Kerala Muslim Woman raised three hindu kids as her own dgtl
Kerala
হিন্দু সন্তানদের মুসলিম বাবা-মা, মন্দিরে পাঠাতেন নিয়মিত! যে কাহিনি সিনেমাকেও হার মানায়
৫০ বছর আগের কথা। কেরলের মলপ্পুরম জেলার কালিকাভুর বাসিন্দা আব্দুল আজিজ হাজি এবং থেন্নাদন সুবেইদা। তাঁদের তিন সন্তানের জীবন নিয়ে তৈরি হয়েছে দক্ষিণী সিনেমা ‘এন্নু সান্থাম শ্রীধরন’।
সংবাদ সংস্থা
কোচি (কেরল)শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:২৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
৫০ বছর আগের কথা। কেরলের মলপ্পুরম জেলার কালিকাভুর বাসিন্দা আব্দুল আজিজ হাজি এবং থেন্নাদন সুবেইদা। ধর্মপ্রাণ এই মুসলিম দম্পতি এবং তাঁদের তিন সন্তানের জীবন নিয়ে তৈরি হয়েছে দক্ষিণী সিনেমা ‘এন্নু সান্থাম শ্রীধরন’। ৯ জানুয়ারি কেরলে মুক্তি পাওয়া এই ছবি দেখে আবেগে ভাসছেন দর্শক। উচ্ছ্বসিত হয়ে টুইট করেছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর। তবে অনেকে বলছেন ছবির চেয়েও ‘নাটকীয়’ এই দম্পতির কাহিনি।
ছবি: সংগৃহীত।
০২২০
ধর্মপ্রাণ মুসলিম দম্পতি কোলে তুলে নিয়েছিলেন হিন্দু পরিচারিকার তিন সন্তানকে। সন্তানস্নেহে তাদের মানুষ করেছেন। তবে কাজটা সহজ ছিল না। সামাজিক গোঁড়ামি, চোখরাঙানি উপেক্ষা করেছেন ওই দম্পতি। পালিত তিন সন্তানের বাবা-মা হয়েছেন তাঁরা। কিন্তু ধর্মান্তরিত করেননি তাঁদের। মুসলিম বাবা-মায়ের তিন হিন্দু সন্তানকে নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘এন্নু সান্থাম শ্রীধরন’ ছবির গল্প।
ছবি: সংগৃহীত।
০৩২০
পরিচারিকা হলেও চাক্কি ছিলেন সুবাইদার পরিবারেরই এক জন। চাক্কির মৃত্যুর হয় আচমকা। তাঁর তিন সন্তান শ্রীধরন, রমানি এবং লীলাকে তাঁর নিজের তিন সন্তানের সঙ্গে বড় করেন সুবাইদা।
ছবি: সংগৃহীত।
০৪২০
২০১৯ সালের জুলাই মাসে কিডনির অসুখে মৃত্যু হয় সুবাইদার। স্ত্রীর মৃত্যুর পর বছর দুই বেঁচে ছিলেন আজিজ হাজি। ২০২১ সালে মৃত্যু হয় তাঁর।
ছবি: সংগৃহীত।
০৫২০
২০১৯ সালেই প্রথম সামনে আসে মুসলিম সুবাইদা ও তাঁর হিন্দু সন্তানদের কাহিনি। একটি ফেসবুক পোস্টে ‘হিন্দু’ শ্রীধরন নিজের ‘উম্মা’র (মালয়ালমে মুসলিম মা) কথা লেখায় সামনে আসে ওই মহিলার গল্প। কী ভাবে হিন্দুর মা ‘উম্মা’ হলেন, পড়তে পড়তে চোখ ভিজে যায় বহু নেটাগরিকের।
ছবি: সংগৃহীত।
০৬২০
প্রথমে অনেকেই একে ভুয়ো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা মনগড়া গল্প বলে মনে করেছিলেন। কেউ কেউ লিখেছিলেন, ‘‘কেন এ সব গল্প লেখেন?’’
প্রতীকী চিত্র।
০৭২০
পরে জানা যায়, ওমানে আটকে থাকা ছেলে তাঁর ‘উম্মা’কে শেষ বারের মতো দেখতে না পেয়ে এই পোস্টটি করেন। ক্রমশ তা ভাইরাল হয়। সেই কাহিনি নিয়ে তৈরি হয় সিনেমা।
প্রতীকী চিত্র।
০৮২০
সংবাদমাধ্যম ‘দ্য নিউজ মিনিট’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শ্রীধরন বলেন, ‘‘উম্মা (মা) এবং উপ্পা (বাবা)-র নিজেদের তিন সন্তান আছে। আমরা উম্মার বাড়িতে জায়গা পাওয়ার পর ওঁদের আরও এক সন্তান হল। আমাদের বোন জোশিনা। কিন্তু ওই বাড়িতে আমরা তিন ভাইবোন কখনও নিজেদের অবাঞ্ছিত বলে মনে করিনি। কখনও উম্মা-উপ্পা আমাদের বুঝতেই দেননি, কে তাঁদের নিজেদের সন্তান আর কে সৎ।’’
ছবি: সংগৃহীত।
০৯২০
শ্রীধরন জানান, নিজের বাড়ি বলতে তিনি উম্মার বাড়িই বোঝেন। নিজের নিরাপদ আশ্রয় মানে জানতেন উম্মার কোল। তাঁর কথায়, ‘‘উম্মার নিজের সন্তান জাফর। ভাই আর আমাকে একসঙ্গে স্তন্যপান করিয়েছেন উম্মা।’’
প্রতীকী চিত্র।
১০২০
সেই মায়ের চলে যাওয়ার দিনে তাঁর কাছে থাকতে পারেননি শ্রীধরন। ছটফট করেছেন বিদেশ বিভুঁইয়ে। কেঁদেছেন একা একা। সবাইকে জানাতে চেয়েছিলেন তাঁর উম্মার কথা। তাই সে দিন ফেসবুকে লিখে ফেলেছিলেন কী ভাবে হিন্দুর সন্তান হয়ে মুসলমান বাবা-মায়ের কাছে লালিত-পালিত হয়েছেন। বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন।
প্রতীকী চিত্র।
১১২০
তবে ওই পোস্টের পর অনেকেই প্রশ্ন করেছিলেন। শ্রীধরনের কথায়, ‘‘যখন আমি আমার তাকিয়া পরা ছবি পোস্ট করতাম, তখনও অনেকে প্রশ্ন করতেন কী ভাবে শ্রীধরন নামের কোনও ছেলে মুসলমানের পোশাক পরেন!’’
