Japanese incoming Prime Minister Shigeru Ishiba demands Asian NATO know the details dgtl
Asian NATO
চিনের চোখরাঙানি বন্ধের নয়া পরিকল্পনা, এশিয়ায় ‘নেটো’ তৈরি করতে মরিয়া জাপান
প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় বাড়ছে আগ্রাসী চিনের দাদাগিরি। এই আবহে ‘এশিয়ান নেটো’ তৈরির কথা বলতে শোনা গেল জাপানের হবু প্রধানমন্ত্রীর গলায়।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:১১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
কখনও যুদ্ধজাহাজ দিয়ে তাইওয়ানকে ঘিরে মহড়া। কখনও আবার জাপানের একাধিক দ্বীপকে নিজেদের বলে দাবি করা। যত দিন গড়াচ্ছে, ততই প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় বাড়ছে চিনের দাদাগিরি। যা আটকাতে এ বার ‘এশিয়ান নেটো’ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে জাপান। দ্বীপরাষ্ট্রটির এই পরিকল্পনা আমেরিকার বিদেশনীতিকে অন্য খাতে নিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
০২২২
সম্প্রতি ‘এশিয়ান নেটো’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেন জাপানের প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। সূর্যোদয়ের দেশে তিনিই যে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন, তা একরকম নিশ্চিত। গত ২৭ সেপ্টেম্বর তাঁকে দলের নেতা নির্বাচিত করে দ্বীপরাষ্ট্রের শাসকদল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি।
০৩২২
জাপানের তরফে দাবি করা হয়েছে, এশিয়ান নেটো তৈরি হলে আগ্রাসী চিনকে ঠেকানো সম্ভব হবে। তখন আর প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় চোখ রাঙাতে পারবে না বেজিং। এর জন্য দীর্ঘ দিনের বন্ধু রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছে টোকিয়ো।
০৪২২
এই এশিয়ান নেটোয় আমেরিকাকেও যুক্ত করতে চাইছে জাপান। ওয়াশিংটন শেষ পর্যন্ত টোকিয়োর প্রস্তাবে রাজি হলে আটলান্টিকের পারের দেশটিতে নিজেদের সেনাবাহিনী রাখতে পারবে প্রশান্ত মহাসাগরের ওই দ্বীপরাষ্ট্র। কূটনৈতিক দিক থেকে যা মেনে নেওয়া আমেরিকার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
০৫২২
কয়েক দিন আগে আমেরিকার হাডসন ইনস্টিটিউটে দেওয়া বক্তৃতায় নিজের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন ইশিবা। সেখানে ‘এশিয়ান নেটো’র নীল নকশা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, এই রাষ্ট্রজোট কী ভাবে চিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন জাপানের ভাবি প্রধানমন্ত্রী।
০৬২২
হাডসন ইনস্টিটিউটের বক্তৃতায় ইশিবা বলেন, ‘‘এই এলাকায় নেটোর মতো কোনও রাষ্ট্রজোট নেই বলেই যুদ্ধ বাধার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, আক্রমণকারী জানে আক্রান্তের জন্য এগিয়ে এসে কেউ কোনও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলবে না। কোনও দেশের সেই বাধ্যবাধকতাও নেই।’’
০৭২২
এর পরই চিনের আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাপানের ভাবি প্রধানমন্ত্রী। দ্বীপরাষ্ট্রের আশপাশে প্রায়ই বেজিংয়ের রণতরী চলে আসার বিষয়টিকে যে তাঁরা মোটেই ভাল চোখে দেখছেন না, তা একরকম স্পষ্ট করেছেন ইশিবা। গত দু’-তিন বছর ধরে এই ইস্যুতে সুর চড়িয়ে আসছে টোকিয়ো।
০৮২২
জাপানের এই এশিয়ান নেটো তৈরির প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছে ওয়াশিংটন। আমেরিকার পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিষয়ক সহকারী বিদেশমন্ত্রী ড্যানিয়েল ক্রিটেনব্রিঙ্ক জানিয়েছেন, ‘‘এখনই এই ধরনের সৈন্য চুক্তি করা উচিত হবে না। টোকিয়ো বিষয়টি নিয়ে বড্ড বেশি তাড়াহুড়ো করছে।’’
০৯২২
তবে আমেরিকা যাই বলুক না কেন, নিজের অবস্থানে অনড় জাপানের ভাবি প্রধানমন্ত্রী। দেশে ফিরে রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন করে ফের এক বার এই বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন তিনি। ইশিবা বলেন, ‘‘আমেরিকার শক্তি দিন দিন কমছে। এই অবস্থায় এশিয়ান নেটো তৈরি করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও রাস্তা নেই।’’
১০২২
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার কাছে চূড়ান্ত পরাজয় হয় জাপানের। ১৯৪৫ সালের ৬ ও ৯ অগস্ট পরমাণু বোমা ফেলে দ্বীপরাষ্ট্রের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরকে ধ্বংস করে দেয় ওয়াশিংটন। এর পরই আত্মসমর্পণ করে টোকিয়ো।
১১২২
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আমেরিকার ছত্রছায়ায় চলে যায় জাপান। সূর্যোদয়ের দেশটির জাতীয় সুরক্ষায় যাবতীয় দায়দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয় ওয়াশিংটন। পরবর্তী কালে জাপানের নিরাপত্তায় সেখানে বিমানবাহী রণতরী ও ৫০ হাজার সেনা মোতায়েন করে আমেরিকা। শুধু তাই নয়, দ্বীপরাষ্ট্রটির পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির নিরাপত্তার দায়িত্বও রয়েছে ওয়াশিংটনের হাতে।
