Kohistan video case is one of the most notorious crime in Pakistan dgtl
Kohistan Video Case
পুরুষের সামনে নাচানাচি! পাকিস্তানে পাঁচ কন্যাকে মেরে দেহ লোপাট, ভয়ঙ্কর এক পারিবারিক কাহিনি
২০১২ সালে প্রকাশ্যে এসেছিল এই হত্যাকাণ্ড। যা শোরগোল ফেলে দিয়েছিল পাকিস্তানে। ‘কোহিস্তান ভিডিয়ো কেস’ নামে পরিচিত এই হত্যাকাণ্ড।
সংবাদ সংস্থা
ইসলামাবাদশেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৩ ১৪:১৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
বিয়েবাড়ির আসর। বাজছে লতা মঙ্গেশকরের গান ‘মেরা দিল ইয়ে পুকারে আজা’। এই কালজয়ী গানের তালে তালে নাচছেন এক পাকিস্তানি তরুণী। তাঁর নাম আয়েশা। ওই পাক তরুণীর এই নাচের ভিডিয়ো সাড়া ফেলেছে সমাজমাধ্যমে। রাতারাতি প্রচারের আলোয় এসেছেন ওই তরুণী। অথচ ঠিক আগের দশকেই পাকিস্তানে বিয়েবাড়িতে মহিলাদের একটি নাচগানের ভিডিয়োর জেরে ঘটে গিয়েছিল হাড় হিম করা এক হত্যাকাণ্ড।
ছবি সংগৃহীত।
০২২২
২০১২ সালের কথা। একটি বিয়েবাড়ির ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছিল। ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছিল, ৫ মহিলা গান গাইছিলেন, হাততালি দিচ্ছিলেন। নাচতে দেখা গিয়েছিল এক যুবককে। আর অন্য যুবক সেই নাচ-গানের মূহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন। এই ভিডিয়ো একেবারেই ভাল ভাবে নেননি এলাকার মাতব্বররা। 'সম্মান রক্ষার্থে' ওই ৫ মহিলাকে খুন করার অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানকে। যা ‘কোহিস্তান ভিডিয়ো কেস’ নামে পরিচিত। এই কাহিনিই তুলে ধরা হল এখানে।
ছবি সংগৃহীত।
০৩২২
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের অন্তর্গত কোহিস্তান। যেখানে সরকারি আইনকানুন সেই সময় খাটত না। এলাকার মাতব্বররাই ঠিক করতেন নিয়মরীতি। সেখানকারই এক বাসিন্দা ছিলেন আফজ়ল কোহিস্তানি।
ছবি সংগৃহীত।
০৪২২
আফজ়লের ৮ ভাই। দর্জির দোকান চালাতেন তিনি। কাজের অবসরে আইন নিয়ে পড়াশোনা করতেন ওই যুবক।
ছবি সংগৃহীত।
০৫২২
২০১০ সালের কথা। সেই সময় স্ত্রী এবং দুই ভাইয়ের সঙ্গে মানসেহরাতে বসবাস করতেন। তাঁর ওই দুই ভাই বিন ইয়াসির এবং গুল নজ়র নিজেদের গ্রাম গদারে গিয়েছিলেন। গ্রামে একটি বিয়ে ছিল। সেখানে গিয়েছিলেন আফজ়লের ওই দুই ভাই।
ছবি সংগৃহীত।
০৬২২
বিয়েবাড়িতে নাচগান চলছিল। সেখানে নাচগান করছিলেন ৫ জন মহিলা। পা মিলিয়েছিলেন আফজলের এক ভাই। নাচগানের ভিডিয়ো তুলছিলেন আফজ়লের অন্য এক ভাই। ভিডিয়োতে ৪ জন মহিলাকে স্পষ্ট ভাবে দেখা গিয়েছিল। তবে পঞ্চম মহিলার মুখ দেখা যায়নি।
ছবি সংগৃহীত।
০৭২২
এর ২ বছর পর ২০১২ সালে আচমকা ওই ভিডিয়োটি ইন্টারনেটে ফাঁস হয়ে যায়। আর তার পরই ভিডিয়োটি ঘিরে তুমুল বিতর্ক শুরু হয় ওই এলাকায়। ভিডিয়োতে মহিলারা নাচগান করছেন। তাঁদের সঙ্গে এক যুবক। যা একেবারেই পছন্দ করেননি এলাকার মাতব্বররা। যুবকের সঙ্গে নাচগান করছেন মহিলারা— এটা দেখে রুষ্ট হয় স্থানীয় পঞ্চায়েত ‘জিরগা’ (খানিকটা খাপ পঞ্চায়েতের মতো)।
