Know about Tollywood actress and TMC candidate for Medinipur constituency June Malia dgtl
June Malia
সম্পর্ক নিয়ে চর্চা, মমতার ‘আস্থাভাজন’, প্রতিদ্বন্দ্বীও বান্ধবী তারকা-নেত্রী জুনের
২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে মেদিনীপুরের বিজেপি প্রার্থী শমিত দাসকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন জুন। মেদিনীপুরের বিধায়ক জুনকে যে লোকসভায় প্রার্থী করবেন, সে ইঙ্গিত ক’মাস ধরে দিচ্ছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা।
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৪ ১২:৩৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
টলিপাড়া থেকে রাজনীতির মাঠে বরাবর চর্চায় থাকলেও নিজেকে তেমন ভাবে বিতর্কে জড়াননি অভিনেত্রী-নেত্রী জুন মালিয়া। মেদিনীপুরের তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গেও এক রকম ‘সৌজন্যমূলক লড়াই’ চলছে। কারণ, মেদিনীপুরের বিজেপি প্রার্থী তাঁর বান্ধবী। শান্ত স্বভাবের এই তারকা প্রার্থী নাকি আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আস্থাভাজন’!
০২১৮
৫৩ বছরের রাজনীতিক এবং অভিনেত্রী জুনের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা দার্জিলিঙে। মহিষাদল রাজ পরিবারের কন্যা জুন। মেদিনীপুর থেকে তৃণমূল প্রার্থী হয়ে দাঁড়ানো জুনের শিকড়বাকড়ের ইতিহাস রয়েছে মেদিনীপুরের মেদিনীতে। স্কুলজীবনের গোড়ার দিকে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির পড়াশোনা অবিভক্ত মেদিনীপুরে।
০৩১৮
খুব কম বয়সে প্রথম বিয়ে। স্বামী, কন্যা শিবাঙ্গী এবং পুত্র শিবেন্দ্রকে নিয়ে ভরা সংসার ছিল জুনের। কিন্তু ক্রমশ মতের অমিল হতে থাকায় একসঙ্গে থাকা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় দু’জনের। দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার ছেড়ে বেরিয়ে আসেন জুন।
০৪১৮
অভিনয়ের পাশাপাশি নাচেও সমান ভাবে পারদর্শী জুন। সেই ছন্দের সূত্রেই বিখ্যাত তালবাদ্য বাদকের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল তাঁর। জীবনে ছন্দ এসেছিল প্রবল বিক্রমে। কিন্তু সে সম্পর্ক টেকেনি। ১৪ বছর সম্পর্কে থাকার পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে দীর্ঘ দিনের বন্ধু সৌরভ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন জুন। সৌরভের একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা রয়েছে। পেশায় ব্যবসায়ী তিনি।
০৫১৮
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে জুনকে মেদিনীপুরের প্রার্থী করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। ভোটে দাঁড়িয়ে জিতে যান তিনি। তবে প্রার্থী হওয়ার আগে থেকেই রাজ্য নারী ও শিশুকল্যাণ বিভাগের সদস্য হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে মানুষের সঙ্গে কাজ করেছিলেন।
০৬১৮
মেদিনীপুরের বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর বিধানসভার তিনটি কমিটিতে স্থান পান জুন। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের স্ট্যান্ডিং কমিটি (ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ দফতর), নারী শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের স্ট্যান্ডিং কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয় তাঁকে। তার পাশাপাশি জুনকে রাখা হয় এস্টিমেট কমিটিতেও।
০৭১৮
প্রায় তিন দশক ধরে অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন জুন। ১৯৯৬ সালে ‘লাঠি’ ছবির হাত ধরে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। ঋতুপর্ণ ঘোষের একটি তথ্যচিত্রেও কম সময়ের জন্য অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
০৮১৮
‘হঠাৎ বৃষ্টি’, ‘নীল নির্জনে’, ‘দ্য বং কানেকশন’, ‘শিকার’, ‘পদক্ষেপ’, ‘প্রেম বিভ্রাট’, ‘এবার শবর’, ‘হর হর ব্যোমকেশ’, ‘একলা চলো’, ‘জ়ুলফিকর’, ‘মিতিন মাসি’, ‘সোয়েটার’, ‘কিশমিশ’ এবং ‘খেলা যখন’-এর মতো বহু বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন। জুনকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে হিন্দি ছবিতেও। ২০১৭ সালে আদিত্য চোপড়ার প্রযোজনায় আয়ুষ্মান খুরানা এবং পরিণীতি চোপড়া অভিনীত ‘মেরি প্যারি বিন্দু’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন জুন।
০৯১৮
‘তৃষ্ণা’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে ছোট পর্দায় অভিনয় শুরু জুনের। তার পর ‘বেহুলা’, ‘কাছের মানুষ’, ‘গাঁটছড়া’, ‘রেশম ঝাঁপি’ এবং ‘সাঁঝের বাতি’র মতো একাধিক বাংলা ধারাবাহিকে অভিনয় করেন তিনি। কখনও নেতিবাচক চরিত্রে কখনও বা ইতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের প্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।
