‘ভূতুড়ে’ মন্দিরের নেপথ্যকাহিনি জানতে গেলে ফিরে যেতে হয় নব্বইয়ের দশকে। ১৯৯৯ সালের ঘটনা। শীতকাল। ঠান্ডা জাঁকিয়ে বসেছে হিমালয়ের কোলে। বরফ পড়ার কারণে মানালি থেকে লেহ যাওয়ার পাহাড়ি রাস্তা আরও দুর্গম হয়ে পড়েছে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৪ ১২:১০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
মানালি থেকে লেহ যাওয়ার সময় পাহাড়ি পথের প্রতিটি বাঁকে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। কিন্তু বরফাবৃত পাহাড়কে ঘিরে সৌন্দর্যের পাশাপাশি রয়েছে ভয়াবহ কাহিনিও। লেহ-র কাছে রয়েছে একটি ‘ভূতুড়ে’ মন্দির। মন্দিরের ‘প্রেত’-এর উদ্দেশে নিবেদন করা হয় জলের বোতল, এমনকি সিগারেটের প্যাকেটও।
০২২০
লেহ যাওয়ার পথে মানালি-লেহ সড়কপথে গাটা লুপ্স নামে একটি জায়গা রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭ হাজার ফুট উচ্চতায় এই নির্দিষ্ট জায়গায় রয়েছে চুলের কাঁটার মতো দেখতে অসংখ্য বাঁক।
০৩২০
গাটা লুপ্সে রয়েছে ২১টি বাঁক। ১০.৩ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে যে ২১টি বাঁক রয়েছে তার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৩০০ থেকে ৬০০ মিটার। এই সড়কপথ পাহাড়প্রেমীদের পছন্দের হলেও এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অলৌকিক কাহিনি।
০৪২০
গাটা লুপ্সের ১৯ নম্বর বাঁকে পৌঁছলে নজরে পড়ে স্তরে স্তরে জমা জলের বোতল এবং সিগারেটের প্যাকেট। স্থানীয়দের দাবি, সেখানে এক ছায়ামূর্তিকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। তার উদ্দেশেই জলের বোতল থেকে শুরু করে সিগারেটের প্যাকেট নিবেদন করা হয়। সেখানে একটি পাথর পোঁতা রয়েছে। সেটিই নাকি ‘ভূতুড়ে’ মন্দির।
০৫২০
‘ভূতুড়ে’ মন্দিরের নেপথ্যকাহিনি জানতে গেলে ফিরে যেতে হয় নব্বইয়ের দশকে। ১৯৯৯ সালের ঘটনা। শীতকাল। ঠান্ডা জাঁকিয়ে বসেছে হিমালয়ের কোলে। বরফ পড়ার কারণে মানালি থেকে লেহ যাওয়ার পাহাড়ি রাস্তা আরও দুর্গম হয়ে পড়েছে।
০৬২০
স্থানীয়দের দাবি, বরফ জমে থাকা রাস্তা কেটে লেহ-র দিকে যাচ্ছিল একটি মালবাহী ট্রাক। সেই ট্রাকে চালক ছাড়াও ছিলেন তাঁর এক সহকারী। ট্রাকটি ১৯ নম্বর বাঁকের কাছে পৌঁছে অচল হয়ে পড়ে। হাজার চেষ্টা করেও ট্রাকটি সারাতে পারেননি তাঁরা।
০৭২০
ঠান্ডার মধ্যে রাস্তার মাঝে আটকে পড়েন ট্রাকচালক এবং তাঁর সহকারী। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা আরও কমতে থাকে। শীতের প্রকোপে অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন সহকারী।
০৮২০
ট্রাকের চালক ভাবেন, লেহ-র দিকে অন্য কোনও গাড়ি গেলে তার চালকের কাছ থেকে সাহায্য চাইবেন। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও কোনও গাড়ি নজরে পড়েনি তাঁর।
