Kishore Anand Bhanushali lost many acting projects because his resemblance to bollywood actor Dev Anand dgtl
Junior Dev Anand
অভিনেতাকে নকল করে কেরিয়ার শুরু, এখন কী করছেন ‘জুনিয়র’ দেব আনন্দ?
যে দক্ষতা ‘জুনিয়র’ দেব আনন্দকে কেরিয়ারের সাফল্যের সিঁড়িতে চড়তে সাহায্য করেছিল, সেই দক্ষতাই তাঁর কেরিয়ার ধ্বংসের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৩ ১০:৩২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৫
বলিপা়ড়ার জনপ্রিয় অভিনেতার সঙ্গে মুখের মিল, তার উপর আবার আদবকায়দা থেকে শুরু করে অভিনয়ের ধরনেও ছাপ রয়েছে। নব্বইয়ের দশকে তাই কৌতুকাভিনেতার চরিত্রে একের পর এক ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পাচ্ছিলেন ‘জুনিয়র’ দেব আনন্দ। কিন্তু যে দক্ষতা তাঁকে কেরিয়ারে সাফল্যের সিঁড়িতে চড়তে সাহায্য করেছিল, সেই দক্ষতাই তাঁর কেরিয়ার ধ্বংসের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
০২২৫
বলি অভিনেতা দেব আনন্দের মতো দেখতে ছিলেন বলে বলিপাড়ায় ‘জুনিয়র’ দেব আনন্দ নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। তাঁর আসল নাম কিশোর আনন্দ ভানুশালী। ১৯৬২ সালের ১৩ মার্চ মুম্বইয়ের এক গুজরাতি পরিবারে জন্ম তাঁর।
০৩২৫
কিশোরের বাবার একটি দোকান ছিল। তিনি চাইতেন কিশোরও যেন পারিবারিক ব্যবসা সামলান। ফিল্মজগৎ সংক্রান্ত কোনও বিষয়ই পছন্দ করতেন না কিশোরের বাবা। এমনকি, শৈশব থেকে অভিনয়ে নামার কথা ভাবেননি কিশোরও।
০৪২৫
হঠাৎ স্কুলের এক বন্ধু কিশোরকে ডেকে জানান যে, তিনি নাকি হুবহু দেব আনন্দের মতো দেখতে। সেই সময় দেব আনন্দকে চিনতেন না কিশোর। বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করায় তিনি জানতে পারেন যে হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন দেব আনন্দ।
০৫২৫
স্কুলে পড়াকালীন অভিনেতাদের মধ্যে একমাত্র রাজেশ খন্নাকেই চিনতেন কিশোর। বলিউডের সুপারস্টার হিসাবেই রাজেশকে চিনতেন কিশোর। বন্ধুর কথা শুনে দেব আনন্দের ছবি দেখার ইচ্ছা হয় তাঁর।
০৬২৫
১৯৭১ সালে যখন কিশোরের আট-নয় বছর বয়স, সেই সময় প্রথম দেব আনন্দের ছবি দেখেন কিশোর। স্কুলের ছুটি চলাকালীন মামাবাড়িতে গিয়ে দেব আনন্দ অভিনীত ‘ইয়ে গলিস্তান হমারা’ ছবিটি দেখেন। তার পর দেব আনন্দের ‘জুয়েল থিফ’ ছবিটিও দেখেন কিশোর।
০৭২৫
দেব আনন্দকে দেখার পর মুগ্ধ হয়ে যান কিশোর। তাঁর সঙ্গে যে দেব আনন্দের মুখের প্রচুর মিল রয়েছে সে বিষয়ে আর কোনও সন্দেহ ছিল না কিশোরের। তার পর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেব আনন্দের চলন-বলন এবং অভিনয় সব কিছুই নকল করতে থাকেন কিশোর।
০৮২৫
স্কুলজীবন থেকেই নিজেকে দেব আনন্দের নকল বা ‘ডুপ্লিকেট’ তৈরির চেষ্টায় লেগে পড়েন কিশোর। দেব আনন্দের মতো দেখতে বলে তাঁর মতো পোশাক পরে অভিনয় করতেন কিশোর।
০৯২৫
স্কুলের নাটকের মঞ্চে জুনিয়র দেব আনন্দ হয়ে অভিনয় করেন কিশোর। এর পরই হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের ইচ্ছা জাগে তাঁর। বন্ধুবান্ধবেরা তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, দেব আনন্দই তাঁকে অভিনয়ের সুযোগ দিতে পারেন।
১০২৫
বন্ধুদের কথায় সাইকেল চালিয়ে দেব আনন্দের বাংলোর সামনে গিয়ে হাজির হন কিশোর। ঠিক সেই সময় বাংলোর ভিতর থেকে গাড়িতে চেপে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন দেব আনন্দ। কিশোরের সাইকেল গাড়ির সামনে পড়ে যাওয়ায় গাড়িটি থামিয়ে দেওয়া হয়।
১১২৫
গাড়ির জানলার কাচ নামিয়ে বাইরে মুখ বাড়িয়ে দেখেন দেব আনন্দ। তাঁর কাছে অভিনয়ে নামার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন কিশোর। কিন্তু কিশোরকে সরাসরি মানা করে দেন দেব আনন্দ। অভিনেতা বলেন, ‘‘তোমার এইটুকু বয়স। এখন কিসের অভিনয় করবে তুমি? পড়াশোনা শেষ করো আগে।’’
১২২৫
দেব আনন্দের পরামর্শ মেনে পড়াশোনা শেষ করেন কিশোর। কিন্তু অভিনয় করা বাদ দিলেন না তিনি। থিয়েটার থেকে শুরু করে নানা রকম শোয়ে অংশ নিয়ে দেব আনন্দের ভূমিকায় অভিনয় করতেন তিনি। কিন্তু তাতে ভাল উপার্জন হত না।
১৩২৫
বিভিন্ন জায়গায় অডিশন দিতে শুরু করেন কিশোর। সকলে তাঁর মুখ থেকে দেব আনন্দের ছবির সংলাপ শুনতেন, দেব আনন্দের মতো অভিনয় করে দেখাতে বলতেন। কিন্তু কাজের সুযোগ কেউই দিতেন না।
১৪২৫