প্রতীকী ছবি।
০৮২২
ভিডিয়োতে যে ৫ মহিলাকে দেখা গিয়েছে, তাঁদের হত্যা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি যে দুই যুবক ওই ভিডিয়োর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁদেরও হত্যা করার নির্দেশ দেয় ওই পঞ্চায়েত।
প্রতীকী ছবি।
০৯২২
২০১২ সালের জুন মাসে খবর ছড়ায় যে, ওই ৫ মহিলাকে সম্মানরক্ষার্থে নির্মম ভাবে খুন করেছেন তাঁদের বাবা, ভাইরা। খুনের পর দেহ লোপাট করা হয় বলে অভিযোগ। বাজ়িঘা, সারিন জান, বেগম জান, আমিনা এবং শাহিন নামে ওই ৫ মহিলাকে হত্যার কথা জানতে পারেন আফজ়লও।
প্রতীকী ছবি।
১০২২
আফজ়ল জানতে পারেন যে, তাঁর এক ভাই ওই ভিডিয়ো তুলেছিলেন। আর অন্য ভাই ওই ভিডিয়োতে নেচেছিলেন। এর পরই পুলিশের দ্বারস্থ হন আইনের ছাত্র আফজ়ল। কিন্তু প্রথমে আফজ়লের অভিযোগ নিতেই চায়নি পুলিশ। কারণ তখন সেখানে পুলিশের ভূমিকা নামমাত্রই ছিল। আইনকানুন আসলে ছিল খাপ পঞ্চায়েতের হাতে। পুলিশ এ-ও দাবি করে যে, ওই ৫ মহিলা বেঁচে রয়েছেন।
ছবি সংগৃহীত।
১১২২
পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার পর দমে যাননি আফজ়ল। গ্রাম থেকে শহরে গেলেন। বিভিন্ন সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেলের অফিসে ঘুরলেন। গোটা ঘটনার কথা জানালেন তিনি। ২০১২ সালের জুন মাসে প্রথম বার পাকিস্তানের সংবাদপত্রে এই ঘটনার খবর প্রকাশিত হয়।
প্রতীকী ছবি।
১২২২
এর পরই পাক সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন আফজ়ল। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই মামলা শুরু করে পাক শীর্ষ আদালত। গঠন করা হয় একটি তদন্ত কমিটি। ৫ মহিলা বেঁচে রয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে কোহিস্তানে যায় ওই কমিটি।
ছবি সংগৃহীত।
১৩২২
তদন্ত কমিটির কাছে ৫ মহিলাকে দেখানো হয়। কমিটির সদস্যরা দেখেন যে, ওই ৫ মহিলা বেঁচে রয়েছেন। এ কথা জানানো হয় আদালতকে। কিন্তু কমিটির এক সদস্য ফরজ়ানা বারির সন্দেহ হয়। তিনি দাবি করেন যে, যে ৫ মহিলাকে দেখানো হয়েছে, তাঁরা ভিডিয়োর ৫ মহিলা নন।
ছবি সংগৃহীত।
১৪২২
ফরজ়ানা দাবি করেন যে, ২০১০ সালে ভিডিয়োটি তৈরি করা হয়েছিল। তাতে যে মহিলাদের দেখা গিয়েছে, তাঁদের বয়স আর তদন্ত কমিটির কাছে যে ৫ মহিলাকে দেখানো হয়েছে, তাঁদের বয়সের অনেক ফারাক। আফজ়লও এই ব্যাপারে ফরজ়ানার সঙ্গে সহমত হন। কিন্তু এই নিয়ে কোনও প্রমাণ না পেশ করতে পারায় মামলাটি খারিজ করে দেয় আদালত।
ছবি সংগৃহীত।
১৫২২
মহিলাদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে আফজ়লের সক্রিয়তা মোটেই ভাল চোখে দেখেননি এলাকার মাতব্বররা। তবে দমানো যায়নি আফজ়লকে। এই মামলার পুনর্তদন্তের আর্জি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন আফজ়ল। এর মধ্যেই ২০১৩ সালে আরও একটি হত্যাকাণ্ড ঘটে। গদর এলাকায় আফজ়লের ৩ ভাইকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ ওঠে। আফজ়লের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় ওই বাড়িতে ছিলেন না আফজ়ল।
