Juliane Koepcke: The Girl Who Fell From an Airplane And Survived The Rainforest dgtl
Amazon Forest
Juliane Koepcke: বিমান দুর্ঘটনায় ১০ হাজার ফুট উপর থেকে পড়েন আমাজনের জঙ্গলে, জুলিয়েনকে নিয়ে আছে ফিল্মও
ছোট থেকেই জঙ্গলে বড় হয়েছেন। বাবা তাঁকে শিখিয়েছিলেন জঙ্গলে পথ হারালে কী ভাবে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:৩২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
কুমিরের তাড়া খেয়ে সাঁতরে পারে উঠে দেখা গেল সামনে দাঁড়িয়ে বাঘ! এমন উভয় সঙ্কটে কী করণীয়? বাঁচার শেষ চেষ্টা না কি অসম্ভব মেনে হাল ছেড়ে দেওয়া? সদ্য স্কুল পেরনো পেরুর এক কিশোরী অসম্ভব বুঝেও প্রথমটিই বেছে নিয়েছিলেন। বানভাসি হয়েও খড়কুটো ধরে যেমন বাঁচতে চায় মানুষ।
০২২৩
নাম জুলিয়েন কোপকে। এক অদ্ভুত বিমান দুর্ঘটনার শিকার জুলিয়েন প্রায় ১০ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে বিমান ভেঙে মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন। তবে তারপরেও তিনি বেঁচে যান।
০৩২৩
এমন মিরাকেলের সামনে পড়েও অবশ্য অবাক হওয়ার অবকাশ পাননি জুলিয়েন। কারণ প্লেন ভেঙে তিনি পড়েছিলেন আমাজনের গভীর জঙ্গলে। এক বিপদ থেকে মূর্তিমান আরএক বিপদের মুখে।
০৪২৩
জনবিবর্জিত এবং বিপদসঙ্কুল আমাজনের জঙ্গলে সম্পূর্ণ একা! জুলিয়েন ভাবতে পারেননি সেখান থেকে বেঁচে ‘সভ্য’ জগতে ফেরা সম্ভব হবে। তবু হাল না ছেড়ে চেষ্টা করে গিয়েছেন।
০৫২৩
প্লেন থেকে পড়ে যাওয়ায় কলার বোন ভেঙে গিয়েছিল, চোট লেগেছিল হাতে পায়ে। খুবলে গিয়েছিল শরীরে বেশ কয়েকটি জায়গা। ওই অবস্থায় অ্যামাজনের জঙ্গলে কাদার মধ্যে টানা দু’দিন পড়েছিলেন জুলিয়েন। জ্ঞান ফিরলে পরিস্থিতি বুঝে উঠতেই গোটা একটা দিন লেগে গিয়েছিল তাঁর।
০৬২৩
সময়টা ছিল ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ। ১৯৭১ সাল। বড়দিনের আগের সন্ধ্যায় মায়ের সঙ্গে জুলিয়েন ফিরছিলেন পেরুর পাঙ্গুয়ানার নিজের বাড়িতে। পড়াশোনার জন্য পেরুরই অন্য একটি শহর, লিমায় থাকতেন জুলিয়েন।
০৭২৩
বাবা-মা দু’জনেই প্রাণীবিজ্ঞানী। পাঙ্গুয়ানার বাড়িটি ছিল আদতে ছোটখাট গবেষণাগার। জঙ্গলে তাঁরা বাড়িটি করেছিলেন গবেষণার সুবিধার জন্যই।
০৮২৩
বাড়ি ফেরার জন্য সেদিন প্রথম থেকেই তাড়াহুড়ো করছিল জুলিয়েন। এদিকে একের পর গোলমালও হয়েই চলেছিল। এক ঘণ্টার উড়ান। অথচ সেই বিমান রওনা হতেই দেরি হয়ে যায় ৭ ঘণ্টা।
০৯২৩
২৪ ডিসেম্বর দুপুরের কিছু আগে আকাশে ওড়ে জুলিয়েনদের বিমান। লানসা ফ্লাইট নম্বর ৫০৮। তবে ওড়ার ২৫ মিনিট পরই আবার শুরু হয় গোলমাল।
১০২৩
