JioCoin launched by Mukesh Ambani how you can earn this digital token free of cost dgtl
JioCoin
‘জিয়োকয়েন’ কী? সত্যিই কি ক্রিপ্টোর দুনিয়ায় পা রাখলেন অম্বানী? কী ভাবে পাওয়া যাবে এই ‘মুদ্রা’?
ওয়েব৩ প্রযুক্তিকে বিকশিত করতে ব্লকচেন সংস্থা পলিগনের সঙ্গে অংশীদারি চুক্তি করেছে রিলায়্যান্স জিয়ো। তার পর থেকেই মুকেশ অম্বানীর সংস্থা ক্রিপ্টো মুদ্রা হিসাবে ‘জিয়োকয়েন’ চালু করতে চলেছে বলে তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:২৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি দ্বিতীয় বার নির্বাচিত হতেই ক্রিপ্টো মুদ্রার দুনিয়ায় এসেছে সুনামি। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বিটকয়েন-সহ সমস্ত ভার্চুয়াল মুদ্রার দাম। এই আবহে কি ডিজিটাল মুদ্রার দুনিয়ায় পা রাখতে চলেছেন ভারতের ধনীতম শিল্পপতি তথা রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়ের কর্ণধার মুকেশ অম্বানী? তাঁর ‘জিয়োকয়েন’কে কেন্দ্র করে তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।
০২২২
রিলায়্যান্স যে ক্রিপ্টোর দুনিয়ায় ঢুকতে চলেছে, সেই খবর প্রথম প্রকাশ্যে আনে পলিগন ল্যাব্স নামের একটি ভারতীয় ব্লকচেন সংস্থা। চলতি বছরের (পড়ুন ২০২৫) ১৫ জানুয়ারি তাদের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি করে মুকেশের সংস্থা জিয়ো। এর পর অম্বানীরা নতুন ডিজিটাল মুদ্রা বাজারে আনছেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে।
০৩২২
প্রসঙ্গত, বিটকয়েনের মতোই ইথেরিয়াম নামের একটি ক্রিপ্টো মুদ্রা রয়েছে। এই ডিজিটাল টাকার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে পলিগন। ভার্চুয়াল মুদ্রাটির গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে ভারতীয় ব্লকচেন সংস্থা। তাদের সঙ্গে রিলায়্যান্স জিয়োর সমঝোতায় ভারতীয় বাজারে অম্বানীদের নতুন ডিজিটাল মুদ্রা আসার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
০৪২২
পলিগনের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছিল রিলায়্যান্স জিয়ো। সেখানে বলা হয়, গ্রাহকদের কাছে ‘ওয়েব ৩’ পরিষেবা পৌঁছে দিতে কাজ করবে এই ভারতীয় ব্লকচেন সংস্থাটি। বিষয়টি নিয়ে সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের একাংশ এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করা শুরু করেন। সেখানেই তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দেন পলিগনের প্রতিষ্ঠাতা সন্দীপ নেলওয়াল।
০৫২২
নিজের লেখায় ‘জিয়োকয়েন’ শব্দটি ব্যবহার করেন সন্দীপ। অচিরেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। রিলায়্যান্স জিয়োর তরফে এ ব্যাপারে সরকারি ভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। কয়েক বছর আগে মুকেশ অম্বানীর সংস্থা অবশ্য জানিয়েছিল, এ দেশের বাজারে কোনও ক্রিপ্টো মুদ্রা আনার পরিকল্পনা করছেন না তাঁরা।
০৬২২
ক্রিপ্টো মুদ্রা হিসাবে ‘জিয়োকয়েন’কে বাজারে না আনলেও এর যে অস্তিত্ব নেই, তা ভাবলে ভুল হবে। এটি মূলত একটি ব্লকচেনভিত্তিক পুরস্কার টোকেন। জিয়োর ইন্টারনেট, অ্যাপ এবং পরিষেবা ব্যবহারকারী গ্রাহকেরা মুকেশের সংস্থার থেকে এটি উপার্জন করে থাকেন। শুধু তা-ই নয়, নিখরচায় এই ডিজিটাল মুদ্রায় পকেট ভরানোর সুযোগও রয়েছে তাঁদের।
