Journey of India’s first woman pilot Sarla Thakral, who rode a plane in a Saree back in 1936 dgtl
Sarla Thukral
পাইলটের কেরিয়ার ছেড়ে হন পোশাকশিল্পী, বিয়ে করেন দু’বার, সরলার জীবন সিনেমার মতো
শাড়ি পরেই উঠে বসেছিলেন বিমানে। তখন তাঁর বয়স মোটে ২১। তবে কোলে চার বছরের সন্তান। যদিও তত দিনে তাঁর আকাশে ওড়ার ১০০০ ঘণ্টা সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে।
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতাশেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:২৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
সাদাকালো ছবিতে একটি জিপসি মথ বিমানের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক ছিপছিপে তরুণী। হাতটি বিমানের ডানায় ভর দেওয়া। নিজেও ঠেসান দিয়েছেন সেই ডানাতেই। পরনে শাড়ি, ঘটিহাতা ব্লাউজ, হাতে কয়েক গাছা চুড়ি আর মাথায় এই পোশাক-আশাকের সঙ্গে একেবারেই বেমানান একটি পাইলটের হেলমেট।
০২২২
নাম সরলা ঠকরাল। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে এই ছবি তোলার পর সম্ভবত তিনি উঠে বসেছিলেন ওই জিপসি মথ বিমানে। শাড়ি পরেই। আর তৈরি করেছিলেন ইতিহাস।
০৩২২
ভারতের আকাশে তখন সবে ডানা মেলতে শুরু করেছেন মহিলা বিমানচালকেরা। সরলা তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৩৬ সালে বিমান চালনার ‘এ’ লাইসেন্স পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তখন সরলা সবে ২১ বছরের তরুণী। তবে ইতিমধ্যেই বিবাহিতা এবং কোলে চার বছরের সন্তান।
০৪২২
ককপিটে যখন ধোপদুরস্ত পোশাকের পুরুষ বিমানচালককে দেখতেই অভ্যস্ত দেশ, সরলা সেই সময় হয়ে উঠেছিলেন এক অন্য আত্মবিশ্বাসী ভারতের প্রতিভূ। একঝলক দমকা হাওয়ার মতো এক ভারতের এক নতুন প্রজন্মের মুখ। মেয়েদের ঘর সামলানোই যে সময়ের রেওয়াজ, সরলা সেই সময়ে দাঁড়িয়ে বাঁধ ভাঙার সাহস আর দৃঢ়তা দেখিয়েছিলেন।
০৫২২
সরলার শাড়ি-ব্লাউজ চুড়ি পরে ককপিটে বসে পড়াতেই সেই নতুন ভারতের সূচনা। তবে সেই সূচনা সহজে ছিল না। বিশেষ করে সবে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে বিয়ে হয়ে যাওয়া এক ১৬ বছরের কিশোরীর ক্ষেত্রে তো নয়ই।
০৬২২
তবে সরলাকে সাহায্য করেছিলেন তাঁর শ্বশুরবাড়ির সদস্যরাই।
০৭২২
কথায় বলে, প্রত্যেক সফল পুরুষের পিছনে কোনও না কোনও নারীর অবদান থাকে। সরলার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হয়েছিল ঠিক উল্টো। তাঁর সাফল্যের পুরো কৃতিত্বই দু’জন পুরুষের। একজন সরলার স্বামী অন্য জন তাঁর শ্বশুর।
০৮২২
১৯১৪ সালে দিল্লিতে জন্ম সরলার। ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। তাঁর স্বামী পি ডি শর্মা নিজে ছিলেন বিমানচালক।
০৯২২
বস্তুত, শর্মা পরিবারের অধিকাংশই ছিলেন বিমানচালনার পেশায়। সব মিলিয়ে মোট ৯ জন সদস্য ছিলেন পাইলট।
১০২২
বিশেষ করে সরলার স্বামী ছিলেন একজন কৃতী বিমানচালক। ভারতে তিনিই ছিলেন প্রথম পাইলট, যাঁকে এয়ারমেল পাইলটের লাইসেন্স দেওয়া হয়। অবিভক্ত ভারতে নিয়মিত করাচি থেকে লাহোরে বিমান চালাতেন তিনি।
১১২২
