয়া হয় মিধিলি। ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত ২০১৯ সালের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক আবহাওয়া দফতর (ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট)-এ গৃহীত হয়েছিল।
০৮২০
ঘূর্ণিঝড় আমফানের পর থেকে আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগর, অর্থাৎ উত্তর ভারত মহাসাগরে তৈরি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্য এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়।
০৯২০
তালিকায় ১৩টি সদস্য দেশের প্রতিটি দেশ ১৩টি করে নাম যোগ করেছে। মোট ১৬৯টি নাম। ১৩টি ঘূর্ণিঝড়ের পরে যখন প্রথম তালিকা সম্পূর্ণ শেষ হবে, তখন দ্বিতীয় তালিকা থেকে নামকরণ শুরু হবে।
১০২০
প্রথম তালিকা ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। সেই তালিকার প্রথমে ছিল ঘূর্ণিঝড় ‘নিসর্গ’-এর নাম। নাম দিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথম তালিকার শেষে ছিল ইয়েমেনের দেওয়া ‘মোকা’ ঘূর্ণিঝড়ের নাম।
১১২০
দ্বিতীয় তালিকার প্রথমে নাম রয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’-এর। চার নম্বরে রয়েছে ‘মিধিলি’। এই তালিকা আবার শেষ হবে ইয়েমেনের দেওয়া ‘দিতওয়া’ ঘূর্ণিঝড় দিয়ে।
১২২০
ভারত যে নামগুলি দিয়েছে সেগুলি হল— ‘গতি’, ‘তেজ’, ‘মুরাসু’, ‘আগ’, ‘ব্যোম’, ‘ঝড়’, ‘প্রবাহ’, ‘নীর’, ‘প্রভঞ্জন’, ‘ঘূর্ণি’, ‘অম্বুদ’, ‘জলধি’ এবং ‘ভেগা’।
১৩২০
প্রসঙ্গত, হাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার রাত থেকে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে ক্রমশ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে সরে যায় গভীর নিম্নচাপ। ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে পরিণত হয় ঘূর্ণিঝড়ে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় শক্তি বাড়িয়ে সেটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
১৪২০
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার হিসাবে ‘মিধিলি’ ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে ১৯০ কিমি পূর্বে, দিঘা থেকে ২০০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
১৫২০
কয়েক ঘণ্টায় আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়েছে ‘মিধিলি’। এর পর শুক্রবার বিকালে ৮৫ কিলোমিটার গতিবেগে সেটি বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়েছে।
১৬২০
মোংলা ও খেপুপাড়ার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করার কথা ছিল ‘মিধিলি’র। এর প্রভাবে শুক্রবার এবং শনিবার খেপুপাড়া এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। হাওয়ার গতিবেগ বেড়ে ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে।
১৭২০
গত ২৪-২৫ অক্টোবরের মধ্যবর্তী রাতে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ মায়ানমার উপকূলে আছড়ে পড়েছিল। তার পর এই মরসুমে বঙ্গোপসাগরের বুকে দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’।
১৮২০
এর আগেও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে একাধিক বার তছনছ হয়েছে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী জেলাগুলির বিস্তীর্ণ এলাকা। তাই ‘মিধিলি’ ধেয়ে আসার খবর পাওয়ার পর থেকেই আশঙ্কায় খেপুপাড়া এবং তৎসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা।
১৯২০
পশ্চিমবঙ্গের দিকে ধেয়ে না এলেও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়বে রাজ্যে। দক্ষিণবঙ্গে বৃহস্পতিবারই হলুদ সতর্কতা জারি করেছিল হাওয়া অফিস। শুক্রবার আরও এক ধাপ এগিয়ে কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
২০২০
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার ভারী বৃষ্টি হতে পারে দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং হাওড়ার কিছু কিছু এলাকায়। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলা যেমন হুগলি, নদিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান এবং মুর্শিদাবাদে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে শনিবার পর্যন্ত। উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে থাকা মৎস্যজীবীদেরও সাগরে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।