ছবি: সংগৃহীত।
১২২০
জন্মদাত্রী মা যখন মারা যান, শ্রীধরনের বয়স তখন এক বছর। দুই দিদি ছিল। বাবাও ছিলেন। তবে যে দিন তাঁর নিজের মা মারা গেলেন, সে দিনই উম্মা আর উপ্পা তিন কচিকাঁচাকে ওঁদের বাড়িতে নিয়ে আসেন। নিজের সন্তানদের মতো এই তিন খুদেকেও বড় করেছেন। প্রত্যেককে শিক্ষিত করেছেন। এমনকি, হিন্দু মতে দুই মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন মুসলমান বাবা-মা।
প্রতীকী চিত্র।
১৩২০
শ্রীধরন বলেন, ‘‘ওঁদের নিজেদের তিন সন্তান। তার সঙ্গে আমরা তিন জন। উম্মা-উপ্পার সংসারে চাপ পড়েছিল। তবে কাউকে তা কখনও বুঝতে দেননি। ওঁরা ধর্মে মুসলমান। ভীষণ ধর্মপ্রাণ দু’জন। তবে আমাদের তিন ভাইবোনকে কোনও দিন ওঁদের ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার কথা বলেননি। বরং একই পরিবারে আমরা হিন্দু এবং মুসলমান ভাইবোন বড় হয়েছি।’’
প্রতীকী চিত্র।
১৪২০
নিজেদের ছোটবেলার কথা বলতে গিয়ে শ্রীধরন বলেন, ‘‘আমি এবং আমার দিদিরা মন্দিরে যেতাম কপালে চন্দন টিকা নিয়ে। আমরা মা-বাবা বরাবর তাতে উৎসাহ দিয়ে এসেছেন। তাঁরা আমাদের শিখিয়েছেন, ধর্ম মানে অন্যকে আঘাত করা নয়। চুরি করা পাপ, অসৎ আচরণ করা উচিত নয়, সবাইকে ভালবাসতে এবং সাহায্য করতেও শিখিয়েছেন তাঁরা। আমরা ভাইবোনেরাও কখনও এমন কোনও কাজ করিনি যাতে ওঁরা দুঃখ পান।’’
প্রতীকী চিত্র।
১৫২০
উম্মা সম্পর্কে কথা বলতে গেলে থামতে চান না শ্রীধরন। বলেন, ‘‘শুনেছি সৎমা নাকি কখনও নিজের হয় না। কিন্তু আমি শুধু শুনেছি। কখনও বুঝিনি যে আমার জন্মদাত্রী অন্য কেউ।’’
প্রতীকী চিত্র।
১৬২০
শ্রীধরন এখনও শিহরিত হন এটা ভেবে যে যদি তাঁদের জীবনে সুবেইদা নামে মহিলা না আসতেন তা হলে কী হত! একে গরিব, তার উপর ‘নিচু জাত’। সবাই দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করত। তবে ওই মহিলার ছত্রছায়ায় এসে শ্রীধরন শিখেছেন মাথা উঁচু করে বাঁচতে। শিখিয়েছেন, কখনও নিজের অস্তিত্বকে খাটো করে না দেখতে।
ছবি: সংগৃহীত।
১৭২০
শ্রীধরন জানান, তাঁর নিজের বাবার মৃত্যুর পর সৎ বোনকেও মানুষ করার ভার নেন উম্মা-উপ্পা। এমনটা অনেকে ভাবতেও পারেন না।
প্রতীকী চিত্র।
১৮২০
শ্রীধরনের কাহিনি অবাক করেছে তামাম কেরলবাসীকে। এমন কাহিনি নিয়ে সিনেমা হবে না তো আর কোন কাহিনি নিয়ে হবে! ৫৫তম আন্তর্জাতিক গোয়া চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে শ্রীধরনদের গল্প। পরিচালক জানান, ফেসবুকের পোস্ট দেখেই তিনি সিদ্ধান নেন এ নিয়ে ছবি করবেনই।
ছবি: সংগৃহীত।
১৯২০
হিন্দু এবং মুসলমান পরিবারের ভালবাসার কাহিনিকে যত্নে গেঁথেছেন চিত্রপরিচালক সিদ্দিক পরাভুর। ইতিমধ্যে দর্শকদের পছন্দের তালিকায় ঢুকে পড়েছে ছবিটি।
প্রতীকী চিত্র।
২০২০
ছবিটিতে সুবেইদার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নৃত্যশিল্পী নির্মলা কান্নন, আজিজ হাজির ভূমিকায় সাংবাদিক তথা এই ছবির কাহিনিকার সুরেশ নিল্লিকোড়। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন সচিন রায়, বৈভব অমরনাথ, হর্ষ অরুণ এবং রাজিথা সন্তোষ।