০৭২২
অম্বানীরা কী ভাবে গ্রাহকদের মধ্যে ‘জিয়োকয়েন’ বিলি করছেন, তা বুঝতে হলে এই সংস্থার ব্যবসায়িক মডেলটি জানতে হবে। ২০১৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জিয়ো ইন্টারনেট পরিষেবা বাজারে নিয়ে আসেন রিলায়্যান্স কর্ণধার। ওই সময়ে গ্রাহকদের বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছিলেন তিনি।
০৮২২
পরবর্তী কালে একাধিক নতুন পরিষেবা চালু করে জিয়ো। এর মধ্যে রয়েছে বিনোদন ও খেলার চ্যানেল বা আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত অ্যাপ। ধীরে ধীরে জিয়ো ইন্টারনেট পরিষেবাও আর বিনামূল্যের থাকে না। বর্তমানে ‘জিয়োস্পিয়ার’ নামের অ্যাপভিত্তিক একটি ওয়েব ব্রাউজ়ার রয়েছে মুকেশের সংস্থার। এটি বহুজাতিক টেক জায়ান্ট সংস্থা গুগ্লের সার্চ ইঞ্জিনের মতোই কাজ করে।
০৯২২
‘জিয়োস্পিয়ার’-এর গ্রাহকদের পুরস্কারমূল্য হিসাবে ‘জিয়োকয়েন’ দিচ্ছে অম্বানীদের সংস্থা। অর্থাৎ, জিয়োর ইন্টারনেট এবং অন্যান্য পরিষেবা গ্রহণকারীরা এই ডিজিটাল মুদ্রা উপার্জন করতে পারবেন। জিয়োকয়েনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বিলের টাকা মেটানো যাবে। যদিও এর মূল্য এখনও নির্ধারণ করেননি ভারতের ধনীতম শিল্পপতি।
১০২২
বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, এক একটি ‘জিয়োকয়েন’-এর মূল্য ৪৩ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বর্তমানে জিয়োর গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৪৫ কোটি। তাঁদের প্রত্যেকের কাছে ওই ডিজিটাল মুদ্রা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে মুকেশের টেলিকম সংস্থার।
১১২২
‘জিয়োকয়েন’ উপার্জন করতে হলে ব্যবহারকারীকে অবশ্যই ‘জিয়োস্পিয়ার’ অ্যাপের মাধ্যমে এর প্রোগ্রামে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস, উইন্ডোজ় এবং ম্যাক— সব ধরনের প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মেই এর যোগ রয়েছে। একাধিক আঞ্চলিক ভাষার সুবিধাও এতে দিয়েছে রিলায়্যান্স।
১২২২
সূত্রের খবর, এই ‘জিয়োস্পিয়ার’ আরও উন্নত করতে ব্লকচেন সংস্থা পলিগন কাজ করবে। গ্রাহকেরা এতে নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। ওয়েব ব্রাউজ়ারটিকে বিজ্ঞাপনের জন্য আরও ভাল ভাবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে রিলায়্যান্স জিয়োর। মাইজিয়ো, জিয়োসিনেমা, জিয়োমার্টের পাশাপাশি এতে আরও অনেক কিছু বিকশিত করার পরিকল্পনা রয়েছে মুকেশের সংস্থার।
১৩২২
‘জিয়োকয়েন’ উপার্জনের জন্য গ্রাহকদের একাধিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে বলেছে রিলায়্যান্সের টেলিকম সংস্থা। এর মধ্যে রয়েছে, ওয়েব ব্রাউজ়িং, ভিডিয়ো দেখা, বিভিন্ন প্রবন্ধ পড়া বা তথ্য সংগ্রহ, গেমিং, ভিপিএন পরিষেবার ব্যবহার, সেটিংস কাস্টমাইজ় করা। তবে অবশ্যই এই সমস্ত কাজ ‘জিয়োকয়েন’ প্রোগ্রামে সাইন আপের পর করতে হবে।
১৪২২
এক বার খরচ করার পর ফের ‘জিয়োকয়েন’কে পুনরুদ্ধার করা যাবে। যদিও তার রূপরেখা এখনও প্রকাশ করা হয়নি। এই ডিজিটাল মুদ্রা কোথায় কোথায় ব্যবহার করা যাবে তা-ও স্পষ্ট নয়। যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, মোবাইল এবং ব্রডব্যান্ড রিচার্জ, জিয়োমার্টে কেনাকাটা এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলিতে বিল এর মাধ্যমে মেটাতে পারবেন গ্রাহক।