সরলার বিমান চালনার পাঠ নেওয়া শুরু স্বামী এবং শ্বশুরের উৎসাহেই। আবার পড়াশোনা শুরু করেন সরলা। শ্বশুরই তাঁকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন অবিভক্ত ভারতের লাহোরের ফ্লাইং ক্লাবে।
১২২২
১৯৪৭ সালে প্রেম মাথুর ভারতের প্রথম ডোমেস্টিক এয়ারলাইন্সের বাণিজ্যিক বিমান চালানোর অনুমোদন পান। ১৯৫৬ সালে দূর্বা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান চালানোর অনুমোদন পান। তারও প্রায় ৫০ বছর পর ২০০২ সালে ভারতের বায়ুসেনার প্রথম মহিলা এয়ার ভাইস মার্শাল হন পদ্মাবতী বন্দ্যোপাধ্যায়। এঁদের নিয়ে ভারতীয়দের গর্বের অন্ত নেই।
১৩২২
সেখানে সরলা প্রথম বিমান চালানোর লাইসেন্স পেয়েছিলেন ১৯৩৬ সালে। ২১ বছরের সরলার তত দিনে পাইলট হিসাবে ১০০০ ঘণ্টা আকাশে ওড়া হয়ে গিয়েছে।
১৪২২
কিন্তু প্রত্যেক গল্পেই ক্লাইম্যাক্স থাকে। থাকে অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স। সরলার জীবনকাহিনীও সেই নিয়মের বাইরে নয়।
১৫২২
পাইলট হিসাবে অনুমোদন পাওয়ার তিন বছরের মাথায় স্বামীকে হারান সরলা। ১৯৩৯ সালে একটি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান শর্মা। সরলা তখন ২৫ বছরের তরুণী। তাঁর কোলে দুই শিশুকন্যা। বড়টির বয়স সাত। ছোটটি তিন বছরের।
১৬২২
তখন বাণিজ্যিক বিমান চালানোর ‘বি’ লাইসেন্স পাওয়ার তোড়জোড় করছেন সরলা। শর্মার মৃত্যু না হলে হয়তো ইতিহাস বদলে যেত। প্রেম মাথুর বা দূর্বা নয়, তিনিই হতেন ভারতের বাণিজ্যিক বিমানের প্রথম প্রথম মহিলা পাইলট। কিন্তু ওই একটি ঘটনায় সব বদলে যায়।
১৭২২
কিছুটা ভেঙে পড়েছিলেন সরলা। তবে তাঁর বাণিজ্যিক বিমানচালনার প্রশিক্ষণ থমকে যায় আরও একটি কারণে। সেই সময়েই শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
১৮২২
মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত সরলা এই সময়ে ফিরে যান লাহোরে। মায়ো স্কুল অফ আর্টসে বাংলার চিত্র কলা বিষয়ে ডিপ্লোমা করেন। পরে দেশভাগের পর দুই মেয়েকে নিয়ে ফিরে আসেন দিল্লিতে।
১৯২২
দিল্লিতে ফিরে দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন সরলা। আর্যসমাজের সদস্য হওয়ায় দ্বিতীয় বিয়েতে অসুবিধা ছিল না বিশেষ। বরং আর্যসমাজে বিধবাদের পুনর্বিবাহে উৎসাহই দেওয়া হত। তরুণী সরলার সঙ্গে আলাপ হয় পি পি ঠাকরালের । সেই আলাপই গড়ায় বিয়েতে।
২০২২
এর পর আর বিমানচালনার প্রশিক্ষণে ফেরেননি সরলা। বরং একেবারেই অন্য পথ বেছে নেন। পোশাকশিল্পী হিসাবে কাজ শুরু করেন। শাড়ি, গয়না, জামাকাপড় বানাতে শুরু করেন চারুকলার ছাত্রী সরলা। বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত তাঁর বানানো পোশাকের নিয়মিত ক্রেতা ছিলেন। আরও বহু শৌখিনী মহলেই সমাদৃত হয়েছিল সরলার তৈরি পোশাক-আশাক। পরে ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার কস্টিউম ডিজ়াইনের দায়িত্বও দেওয়া হয় তাঁকেই।
২১২২
এর পাশাপাশি ছবি আঁকাও চলছিল সরলার। সোজা কথায়, এক জীবনে যে দু’টি ভিন্নধারার যাপন করেছেন সরলা, সেই দু’ক্ষেত্রেই সফল হয়েছেন। শেখার মতো জীবনবোধ ছিল সরলার।
২২২২
২০০৯ এর মার্চে দিল্লিতে মৃত্যু হয় সরলার। তবে তাঁর সফর এবং সেই সফরে পাওয়া পারিবারিক সমর্থন এই আধুনিক ভারতেও অনেককে অনুপ্রেরণা দিতে পারে।