Maldives oppositions are demanding removal of President Mohamed Muizzu as he travels to China amid India Row dgtl
India-Maldives Row
চিনের সঙ্গে বন্ধুত্বই কি কাল হল? হাজারো ভারতীয়ের সফর বাতিলে এ বার আতঙ্কে মলদ্বীপ
মলদ্বীপের নেতা মন্ত্রীদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, ভারতকে চটিয়ে চরম বোকামি করেছে মলদ্বীপ। কারণ, ভারত শুধু পর্যটনের জোগান দেয় তা-ই নয়, যে কোনও প্রয়োজনেও মলদ্বীপ সবার আগে পাশেও পেয়েছে ভারতকেই।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:০৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
বছর খানেক আগেও ভারতীয় তারকাদের উইকেন্ড ডেস্টিনেশন ছিল বাড়ির কাছের ‘বিদেশ’ মলদ্বীপ।
০২২২
সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা তো বটেই, ক্রিকেট তারকারাও পরিবার, স্ত্রী কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকাকে সঙ্গে নিয়ে সময় কাটাতে চলে আসতেন মলদ্বীপের সাদা বালি আর নীলজলের চোখ জুড়নো সৈকতে।
০৩২২
তারকাদের দেখাদেখি ভক্তদের ভিড়ও বাড়ত। ফুলে ফেঁপে উঠত ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রের অর্থনীতি। তৈরি হত হাজারো কর্মসংস্থান। কিন্তু সম্প্রতি মলদ্বীপ সেই সোনার ডিম দেওয়া হাঁসটিকেই ‘জবাই’ করেছে! অন্তত তেমনই মনে করছেন দ্বীপরাষ্ট্রের নেতা-মন্ত্রীরা।
০৪২২
মালদ্বীপের সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিক বৈরিতার জন্য তাঁরা দায়ী করছেন দেশের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ়ুকে। তাঁকে অবিলম্বে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অপসারণের দাবি তুলেছেন ওই দেশেরই এক সাংসদ আলি আজিম।
০৫২২
মলদ্বীপের প্রধান বিরোধী দল এমডিপিকে তিনি অনুরোধ করেছেন অবিলম্বে মুইজুকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অপসারণের জন্য অনাস্থা প্রস্তাব আনতে।
০৬২২
উল্লেখ্য, মলদ্বীপের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মুইজ়ু হলেন পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেসের (পিএনসি) সদস্য। নভেম্বরেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। হারিয়ে দিয়েছেন দেশের পূর্বতন ক্ষমতাসীন দল মলদ্বীপ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এমডিপি)-র ইব্রাহিম মোহম্মদ সোলিনকে। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এমডিপি হারলেও দেশের পার্লামেন্টে এখনও তাদেরই সংখ্যাধিক্য। মালদ্বীপের পার্লামেন্টারি নির্বাচন হওয়ার কথা ২০২৪ সালেই।
০৭২২
এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট মুইজ়ুর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হলে তাতে প্রেসিডেন্ট বিরোধী ভোট পড়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে কি ভারতের সঙ্গে ‘শত্রুতা’ই কাল হল মলদ্বীপের প্রেসিডেন্টের?
০৮২২
মলদ্বীপের নেতা মন্ত্রীদের একটা বড় অংশ অন্তত তেমনই মনে করছেন। তাঁরা বলছেন, ভারতকে চটিয়ে চরম বোকামি করেছে মলদ্বীপ। কারণ, ভারত শুধু মলদ্বীপে পর্যটনের জোগান দেয় তা-ই নয়, মলদ্বীপের নেতামন্ত্রীরা বলেছেন, ‘‘ভারত হল মলদ্বীপের আপৎকালীন হেল্পলাইন নম্বর।’’ যে কোনও প্রয়োজনেও যে দেশকে মলদ্বীপ সবার আগে পাশে পায় সে হল ভারত।
০৯২২
ভারতের সঙ্গে মলদ্বীপের পুরনো সম্পর্কের কথা মনে করিয়ে দিয়ে সে দেশের প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মারিয়া আহমেদ দিদি বলেছেন, ‘‘মলদ্বীপের বরাবরের নীতি ছিল, ‘সবার আগে ভারত’। সেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করে অত্যন্ত নির্বুদ্ধিতা এবং অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে মলদ্বীপের বর্তমান সরকার।’’
