Man cycled for four months from India to Sweden to meet his Swedish wife dgtl
Love Story
প্রেমের টান! স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চার মাস সাইকেল চালিয়ে সুইডেন যান দিল্লির তরুণ
প্রদ্যুম্নের আঁকার প্রশংসা শুনেছিলেন সুইডেনের শার্লট ভন স্কেডভিন। ১৯ বছরের ছাত্রী শার্লট তখন প্রদ্যুম্নের শিল্পে মুগ্ধ। কী ভাবে তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন, তা ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছিলেন না শার্লট।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৩ ১১:২৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
প্রায় পাঁচ দশক আগেকার ঘটনা। শিল্পের প্রেমে পড়ে সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করে ভারতে এসেছিলেন ইউরোপের এক তরুণী। কিন্তু ভারতে এসে শিল্পীর প্রেমে পড়ে গেলেন তিনি। ভালবেসে সাত পাকে বাঁধাও পড়লেন তাঁরা।
০২১৭
তবে ভাগ্যের পরিহাস! আবার দু’জনকে আলাদা হয়ে যেতে হয়। সুইডেনে নিজের বাড়িতে ফিরে যান নববধূ। ‘আবার দেখা হবে’, জীবনসঙ্গীর এইটুকু প্রতিশ্রুতি নিয়ে এক বছরেরও বেশি সময় তিনি একাই ছিলেন সুইডেনে।
০৩১৭
অবশেষে তাঁর জীবনসঙ্গী দেখা করতে এলেন। চার মাস ধরে সাইকেল চালিয়ে ভারত থেকে সুইডেনে স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন দিল্লির বাসিন্দা প্রদ্যুম্নকুমার মহানন্দিয়া। পেশায় এক জন শিল্পী তিনি।
০৪১৭
প্রদ্যুম্নের আঁকার প্রশংসা শুনেছিলেন সুইডেনের শার্লট ভন স্কেডভিন। ১৯ বছরের ছাত্রী শার্লট তখন প্রদ্যুম্নের শিল্পে মুগ্ধ। কী ভাবে তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন তা ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছিলেন না শার্লট। ভারত এবং সুইডেনের মধ্যে দূরত্ব তো নেহাত কম নয়।
০৫১৭
তবুও শিল্পের টানে ভারত সফরের সিদ্ধান্ত নিলেন শার্লট। ভ্যানে চেপে ২২ দিনের যাত্রা শেষে ভারতে পৌঁছলেন তিনি। ১৯৭৫ সালে নয়াদিল্লিতে প্রদ্যুম্নের সঙ্গে দেখাও করেন তিনি।
০৬১৭
শিল্পের পাশাপাশি শিল্পীরও প্রেমে পড়ে যান শার্লট। প্রদ্যুম্নের কাছে হঠাৎ অনুরোধ করে বসলেন, তাঁর ছবি এঁকে দিতে হবে। গুণমুদ্ধ তরুণীর অনুরোধ ফেরাতে পারেননি প্রদ্যুম্ন। কারণ তিনিও শার্লটের সারল্য দেখামাত্রই তাঁকে ভালবেসে ফেলেছিলেন।
০৭১৭
ভালবাসার কথা স্বীকার করেন দু’জনই। সাত পাকে বাঁধাও পড়েন শার্লট এবং প্রদ্যুম্ন। কিন্তু বিশেষ কারণে এক ছাদের তলায় থাকার মতো পরিস্থিতি ছিল না তাঁদের।
০৮১৭
প্রদ্যুম্নকে সুইডেন যেতে বলেছিলেন শার্লট। যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সেই সময় শার্লটের হাত ধরতে পারেননি প্রদ্যুম্ন। ভারতে তখনও পড়াশোনা করছিলেন তিনি। তাই পড়াশোনা মাঝপথে ছেড়ে সুইডেন যেতে চাননি প্রদ্যুম্ন।
০৯১৭
তবে শার্লটকে কথা দিয়েছিলেন, এক দিন ঠিক সুইডেনে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন প্রদ্যুম্ন। জীবনসঙ্গীর অপেক্ষায় দিন গুনতে গুনতে পেরিয়ে যায় এক বছরেরও বেশি সময়।
১০১৭
অবশেষে অপেক্ষার অবসান হয়। পড়াশোনা শেষ হলে সুইডেন যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন প্রদ্যুম্ন। কিন্তু তাঁর কাছে বিমানের টিকিট কাটার জন্য যথেষ্ট অর্থ ছিল না।
১১১৭
মনের মানুষকে যে কথা দিয়েছেন, তা ফিরিয়ে নিতে মোটেও রাজি ছিলেন না প্রদ্যুম্ন। তাই নিজের সর্বস্ব বিক্রি করে সুইডেন যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিনে ফেলেন একটি সাইকেলও।
১২১৭
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রদ্যুম্ন জানান, একটানা চার মাস তিন সপ্তাহ সাইকেল চালিয়ে ভারত থেকে ইউরোপে গিয়েছিলেন তিনি। প্রদ্যুম্ন বলেন, ‘‘১৯৭৭ সালে ২২ জানুয়ারি ভারত থেকে আমি যাত্রা শুরু করেছিলাম। রোজ প্রায় ৭০ কিলোমিটার রাস্তা সাইকেল চালিয়ে গিয়েছি।’’
১৩১৭
পথে বহু বাধাবিপত্তির মুখে পড়েছিলেন প্রদ্যুম্ন। সে কথাও সাক্ষাৎকারে জানাতে ভোলেননি তিনি। প্রদ্যুম্ন বলেন, ‘‘এমন বহু দিন গিয়েছে যখন মাঝরাস্তায় সাইকেল খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কী করব কোনও দিশা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আবার বহু দিন এমন হয়েছে যে, মুখে কোনও খাবার কাটিনি আমি। না খেয়ে একটানা সাইকেল চালিয়ে গিয়েছি।’’
১৪১৭
প্রদ্যুম্ন জানান, ১৯৭৭ সালের ২৮ মে তিনি সুইডেন পৌঁছন। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, তুরস্ক, ইস্তানবুল এবং ভিয়েনা পার করে তিনি গোথেনবার্গে যান। সেখান থেকে ট্রেনে চেপে সুইডেনের বোরাস শহরে পৌঁছন।
১৫১৭
সাক্ষাৎকারে প্রদ্যুম্ন বলেন, ‘‘শার্লট যখন আমার বাড়ির লোকের সঙ্গে প্রথম দেখা করতে এসেছিল, তখন শাড়ি পরেছিল। আমি জানি না কী ভাবে ও সব সামলেছিল।’’ ভারতে বিয়ে হওয়ার পরেও সুইডেন যাওয়ার পর আবার শার্লটকে বিয়ে করেছিলেন প্রদ্যুম্ন।
১৬১৭
প্রদ্যুম্নের মতে, ১৯৭৫ সালে তিনি ঠিক যতটা ভালবাসতেন, আজও শার্লটকে ঠিক ততটাই ভালবাসেন তিনি। জীবনসঙ্গীর জন্য ভালবাসা একচুলও কমেনি তাঁর। বিয়ের পর ভারত থেকে সুইডেনে নিয়মিত স্ত্রীকে চিঠি লিখে পাঠাতেন প্রদ্যুম্ন।
১৭১৭
প্রদ্যুম্ন জানান, সুইডেন গিয়ে নতুন জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছিল প্রদ্যুম্নের। কিন্তু শার্লট প্রতি মুহূর্তে তাঁর পাশে ছিলেন। বর্তমানে স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে সুইডেনেই রয়েছেন প্রদ্যুম্ন। সেখানেই নিজের শিল্প নিয়ে ব্যস্ত তিনি।