হঠাৎই প্রবল ঝড়বৃষ্টির মধ্যে পড়ে বিমানটি। মারাত্মক ঝাঁকুনি দিতে শুরু করে। ঝাঁকুনির দমকে খুলে যায় প্লেনের জিনিসপত্র রাখার জায়গা। যাত্রীদের অনেকেই ক্রিসমাসের উপহার নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। বড়দিনের আগেই সেই উপহারের বৃষ্টি শুরু হয় বিমানের ভিতর যাত্রীদের মাথার উপরে।
১১২৩
চাইলে তখনও ঘুরিয়ে নেওয়া যেত বিমান। কিন্তু বিমান সংস্থার উপরেও সম্ভবত উৎসবের চাহিদা মেটানোর চাপ ছিল। তাই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বিমানটি তার যাত্রাপথে এগোতে থাকে। আর ঠিক ১০ মিনিট পরে ঘটে যায় দুর্ঘটনা।
১২২৩
বিদ্যুতের একটা ঝলক দেখা যায় বিমানের বামদিকের ডানায়। জুলিয়েন তাঁর মাকে চিৎকার করে বলতে শোনে— ‘‘ব্যাস এটাই শেষ। সব শেষ হয়ে গেল।’’ তারপরই ওই বিমান ডিগবাজি খেয়ে নাকবরাবর সজোরে নিচে নামতে শুরু করে। জুলিয়েনের এরপর আর কিছু মনে নেই।
১৩২৩
শেষমুহূর্তে শুধু ইঞ্জিনের প্রবল আওয়াজ, ঘুটঘুটে অন্ধকার আর চারপাশে আতঙ্কের চিৎকারের কথা মনে আছে তাঁর। আর মনে আছে একটা দৃশ্য ঘন জঙ্গল ক্রমশ তার দিকে এগিয়ে আসছে।
১৪২৩
পরের দিন জ্ঞান ফেরে জুলিয়েনের। ঝড়ে যাওয়া পাতার পুরু চাদরের উপর পড়েছিল তাঁর যন্ত্রণায় কাঁটা হয়ে থাকা শরীরটা। ২১ হাজার ফুট উচ্চতায় দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছিল তাঁর বিমান ১০ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে ভেঙে পড়ে। সেখান থেকে জঙ্গলের পাতার বিছানায় এসে পড়েছিল সদ্য স্কুল পেরনো কিশোরী।
১৫২৩
তবে তারপরও আঘাত লেগেছিল। কলার বোন ভেঙে গিয়েছিল জুলিয়েনের, মুচড়ে গিয়েছিল হাঁটু। কাঁধে, পায়ে ছিল গভীর ক্ষত। আহত অবস্থায় জ্ঞান ফিরলেও উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ছিল না। আরও একটা দিন, আরও একটা রাত ওই ভাবেই পাতার বিছানায় শুয়ে প্রায় অচেতন হয়েই কেটে যায় তাঁর। পরে সেই অভিজ্ঞতার কথা জুলিয়েন জানাবেন তাঁর জীবনকাহিনীতে। লিখবেন, ‘সারা শরীর ভিজে। কাদায়-নোংরায় মাখামাখি। হয়তো দুর্ঘটনার পরে দিন-রাত বৃষ্টি হয়েছিল। আমি পাতার বিছানায় মায়ের গর্ভে থাকা ভ্রুণের মতোই নিশ্চিন্তে শুয়েছিলাম। জ্ঞান ফেরার পরও। আরও ২৪ ঘণ্টা।’
১৬২৩
ডিসেম্বর মাস। তারওপর বৃষ্টি। খোলা আকাশ। শীতবোধ সম্ভবত চলে গিয়েছিল জুলিয়েনের। না হলে ভিজে পোশাকে ওই ঠাণ্ডায় আরও অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা। তার উপর জুলিয়েনের কাছে খাবার ছিল না। বৃষ্টি হওয়ায় আগুন জ্বালার শুকনো ডালও ছিল না।
১৭২৩
