Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Punam Rai

Punam Rai: তিন তলা থেকে ফেলে দিয়েছিলেন স্বামী, ১৫ বছর শয্যাশায়ী পুনম এখন তিন হাজার মেয়ের প্রেরণা

১৯৯৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে পাশের ঘরে শুইয়ে এসে সে দিন মুখ খুলেছিলেন তিনি।

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২১ ১৪:৪৫
Share: Save:
০১ ১১
দিনটা আজও স্পষ্ট মনে রয়েছে পুনম রাইয়ের। ১৯৯৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। রোজকারের মতোই শ্বশুরবাড়ির লোকেদের কটূক্তি শুনে যাচ্ছিলেন তিনি। কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ায় গত দু’মাস ধরে এ ভাবেই দিন কাটছিল পুনমের। মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে পাশের ঘরে শুইয়ে এসে সে দিন মুখ খুলেছিলেন তিনি। স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। সব চেষ্টাই বৃথা হয়েছিল। সেই রাত তাঁর কাছে আজও এক ভয়ানক স্মৃতি।

দিনটা আজও স্পষ্ট মনে রয়েছে পুনম রাইয়ের। ১৯৯৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। রোজকারের মতোই শ্বশুরবাড়ির লোকেদের কটূক্তি শুনে যাচ্ছিলেন তিনি। কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ায় গত দু’মাস ধরে এ ভাবেই দিন কাটছিল পুনমের। মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে পাশের ঘরে শুইয়ে এসে সে দিন মুখ খুলেছিলেন তিনি। স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। সব চেষ্টাই বৃথা হয়েছিল। সেই রাত তাঁর কাছে আজও এক ভয়ানক স্মৃতি।

০২ ১১
কথা কাটাকাটির পর তিন তলার ব্যালকনি থেকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল সে রাতে। শ্বশুর-শাশুড়ির উস্কানিতে স্বামী টেনে হিঁচড়ে নিয়ে এসে তিন তলা থেকে নীচে ফেলে দিয়েছিলেন তাঁকে।

কথা কাটাকাটির পর তিন তলার ব্যালকনি থেকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল সে রাতে। শ্বশুর-শাশুড়ির উস্কানিতে স্বামী টেনে হিঁচড়ে নিয়ে এসে তিন তলা থেকে নীচে ফেলে দিয়েছিলেন তাঁকে।

০৩ ১১
তার পর আর কিছু মনে ছিল না তাঁর। কয়েক দিন পর পুনমের যখন জ্ঞান ফিরেছিল, শরীরে কোনও সাড় ছিল না। শুধু চোখের পাতাটুকুই নাড়াতে পারতেন তিনি। চোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝরে পড়ত। কোমায় চলে গিয়েছিলেন।

তার পর আর কিছু মনে ছিল না তাঁর। কয়েক দিন পর পুনমের যখন জ্ঞান ফিরেছিল, শরীরে কোনও সাড় ছিল না। শুধু চোখের পাতাটুকুই নাড়াতে পারতেন তিনি। চোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝরে পড়ত। কোমায় চলে গিয়েছিলেন।

০৪ ১১
এ ভাবে পরের ১৫টি বছর শয্যাশায়ী হয়েই কাটে তাঁর। হাঁটাচলার সমস্ত আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরাও। আশা ছাড়েননি পুনম। নিজের সন্তানের জন্য বাঁচার জেদ, সুস্থ হয়ে ওঠার জেদের জোরেই আজ তিনি এক জন শিক্ষিকা। নিজের একটি বেসরকারি সংস্থা খুলেছেন। সেখানে পিছিয়ে পড়া, নির্যাতনের শিকার হওয়া মেয়েদের আত্মরক্ষার পাঠ দেন।

এ ভাবে পরের ১৫টি বছর শয্যাশায়ী হয়েই কাটে তাঁর। হাঁটাচলার সমস্ত আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরাও। আশা ছাড়েননি পুনম। নিজের সন্তানের জন্য বাঁচার জেদ, সুস্থ হয়ে ওঠার জেদের জোরেই আজ তিনি এক জন শিক্ষিকা। নিজের একটি বেসরকারি সংস্থা খুলেছেন। সেখানে পিছিয়ে পড়া, নির্যাতনের শিকার হওয়া মেয়েদের আত্মরক্ষার পাঠ দেন।

০৫ ১১
কঠিন সময়ে পুনমের বাবা ছিলেন তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি। কিন্তু ২০১৪ সালে বাবার মৃত্যু হয়। বাবার স্মৃতিতেই বিন্দেশ্বর রাই ফাউন্ডেশন গড়ে তোলেন পুনম।

কঠিন সময়ে পুনমের বাবা ছিলেন তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি। কিন্তু ২০১৪ সালে বাবার মৃত্যু হয়। বাবার স্মৃতিতেই বিন্দেশ্বর রাই ফাউন্ডেশন গড়ে তোলেন পুনম।

