Journey of Salman Rushdie and several attacks on him due to controversial novel dgtl
Salman Rushdie
Salman Rushdie: মাথার দাম রাখা হয়েছিল প্রায় ২৪ কোটি টাকা! এর আগেও সলমন রুশদির উপর হয়েছে একাধিক হামলা
১৯৮৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, অর্থাৎ ‘প্রেম দিবস’-এ তাঁর নামে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছিলেন ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা রুহোল্লা খোমেইনি।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২২ ১৬:৪২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
নিউ ইয়র্ক থেকে ১০০ কিমি দূরে শতকা ইন্সটিটিউশনের মঞ্চে বক্তৃতা করতে ওঠার সময় এক হামলাকারীর ছুরিকাঘাতে আহত বুকারজয়ী লেখক সলমন রুশদি। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি ৭৫ বছর বয়সি এই লেখক। তাঁর একটি চোখ নষ্ট হতে পারে বলেও সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও রুশদির উপর বেশ কয়েক বার আক্রমণ ঘটেছিল।
০২২১
১৯৪৭ সালের ১৯ জুন, ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের বোম্বে (বর্তমানে মুম্বই) শহরে এক কাশ্মীরি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আহমেদ সলমন রুশদি।
০৩২১
সলমনের বাবা আনিস আহমেদ রুশদি কেমব্রিজ-ফেরত আইনজীবী ছিলেন। তবে পরে তিনি ব্যবসা শুরু করেন। মা নেগিন ভট্ট ছিলেন শিক্ষিকা। ‘রুশদি’ তাঁদের পারিবারিক উপাধি নয়। স্পেনের আন্দালুসিয়ার দ্বাদশ শতকীয় বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন দার্শনিক ইবনে রুশদের সম্মানে তাঁর বাবা নামের শেষে 'রুশদি' শব্দটি ব্যবহার করতেন। সলমন ছাড়া রুশদি দম্পতির আরও তিন কন্যাসন্তান ছিল।
০৪২১
সলমন বোম্বেতে বেড়ে ওঠেন এবং দক্ষিণ বোম্বের ‘ক্যাথিড্রাল অ্যান্ড জন কোনন স্কুল’-এ পড়াশোনা শুরু করেন। পরে ইংল্যান্ডে গিয়ে ওয়ারউইকশায়ারের রাগবি স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। স্কুলের পড়াশোনা চুকিয়ে ভর্তি হন কেমব্রিজের কিংস কলেজে। সেখান থেকেই ইতিহাসে স্নাতক হন। কেমব্রিজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর পাকাপাকি ভাবে ব্রিটেনে চলে যাওয়ার আগে কিছু দিন পরিবারের সঙ্গে পাকিস্তানেও ছিলেন সলমন।
০৫২১
২০০০ সাল থেকে আমেরিকায় বসবাস করতে শুরু করেন সলমন। ফুটবলপ্রেমী সলমন ইংলিশ ফুটবল ক্লাব টটেনহ্যাম হটস্পারের ভক্ত।
০৬২১
রুশদি বিজ্ঞাপনী সংস্থা ওগিলভি অ্যান্ড ম্যাথার-এর কপিরাইটার হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। এই সময়ে তিনি একাধিক সংস্থার জন্য বিজ্ঞাপনী ‘কপি’ লিখেছিলেন। যার মধ্যে বেশির ভাগই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। সঙ্গীতশিল্পী রনি বন্ডের সঙ্গে জোট বেঁধে গানও লিখেছিলেন রুশদি। ওগিলভিতে কাজ করতে করতে রুশদি উপন্যাস লেখায় হাত দেন। এখানে কর্মরত অবস্থাতেই তিনি লেখেন ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’। এই উপন্যাসটির জন্য বুকার পুরস্কার পান রুশদি।
০৭২১
রুশদির লেখা প্রথম উপন্যাস ছিল ‘গ্রিমাস’। ১৯৭৫ সালে তিনি এই উপন্যাসটি লেখেন। এর পরই ১৯৮১-তে লেখেন ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’। এ ছাড়াও তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলি হল ‘শেম’, ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’, ‘দ্য মুর’স লাস্ট সাই’, ‘দ্য গ্রাউন্ড বিনিথ হার ফিট’ । পাশাপাশি কিশোরদের জন্য দু'টি উপন্যাস তিনি লিখেছেন। লিখেছেন বেশ কিছু নিবন্ধও।
০৮২১
তবে যে উপন্যাসটি লিখে তিনি রাতারাতি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন, সেটি হল ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’। ১৯৮৮ সালে তিনি এই উপন্যাসটি লেখেন। এই বইটির কারণে ‘ধর্মদ্রোহ’-এর অভিযোগ আনা হয় রুশদির বিরুদ্ধে। তাঁর উপর রুষ্ট হয় বিভিন্ন কট্টরপন্থী ইসলাম সংগঠন। এমনকি, রুশদির বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানাও জারি করা হয়।
০৯২১
১৯৮৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, অর্থাৎ ‘প্রেম দিবস’-এ তাঁর নামে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছিলেন ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা রুহোল্লা খোমেইনি। খোমেইনি মারা গেলেও এই ‘ফতোয়া’ জারি থেকেছে বছরের পর বছর। সলমনের মাথার দাম রাখা হয়েছিল প্রায় ৩০ লক্ষ ডলার।