ছোট থেকেই জঙ্গলে বড় হয়েছেন। বাবা তাঁকে শিখিয়েছিলেন জঙ্গলে পথ হারালে কী ভাবে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে। জুলিয়ন লিখেছেন, ‘বাবা বলেছিলেন, জঙ্গলে হারালে সবসময় নদীর খোঁজ করতে। নদীই রাস্তা দেখাবে। ছোটবেলার সেই শিক্ষা কাজে লাগে। জঙ্গলের আওয়াজ শুনে বুঝতে পারি আমি পাঙ্গুয়ানার জঙ্গলেই রয়েছি। একটা লাঠি নিয়ে রাস্তার খোঁজে বেরিয়ে পড়ি।’
১৮২৩
প্রথমেই মায়ের খোঁজ করেন জুলিয়েন। কিন্তু তাঁর আশপাশে প্লেনের চিহ্নমাত্র দেখতে পাচ্ছিলেন না তিনি। বেশ কয়েক মাইল হাঁটার পর কিছু ক্রিসমাসের উপহার চোখে পড়ে, বাক্সে ভরা কেক এবং মিষ্টিও। তবে মাকে খুঁজে পাননি। পরে জানতে পেরেছিলেন, ওই দুর্ঘটনায় তিনিই ছিলেন একমাত্র জীবিত বিমানযাত্রী।
১৯২৩
নদীর খোঁজে হাঁটতে হাঁটতে এক’টি ঝর্ণার উৎসস্থল খুঁজে পেয়েছিলেন জুলিয়েন। সেটি অনুসরণ করে হাঁটতে থাকেন। নদীর খোঁজও পান। প্রায় ৭ দিন সেই নদীর পাড় বরাবর হাঁটতে হাঁটতে এক সময় নদী চওড়া হতে শুরু করে। আরও একদিন হাঁটার পর চোখে পড়ে বসতি। নদীর পাড়ে বাঁধা একটি নৌকাও দেখতে পান জুলিয়েন। তার পাশেই ছিল একটা কুঁড়ে ঘর।
২০২৩
ততদিনে জখম শরীর টানতে টানতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন জুলিয়েন। ক্ষতে তৈরি হয়েছে ঘা। পোকা ধরেছে তাতে। মুচকে যাওয়া পা-ও আর টানতে পারছেন না। কুঁড়েঘর দেখে জোর পান জুলিয়েন। আর প্রথমেই নিজের ক্ষতস্থানের চিকিৎসা করেন।
২১২৩
নিজের বইয়ে জুলিয়েন জানিয়েছেন, ছোটবেলায় দেখেছিলেন, ক্ষত সারাতে কেরোসিন ব্যবহার করতেন বাবা। জুলিয়েন নৌকায় গ্যাসোলিন পেয়েছিলেন। সেই তেলই ঢালে দেন ক্ষতস্থানে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষতস্থান থেকে পরজীবী পোকা বেরিয়ে আসতে শুরু করে। তিনি নিজে হাতে অন্তত ২০-২৫টি এমন পোকা টেনে বের করেছিলেন সেদিন। তবে তারপর জ্ঞান হারান।
২২২৩
ওই কুঁড়ে ঘর থেকে তাঁকে পরের দিন উদ্ধার করে স্থানীয় জেলেরা। প্লেনে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হন শহরের হাসপাতালে। ধীরে ধীরে সুস্থ হন জুলিয়েন। তবে ওই ১১দিনের ওই অভিজ্ঞতায় জীবনটাই বদলে যায় তাঁর। জুলিয়েন এরপর বাবা মায়ের মতোই প্রাণীবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। পাঙ্গুয়ানার জঙ্গলেই তৈরি করেন গবেষণাগার। পরে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে একটি বই লেখেন। নাম ‘হোয়েন আই ফেল ফ্রম স্কাই’।
২৩২৩
তবে জুলিয়েনের এই ১১ দিনের সফর শুধু বইয়ে নয় সিনেমার গল্প হিসেবেও জায়গা করে নিয়েছে। ইতালীয় ভাষায় তৈরি সেই সিনেমার নাম ‘মিরাকেল স্টিল হ্যাপেন্স’। অর্থাৎ আজও অলৌকিক ঘটনা ঘটে।