Israel Defence Minister Yoav Gallant says Strike on Iran will show our power to world dgtl
Israel Iran Conflict
‘দুনিয়া এ বার আমাদের শক্তি দেখবে...’! ইরান ধ্বংসের নীল নকশা করে ফেলেছে ইহুদি রাষ্ট্র?
যে কোনও মুহূর্তে ইরানের উপর প্রত্যাঘাত হানতে পারে ইজ়রায়েল। সেই আক্রমণে বিশ্ব তাদের শক্তি বুঝতে পারবে বলে চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইহুদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:০৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
এক দিকে পারস্য উপসাগরের কোলের শিয়া মুলুকটিকে ‘সবক’ শেখানো। অন্য দিকে সারা দুনিয়ার সামনে শক্তি প্রদর্শন। ইরানের উপর হামলা চালানোর মধ্যে দিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে ইহুদি রাষ্ট্র ইজ়রায়েল। যা পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতিকে জটিল করবে বলেই মনে করছেন তাবড় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।
০২১৯
চলতি বছরের ১ অক্টোবর তেল আভিভকে ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে নিশানা করে তেহরান। তার পর থেকেই ইরানে প্রত্যাঘাত শানানোর হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছেন ইহুদি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তেহরানের পরমাণু কেন্দ্র না কি ফৌজি ঘাঁটি— কোথায় হামলা হবে, তা নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।
০৩১৯
এই পরিস্থিতিতে প্রকাশ্যে এসেছে ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের একটি ভিডিয়ো। সেখান তাঁকে ইহুদি যুদ্ধবিমানের পাইলটদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) বায়ুযোদ্ধাদের কাছে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেন তিনি।
০৪১৯
চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর আইডিএফের ‘হাতজেরিম’ বায়ুসেনা ছাউনিতে যান গ্যালান্ট। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘আমরা ইরানের উপর হামলা চালালে, ইজ়রায়েল কী, তা ওরা বুঝতে পারবে। এটা মাথায় রেখে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হন।’’
০৫১৯
এর পর সমাজমাধ্যমে বায়ুসেনা ছাউনি পরিদর্শনের একটা ভিডিয়ো পোস্ট করেন ইহুদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ‘‘বায়ুযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে একটা বিষয়ে বার বার জোর দিয়েছি। ওঁদের বলেছি, ইরানে হামলার পর প্রত্যেকে আমাদের শক্তি সম্পর্কে অবগত হবে। ইজ়রায়েলের ক্ষতি করলে যে চরম মূল্য দিতে হয়, এটা শত্রুদের বুঝিয়ে দেব আমরা।’’ এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন গ্যালান্ট।
০৬১৯
আগাগোড়া হিব্রু ভাষায় পোস্টটি করেন নেতানিয়াহু মন্ত্রিসভার এই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। সেখানে তিনি আইডিএফের বায়ুযোদ্ধাদের প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। গ্যালান্ট লিখেছেন, ‘‘ব্যক্তিবিশেষ হোক বা কোনও একটা ফৌজি দল বা স্কোয়াড্রন। আপনাদের ক্ষমতার উপর আমাদের প্রবল আস্থা রয়েছে।’’
০৭১৯
এর পরই ‘হামাস’ প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের প্রসঙ্গ তোলেন ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী। গাজ়ায় যাঁকে নিকেশ করেছে ইহুদি ফৌজ। এক্স হ্যান্ডলের ভিডিয়োয় গ্যালান্টকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘এক বছর আগে গাজ়ার কেউ একজন আমাদের হারিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আজ আর স্বপ্ন দেখার জায়গাতেই নেই তিনি। নেই কোনও সিনওয়ার। আইডিএফের জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে।’’
০৮১৯
উল্লেখ্য, গত ছ’মাসে দু’বার ইহুদি ভূমিতে বড় হামলা চালিয়েছে শিয়া ফৌজ। এর মধ্যে ১ অক্টোবরের আক্রমণ ছিল ভয়ঙ্করতম। ওই দিন ইজ়রায়েলকে লক্ষ্য করে প্রায় ২০০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। যার অধিকাংশকেই মাঝ আকাশে ধ্বংস করেছিল আইডিএফ। ফলে জীবনহানি সে ভাবে হয়নি।
০৯১৯