১০২২
মুইজ়ুর অপসারণ চেয়ে বিরোধী এমডিপির আর এক নেতা আহমেদ মাহলুফ বলেছেন, ‘‘মলদ্বীপ-ভারত সম্পর্কের অবনতির ফলে খুব শীঘ্রই দেশে অর্থনৈতিক সঙ্কট শুরু হতে পারে। আমার আশঙ্কা, সেই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানো খুব একটা সহজ হবে না।’’
১১২২
মাহলুফের মন্তব্য যে খুব একটা ভুল নয়, তার প্রমাণ গত চার-পাঁচ দিনেই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে মলদ্বীপ। এই ক’দিনের মধ্যেই মলদ্বীপে ১৪ হাজার ভারতীয়ের হোটেল বুকিং বাতিল হয়েছে। আগামী দিনে যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন দ্বীপরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদের।
১২২২
সমাজমাধ্যমে এখনও ‘বয়কট মলদ্বীপ’ স্লোগান জোড়দার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে লক্ষ্য করে মলদ্বীপের এক মন্ত্রীর কুমন্তব্যের পর থেকেই এই স্লোগানে ছেয়ে গিয়েছে ভারতীয় সমাজমাধ্যম। মোদীকে ‘জোকার’ এবং ‘ইজ়রায়েলের হাতের পুতুল’ বলে মন্তব্য করেছিলেন মলদ্বীপের ওই মন্ত্রী। এ ছাড়াও আরও দুই মন্ত্রী ভারতের সংস্কৃতি নিয়ে কু-মন্তব্য করেন।
১৩২২
এক্স হ্যান্ডলে করা ওই মন্তব্য তিন জনই পরে ডিলিট করতে বাধ্য হন। মন্ত্রিসভা থেকে সাসপেন্ডও করা হয় তিন মন্ত্রীকে। কিন্তু তত ক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। ভারতীয়রা চটেছে প্রিয় ছুটি কাটানোর জায়গা মলদ্বীপের উপর।
১৪২২
গত ২-৩ জানুয়ারি ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ লক্ষদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন মোদী। ৪ জানুয়ারি তিনি সেই সফরের ছবি পোস্ট করেন সমাজমাধ্যমে তার পরেই আচমকা মলদ্বীপ থেকে উড়ে আসে এই আক্রমণের তির।
১৫২২
এর পরেই ভারতে শুরু হয় মলদ্বীপ-বিরোধী এবং লক্ষদ্বীপ পন্থী পর্যটন প্রচার। দেশের তারকারাই মলদ্বীপে না গিয়ে দেশের নিজস্ব দ্বীপ সৈকতগুলিতে পর্যটনের কথা বলতে শুরু করেন। তাতেই প্রমাদ গোনে মলদ্বীপ।
১৬২২
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই লড়াইয়ের আসল শুরু মোদীর লক্ষদ্বীপ সফর নয়। আসলে মলদ্বীপের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মুইজ়ুর ‘অতি চিন প্রীতি’ই এর কারণ হতে পারে।
১৭২২
মুইজ়ু বরাবরই পরিচিত চিনপন্থী বলে। তবে চিনের প্রতি তাঁর আনুগত্য কতখানি, তার প্রমাণ মিলেছে সম্প্রতিই। ভারত-মলদ্বীপ সম্পর্কের অবনতি নিয়ে যখন দেশে গেল গেল রব উঠেছে, তখন মুইজ়ু পৌঁছে গিয়েছেন চিনে।
১৮২২
সোমবার থেকে শুরু হওয়া সেই সফর চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। পাঁচ দিনের এই সফরে চিন এবং মলদ্বীপের মধ্যে স্বাক্ষর হবে অনেকগুলি উন্নয়ন চুক্তি।
১৯২২
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে চিন সরকার ভারতীয় সীমান্তে নানা রকম সমস্যা তৈরি করে চলেছে এবং তাদের সঙ্গে মলদ্বীপের এই অতি বন্ধুত্বকে ভাল চোখে দেখেনি ভারত।
২০২২
অনেকে এমনও বলছেন, মলদ্বীপকে চাপে রাখতেই লক্ষদ্বীপের সাদা বালি আর নীল জলের সৈকতে নিজের ছবি দিয়ে পর্যটনের প্রচার করেছেন মোদী। তবে এ সবই রাজনৈতিক জল্পনা।
২১২২
মলদ্বীপের এই কাণ্ড নিয়ে রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠানো ছাড়া ভারত প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্যই করেনি। উল্টে মলদ্বীপকে ক্ষমা চাইতে বলা হবে কি না জানতে চাওয়া হলে বিদেশ মন্ত্রক উড়িয়ে দিয়েছেন সেই সম্ভাবনা।
২২২২
আর তাতেই আরও ভয় পেয়েছে মলদ্বীপের নেতা মন্ত্রীরা। দেশের অর্থনীতির বড় উৎস পর্যটন শিল্পের অনেকটাই নির্ভরশীল ভারতের উপর। সেই ভারতের এমন চুপ করে যাওয়া কি ঝড়ের আগের স্তব্ধতা?