কংগ্রেসের যে সাংসদের বাড়ি থেকে টাকার পাহাড় উদ্ধার হয়েছে তিনি এই বিষয় নিয়ে এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেননি।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:২০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৪
কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ধীরজ সাহুর বাড়ি থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত ৩০০ কোটি টাকা উদ্ধার করেছেন আয়কর দফতরের আধিকারিকেরা। টাকা গোনার কাজ শেষ হয়নি। এক দফার আয়কর হানায় এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি উদ্ধার হওয়া টাকার ঘটনা বলে মনে করছেন আয়কর কর্তারা। বিপুল পরিমাণ এই টাকা উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে গোটা দেশে তোলপাড় চলছে। শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতরও।
০২১৪
কংগ্রেসের যে সাংসদের বাড়ি থেকে টাকার পাহাড় উদ্ধার হয়েছে তিনি এই বিষয় নিয়ে এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেননি। অন্য দিকে, দলেরই এক সাংসদের বাড়ি থেকে আলমারি ঠাসা কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনায় দায় ঝেড়ে ফেলেছে কংগ্রেস।
০৩১৪
কংগ্রেস দাবি করেছে, দলের সঙ্গে সাংসদের ব্যবসার কোনও যোগসূত্র নেই। দলের পক্ষ থেকে প্রবীণ নেতা জয়রাম রমেশ এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লিখেছেন, “ধীরজ সাহুর ব্যবসার সঙ্গে জাতীয় কংগ্রেসের কোনও সম্পর্ক নেই। একমাত্র সংশ্লিষ্ট সাংসদই এর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন কী ভাবে এত টাকা উদ্ধার হল তাঁর বাড়ি থেকে।”
০৪১৪
বিবিসির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধীরজ সাহুর জন্ম ১৯৫৫ সালে রাঁচীতে। তাঁর বাবা রায় সাহেব বলদেব এবং মা সুশীলা দেবী। ধীরজের বাবা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরিবারের সঙ্গে কংগ্রেস-যোগ থাকায় ধীরজেরও ছাত্র রাজনীতিতে উত্থান হয় যুব কংগ্রেসের হাত ধরেই।
০৫১৪
১৯৭৭ সালে রাজনীতির জগতে পা রাখেন ধীরজ। ধীরজের ভাই শিবপ্রসাদ সাহুও কংগ্রেস নেতা। দু’বার রাঁচী থেকে সাংসদ হয়েছেন। ধীরজ স্নাতক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তাঁর পরিবার ঝাড়খণ্ডের লোহারডাগাতে থাকে। ২০১০ সালে প্রথম বার রাজ্যসভার সাংসদ হন ধীরজ। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় বার সাংসদ হন তিনি।
০৬১৪
২০১৮ সালে রাজ্যসভা নির্বাচনের জন্য যে হলফনামা দিতে হয়েছিল ধীরজকে, সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৩৪ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও ধীরজ জানিয়েছিলেন, ২০১৬-’১৭ আর্থিক বর্ষে তাঁর আয়ের পরিমাণ ছিল এক কোটি টাকা।
০৭১৪
ধীরজের হলফনামা অনুযায়ী, তাঁর নামে মোট দেড় কোটি টাকার চারটি গাড়ি রয়েছে। ৮৭ লক্ষ টাকার একটি বিএমডব্লিউ, ৩২ লক্ষ টাকার ফরচুনার, ২৪ লক্ষ টাকার রেঞ্জ রোভার, সাড়ে ৮ লক্ষ টাকার পাজ়েরো।
০৮১৪
গত ৬ ডিসেম্বর ওড়িশার বৌধ ডিস্টিলারিজ় প্রাইভেট লিমিটেড এবং তার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকটি সংস্থায় আয়কর দফতর হানা দেয়। আয়কর দফতরের সূত্রে খবর, এই সংস্থাগুলির সঙ্গে কংগ্রেস সাংসদ ধীরজের যোগ রয়েছে।
০৯১৪
এ ছাড়াও বলদেও সাহু ইনফ্রা প্রাইভেট লিমিটেড নামে যে সংস্থাটিতে আয়কর তল্লাশি চলে, যার সরাসরি যোগ কংগ্রেস সাংসদের সঙ্গে রয়েছে বলেও দাবি করে আয়কর দফতর। ওড়িশার সম্বলপুর, বোলাঙ্গির, টিটিলাগড়, বৌধ, সুন্দরগড়, রাউরকেল্লা এবং ভুবনেশ্বরে তল্লাশি চালানো হয়। ঝাড়খণ্ডের রাঁচী এবং বোকারোতেও তল্লাশি চালানো হয়।
১০১৪
আয়কর দফতর সূত্রে খবর, বলদেও সাহু অ্যান্ড গ্রুপ অফ কোম্পানিজ় লিমিটেডের সঙ্গে জড়িত ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ডের ২৫টিরও বেশি ঠিকানায় পাঁচ দিন ধরে অভিযান চালানো হচ্ছে। শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়ে ৩০০ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। তবে টাকার পরিমাণ ৪০০ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন আয়কর কর্তারা।
১১১৪
বৌধ ডিস্টিলারিজ়ের ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন ঠিকানায় তল্লাশি চালানোর সময় ৩০টি আলমারি ভর্তি টাকার হদিস পান আয়কর কর্তারা। সেই টাকা পাঠানো হয় বোলাঙ্গিরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে।
১২১৪
প্রথমে ছোট যন্ত্র এনে টাকা গোনা শুরু হয়। কিন্তু টাকার পরিমাণ এত বেশি ছিল যে, সেই যন্ত্রগুলি খারাপ হয়ে যায়। পরে আবার নতুন যন্ত্র আনিয়ে টাকা গোনা শুরু হয়। শুক্রবার থেকে আবার টাকা গোনা শুরু হয়েছে।
১৩১৪
বোলাঙ্গিরের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক ম্যানেজার ভগত বেহরা বলেন, “আমাদের কাছে ১৭৬টি ব্যাগভর্তি টাকা এসেছে। তার মধ্যে ৪০টি গোনা হয়েছে। টাকা গোনার জন্য লোকসংখ্যা এবং যন্ত্রের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে।”
১৪১৪
আয়কর দফতর সূত্রে খবর, বড় এবং ছোট মিলিয়ে মোট ২০০টি ব্যাগে টাকা ভরা হয়েছে। বড় এবং ছোট মিলিয়ে মোট ৪০টি যন্ত্র কাজে লাগানো হয়েছে টাকা গোনার জন্য। রবিবার আরও যন্ত্র আনা হয়েছে। টাকা গোনার জন্য কর্মীসংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে বলে ওই সূত্রের খবর।