তেহরানকে এর জবাব ‘হাওয়াই হামলা’র মাধ্যমেই দেওয়া হবে বলে অনুমান প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের। এর কারণ হিসাবে শিয়া ফৌজের হাতে শক্তিশালী ‘বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) না থাকাকেই দায়ী করছেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে আইডিএফের আমেরিকার তৈরি এফ-১৬, এফ-৩৫ মতো যুদ্ধবিমানগুলি ব্যবহারের সম্ভাবনা প্রবল।
১০১৯
সূত্রের খবর, এই ইস্যুতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ইহুদি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তেল আভিভ ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে হামলা করুক, তা চাইছে না ওয়াশিংটন। ফলে আইডিএফের নিশানায় শিয়া ফৌজের বড় বড় ছাউনি থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
১১১৯
সম্ভাব্য সেই আক্রমণের প্রস্তুতি সংক্রান্ত গোপন নথি ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। যা তৈরি করছিল আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল জিয়োস্প্যাকিয়াল-ইনটেলিজেন্স এজেন্সির (এনজিএ)। ওয়াশিংটনের গুপ্তচর উপগ্রহের পাঠানো ছবি বিশ্লেষণ করে ওই নথি তৈরি করা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।
১২১৯
আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এনজিএ মহাফেজখানা থেকে মোট দু’টি নথি ফাঁস হয়েছে যা ১৫ ও ১৬ অক্টোবরের। এর একটির নাম হল, ‘ইজ়রায়েল: ইরানে প্রত্যাঘাতের জন্য বিমান বাহিনীর নিরন্তর অনুশীলন’।
১৩১৯
ওই নথিটিতে আইডিএফের বিমানবাহিনীর কসরতের একাধিক ছবি রয়েছে। মাঝ আকাশে যুদ্ধবিমানে জ্বালানি ভরানোর অনুশীলনে জোর দিয়েছে ইহুদি ফৌজ, সে সব ছবিও রয়েছে। মহড়ায় চার-পাঁচ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আমেরিকার গোয়েন্দারা।
১৪১৯
দ্বিতীয় নথিতে কৌশলগত এলাকায় আইডিএফ হাতিয়ার ও গোলা-বারুদ সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ফাঁস হওয়া রিপোর্টে ইহুদি ফৌজের অনুশীলনের উল্লেখ থাকলেও কোনও উপগ্রহচিত্র নেই। শুধু বলা হয়েছে, উপগ্রহচিত্র আমেরিকার গোয়েন্দারা ভাল করে পর্যালোচনা করেছেন। তবে ইরানের উপর কত বড় আকারের আক্রমণ ইজ়রায়েল শানাবে, সেই ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত নন।
১৫১৯
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের কথায়, ইরানের উপর প্রত্যাঘাত হানলে পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতি যে অন্য মাত্রা নেবে তা ভাল ভাবেই জানে ইজ়রায়েল। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পারে শিয়া ফৌজ। আর তাই বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে মজবুত করছে ইহুদি সেনা।
১৬১৯
সম্প্রতি আমেরিকার থেকে ‘থাড’ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম হাতে পেয়েছে তেল আভিভ। শুধু তাই নয়, সেটি চালানোর জন্য ইহুদি দেশটিতে ফৌজও পাঠিয়েছে ওয়াশিংটন। এ ছাড়া আইডিএফের কাছে তিন ধরনের বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। সেগুলি হল, আয়রন ডোম, ডেভিডস্ স্লিং ও অ্যারো।
১৭১৯
চুপ করে বসে নেই তেহরানও। ইতিমধ্যেই পারস্য উপসাগরের তীরের দেশটি ‘হাইপারসনিক’ ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বানিয়ে ফেলেছে। যে কোনও বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে একে আটকানো বেশ চ্যালেঞ্জিং। কারণ শব্দের প্রায় পাঁচ গুণের বেশি জোরে উড়ে গিয়ে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির অব্যর্থ লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে।
১৮১৯
এ মাসের ২২ ও ২৩ অক্টোবর রাশিয়ার কাজ়ান শহরে বসেছিল ‘ব্রিকস’ সম্মেলন। সেখানে যোগ দিতে যান ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজ়েকস্তিয়ান। সম্মেলন চলাকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন তিনি। সূত্রের খবর, যুদ্ধ বন্ধ করতে নয়াদিল্লিকে হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়েছেন ইরানি রাষ্ট্রপ্রধান।
১৯১৯
কাজ়ান সফরে যাওয়ার কিছু দিন আগে আবার ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইরানের মদতপুষ্ট হামাস, হিজ়বুল্লা ও হুথি নামের তিন জঙ্গি সংগঠনের লাগাতার আক্রমণে রক্তাক্ত হয়েছে ইহুদিরা। ফোনে কথা বলার সময়ে ই সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে কোনও আপস নয় বলে বার্তা দেন মোদী, খবর সূত্রের।