০৬ ১১
অথচ জীবনকে একটু অন্যভাবেই এঁকেছিলেন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের পেন্টিং নিয়ে স্নাতক পুনম। ছোট থেকে মা-বাবা কখনও তাঁর এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে পার্থক্য করেননি। সেই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই বিহারে বেড়ে ওঠা পুনমের। স্নাতক হওয়ার পর এক পিডব্লিউডি ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন বাবা।

অথচ জীবনকে একটু অন্যভাবেই এঁকেছিলেন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের পেন্টিং নিয়ে স্নাতক পুনম। ছোট থেকে মা-বাবা কখনও তাঁর এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে পার্থক্য করেননি। সেই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই বিহারে বেড়ে ওঠা পুনমের। স্নাতক হওয়ার পর এক পিডব্লিউডি ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন বাবা।

০৭ ১১
শিক্ষিত পরিবার। ভেবেছিলেন মানসিকতাও সে রকমই হবে। কিন্তু বিয়ের এক সপ্তাহের মধ্যেই পুনম জানতে পারেন, তাঁর স্বামী স্কুলের গণ্ডি পার হয়নি। মোটা টাকা পণ নিতে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজন। বিশ্বাস করে ট্রাক বোঝাই করে মেয়েকে জিনিস দিয়েছিলেন পুনমের বাবাও। সত্যি জানার পরই পুনম বাপের বাড়ি চলে এসেছিলেন। কিন্তু মাস খানের পর জানতে পারেন তিনি অন্তঃসত্ত্বা। এই খবর পেয়ে ক্ষমা চেয়ে স্বামী তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।

শিক্ষিত পরিবার। ভেবেছিলেন মানসিকতাও সে রকমই হবে। কিন্তু বিয়ের এক সপ্তাহের মধ্যেই পুনম জানতে পারেন, তাঁর স্বামী স্কুলের গণ্ডি পার হয়নি। মোটা টাকা পণ নিতে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজন। বিশ্বাস করে ট্রাক বোঝাই করে মেয়েকে জিনিস দিয়েছিলেন পুনমের বাবাও। সত্যি জানার পরই পুনম বাপের বাড়ি চলে এসেছিলেন। কিন্তু মাস খানের পর জানতে পারেন তিনি অন্তঃসত্ত্বা। এই খবর পেয়ে ক্ষমা চেয়ে স্বামী তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।

০৮ ১১
শ্বশুরবাড়ির মুখোশ খুলে যায় পুনমের সন্তান জন্মানোর পরই। কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। তারপর থেকেই উঠতে বসতে মানসিক এবং কখনও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাঁকে। সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদ করাতে সেই রাতে তাঁকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।

শ্বশুরবাড়ির মুখোশ খুলে যায় পুনমের সন্তান জন্মানোর পরই। কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। তারপর থেকেই উঠতে বসতে মানসিক এবং কখনও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাঁকে। সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদ করাতে সেই রাতে তাঁকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।

০৯ ১১
পুনমের বয়স তখন মাত্র ২২। মেরুদণ্ড প্রায় গুড়িয়ে গিয়েছিল। ফিজিওথেরাপির সাহায্যে ১৫ বছর ধরে একটু একটু করে শরীরের সাড় ফিরে পেয়েছেন তিনি।

পুনমের বয়স তখন মাত্র ২২। মেরুদণ্ড প্রায় গুড়িয়ে গিয়েছিল। ফিজিওথেরাপির সাহায্যে ১৫ বছর ধরে একটু একটু করে শরীরের সাড় ফিরে পেয়েছেন তিনি।

১০ ১১
প্রথম প্রথম নিজের সংস্থায় ছাত্রীদের নিজে হাতে আঁকা শেখাতেন শুধু। তাইকোন্ড শেখানোর জন্য একজন শিক্ষক রেখেছিলেন তিনি। ২০১৬ সালে পুনম নিজেও আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ নেন। নিজেও ছাত্রীদের আত্মরক্ষার পাঠ দেন।

প্রথম প্রথম নিজের সংস্থায় ছাত্রীদের নিজে হাতে আঁকা শেখাতেন শুধু। তাইকোন্ড শেখানোর জন্য একজন শিক্ষক রেখেছিলেন তিনি। ২০১৬ সালে পুনম নিজেও আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ নেন। নিজেও ছাত্রীদের আত্মরক্ষার পাঠ দেন।

১১ ১১
পুনমের মেয়ে এখন অনেকটাই বড়। ২৪ বছরের প্রিয়া বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ে পড়াশোনা করছেন। আত্মরক্ষার পাঠ শেখা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, ছাত্রীদের কাছে তার জলজ্যান্ত উদাহরণ পুনম। তিন হাজার ছাত্রীর অনুপ্রেরণাও তিনি।

পুনমের মেয়ে এখন অনেকটাই বড়। ২৪ বছরের প্রিয়া বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ে পড়াশোনা করছেন। আত্মরক্ষার পাঠ শেখা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, ছাত্রীদের কাছে তার জলজ্যান্ত উদাহরণ পুনম। তিন হাজার ছাত্রীর অনুপ্রেরণাও তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy