Is Tapovan-Vishnugarh hydropower project cause of joshimath disaster dgtl
জোশীমঠ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী কি তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প? কেন বার বার পিছোচ্ছে কাজ
জোশীমঠের বিপর্যয়ের জন্য বাসিন্দারা দায়ী করছেন তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে। তাঁদের দাবি, পাহাড়ের বুকে বেআইনি ভাবে এই প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে বলেই এই বিপর্যয়। সত্যিই কি তাই?
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:৩৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
ক্রমেই বসে যাচ্ছে উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠ। ফাঁপা হয়ে গিয়েছে মাটির তলা। সেখানকার প্রায় ৫০০ বাড়িতে ফাটল। ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বাসিন্দারা। আর তাঁরা এখন দায়ী করছেন তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে। তাঁদের দাবি, পাহাড়ের বুকে বেআইনি ভাবে এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে বলেই এই বিপর্যয়। সত্যিই কি তাই? অন্য দিকে, কোটি কোটি টাকা খরচ করা হলেও এখনও কার্যকর হয়নি এই বিদ্যুৎ প্রকল্প। বার বার আটকেছে কাজ। কখনও প্রকৃতি বাদ সেধেছে। কখনও স্থানীয়রা। আবারও কি বিপাকে পড়তে চলেছে এই প্রকল্পের কাজ?
০২২০
ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন (এনটিপিসি)-এর তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে বিপর্যয়ের জন্য দায়ী করে তদন্তের দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে অনেকেই মনে করছেন, বিশেষজ্ঞদের এই দাবি একেবারে অযৌক্তিক নয়। যদিও এনটিপিসি এই অভিযোগ মানতে চায়নি। জানিয়েছে, নিয়ম মেনেই সব কাজ হয়েছে।
০৩২০
গত ৫ জানুয়ারি এনটিপিসি এবং হিন্দুস্থান কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে একটি চিঠি লেখেন চামোলির জেলাশাসক অভিষেক ত্রিপাঠী। চিঠিতে তাদের ২০০০ বাড়ি তৈরির কথা বলেন। জানান, জোশীমঠে যাঁদের বাড়িতে ফাটল ধরেছে, তাঁদের সেখানে পুনর্বাসন দেওয়া হবে।
০৪২০
পাশাপাশি তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ বন্ধের নির্দেশিকা জারি করেন ত্রিপাঠী। তার আগে জোশীমঠ থেকে আউলি যাওয়ার রোপওয়ে বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। এটি এশিয়ার বৃহত্তম রোপওয়ে।
০৫২০
জোশীমঠের এক থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৬১টি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। চার নম্বর ওয়ার্ডের দু’টি হোটেল ফাটলের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দু’নম্বর ওয়ার্ডে মাটির তলা থেকে বেরিয়ে আসছে কাদাজল। স্থানীয়দের ধারণা, পাহাড়ের উপরের অংশে নির্মীয়মাণ টানেল থেকেই আসছে ওই জল।
০৬২০
তেহরি গাড়োয়ালের এক কলেজের অধ্যাপক, ভূতত্ত্ববিদ এসপি সতী দাবি করেছেন, দু’নম্বর ওয়ার্ডে যে কাদাজল উঠছে, তা পরীক্ষা করা উচিত। তা আসলে তপোবনের ধউলিগঙ্গা নদীর জল কি না, খতিয়ে দেখা উচিত। তপোবনের ধউলিগঙ্গা নদীর উপরেই গড়ে উঠছে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প।
০৭২০
জোশীমঠ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই তপোবন। তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের টানেল শেষ হয়েছে সেলাঙে। জোশীমঠ থেকে সেলাঙের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার।
০৮২০
স্থানীয়দের অনুরোধে অধ্যাপক সতী জোশীমঠের বাড়িগুলির ফাটল পরখ করতে গিয়েছিলেন। তিনি অবশ্য অতীতেও এই তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। ২০১৩ সালে সেই নিয়ে সরব হয়েছিলেন সতী-সহ স্থানীয় বহু বিশেষজ্ঞ।
