Manager of Sushant Singh Rajput Disha Salian, whose father registered FIR to Mumbai police dgtl
Disha Salian Case
সত্যিই কি ১৪ তলা থেকে পড়ে মৃত্যু? সুশান্তের ম্যানেজারের মৃ্ত্যুতে বলি তারকা, ঠাকরে-পুত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ
বহুতল থেকে ঝাঁপ দিলে মাথার খুলি চৌচির হয়ে নাক-মুখ দিয়ে রক্তপাত হওয়ার কথা। মৃতা যেখানে পড়েছিলেন সেখানেও রক্ত জমে থাকার কথা ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনাস্থলে সে সব কিছুই দেখা যায়নি বলে দাবি। তা হলে প্রকৃত সত্য কী?
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫ ১৪:৪১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
চার বছর আগে মারা গিয়েছেন দিশা সালিয়ান। বলি অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের আপ্তসহায়ক হিসাবে কাজ করতেন তিনি। দিশার মৃত্যুর সপ্তাহখানেক পর মারা গিয়েছিলেন সুশান্ত। তাঁদের মৃত্যু নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি।
০২২৩
দীর্ঘ তদন্তের পর সিবিআই চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করে জানিয়েছিল, আত্মঘাতীই হয়েছিলেন সুশান্ত। তার আগে একই পথে হেঁটে গিয়েছিলেন দিশাও। কিন্তু কন্যার মৃত্যুর তদন্তপ্রক্রিয়া নিয়ে সন্তুষ্ট হয়নি দিশার পরিবার। তাতে সায় দিয়েছে সুশান্তের পরিবারও। সম্প্রতি মুম্বই পুলিশের কাছে নতুন করে তদন্তের দাবি চেয়েছেন তাঁরা। প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ থেকে একাধিক বলি তারকার বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
০৩২৩
২০২০ সালের ৮ জুন দিশা সালিয়ানের মৃত্যু হয়েছিল। মলাডের একটি বহুতলের ১৪ তলা থেকে পড়ে দিশার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হয়। ছয় দিন পর, সুশান্তকে তাঁর বান্দ্রার বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। সাত দিনের ব্যবধানে দু’জনের আকস্মিক মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছিল বলিপাড়া থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহলও।
০৪২৩
দিশার পিতা সতীশ সালিয়ান আবার তাঁর কন্যার মৃত্যুর তদন্ত শুরু করার আবেদন করেছেন। এমনকি সুশান্তের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করতে নতুন করে তদন্ত শুরু করার দাবি করেছেন সুশান্তের তুতো ভাই নীরজকুমার সিংহ বাবলুও।
০৫২৩
নীরজ বলেছেন, “অনেক দিন ধরেই আমরা নতুন করে তদন্তের দাবি করে চলেছি। এ বার সরকার বদলেছে। তাই এই তদন্ত নতুন করে শুরু করে সত্য প্রকাশ্যে আনার আর্জি রাখছি। দিশা সালিয়ানের বাবাও এ বার মুখ খুলেছেন। ওঁকে চাপ দিয়ে চুপ করিয়ে রাখা হয়েছিল।”
০৬২৩
দিশার মৃত্যুর রহস্য এখনও উদ্ঘাটিত হয়নি বলে দাবি সতীশের। তাঁর আইনজীবী নীলেশ ওঝা মঙ্গলবার মুম্বই পুলিশ কমিশনারের অফিসে জয়েন্ট সিপি (অপরাধ) লক্ষ্মী গৌতমের সঙ্গে দেখা করেন। দাবি করেন, দিশা আত্মহত্যা করেননি। তা হলে মৃতার দেহের চার পাশে রক্ত থাকত। সেটা ছিল না। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস অভিযুক্তেরা প্রত্যেকেই কোনও না কোনও ভাবে তাঁর মেয়ের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত।
০৭২৩
সতীশের যুক্তি, বহুতল থেকে ঝাঁপ দিলে মাথার খুলি চৌচির হয়ে নাক-মুখ দিয়ে রক্তপাত হওয়ার কথা। মৃতা যেখানে পড়েছিলেন সেখানেও রক্ত জমে থাকার কথা ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনাস্থলে সে সব কিছুই দেখা যায়নি। তা হলে প্রকৃত সত্য কী?
০৮২৩
দিশার মৃত্যু মামলার তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠনের দাবি জানিয়েছেন সতীশের আইনজীবী নীলেশ। তাঁর অভিযোগ, মুম্বইয়ের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার পরমবীর সিংহের প্রতি। সুশান্ত এবং দিশার মৃত্যুর ঘটনায় বার বার নাম জড়িয়েছিল উদ্ধব ঠাকরের পুত্র আদিত্য ঠাকরের।
০৯২৩
আইনজীবীর মতে, দিশার মৃত্যু ধামাচাপা দেওয়ার ক্ষেত্রে পরমবীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনিই অপরাধ গোপনের মূল চক্রী। এই প্রসঙ্গে তাঁর আরও অভিযোগ, পরমবীর সেই সময়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে আদিত্যের অপরাধ লঘু প্রমাণ করেছিলেন।
১০২৩
অন্য দিকে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো (এনসিবি)-এর একাধিক নথি আদিত্যের মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার প্রমাণ দিয়েছিল। এ কথাও তিনি লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমকে সতীশের আইনজীবী জানান, পুলিশ তাঁদের অভিযোগ গ্রহণ করেছে। সমস্ত অভিযোগ নতুন করে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে।
১১২৩
নতুন করে তদন্ত শুরু হওয়ার প্রাক্কালে উদ্ধব এবং আদিত্যকে নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করেন বিজেপি বিধায়ক নারায়ণ রাণে। সেই সময়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন উদ্ধব। তিনি নাকি বিজেপি বিধায়ককে ফোন করে অনুরোধ করেছিলেন যে, তাঁর পুত্রের নাম যেন এই মামলায় না জড়ানো হয়।
১২২৩
সম্প্রতি নারায়ণ বলেছেন, “উদ্ধব ঠাকরের আপ্তসহায়ক আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি তখন বাড়ি যাচ্ছিলাম। আমাকে ফোন করে তিনি বলেন, উদ্ধব ঠাকরে নাকি আমার সঙ্গে কথা বলতে চান।” এর পরে নাকি সরাসরি উদ্ধবের সঙ্গে কথা হয় বিজেপি বিধায়কের।
১৩২৩
নারায়ণের কথায়, “আদিত্য ঠাকরের নাম উল্লেখ না করার কথা বলেছিলেন উদ্ধব। আমি তখন বলেছিলাম, আমি আদিত্যের নাম নিইনি। আমি শুধু বলেছি, এক মন্ত্রী এই ঘটনায় জড়িয়ে রয়েছেন। সুশান্ত এবং দিশার যখন মৃত্যু হয়েছিল, সেই সময়ে আদিত্য এক জন মন্ত্রীই ছিলেন। সকলেই সমস্তটা জানতেন। প্রমাণও ছিল।”
১৪২৩
যদিও এই প্রসঙ্গে উদ্ধব ঠাকরে জানিয়েছেন, এই দু’টি মৃত্যুর সঙ্গে কোনও ভাবেই জড়িয়ে নেই আদিত্য। আদিত্যেরও দাবি, তাঁর ভাবমূ্র্তি নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে।
১৫২৩
উদ্ধব, আদিত্য এবং পরমবীরের পাশাপাশি নতুন করে মুম্বই থানায় সতীশ লিখিত অভিযোগ জানান বলি তারকা রিয়া চক্রবর্তী, দিনো মোরিয়া, সুরজ পাঞ্চোলির বিরুদ্ধে। তা ছাড়া সন্দেহের তির রয়েছে সুরজের নিরাপত্তারক্ষী, সচিন ভাজে-সহ একাধিক ব্যক্তির দিকে।
১৬২৩
সিবিআইয়ের দায়ের করা সুশান্তের মৃত্যু মামলায় নির্দোষ প্রমাণিত হতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন রিয়া। এমনকি বলিউডের একাধিক তারকাও জানিয়েছিলেন যে, তদন্ত চলাকালীন সকলে মিলে রিয়ার উপর যে ভাবে কটুবাক্য বর্ষণ করেছিলেন, সে কারণে রিয়ার কাছে ক্ষমা চাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু ফের তদন্তের দাবি জানানোয় ফের নতুন মোড় দেখা দিল।
১৭২৩
১৯৯২ সালে ২৬ মে মুম্বইয়ে জন্ম দিশার। মুম্বইয়ের দাদর পার্সি ইউথ অ্যাসেম্বলি হাই স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। ডব্লিউএ সায়েন্স কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন দিশা।
১৮২৩
২০১১ সাল থেকে কেরিয়ার শুরু হয়েছিল দিশার। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় নানা পদে কাজ করেছিলেন তিনি। পরে বিনোদন জগতে পা রেখেছিলেন।
১৯২৩
কেরিয়ারের গোড়ার দিকে একাধিক সংস্থায় ট্যালেন্ট ম্যানেজার হিসাবে কাজ করেছিলেন দিশা। ধীরে ধীরে পরিচিতি পাচ্ছিলেন তিনি। ভারতী সিংহ, বরুণ শর্মা-সহ বহু জনপ্রিয় তারকার সঙ্গে কাজ করেছিলেন তিনি।
২০২৩
সুশান্তের ম্যানেজার হিসাবে নিযুক্ত হয়ে আরও খ্যাতি পেয়েছিলেন দিশা। মুম্বইয়ের দাদরের একটি ফ্ল্যাটে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। টেলি অভিনেতা রোহন রাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন দিশা।
২১২৩
২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘পিয়া আলবেলা’ ধারাবাহিকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল রোহনকে। দিশার মৃত্যু সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে রোহন জানিয়েছিলেন, মলাডের একটি ফ্ল্যাটে বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করছিলেন তাঁরা। দিশা নিজের পানীয়ের মধ্যে কিছু মিশিয়ে নিয়েছিলেন। ফলে নেশা হয়ে গিয়েছিল দিশার।
২২২৩
রোহন বলেছিলেন, ‘‘দিশা খুব সংবেদনশীল। পার্টি চলাকালীন ইংল্যান্ডের এক বন্ধুকে ফোন করেছিল ও। তার পরেই চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়। দিশার কাছে ফোন নিয়ে আমি ওর বন্ধুর সঙ্গে কথা বলা শুরু করি। তখনই দিশা বেডরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।’’
২৩২৩
বেডরুমের দরজা ভিতর থেকে আটকানো না থাকায় ঘরের ভিতর ঢুকেছিলেন বলেও দাবি রোহনের। ঘরে ঢুকে তিনি দেখেছিলেন, বিছানায় মদ ছড়ানো রয়েছে। কিন্তু ঘরের কোথাও দিশাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তাঁরা ফ্ল্যাটের নীচে দিশার দেহ দেখতে পেয়েছিলেন।