প্রতীকী ছবি।
১৬২২
সুপ্রিম কোর্ট আবার একটি কমিটি গঠন করে। আদালত এ-ও জানায় যে, ওই ৫ মহিলাকে আদালতে হাজির করানো হোক। তা হলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে তাঁরা জীবিত রয়েছেন কি না। কিন্তু, বিপক্ষের আইনজীবীরা জানান যে,ওই এলাকা থেকে আদালতে মহিলাদের নিয়ে আসা ঠিক হবে না। প্রকাশ্যে এই ভাবে মহিলাদের হাজির করানো স্থানীয় রীতির পরিপন্থী। বিপক্ষের আইনজীবীর এই কথায় সম্মতি দেয় আদালত।
ছবি সংগৃহীত।
১৭২২
২০১৬ সালে আবার ওই এলাকায় পৌঁছয় সুপ্রিম কোর্টের তদন্ত কমিটি। আবার ৫ মহিলাকে দেখানো হয়। একই সন্দেহ হয় ফরজ়ানার। তদন্ত কমিটির সামনে যে ৫ মহিলাকে দেখানো হয়েছে, তাঁদের ছবি সেই সময় রয়টার্সের এক সাংবাদিককে দেন ফরজ়ানা। ওই সাংবাদিক ২০১০ সালের ভিডিয়োর ৫ মহিলার ছবি এবং তদন্ত কমিটির সামনে দেখানো ৫ মহিলার ছবি এক কি না যাচাই করতে ‘ডিজ়িটাল বেরিয়ার্স’ নামে এক ব্রিটিশ সংস্থার সাহায্য নেন। এর পরই স্পষ্ট হয় যে, ভিডিয়োতে যে মহিলাদের দেখা গিয়েছে, আর তদন্ত কমিটির কাছে যে মহিলাদের হাজির করানো হয়েছে, তাঁরা এক নন।
ছবি সংগৃহীত।
১৮২২
এই রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টে জমা দেন ফরজ়ানা। এর পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৮ সালের অগস্টে এই ঘটনায় এফআইআর দায়ের করে কোহিস্তান পুলিশ। তদন্তের পর পুলিশ জানায় যে, সিরান জান, বেগম জান এবং বাজ়িঘাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু বাকি ২ মহিলা আমিনা এবং শাহিন জীবিত। তবে তাঁদের বেঁচে থাকার কোনও প্রমাণ পেশ করতে পারেনি পুলিশ।
প্রতীকী ছবি।
১৯২২
পুলিশের রিপোর্ট মোতাবেক বাজ়িঘা, সারিনার বাবা এবং বেগমের ভাইকে গ্রেফতার করা হয়। খুনের কথা গর্বের সঙ্গে স্বীকার করেন তাঁরা। এর মধ্যেই , ২০১৪ সালে আফজ়লের তিন ভাইকে হত্যার ঘটনায় এক জনকে মৃত্যুদণ্ডের সাজার নির্দেশ দেওয়া হয়। বাকি ৫ জনকে ২৫ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত।
প্রতীকী ছবি।
২০২২
৫ মহিলার হত্যাকাণ্ডের সাজা ঘোষণার আগে আরও রক্ত ঝরে। খুনের বিচার চাওয়ার জন্য লড়াই করার ফলে এলাকার মাতব্বরদের রোষের মুখে পড়েছিলেন আফজ়ল। তাই এলাকায় যেতে পারতেন না। সেই সময় অ্যাবটাবাদে চলে গিয়েছিলেন। সেখানেই থাকছিলেন। আর সেখানেই ঘটে যায় আরও এক হত্যাকাণ্ড।
ছবি সংগৃহীত।
২১২২
২০১৯ সালের ৬ মার্চ আফজ়লকে গুলি করে খুন করা হয়। ‘সম্মানরক্ষার্থে খুন’-এর বিচারের জন্য যে যুবক লড়াই চালিয়েছেন, তাঁকেই নিজের জীবন দিতে হল।
ছবি সংগৃহীত।
২২২২
ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বাজ়িঘা, সারিনার বাবা এবং বেগমের ভাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজার নির্দেশ দেয় আদালত। এই ঘটনায় আরও ধৃত ৫ জনকে বেকসুর খালাস করা হয়। তবে সাজা দেখে যেতে পারেননি আফজ়ল। তার আগেই তাঁকে খুন করা হয়। সম্মানরক্ষার্থে খুনের সাজা ঘোষণা হলেও শাহিন এবং আমিনাকে নিয়ে রহস্য কাটেনি। তাঁদের সম্পর্কে আর কিছুই জানা যায়নি।