ইজ়রায়েল ও হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ করল কাতার। ইরানের মদতপুষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতাদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দোহা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:৫৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
দু’পক্ষই নিজেদের অবস্থান থেকে একচুলও সরতে নারাজ। উল্টে দিন যত গড়াচ্ছে, ততই ‘রণং দেহি’ অবস্থান নিচ্ছে তারা। এই অবস্থায় শান্তি প্রতিষ্ঠা যে ‘সোনার পাথরবাটি’ তা বুঝে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা থেকে সরে এল কাতার। ফলে পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।
০২১৮
গত এক বছর ধরে চলা ইজ়রায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিয়েছিল কাতার। কিন্তু কূটনৈতিক মহল সূত্রে খবর, সম্প্রতি যুদ্ধ থামানোর যাবতীয় প্রচেষ্টা আপাতত থামিয়ে দিয়েছে দোহা। দু’পক্ষের মধ্যে এ ব্যাপারে সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে মনে করছে তারা।
০৩১৮
কাতারের কূটনৈতিক মহল জানিয়েছে, ইস্যুভিত্তিক নানা বিষয় নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কথা হলেও সার্বিক ভাবে কোনও শান্তি আলোচনা হয়নি। ইজ়রায়েল ও হামাস নিজেদের স্বার্থ বজায় রেখে অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ফলে পশ্চিম এশিয়ায় আপাতত যে যুদ্ধ বন্ধ হচ্ছে না, তা বলাই বাহুল্য।
০৪১৮
তবে আগামী দিনে ফের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনে তারা যে আগ্রহী, তা এক রকম বুঝিয়ে দিয়েছে দোহা। তবে সে ক্ষেত্রে ইহুদি ও প্যালেস্তিনীয় জঙ্গিদের সামান্য হলেও নমনীয় অবস্থান নিতে হবে। যা মধ্যস্থতার মাধ্যমে শান্তি ফেরাতে সহায়ক হবে বলে জানিয়েছে কাতার।
০৫১৮
এর আগে আমেরিকার চাপে পড়ে ইরান মদতপুষ্ট সশস্ত্র সংগঠন ‘হামাস’-এর রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে দোহা। পাশাপাশি, ইহুদি পণবন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার কথাও বলেছিল কাতার। সেই শর্ত পূরণে হামাস নিমরাজি হওয়ায় শান্তি আলোচনা এগোনো যায়নি। জানিয়েছেন আমেরিকার এক শীর্ষ প্রশাসনিক আধিকারিক।
০৬১৮
সংবাদ সংস্থা ‘এনবিসি নিউজ়’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাতারের এক কূটনীতিক বলেছেন, ‘‘ইজ়রায়েল ও হামাস যে রকমের মনোভাব দেখিয়েছে, তাতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আমরা যথেষ্টই হতাশ। সরল বিশ্বাসে একটা সমাধান চুক্তির দিকে এগোনো না গেলে পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি ফেরার বিষয়টি কষ্টকল্পিত।’’
০৭১৮
বর্তমানে হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই কাতারে রয়েছেন। দেশ ছাড়তে বলে দোহা তাঁদের কোনও ‘ডে়ডলাইন’ দিয়েছে কি না, তা স্পষ্ট হয়। এই ইস্যুতে মুখে কুলুপ এঁটেছেন কাতারের কূটনীতিকরা।
০৮১৮
সদ্য শেষ হওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পালাবদলের সাক্ষী থেকেছে আমেরিকা। ভোটে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছেন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী বছরের (পড়ুন ২০২৫) জানুয়ারিতে শপথ নেবেন তিনি।
০৯১৮
আর তাই ট্রাম্প জমানা শুরু হওয়ার আগেই প্যালেস্টাইনের গাজ়ায় যুদ্ধবিরতি করতে মরিয়া চেষ্টা করছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট তথা ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন। পণবন্দিদের প্রত্যর্পণের ব্যাপারে তাঁর প্রশাসন সদিচ্ছা দেখিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, সেই লক্ষ্যেই কাতারকে দিয়ে হামাসের উপর চাপ তৈরি করছে ওয়াশিংটন।