১০২১
তবে রুশদি বার বার দাবি করেছেন যে, তাঁর উপন্যাসের ভুল ব্যাখা করা হয়েছে। এই উপন্যাস নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক প্রসঙ্গে রুশদি এক বার আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘‘সে সময়ে ইসলাম তেমন কোনও বিষয় ছিল না। কেউ অত ভাবতও না। এখন যেটা হয়েছে, পশ্চিমের মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল। বইটি সম্পর্কে সত্যিই ভুল বোঝা হয়েছিল।’’
১১২১
ভারত-সহ ১৩টি দেশে ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ উপন্যাসটির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। যদিও ২০১৫ সালে, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম স্বীকার করেন যে এই উপন্যাস নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। ১৯৯৮ সালে, ইরানের সাবেক রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ খাতামি রুশদির বিরুদ্ধে আনা ‘ফতোয়া’ তুলে নেন। সরকারি ভাবে প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করা হলেও অনেক কট্টরপন্থী নেতাই তাঁর উপর আনা ‘ফতোয়া’ জারি রেখেছিলেন।
১২২১
তবে শুধু শতকা ইন্সটিটিউশনের হামলাই নয়, ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ লেখার পর থেকে একের পর এক হামলা চলেছে রুশদির উপর। এই হামলা থেকে বাঁচার জন্য ১৩ বছর বেনামেও কাটিয়েছিলেন তিনি। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে ‘ছদ্মনামে’র জীবন থেকে বেরিয়ে আসেন রুশদি।
১৩২১
১৯৮৯ সালের ৩ অগস্ট মোস্তফা মাহমুদ মাজেহ নামে এক ব্যক্তি বিস্ফোরক ভর্তি বই নিয়ে লন্ডনের প্যাডিংটনের একটি হোটেলে পৌঁছন। উদ্দেশ্য ছিল, রুশদিকে হত্যা করা। কিন্তু এই বই-বোমা আগেই ফেটে মোস্তফার মৃত্যু হয়। কট্টরপন্থী মুজাহিদিন দল এই আক্রমণের দায় স্বীকার করে। মোস্তফাকে ইরানে শহিদের সম্মান দেওয়া হয়।
১৪২১
নব্বইয়ের দশকে ইটালির মিলানেও রুশদির উপর হামলা চালানো হয়। ২০১০ সালে আল কায়দা জঙ্গি সংগঠনের খতম তালকায় নাম উঠে আসে রুশদির।
১৫২১
২০১২ সালের জানুয়ারিতে রাজস্থানের ‘জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভাল’-এ উপস্থিত থাকার কথা ছিল রুশদির। তবে পরে তিনি তাঁর সফর বাতিল করেন। রুশদি জানিয়েছিলেন, তিনি জয়পুর গেলে তাঁর উপর হামলা চালানো হতে পারে। তাঁকে পুলিশের তরফে এই খবর দেওয়া হয়। তবে পরে রুশদি দাবি করেছিলেন যে, ঝামেলা এড়াতেই পুলিশ তাঁকে মিথ্যে তথ্য দিয়েছিল।
১৬২১
তবে শুধু রুশদি নন, ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর জাপানি অনুবাদক হিতোশি ইগারাসিকেও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় টোকিয়োর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১৭২১
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার পর পরই ১৯৯০ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল গোরিলাঁয়ে’ নামে একটি পাকিস্তানি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। এই চলচ্চিত্রে রুশদিকে খলনায়কের চরিত্রে দেখানো হয়। সিনেমার শেষে তাঁর আদলে তৈরি চরিত্রটিকে মেরে ফেলা হয়।
১৮২১
সাহিত্যে তাঁর অবদানের জন্য ২০০৭ সালে রুশদিকে ব্রিটিশ সরকারের তরফে নাইটহুড প্রদান করা হয়। তবে বিশ্ব জুড়ে এই ঘটনার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন ইসলামপন্থী বহু মানুষ। তবে এই সম্মান পেয়ে তিনি খুশি বলেই জানিয়েছিলেন রুশদি।
১৯২১
তাঁর জীবনে ফতোয়া জারির মতো বিপদ ঘনালেও রুশদির ব্যক্তিগত জীবন কিন্তু বর্ণময়।
২০২১
সলমন মোট চার বার বিয়ে করেছেন। ১৯৭৬ সালে সলমনের বিয়ে হয় ক্লারিসা লুয়ার্ডের সঙ্গে। তবে ১৯৮৭ সালে তাঁদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। এর পর ১৯৮৮ সালে আমেরিকার সাহিত্যিক মারিয়ান উইগিন্সকে বিয়ে করেন সলমন। বিয়ে ভাঙে ১৯৯৩ সালে।
২১২১
১৯৯৭ সালে সলমন বিয়ে করেন এলিজাবেথ ওয়েস্টকে। ২০০৪ সালে তাঁর সঙ্গেও বিচ্ছেদ ঘটে। এর পরেও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সলমন। ২০০৪ সালে আমেরিকার ভারতীয় বংশোদ্ভূত অভিনেত্রী এবং মডেল পদ্মা লক্ষ্মীকে বিয়ে করেন। এই বিয়েও ভাঙে ২০০৭-এ। (সঙ্গের ছবিটি রুশদি এবং তাঁর চতুর্থ স্ত্রী পদ্মা লক্ষ্মীর)