১৫২২
রিলায়্যান্স জিয়োর সঙ্গে অংশীদারির বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছেন পলিগনের প্রতিষ্ঠাতা সন্দীপ নেলওয়াল। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতে ওয়েব৩ প্রযুক্তি আনার ক্ষেত্রে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। মুকেশ অম্বানীর সংস্থার সঙ্গে কাজ করার জন্য মুখিয়ে রয়েছি। জিয়োর গ্রাহক উন্নত ওয়েব প্রযুক্তির স্বাদ পেতে চলেছেন।’’
১৬২২
বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, ওয়েব৩ প্রযুক্তি পুরোপুরি চলে এলে ‘জিয়োকয়েন’কে ক্রিপ্টোমুদ্রা হিসাবে বাজারে আনতে পারেন মুকেশ অম্বানী। সে ক্ষেত্রে জিয়োর গ্রাহক ছাড়াও আমজনতার সকলেই এতে লগ্নি করতে পারবেন। তবে ভার্চুয়াল মুদ্রাটিকে আয়কর সংক্রান্ত সরকারি কঠোর নিয়মের মধ্যে পড়তে হবে।
১৭২২
আয়কর আইন অনুযায়ী, ক্রিপ্টো মুদ্রা থেকে মুনাফার উপর গ্রাহককে ৩০ শতাংশ কর দিতে হয়। এ ছাড়া টিডিএস বাবদ কেটে নেওয়া হয় আরও এক শতাংশ টাকা। ‘জিয়োকয়েন’ ভার্চুয়াল মুদ্রা হিসাবে বাজারে এলে তার উপর কড়া নজর রাখবে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) এবং সিকিউরিটিজ় অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি)।
১৮২২
২০১৮ সালে এক বার মুকেশ অম্বানী ক্রিপ্টো মুদ্রা হিসাবে ‘জিয়োকয়েন’কে বাজারে আনছেন বলে খবর ছড়িয়েছিল। কিন্তু তা অস্বীকার করে রিলায়্যান্স গোষ্ঠী। বর্তমানে মুকেশ-পুত্র আকাশ অম্বানীর নেতৃত্বে ৫০ জনের একটি দল এই ডিজিটাল মুদ্রাটিকে নিয়ে কাজ করছেন বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।
১৯২২
বিশেষজ্ঞদের অনুমান, চলতি বছরেই (পড়ুন ২০২৫) ‘জিয়োকয়েন’-এর বাজারমূল্য ঘোষণা করবেন মুকেশ। পাশাপাশি, একে পুরোপুরি ক্রিপ্টো মুদ্রা হিসাবে লঞ্চ করতে পারেন তিনি। কেউ কেউ আবার বলছেন, ‘জিয়োকয়েন’কে শুধুমাত্র জিয়োর গ্রাহকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবে রিলায়্যান্স।
২০২২
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ক্রিপ্টো মুদ্রা নিয়ে বড় ঘোষণা করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমেরিকায় বড় আকারের ভার্চুয়াল মুদ্রার ব্যাঙ্ক গড়ে তুলবেন তিনি। এর পরই হু হু করে বাড়তে থাকে ডিজিটাল মুদ্রাগুলির দাম। বর্তমানে একটি বিটকয়েনের মূল্য ভারতীয় টাকায় প্রায় ৯১ হাজারে পৌঁছে গিয়েছে।
২১২২
প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার মুখে নিজের নামে একটি ক্রিপ্টো মুদ্রা বাজারে নিয়ে এসেছেন ট্রাম্প। এর মালিকানার একাংশ রয়েছে আমেরিকার ফার্স্ট লেডি তথা ডোনাল্ড-পত্নী মেলানিয়ার হাতে। বলা বাহুল্য, ট্রাম্প কুর্সিতে বসা ইস্তক এর দামও আকাশ ছুঁয়েছে।
২২২২
ভারতের নিজস্ব কোনও ক্রিপ্টো মুদ্রা নিয়ে। এই ভার্চুয়াল মুদ্রাকে নিয়ন্ত্রণ করা যথেষ্ট কঠিন। তবে নয়াদিল্লির নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। সূত্রের খবর, তার জন্য নতুন আইনও পাশ করাতে পারে কেন্দ্র। এই ইস্যুতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের শীর্ষকর্তারা কাজ করছেন বলে জানা গিয়েছে।