০৯২০
সারা রাত ঠান্ডার মধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলে বিপদ হতে পারে ভেবে নিকটবর্তী জনবসতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ট্রাকের চালক। সেখানে গিয়ে গাড়ি সারাইয়ের মিস্ত্রির সন্ধান করতে চেয়েছিলেন তিনি।
১০২০
শরীর খারাপ থাকার কারণে ট্রাকের ভিতর থাকার সিদ্ধান্ত নেন সহকারী। ১৯ নম্বর বাঁকের নিকটবর্তী গ্রামে পৌঁছেও কোনও লাভ হল না ট্রাকচালকের। গাড়িসারাইয়ের কোনও মিস্ত্রির খোঁজ পেলেন না তিনি। বরং আরও বিপদে পড়লেন সেই চালক।
১১২০
স্থানীয়দের দাবি, ১৯ নম্বর বাঁকের দিকে ফেরার সময় আটকে পড়েন ট্রাকের চালক। আচমকা শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। তাপমাত্রা আরও কমে রাস্তায় বরফ জমতে থাকে। কোনও মতেই ফিরতে পারেননি তিনি। সেই পাহাড়ি গ্রামেই সারা রাত কাটাতে বাধ্য হন।
১২২০
সকালে শিলাবৃষ্টি থামলে ট্রাকের দিকে রওনা হন চালক। অসুস্থ সহকারীকে নিয়েও চিন্তা হতে থাকে তাঁর। কিন্তু পৌঁছে দেখেন, তাঁর সহকারীর মৃত্যু হয়েছে।
১৩২০
সারা রাত ট্রাকের ভিতরেই বসে ছিলেন ট্রাকচালকের সহকারী। শিলাবৃষ্টি হওয়ায় তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ট্রাকের ভিতরেই মারা যান।
১৪২০
স্থানীয়দের অধিকাংশের দাবি, ১৯ নম্বর বাঁকের কাছেই পুঁতে দেওয়া হয় সহকারীর দেহ। পাথর দিয়ে একটি বেদিও নাকি তৈরি করা হয় সেখানে।
১৫২০
এর পর থেকে নাকি মাঝেমধ্যেই ১৯ নম্বর বাঁকের কাছে একটি ছায়ামূর্তি ঘুরে বেড়াতে দেখেন স্থানীয়দের একাংশ। পর্যটকদের অধিকাংশের দাবি, তাঁরাও এক ছায়ামূর্তিকে দেখেছেন।
১৬২০
গাড়ি নিয়ে কোনও পর্যটক রাস্তা পার হলে তাঁদের কাছে নাকি প্রায়ই এক ব্যক্তি সাহায্য চেয়ে গাড়ি থামান। কিন্তু তাঁর মুখ স্পষ্ট দেখতে পান না কেউই। কখনও জল খেতে চান, কখনও বা সিগারেট খেতে চান।
১৭২০
স্থানীয়দের দাবি, কোনও পর্যটক ১৯ নম্বর বাঁকে পৌঁছে অচেনা ব্যক্তিকে সাহায্য করার জন্য গাড়ি থামালে তার পর আর কাউকেই দেখতে পান না।
১৮২০
ওই ট্রাকচালকের সহকারীর ‘আত্মা’ই সাহায্য চেয়ে গাড়ি দাঁড় করায় বলে দাবি করেন স্থানীয়েরা। তাই সেই ‘প্রেতাত্মা’র ইচ্ছাপূরণ করতে একটি পাথরের কাছে জলের বোতল এবং সিগারেটের প্যাকেট রাখার চল শুরু হয়।
১৯২০
১৯ নম্বর বাঁকের কাছে একটি বড় পাথর রয়েছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, ওই পাথরের নীচেই পোঁতা রয়েছে ওই ট্রাকচালকের সহকারীর দেহ। সেখানেই তৈরি হয়েছে ‘ভূতুড়ে’ মন্দির।
২০২০
স্থানীয়দের ধারণা, লেহ যাওয়ার পথে ‘প্রেতাত্মা’র উদ্দেশে জলের বোতল এবং সিগারেটের প্যাকেট নিবেদন করলে নাকি যাত্রাপথে কোনও দুর্ঘটনা ঘটে না। যাত্রা মঙ্গলের প্রার্থনা করে এখনও পর্যটকদের অধিকাংশ সেই ‘ভূতুড়ে’ মন্দিরের দর্শন করেন।