১০১৮
‘দিদি নম্বর ১’— ছোট পর্দায় যে রিয়্যালিটি শো নেত্রী-অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, ২০১১ সালে সেই শোয়ের তৃতীয় সিজ়নের সঞ্চালিকার ভূমিকায় দেখা যায় জুনকে। ২০১০ সালে ছোট পর্দার অধিক পরিচিত নাচের রিয়্যালিটি শোয়ে বিচারকের আসনে ছিলেন তিনি।
১১১৮
মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রশাসক কমিটিতে পদাধিকার বলে শীর্ষে ছিলেন জেলাশাসক আয়েশা রানি। মেদিনীপুর জেলাশাসকের তরফে ২০২২ সালে জুনকে সিএবি (ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল)-র বৈঠকে পাঠানো হয়। আয়েশাই মনোনীত করেছিলেন জুনকে। সেই সময় জেলা ক্রীড়াসংস্থার কোনও নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসাবে সিএবি-র সভায় ছিলেন জুন।
১২১৮
২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে মেদিনীপুরের বিজেপি প্রার্থী শমিত দাসকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন জুন। মেদিনীপুরের বিধায়ক জুনকে যে লোকসভায় প্রার্থী করবেন, সে ইঙ্গিত ক’মাস ধরে দিচ্ছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা। দলের একটি সূত্রে খবর, জুনের প্রশংসায় অধিকাংশ সময় পঞ্চমুখ হয়ে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী। অনেকের দাবি, মমতার ‘ঘনিষ্ঠ-বৃত্তে’র মধ্যে রয়েছেন জুন। মুখ্যমন্ত্রীর ‘আস্থাভাজন’ও তিনি।
১৩১৮
২০২১ সালের মার্চে বিধানসভার প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণার পর মেদিনীপুরের মাটিতে পা রেখে যা যা করেছিলেন, লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে প্রথম দিন বেরিয়েও একই জিনিস করেছিলেন জুন। এমনকি, তিন বছর আগে যে শাড়ি পরে মেদিনীপুর গিয়েছিলেন, সেই একই শাড়ি পরে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম প্রচারে বেরিয়েছিলেন তিনি। তবে প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে কোনও রকম ‘গরম লড়াই’ নেই জুনের।
১৪১৮
বিদায়ী বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ এ বার নিজের জেতা আসনে টিকিট পাননি। দল তাঁকে পাঠিয়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে। এ বার লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুরের বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল। যদিও প্রার্থিতালিকা ঘোষণার আগেই দিলীপ জানিয়েছিলেন যে জুনকে তিনি দু’লক্ষ ভোটে হারাবেন। মেদিনীপুরের ভোটযুদ্ধে জুনের প্রতিদ্বন্দ্বী অগ্নিমিত্রা । তবে এই ‘যুদ্ধক্ষেত্রে’র বাইরে প্রায় দু’দশকের বন্ধুত্ব দু’জনের।
১৫১৮
জুন অভিনেত্রী। অগ্নিমিত্রা পেশায় পোশাকশিল্পী। কাজের সূত্রেই দু’জনের পরিচয় এবং তার পর বন্ধুত্বও হয় তাঁদের। এক সময় অগ্নিমিত্রার ফ্যাশন শোয়ের শো-স্টপার ছিলেন অভিনেত্রী জুন। অগ্নিমিত্রার ডিজ়াইন করা পোশাক পরে কলকাতায় ফ্যাশন সরণিতে নজরও কেড়েছিলেন জুন।
১৬১৮
অগ্নিমিত্রা প্রসঙ্গে জুন বলেছিলেন, ‘‘ব্যক্তিগত জীবন আর রাজনীতি দুটো আলাদা। অগ্নি (অগ্নিমিত্রাকে এই নামেই ডাকেন) সব সময় আমার বান্ধবী থাকবে। ওকে কুড়ি বছর ধরে চিনি। অগ্নি যখন কেরিয়ার শুরু করেছে, এখনও মনে আছে, ওর জন্য মডেলিং করেছিলাম।’’ অগ্নিমিত্রাও বলছেন, ‘‘উনি (জুন) আমার ফ্যাশন শোয়ে শো-স্টপার ছিলেন। আমার জন্য হেঁটেছেন (র্যাম্প)। সেই হিসেবে আমাদের পরিচিতি, বন্ধুত্বও।’’ বছর কয়েক আগে নিউ টাউনের বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারে এক অনুষ্ঠান মঞ্চে তারকাদের সঙ্গে হেঁটেছিলেন পাচারকারীর হাত থেকে উদ্ধার হওয়া কয়েক জন তরুণী। সে দিন তাঁরা সবাই অগ্নিমিত্রার ডিজ়াইন করা পোশাকই পরেছিলেন। মঞ্চে সৃজিত মুখোপাধ্যায়, ঋদ্ধি সেন, রূপম ইসলাম, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়দের সঙ্গে ছিলেন জুনও।
১৭১৮
অগ্নিমিত্রার মন্তব্য, ‘‘জুন মালিয়ার সঙ্গে আমার কোনও লড়াই নেই। আমার লড়াই তৃণমূলের অপশাসনের বিরুদ্ধে, ওদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে।’’ অন্য দিকে, জুনের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘যুদ্ধক্ষেত্রে নিশ্চয়ই ও আমার বিরোধী। আমি ভালই লড়াই করব। আমি নিশ্চিত, ও-ও ওর সেরাটা দেবে। লড়াই হবে লড়াইয়ের মতোই।’’ দু’জনে সমবয়সি। প্রায় একই সময়ে কেরিয়ার শুরু করেছেন। রাজনীতিতেও আনকোরা থেকে প্রথম চেষ্টায় পৌঁছেছেন বিধানসভার অন্দরে।
১৮১৮
মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র এ বার যেন ব্যতিক্রম। এই কেন্দ্রে দুই ‘বন্ধু’র লড়াই যেন সৌজন্যের। ব্যক্তিগত পর্যায়ে নেই কোনও আক্রমণ। এখানে লড়াই রাজনৈতিক নীতি-আদর্শের। এই লড়াইয়ে কে জেতেন, তা অবশ্য বলবে সময়ই।