১২২২
কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে চিন এই এলাকায় দাদাগিরি শুরু করায় পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। ২০২২ সালে তাঁদের দেশে পরমাণু হাতিয়ার মোতায়েনের জন্য ওয়াশিংটনের কাছে আর্জি জানিয়েছিল টোকিয়ো। যা সঙ্গে সঙ্গে খারিজ করেছিল আমেরিকা। এর পরই অসন্তুষ্ট জাপান বন্ধু দেশগুলির সঙ্গে সৈন্য চুক্তি করার জন্য সুর চড়াতে শুরু করে।
১৩২২
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের অনুমান, এশিয়ান নেটো তৈরির উদ্দেশ্য প্রথমেই দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে হাত মেলাবে টোকিয়ো। দ্বিতীয় ধাপে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মতো ইউরোপের শক্তিশালী দেশগুলির সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়াতে পারেন ইশিবা। আর এ ভাবেই এশিয়ান নেটো তৈরির জন্য আমেরিকার উপর চাপ তৈরি করা হবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
১৪২২
সূত্রের খবর, এশিয়ান নেটোয় চতুর্শক্তি জোট ‘কোয়াড’ ও তিন দেশের ‘অকাস’-কে চাইছেন ইশিবা। কোয়াডে রয়েছে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারত। আর অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন ও আমেরিকাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে অকাস। এই সব দেশগুলিকে নিয়ে এশিয়ান নেটো তৈরি হলে বিপদে-আপদে ভারত, আমেরিকা ও ব্রিটেনের মতো তিনটি পরমাণু শক্তিধর দেশকে পাশে পাবে টোকিয়ো।
১৫২২
এ প্রসঙ্গে জাপানের ভাবি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আমেরিকার পরমাণু অস্ত্র যাতে আগ্রাসী প্রতিবেশীর থেকে নিরাপত্তা দিতে পারে, তা আমরা নিশ্চিত করতে চাইছি। ওয়াশিংটন-টোকিয়োর সম্পর্কের ভারসাম্য পুনর্মূল্যায়ন করার সময় এসে গিয়েছে। নাগরিকদের নিরাপত্তা ও অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে সেটা কোনও ভুল সিদ্ধান্ত নয়।’’
১৬২২
হাডসন ইনস্টিটিউটের ভাষণে ইশিবা গুয়ামে আমেরিকার সামরিক ঘাঁটিতে জাপানি ফৌজ মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, ১৯৪৪ সালের পর আর কখনও অন্য দেশের সেনাঘাঁটিতে পা রাখেনি টোকিয়োর ‘সামুরাই যোদ্ধারা’। এতে করে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করা যাবে বলে দাবি করেছেন দ্বীপরাষ্ট্রের ভাবি প্রধানমন্ত্রী।
১৭২২
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, ইশিবা এই সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে আমেরিকার সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক খারাপ হতে পারে। তবে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় নতুন বন্ধু পেতে পারে টোকিয়ো। সেই তালিকায় দক্ষিণ কোরিয়া ছাড়াও ভিয়েতনাম ও ফিলিপিন্সের নাম থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
১৮২২
১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল আমেরিকার উদ্যোগে তৈরি হয় উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংগঠন বা নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজ়েশন (নেটো)। এর সদর দফতর রয়েছে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে। প্রাথমিক ভাবে মোট ১২টি দেশ নিয়ে তৈরি হয়েছিল নেটো।
১৯২২
বর্তমানে এই চুক্তির আওতায় রয়েছে ৩২টি দেশ। যার মধ্যে আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস ও ইটালি উল্লেখযোগ্য। নেটোয় দু’টি মাত্র ইসলাম ধর্মাবলম্বী দেশ রয়েছে। সেগুলি হল, তুরস্ক ও আলবেনিয়া।
২০২২
নেটো প্রকৃতপক্ষে একটি সৈন্য চুক্তি। এর আওতাভুক্ত কোনও রাষ্ট্র অপর কোনও দেশ দ্বারা আক্রান্ত হলে তা সম্পূর্ণ নেটোর উপর আক্রমণ বলে মেনে নেওয়া হবে। তখন বাকি ৩১টি দেশই আক্রান্ত রাষ্ট্রটিকে সামরিক সাহায্য পাঠাতে বাধ্য থাকবে।
২১২২
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাবেক সোভিয়েত ও আমেরিকার মধ্যে ঠান্ডা লড়াই শুরু হলে মস্কোর উপর চাপ তৈরি করতে নেটো তৈরি করে ওয়াশিংটন। পরবর্তী কালে যা কলেবরে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিতে গেলে তাতে বাধা দেয় রাশিয়া। কিন্তু সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি কিভ। ফলে ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
২২২২
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের দাবি, জাপান একই মডেলের এশিয়ান নেটো তৈরি করলে তাতে নয়াদিল্লির যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, সে ক্ষেত্রে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় অকারণে অন্য দেশের সঙ্গে নানা কারণে ঝামেলায় জড়াতে হবে দিল্লিকে। যা কখনওই চাইবে না সাউথ ব্লক।