Israel used 100 fighter jets for attack in three waves on Iranian defense and missile sites dgtl
Israel Iran Conflict
১০০ যুদ্ধবিমানের গর্জন, তিন পর্যায়ে ইরানি সেনাছাউনিতে আছড়ে পড়ে ইজ়রায়েলি আক্রমণ
২৫ দিনের মাথায় ইরানের উপর প্রত্যাঘাত হানতে ১০০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছে ইজ়রায়েলি বায়ুসেনা। এবার সূত্র মারফত প্রকাশ্যে এল শিয়া ভূমিতে সেই অপারেশনের যাবতীয় খুঁটিনাটি।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:৫৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
আশঙ্কাই সত্যি হল। অবশেষে শিয়া মুলুক ইরানের উপর প্রত্যাঘাত হানল ইহুদি রাষ্ট্র ইজ়রায়েল। পারস্য উপসাগরের তীরে কী ভাবে হয়েছে সেই হামলা? বিশ্ব জুড়ে তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে আমেরিকা। তবে ইজ়রায়েল ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) এই পদক্ষেপ পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতিকে যে জটিল করল, তা বলাই বাহুল্য।
০২১৯
সূত্রের খবর, শিয়া দেশে আঘাত হানতে অন্তত ১০০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছে ইহুদি সেনা। যার মধ্যে বড় সংখ্যায় ছিল আমেরিকার তৈরি মাটির লক্ষ্যবস্তুতে হামলার উপযোগী এফ-১৫আই র্যাম ‘গ্রাউন্ড অ্যাটাক জেট’। এ ছাড়া পঞ্চম প্রজন্মের ‘এফ-৩৫ লাইটনিং-২’ মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছে ইজ়রায়েল। এক আসন ও এক ইঞ্জিন বিশিষ্ট এই যুদ্ধবিমানগুলির নির্মাণকারী সংস্থা হল ‘লকহিড মার্টিন’। শব্দের থেকে দ্রুত গতিতে ছোটার ক্ষমতা রয়েছে এফ ৩৫-এর। ‘স্টেলথ’ ক্যাটাগরির হওয়ায় এগুলি রাডারে প্রায় ধরা পড়ে না বললেই চলে।
০৩১৯
ইজ়রায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, মোট তিনটি পর্যায়ে ইরানের ‘ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস’-কে (আইআরজিসি) নিশানা করেছে ইহুদি বায়ুসেনা। প্রথমে শিয়া দেশটির ‘বায়ু সুরক্ষা ব্যবস্থা’ (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ধ্বংসের লক্ষ্য ছিল আইডিএফ-এর। এই অপারেশনের নাম দেওয়া হয়, ‘অনুতাপের অভিযানের দিন’ (অপারেশন ডেজ় অফ রিপেনট্যান্স)।
০৪১৯
শনিবার, ২৬ অক্টোবর ভোর ৪টে নাগাদ পারস্য উপসাগরের তীরে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে ইহুদিদের যুদ্ধবিমান। আমেরিকার সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথমে ইরানের রাজধানী তেহরান এবং তার অদূরের কারাজ় শহরকে নিশানা করে ইজ়রায়েলের বায়ুসেনা। যুদ্ধবিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমাবর্ষণ করায় রীতিমতো কেঁপে ওঠে ওই দুই এলাকা। হামলায় ‘এফ-১৬আই সুফা’ এয়ার ডিফেন্স জেট ও হানাদার ‘হেরন’ ড্রোনের নতুন সংস্করণও ব্যবহার করা হয়।
০৫১৯
ইজ়রায়েলি সংবাদ সংস্থা ‘নিউজ় টুয়েলভ’ লিখেছে, ওই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দ্বিতীয় দফার হামলা শুরু করে আইডিএফ। এ বার ইহুদি বায়ুসেনার নিশানায় ছিল সিরাজ শহর। সেখানে আইআরজিসির সামরিক ঘাঁটিগুলিকে উড়িয়ে দিতে যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া হয় ক্ষেপণাস্ত্র। এ ছাড়া ইলাম এবং কুর্জ়েস্তান প্রদেশে অন্তত ২০টি লক্ষ্যে আঘাত হানে ইহুদি সেনা। রাডার নজরদারিকে ফাঁকি দিতে আইডিএফ উচ্চ প্রযুক্তির জ্যামার ব্যবহার করেছে বলে জানা গিয়েছে।
০৬১৯
শিয়া মুলুকে প্রত্যাঘাতের পর এই নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইহুদি ফৌজ। সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘ইজ়রায়েলের উপর মাসের পর মাস ধরে আক্রমণ শানাচ্ছে ইরান। তার জবাব দিতেই সেখানকার সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে নির্দিষ্ট হামলা চালানো হয়েছে।’’ আগামী দিনে আক্রমণের ঝাঁজ আরও বাড়ানো হবে কি না, তা স্পষ্ট করেনি ইজ়রায়েল।
০৭১৯
ইরানের উপর আক্রমণের সময়ে ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সদর দফতরে একটি ভূগর্ভস্থ কক্ষে (বাঙ্কার) ছিলেন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। আইডিএফের হামলার ‘সরাসরি সম্প্রচার’ দেখেন তিনি। নেতানিয়াহুর পাশে সর্ব ক্ষণ ইহুদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের থাকার কথা জানা গিয়েছে। দু’দিন আগেই আইডিএফের যোদ্ধা-পাইলটদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি।
০৮১৯
চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর আইডিএফের ‘হাতজেরিম’ বায়ুসেনা ছাউনিতে যান গ্যালান্ট। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘আমরা ইরানের উপর হামলা চালালে, ইজ়রায়েল কী, তা ওরা বুঝতে পারবে। এটা মাথায় রেখে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হোন।’’ তখনই আকাশপথে ইরানের উপর যে ইহুদিদের আক্রমণ নেমে আসবে, তা একরকম স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
০৯১৯
ইজ়রায়েল সেনার মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাঘারি ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে আবার কোনও ভুল করলে এ ভাবেই তার জবাব দেওয়া হবে।’’ অন্য দিকে, শিয়া দেশটির সরকারি সংবাদমাধ্যমের দাবি, ইহুদি বায়ুসেনার অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র সফল ভাবে মাঝ আকাশেই ধ্বংস করেছে তাদের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। এই সংক্রান্ত একটি ভিডিয়ো ফুটেজও প্রকাশ করা হয়েছে।
১০১৯
একই কথা বলেছে পশ্চিম এশিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘আল জাজ়িরা’। ইরান সরকারকে উদ্ধৃত করে লেখা তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইআরজিসির ‘রেভোলিউশনারি গার্ডস অ্যারোস্পেস ফোর্স’-এর কোনও ক্ষতি হয়নি। উল্লেখ্য, রাশিয়ার তৈরি ‘এস-৩০০’ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ব্যবহার করে শিয়া ফৌজ।
১১১৯
চলতি বছরের ১ অক্টোবর ইহুদি ভূমিতে প্রায় ২০০টি ‘হাইপারসনিক’ ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় ইরান। রেভোলিউশনারি গার্ডস অ্যারোস্পেস ফোর্স ওই ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল বলে খবরে প্রকাশ। তার পর থেকেই প্রত্যাঘাতের কথা বলে এসেছে ইহুদি ফৌজ। শেষ পর্যন্ত ওই ঘটনার ২৫ দিনের মাথায় প্রত্যাঘাত হানল আইডিএফ।
১২১৯
হামলার পর ইহুদি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দফতরের থেকে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আমাদের দেশকে নিরাপদে রাখতে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। অন্য দিকে, আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তথা আসন্ন নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন।
১৩১৯
এই ঘটনার পর আমেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। সংবাদ সংস্থা ‘রয়টার্স’ জানিয়েছে, ইরানের পরমাণু কেন্দ্র বা খনিজ তেলের কুয়োগুলিকে নিশানা করেনি আইডিএফ। শুধুমাত্র আইআরজিসির সামরিক ঘাঁটিগুলির উপরেই ইহুদি ফৌজের লক্ষ্য স্থির ছিল।
১৪১৯
ইরানি সংবাদ সংস্থার দাবি, এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে শিয়া ফৌজ। আইআরজিসির এক সামরিক কর্তাকে উদ্ধৃত করে সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘আইডিএফকে উচিত শিক্ষা দেব আমরা। তবেই ওদের বাড়বাড়ন্ত বন্ধ হবে।’’ প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ফের তেল আভিভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পারে তেহরান। কারণ, তাদের হাতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের অভাব নেই।
১৫১৯
ইরান যে প্রতিশোধ নিতে তেমনটা করতে পারে, তা ভাল করেই জানেন নেতানিয়াহু। আর তাই আমেরিকার থেকে নতুন বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছেন তিনি। যার পোশাকি নাম ‘টার্মিনাল হাই অলটিটুড এরিয়া ডিফেন্স’ বা থাড। এটি চালানোর জন্য ইহুদি ভূমিতে সৈন্যও পাঠিয়েছে ওয়াশিংটন। এ ছাড়া আইডিএফের হাতে নিজস্ব তিনটি ডিফেন্স সিস্টেম রয়েছে। সেগুলি হল, আয়রন ডোম, ডেভিস স্লিং ও অ্যারো।
১৬১৯
গত বছরের (পড়ুন ২০২৩) ৭ অক্টোবর প্যালেস্টাইনের গাজ়া থেকে ইজ়রায়েলে ঢুকে হামলা চালায় ইরানের মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন ‘হামাস’। ওই ঘটনায় প্রাণ হারান ১ হাজার ২০০ জন। বেশ কয়েক জনকে অপহরণ করে গাজ়ায় নিয়ে যায় হামাস। এর পরই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।
১৭১৯
এর পর গাজ়ায় আইডিএফ আক্রমণের ঝাঁজ বাড়ানোয় হামাসের সমর্থনে এগিয়ে আসে ইরানের মদতপুষ্ট আরও দুই জঙ্গি সংগঠন – ‘হিজ়বুল্লা’ ও ‘হুথি’। প্রতিবেশী দেশ লেবানন থেকে ইহুদি ভূমিতে হামলা শুরু করে হিজ়বুল্লা। আর ইয়েমেন থেকে ইজ়রায়েলকে নিশানা করে হুথিরা।
১৮১৯
গাজ়ায় একরকম হামাসের কোমর ভাঙার পর বর্তমানে হিজ়বুল্লার দিকে নজর দিয়েছে আইডিএফ। লেবাননে ইহুদি ফৌজের কার্পেট বোমাবর্ষণে প্রাণ হারান হিজ়বুল্লার শীর্ষনেতা হাসান নাসরাল্লা। সেখানে গ্রাউন্ড অপারেশনও চালাচ্ছে আইডিএফ। আবার গাজ়ায় হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে নিকেশ করেছে নেতানিয়াহুর সেনা।
১৯১৯
এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসের দফতর থেকে একটি বিবৃতিতে যুযুধান দু’পক্ষের কাছেই অস্ত্র সংবরণের আবেদন জানানো হয়েছে। যা অলীক কল্পনা বলেই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।