শেষে বাবার দোকানে বসতে শুরু করেন কিশোর। ভারতী নামের এক মহিলাকে বিয়েও করেন তিনি। বিয়ের পর এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন ভারতী। দোকান চালিয়ে সংসারের খরচ চললেও সে কাজে মন বসছিল না কিশোরের। সেই সময়েই ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে তাঁর।
১৫২৫
দোকান থেকে বাড়ি ফিরে গিয়ে কিশোর হঠাৎ দেখেন, তাঁর বাড়িতে অভিনেতা মোহন চোটী বসে রয়েছেন। মোহন তাঁর একটি শোয়ে অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন কিশোরের কাছে। মোহনের কথামতো তাঁর সঙ্গে কাজ করেন কিশোর।
১৬২৫
মোহনই তার পর ‘পাগলখানা’ ছবিতে একটি পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন কিশোরকে। তবে তাঁর জীবনে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন বলি পরিচালক ইন্দ্র কুমার। ‘দিল’ ছবির কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন ইন্দ্র। ছবির চিত্রনাট্য থেকে শুরু করে সমস্ত চরিত্র নিয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গিয়েছে। তার পরেও কিশোরকে তাঁর ছবিতে নতুন একটি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দেন ইন্দ্র।
১৭২৫
আসলে কিশোর হঠাৎ জানতে পারেন যে তাঁর বাড়ির কাছে আমির খান এবং মাধুরী দীক্ষিত শুটিং করতে গিয়েছেন। শুটিং দেখতে সেখানে যান কিশোর। দর্শকের ভিড়ের মাঝেও কিশোরের দিকে নজর পড়ে ইন্দ্রের। কিশোরকে ডেকে পাঠিয়ে তাঁকে ‘দিল’ ছবিতে ছোট চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন ইন্দ্র। পরিচালকের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান কিশোর।
১৮২৫
১৯৯০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দিল’ ছবিতে অভিনয় করার পর বলিপাড়ায় নিজের পরিচিতি তৈরি হয়ে যায় কিশোরের। কিন্তু পরিচিতি তৈরি হলেও কাজ পাচ্ছিলেন না তিনি। নিজের পরিস্থিতির কথা ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং অভিনেতা রাজ়া মুরাদকে জানান তিনি।
১৯২৫
রাজ়া জানান, কিশোরের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য কোনও ফোন নম্বর কারও কাছে ছিল না। তাই কাজ দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও ছবি নির্মাতারা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। নিজের ফোন নম্বর সকলকে দেওয়া শুরু করলে একের পর এক ছবির প্রস্তাব আসতে থাকে কিশোরের কাছে।
২০২৫
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, প্রতি বছর গড়ে সাত থেকে আটটি ছবিতে অভিনয় করতেন কিশোর। জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকায় দেব আনন্দ দেখা করতে চান কিশোরের সঙ্গে। অভিনেতা কিশোরকে বলেন, ‘‘তোমার হাতে এত ছবি। কয়েকটা আমাকেও দাও।’’
২১২৫
‘রামগড় কে শোলে’, ‘গোপি কিষণ’, ‘বরসাত’, ‘খিলাড়িয়ো কা খিলাড়ি’, ‘বড়ে মিঞা ছোটে মিঞা’র মতো ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় কিশোরকে। কিন্তু এই জনপ্রিয়তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি কিশোরের। ২০০০ সালের পর কাজ পাওয়া বন্ধ হয়ে যায় তাঁর।
২২২৫
দেব আনন্দের ভূমিকা ছাড়া অন্য কোনও চরিত্রে অভিনয় করতে পারবেন না বলে কেউ তাঁকে কাজের সুযোগ দিতে চাইতেন না। বিষয়টি টেলি অভিনেতা মুকেশ খন্নাকে জানালে তাঁর ‘শক্তিমান’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ দেন কিশোরকে।
২৩২৫
বড় পর্দায় কাজ করতে না পারার কারণে ছোট পর্দায় অভিনয় করা শুরু করেন কিশোর। ২০১৫ সালে ‘ভাবিজি ঘর পে হ্যায়’ ধারাবাহিকে কমিশনার রেশমপাল সিংহের চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা পান তিনি।
২৪২৫
বর্তমানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে শো করে বেড়ান কিশোর। মাঝেমধ্যে টেলিভিশনের পর্দাতেও অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। তিন দশক ধরে বিনোদনজগতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি। ‘কিশোর কি আওয়াজ দেব কা আন্দাজ’ নামের তিন ঘণ্টার একটি কমেডি শোও করেন তিনি।
২৫২৫
কিশোর এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘দেব আনন্দের মতো দেখতে হওয়ার কারণে আমার কাজ পাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমি নিরাশ হইনি। আমি একটা কথা মানি, ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়।’’