১০১৮
এ ব্যাপারে এনবিসি নিউজ়ের কাছে মুখ খোলেন আমেরিকার এক শীর্ষ কর্তা। তাঁর কথায়, ‘‘হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিকেশের পর পণবন্দি প্রত্যার্পণ প্রস্তাব প্রত্যাখান করে ইরান মদতপুষ্ট এই সশস্ত্র সংগঠন। তখনই কাতারকে আমরা হামাসের নেতাদের দেশ থেকে বার করে দেওয়ার কথা বলেছিলাম।’’
১১১৮
ওয়াশিংটনের দাবি, তাদের সিদ্ধান্ত সঙ্গে সঙ্গেই মেনে নিয়েছিল দোহা। ‘‘পণবন্দিদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা বার বার অনুরোধ করেছি। কিন্তু হামাসের সন্ত্রাসীরা তা কিছুতেই মানতে চাননি। এই অবস্থায় সংগঠনটির কোনও নেতাকে আমেরিকার অংশীদার কোনও রাষ্ট্রের রাজধানীতে স্বাগত জানানো উচিত নয়। কাতার সেটা হামাসকে ভাল ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে।’’ এবিসি নিউজ়কে বলেছেন আমেরিকার ওই পদস্থ কর্তা।
১২১৮
উল্লেখ্য, দোহায় ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীটির গোপন কার্যালয় রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ইজ়রায়েল। যা অস্বীকার করেছে কাতার। এ ব্যাপারে দেশটির বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মাজেদ বিন মহম্মদ আল আনসারি বলেছেন, ‘‘কিছু প্রতিবেদনে একটি কার্যালয়কে হামাসের বলে দাবি করা হয়েছে। যা একেবারই ঠিক নয়।’’
১৩১৮
গত বছর (পড়ুন ২০২৩) প্রায় ২০০ জন পণবন্দিকে মুক্তি দেয় হামাস। এ ব্যাপারে তাদের রাজি করার পিছনে কাতারের বড় ভূমিকা ছিল। পরবর্তী পর্যায়ে ফের পণবন্দি মুক্তির ইস্যুতে মিশরের রাজধানী কায়রোতে একটি বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু সেখানেও বন্দি প্রত্যর্পণে রাজি হয়নি হামাস।
১৪১৮
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট অফিস ছাড়ার আগে পণবন্দিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাইছেন বাইডেন। আর তাই হামাসের উপর চাপ বাড়াচ্ছে ওয়াশিংটন। ইতিমধ্যেই সশস্ত্র গোষ্ঠীটির হাতে থাকা আমেরিকার নাগরিক হার্শ গোল্ডবার্গ-পলিনের মৃত্যু হয়েছে। যার জেরে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন বাইডেন।
১৫১৮
গত বছরের (পড়ুন ২০২৩) ৭ অক্টোবর গাজ়া থেকে ইহুদি ভূমির উপর ভয়ঙ্কর হামলা চালায় হামাস। তাতে প্রাণ হারান ১,২০০ জন ইজ়রায়েলি নাগরিক। এ ছাড়া অন্তত ২৫০ জনকে অপহরণ করে হামাস যোদ্ধারা গাজ়ায় নিয়ে যায়। যার মধ্যে বর্তমানে শতাধিক পণবন্দি তাঁদের হাতে রয়েছে বলে দাবি করেছে তেল আভিভ।
১৬১৮
ওই ঘটনার পরই হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এক বছরের মাথায় এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা সিনওয়ারকে খতম করে ইহুদি ফৌজ। যার জেরে হামাসের একরকম কোমর ভেঙে গিয়েছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পরিস্থিতিতে কাতারে ঢোকা বন্ধ হলে আরও বিপদে পড়বেন তাঁরা।
১৭১৮
গোয়েন্দাদের দাবি, এত দিন দোহায় বসেই ইহুদি ভূমিতে আক্রমণের জন্য যাবতীয় অর্থ সংগ্রহ করেছে হামাস। যা বন্ধ হওয়ায় তাঁদের দ্বিতীয় বিকল্প খুঁজতে হবে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সেটা পাওয়া খুবই কষ্টকর। যদিও কাতারের এই পদক্ষেপে একেবারেই খুশি নন ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।
১৮১৮
ইহুদি রাষ্ট্রপ্রধানের অভিযোগ, দোষ কবুল করে হামাসকে চুক্তিতে সই করাতে বাধ্য করেনি কাতার। যার প্রভূত সুযোগ ছিল। ফলে গাজ়া থেকে বাহিনী সরাতে রাজি নন তিনি। শুধু তা-ই নয়, ভূমধ্যসাগরের তীরের এই প্যালেস্তানীয় ভূমি ইজ়রায়েলে মিশিয়ে দিতে চাইছেন নেতানিয়াহু। আর সেই লক্ষ্যে তিনি যাবতীয় পদক্ষেপ করছেন বলে মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের।