Lesser known facts about Gangster turned politician Mukhtar Ansari dgtl
Mukhtar Ansari Death
ঠাকুরদা ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি, ‘মহাবীর চক্র’ পান দাদু! কী ভাবে উত্তরপ্রদেশের ত্রাস হয়ে ওঠেন মুখতার?
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় জেলবন্দি মুখতারকে গাজিপুরের বান্দা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৩:৩৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১৩০
বৃহস্পতিবার মৃত্যু হয়েছে উত্তরপ্রদেশের বাহুবলী রাজনীতিবিদ তথা ‘গ্যাংস্টার’ মুখতার আনসারির। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। বিভিন্ন মামলায় দীর্ঘ দিন জেলে বন্দি ছিলেন মুখতার।
০২৩০
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় জেলবন্দি মুখতারকে বান্দা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। গত মঙ্গলবারও পেটের যন্ত্রণায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল মুখতারকে।
০৩৩০
তবে মুখতারের পরিবারের অভিযোগ, জেলের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিষ প্রয়োগ করে মেরে ফেলা হয়েছে তাঁকে।
০৪৩০
১৯৬৩ সালের ৩০ জুন উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরে মুখতারের জন্ম। তাঁর ঠাকুরদা মুখতার আহমদ আনসারি ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি। মুখতারেরা হেরাতের সুফি সাধক আবদুল্লা আনসারির বংশধর বলে মনে করা হয়।
০৫৩০
মুখতারের অন্য এক দাদু মহম্মদ উসমান ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ চলাকালীন ১৯৪৮ সালের ৩ জুলাই কাশ্মীরের নওশেরায় মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৩৫ বছর। বীরত্ব এবং সাহসিকতার জন্য উসমানকে মরণোত্তর ‘মহাবীর চক্র’ দেওয়া হয়েছিল।
০৬৩০
১৯৭০ সালের গোড়ার দিকে তৎকালীন সরকার পূর্বাঞ্চল এলাকায় বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প চালু করেছিল। সেই সব প্রকল্পের চুক্তি পেতে সেই সময় বেশ কয়েকটি সংগঠিত গোষ্ঠীর উত্থান ঘটে। সরকারি প্রকল্পের চুক্তি হাতের মুঠোয় রাখতে সেই সব গোষ্ঠীগুলি মাঝেমধ্যেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ত।
০৭৩০
শোনা যায়, সেই সময় মাখানু সিংহ দলের সদস্য ছিলেন মুখতার। আশির দশকে সৈয়দপুরে একটি জমি নিয়ে সাহিব সিংহের দলের সঙ্গে একাধিক বার সংঘর্ষ বাধে মাখানু সিংহের দলের।
০৮৩০
সাহেব সিংহ গ্যাংয়ের সদস্য ব্রিজেশ সিংহ পরে নিজস্ব গ্যাং তৈরি করেন এবং নব্বইয়ের দশকে গাজিপুরের ঠিকা শ্রমিকদের নিয়ে মাফিয়ারাজ চালাতে থাকেন। অন্য দিকে, মুখতারের গ্যাং ১০০ কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পের চুক্তি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্রিজেশের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিচ্ছিলেন।
০৯৩০
মূলত কয়লাখনি, রেলপথ নির্মাণ, লোহা ভাঙার কাজ এবং মদের ব্যবসার দখল নিয়ে দুই দলের দ্বন্দ্ব ছিল। অপহরণ এবং তোলাবাজির অভিযোগও ওঠে ওই দলগুলির বিরুদ্ধে।
১০৩০
নব্বইয়ের দশকের গোড়া থেকে মাউ, গাজিপুর, বারাণসী, জৌনপুর এবং তদ্সংলগ্ন এলাকার ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন মুখতার। কুখ্যাত অপরাধী হিসাবে তাঁর প্রভাব বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছিল সমগ্র উত্তরপ্রদেশ জু়ড়ে।
১১৩০
১৯৯৫ সালে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে মুখতার সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৯৬ সালে প্রথম বার বিধায়ক হয়ে ব্রিজেশ সিংহ গ্যাংয়ের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেন। পূর্বাঞ্চলে তখন এই দু’টি প্রতিদ্বন্দ্বী দলেরই প্রভাব ছিল।
১২৩০
২০০২ সালে মুখতারের গাড়িতে অতর্কিত হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে ব্রিজেশের দলের বিরুদ্ধে। এর ফলে মুখতারের তিন সহযোগীর মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত হন ব্রিজেশ। তাঁকে মৃত বলে ধরে নেওয়া হয়। পরে জানা যায় যে, তিনি বেঁচে আছেন।
১৩৩০
ব্রিজেশের সক্রিয়তা কমার কারণে পূর্বাঞ্চলের একমেবাদ্বিতীয়ম হয়ে ওঠে মুখতারের গ্যাং। মুখতারের রাজনৈতিক প্রভাবের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য বিজেপি নেতা কৃষ্ণানন্দ রাইয়ের হাত ধরেন ব্রিজেশ।
১৪৩০
২০০২ সালের উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে মুখতারের দাদা তথা পাঁচ বারের বিধায়ক আফজল আনসারিকে মহম্মদবাদ থেকে পরাজিত করেন কৃষ্ণানন্দ।
১৫৩০
মুখতারের অভিযোগ ছিল, রাজনৈতিক পদের অপব্যবহার করে ব্রিজেশ গ্যাংকে সমস্ত সরকারি চুক্তি পাইয়ে দিচ্ছেন কৃষ্ণানন্দ।
১৬৩০
বিধানসভা নির্বাচনে গাজিপুর-মাউ এলাকায় জয় সুনিশ্চিত করতে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ককে পুঁজি করেছিলেন মুখতার। সেই সময় ওই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি হিংসার ঘটনা ঘটে। সেই সব হিংসার ঘটনায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে মুখতারের বিরুদ্ধে।
১৭৩০
২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর কৃষ্ণানন্দ এবং তাঁর ছয় সহযোগীকে জনসমক্ষে গুলি করে খুন করা হয়। হামলাকারীরা ছ’টি একে-৪৭ রাইফেল থেকে ৪০০ রাউন্ডের বেশি গুলি ছোড়েন তাঁদের লক্ষ্য করে। সাতটি দেহ থেকে ৬৭টি বুলেট উদ্ধার করা হয়েছিল।
১৮৩০
সেই হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছিল মুখতারের বিরুদ্ধে। ২০০৬ সালে এই মামলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী শশীকান্ত রাইয়ের রহস্যমৃত্যু হয়। তিনি হামলাকারীদের মধ্যে দু’জনকে চিহ্নিত করেছিলেন। যদিও পুলিশের দাবি ছিল, শশীকান্ত আত্মহত্যা করেছিলেন।
১৯৩০
কৃষ্ণানন্দের মৃত্যুর পর গাজিপুর-মাউ এলাকা থেকে পালিয়ে যান ব্রিজেশ। পরে ২০০৮ সালে ওড়িশায় গ্রেফতার হন। পরবর্তী কালে প্রগতিশীল মানব সমাজ পার্টির সদস্য হিসাবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
২০৩০
মাউ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে পাঁচ বার বিধায়ক হন মুখতার। তার মধ্যে বহুজন সমাজ পার্টির প্রার্থী হিসাবে দু’বার জয়ী হয়েছিলেন তিনি।
২১৩০
মুখতার এবং তাঁর দাদা আফজল ২০০৭ সালে বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি)-তে যোগ দেন। বিএসপি প্রধান মায়াবতী সেই সময় মুখতারকে ‘গরিবদের ত্রাতা রবিন হুড’ হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন।
২২৩০
২০০৯ সালে জেলে থাকাকালীন লোকসভা নির্বাচনে বারাণসী থেকে বিএসপির টিকিটে লড়েছিলেন মুখতার। বিজেপির মুরলীমনোহর জোশীর কাছে ১৭ হাজারের সামান্য বেশি ভোটে হেরে যান তিনি।
২৩৩০
অপরাধ জগতের সঙ্গে আঁতাঁত থাকার অভিযোগে ২০১০ সালে মুখতার এবং তাঁর দাদা আফজলকে বিএসপি বহিষ্কার করে।
২৪৩০
ওই বছরই মুখতার এবং তাঁর দুই দাদা মিলে ‘কাওয়ামি একতা দল’ তৈরি করেন। তবে ২০১৬ সালে মুখতার আবার বিএসপিতে ফিরে যান।
২৫৩০
২০০৫ সাল থেকে উত্তরপ্রদেশ এবং পঞ্জাবের জেলে বন্দি ছিলেন মুখতার। কংগ্রেস নেতা অবধেশ রাই হত্যা মামলায় অভিযুক্ত মুখতারকে পঞ্জাবের জেল থেকে নিয়ে আসতে চেয়ে উত্তরপ্রদেশ সরকারের করা আর্জি ২০২১ সালে মঞ্জুর করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। তাঁর বিরুদ্ধে ৬০টিরও বেশি ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন ছিল।
২৬৩০
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন আদালতে আটটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বান্দা জেলে বন্দি ছিলেন মুখতার। ২০২৩ সালের এপ্রিলে বিজেপি বিধায়ক কৃষ্ণানন্দকে খুনের মামলাতেও দোষী সাব্যস্ত হন মুখতার। সেই মামলায় তাঁকে ১০ বছরের সাজা শোনানো হয়।
২৭৩০
এর পর চলতি মাসে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স জালিয়াতির মামলাতেও তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ গত বছর যে ৬৬ জন গ্যাংস্টারের তালিকা প্রকাশ করেছিল, তাতেও নাম ছিল মুখতারের।
২৮৩০
এক সময় অভিযোগ উঠেছিল, জেলে বসেই সাম্রাজ্য চালাচ্ছেন মুখতার। বিএসপি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর গাজিপুর কারাগারে একটি অভিযান চলাকালীন মুখতারের কুঠুরি থেকে এয়ার কুলার এবং রান্নার সরঞ্জাম পাওয়া যায়। এর পরেই তাঁকে মথুরা কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।
২৯৩০
মুখতারের স্ত্রীর নাম আফসা। ২০২৩ সালে তাঁর বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিসও জারি করা হয়। অভিযোগ ছিল মুখতার জেলে যাওয়ার পর তাঁর সব ব্যবসা আফসা সামলাচ্ছিলেন।
৩০৩০
মুখতারের দুই সন্তান। তার মধ্যে অর্থ পাচার এবং অন্যান্য বেআইনি কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁর জেষ্ঠ্য সন্তান আব্বাস আনসারিকে গ্রেফতার করেছে ইডি। বাবার মতোই তিনিও মাউ বিধানসভার বিধায়ক। ২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে জিতে তিনি বিধায়ক হন।