বিজেপির তরফে মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত ‘নিখোঁজ’ পোস্টার দেওয়া হয়। তার কিছু ক্ষণ পরেই প্রকাশ্যে আসেন তিনি এবং শাসক জোটের বিধায়কদের বৈঠক ডাকেন। সেখানে ছিলেন হেমন্ত-পত্নী কল্পনা সোরেনও।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:০৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
তবে কি ঝড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করবেন হেমন্ত সোরেন? তাঁর জায়গায় বসাবেন তাঁর স্ত্রী কল্পনা সোরেনকে? ঝড়খণ্ডের রাজনীতিতে এখন ঘুরপাক খাচ্ছে এই প্রশ্নই।
০২২২
আচমকা ঝাড়খণ্ড রাজনীতিতে লালু-রাবড়ী চর্চা! এই চর্চার সূত্রপাত ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তথা ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার (জেএমএম) প্রধান হেমন্ত সোরেনের একটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে।
০৩২২
বিজেপির তরফে আজ প্রচার করা হয় মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত ‘নিখোঁজ’। এমনকি ‘নিখোঁজ’ পোস্টারও দেয় তারা। এর ঘণ্টাখানেক পরেই প্রকাশ্যে আসেন তিনি এবং শাসকজোটের বিধায়কদের বৈঠক ডাকেন।
০৪২২
সেখানে ছিলেন হেমন্ত-পত্নী কল্পনা সোরেনও। জেএমএম প্রধানের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
০৫২২
বিজেপির অভিযোগ, গত শতকের নয়ের দশকে লালুপ্রসাদ যেমন স্ত্রী রাবড়ী দেবীকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসিয়ে বকলমে সরকার চালাতেন, হেমন্তও সেই পন্থা নিতে চলেছেন।
০৬২২
আজ বৈঠকের পরে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হেমন্ত বলেন, ‘‘খুব শীঘ্রই আপনাদের সব বলব।’’
০৭২২
শাসক জোটে শামিল কংগ্রেসের দুই বিধায়ক অম্বা প্রসাদ এবং দীপিকা পাণ্ডে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী বদলের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। ঝাড়খণ্ডে সরকারে রয়েছে জেএমএম, কংগ্রেস এবং আরজেডি।
০৮২২
প্রসঙ্গত, পশুখাদ্য দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পরে ১৯৯৭ সালে লালুপ্রসাদ বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন। সকলকে হতচকিত করে রাবড়ী দেবীকে মুখ্যমন্ত্রীর করেছিলেন তিনি।
০৯২২
হেমন্ত কোথায় তা নিয়ে গত কাল দিনভর জল্পনা চলেছিল। আজ ভোরে রাঁচী ফেরেন তিনি। কোথায় গিয়েছিলেন জানতে চাওয়া হলে হেমন্ত সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমি আপনাদের হৃদয়েই রয়েছি।’’
১০২২
আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগে হেমন্তের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করছে ইডি। আগামিকাল দুপুরে রাঁচীতে নিজের বাসভবনে তদন্তকারীদের মুখোমুখি হতে পারেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে শাসক জোটের বিধায়কদের বৈঠক এবং তাতে কল্পনার উপস্থিতি চর্চায় রসদ জুগিয়েছে।
১১২২
ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের বলেছেন, ‘‘চলতি মাসে জেএমএম বিধায়ক সরফরাজ আহমেদ বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন। খুব তাড়াতাড়ি হেমন্ত সোরেনও পদত্যাগ করবেন এবং তাঁর স্ত্রী পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবেন।’’
১২২২
নিশিকান্তের ইঙ্গিত, সরফরাজের ছেড়ে দেওয়া আসন থেকে জিতিয়ে আনা হতে পারে হেমন্তের স্ত্রীকে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ চেয়ে সরব হয়েছে বিজেপি।
১৩২২
বিষয়টি নিয়ে হেমন্তের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন খোদ রাজ্যপাল সি পি রাধাকৃষ্ণন। বিষয়টির উপরে নজর রাখছেন বলে জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘কেউ-ই আইনের ঊর্ধ্বে নন।’’
১৪২২
হেমন্ত যদি লালুর পদাঙ্ক অনুসরণ করেন, তা হলে রাজ্যপালের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
১৫২২
প্রসঙ্গত, সোমবার সোরেনের দিল্লির বাসভবনে যান ইডি আধিকারিকরা। কিন্তু সোরেনের দেখা মেলেনি। টানা ১৩ ঘণ্টা ধরে সেখানে তল্লাশি চালান তাঁরা। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ সোরেনের বাসভবন ছেড়ে বেরিয়ে যান।
১৬২২
ইডি সূত্রে খবর, সোরেনের দিল্লির বাসভবন থেকে দু’টি বিএমডব্লিউ গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি এবং নগদ ৩৬ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে।
১৭২২
এই তল্লাশি চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে ইডিকে চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়, ৩১ জানুয়ারি দুপুর ১টায় রাঁচীর বাসভবনে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার মুখোমুখি হবেন সোরেন। সোরেনের রাঁচীর সরকারি বাসভবন রাজ ভবনের ১০০ মিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
১৮২২
এর আগে সোরেনকে ইডি মোট ন’বার তলব করলেও প্রতি বারই তা এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। গত শনিবার তাঁকে আবার নতুন করে সমন পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
১৯২২
প্রথমে তাঁকে ২৭ থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে দিল্লিতে ইডির দফতরে হাজির হয়ে তদন্তপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু প্রত্যুত্তর না পেয়ে পরে তাঁকে ২৯ কিংবা ৩১ জানুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সময় রাখতে বলা হয়।
২০২২
গত ২০ জানুয়ারি রাঁচীতে হেমন্তের সরকারি বাসভবনে হানা দিয়েছিল ইডি। প্রায় সাত ঘণ্টা তল্লাশি চালানোর পর অর্থ তছরুপ প্রতিরোধ আইন (পিএমএলএ)-এ তাঁর বয়ান নথিভুক্ত করা হয়।
২১২২
তার পরই ইডি সূত্রে জানা গিয়েছিল, বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব না মেলায় হেমন্তকে ফের সমন পাঠানো হবে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক তছরুপের অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী।
২২২২
তিনি দাবি করেন যে, নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দিতেই এবং রাজ্যে অস্থিরতা তৈরি করতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে ব্যবহার করছে বিজেপি।