০৯২০
কেন তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বিপর্যয় ধেয়ে আসতে পারে? জোশীমঠের অদূরে খরস্রোতা ধউলিগঙ্গার উপর টারবাইন ঘুরিয়ে তৈরি করা হবে জলবিদ্যুৎ। সে কারণে খনন করা হয়েছে ১২.১ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সুড়ঙ্গ।
১০২০
এই সুড়ঙ্গ খননের জন্য আনা হয় টানেল বোরিং মেশিল। পাহাড়ের ভিতর সেই যন্ত্র ঢোকাতে গিয়ে ভূগর্ভস্থ জলাধার ফেটে যায়। ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বহু কর্মীর।
১১২০
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূগর্ভস্থ জল বেরিয়ে যাওয়া ফাঁপা হয়ে গিয়েছে মাটি। তার জেরেই বার বার আসছে বিপর্যয়। স্থানীয়দের দাবি, ওই ঘটনার কারণ ভূগর্ভস্থ জলস্তর নেমে যাওয়ায় জলসঙ্কট দেখা দিয়েছে। মাটির নীচে বিস্ফোরণের কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি।
১২২০
২০০৪ সালে ধউলিগঙ্গা নদীর উপর এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির জন্য চুক্তি সই হয়। ২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় প্রকল্পের। ২০০৬ সালের নভেম্বর মাসে এই তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
১৩২০
১৪৪.৫৯ হেক্টর জমির উপর তৈরি হয়েছিল প্রকল্প। তার মধ্যে ৮২.৭৩ হেক্টর জমি ছিল সরকারের। বাকি ৬১.৮৬ হেক্টর জমি ১০টি গ্রামের ৬৩০ জন মালিকের থেকে নেওয়া হয়েছে। বদলে তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে।
১৪২০
মনে করা হয়েছিল, ২০১২ সাল থেকেই এই প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। কিন্তু পাহাড়ের বুকে টানেল খোঁড়া সহজ ছিল না। বার বার দুর্ঘটনার মুখে পড়েন শ্রমিকরা।
১৫২০
২০১১, ২০১২ এবং ২০১৩ সালের জুনে পর পর উত্তরাখণ্ডের হড়পা বান আসে। সে কারণে পিছিয়ে যায় প্রকল্পের কাজ। বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়।
১৬২০
এখানেই শেষ নয়, ২০০৯ সালের ডিসেম্বর থেকে টানেলের মধ্যে ঢুকেছিল একটি টানেল বোরিং মেশিন। এখনও তা বার করা যায়নি টানেল থেকে। মনে করা হয়, সঠিক পরিকল্পনার অভাবেই এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এখনও কার্যকর হয়নি। পাশাপাশি বার বার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রকৃতি।
১৭২০
এই প্রকল্প থেকে ৫২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি হওয়ার কথা। প্রকল্প তৈরির সম্ভাব্য খরচ হল ২,৯৭৮.৪৮ কোটি টাকা। কিন্তু সেই খরচ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। কারণ দীর্ঘদিন আটকে রয়েছে কাজ। ২০১৭ সালে লোকসভায় এই বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন প্রাক্তন শক্তিমন্ত্রী পীযূষ গয়াল।
১৮২০
এই প্রকল্প বড় ধাক্কা খায় চামোলি বিপর্যয়ের কারণে। ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বরফ ধস নামে চামোলি জেলায়। ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬৪ জনের দেহ উদ্ধার হয়। ৯০ শতাংশই বিদ্যুৎ প্রকল্পের কর্মী।
১৯২০
বরফধসে নিখোঁজ শতাধিক। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই বিদ্যুৎপ্রকল্পের কর্মী। কর্মীদের মৃত্যুর জন্য এনটিপিসিকে দায়ী করেছিল বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এনটিপিসি জানিয়েছিল, এই বরফধসের কারণে তাদের প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
২০২০
এ বার ফের জোশীমঠে বিপর্যয়ের জন্য আঙুল উঠেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনটিপিসির দিকে। তারা যদিও স্পষ্ট জানিয়েছে, নিয়ম মেনে কাজ হয়েছে।