হিন্দুরা এই কৃষ্ণা নদীকে পবিত্র বলে মনে করেন। অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত এই নদী দক্ষিণের চার রাজ্যে জল জোগায়। এক সময় গোটা দুনিয়ার দামি হিরের উৎস ছিল এই নদী।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৩ ০৮:৫৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
এই নদীগর্ভে ঝাঁপ দিলেই নাকি মেলে অমূল্য রতন! শুধু ভাগ্য সহায়ক হতে হবে। ভারতেই রয়েছে সেই নদী। অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণা। সেখানে নাকি সঞ্চিত রয়েছে হিরের ভান্ডার। অতীতেও এই নদী থেকে কম হিরে মেলেনি।
০২১৮
এক সময় ভারতকে বলা হত সোনার পাখি। সে প্রায় কয়েক হাজার বছর আগের কথা। তার পর বার বার বিদেশি শাসক আক্রমণ করেছে ভারতকে। লুঠ করেছে এর ধন, সম্পদ। মনে করা হয়, এখনও এ দেশের বহু জায়গায় সঞ্চিত রয়েছে গুপ্তধন। অনেক খোঁজের পরেও সে সব জায়গা থেকে ধনরত্ন উদ্ধার করা যায়নি।
০৩১৮
বলা হয়, কৃষ্ণা নদীগর্ভে সঞ্চিত রয়েছে হিরের ভান্ডার। সেই হিরে কি কেউ লুকিয়ে রেখে গিয়েছিলেন? না কি প্রাকৃতিক ভাবেই সেখানে গড়ে উঠেছে হিরের ভান্ডার?
০৪১৮
হিন্দুরা এই কৃষ্ণা নদীকে পবিত্র বলে মনে করেন। অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত এই নদী দক্ষিণের চার রাজ্যে জল জোগায়। এক সময় গোটা দুনিয়ার দামি হিরের উৎস ছিল এই নদী। পৃথিবীতে প্রথম ১০টি দামি হিরের মধ্যে ৭টিই অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে মিলেছে।
০৫১৮
মনে করা হয়, পৃথিবীতে যত বিখ্যাত হিরে রয়েছে, সেগুলি কৃষ্ণা অববাহিকা থেকেই মিলেছে। কোহিনুরও কৃষ্ণার নদীগর্ভ থেকেই উঠে এসেছে।
০৬১৮
পৃথিবীর দামি হিরেগুলির মধ্যে অন্যতম এই কোহিনুর। এর ওজন প্রায় ১০৬.৬ ক্যারাট। চতুর্দশ শতকে এই হিরে উদ্ধার করা হয়।
০৭১৮
কর্নাটকের ইতিহাসবিদেরা দাবি করেন, কোল্লুর গ্রাম থেকে নাকি কোহিনুর উদ্ধার করা হয়েছিল। কৃষ্ণা নদীর তীরে ইয়াদগির জেলার শাহপুর তালুকে রয়েছে সেই কোল্লুর গ্রাম। সেখান থেকে মিলেছিল কোহিনুর।
০৮১৮
বিচারক রবার্ট সিউয়েল তাঁর ‘দ্য ফরগটন এম্পায়ার’ বইতে লিখেছিলেন, কোহিনুর কোল্লুর গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল।
০৯১৮
কয়েক জন ইতিহাসবিদ দাবি করেন, অন্ধ্রপ্রেদেশের গুণ্টুর জেলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল কোহিনুর। তখন সেখানে রাজত্ব করছিল কাকটীয় বংশ। সেই রাজত্বকালে এক বিগ্রহের একটি চোখ ছিল এই কোহিনুর।
১০১৮
মনে করা হয়, আলাউদ্দিন খিলজির সেনাপতি মালিক কাফুর সেই হিরে লুট করে নিয়ে যান। তার পর হাত ঘুরে মোগলদের থেকে মহারাজা রঞ্জিৎ সিংহের হাতে আসে। শেষ পর্যন্ত ওঠে রানি ভিক্টোরিয়ার মুকুটে। সে ইতিহাস ভিন্ন।
১১১৮
কোহিনুর ছাড়াও কৃষ্ণা জেলার কোল্লুর-পারিতালা থেকে আরও প্রায় ২০টি বিখ্যাত হিরে উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলি পৃথিবীর বিভিন্ন জাদুঘরে নয়তো কোনও সম্রাটের মুকুট বা গয়নায় শোভা পাচ্ছে। সেগুলি ফিরিয়ে আনার দাবি তুলেছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলঙ্গানার ইতিহাসবিদ এবং প্রত্নতাত্ত্বিকেরা।
১২১৮
কোহিনুর ছাড়াও প্যারিসের ল্যুভর জাদুঘরের পীত বা রিজেন্ট হিরে, মস্কোর ওরলফ হিরে মিলেছিল এই কৃষ্ণা নদীর তীরবর্তী অঞ্চল থেকেই। হোপ, দরিয়া-ই-নুর, তাজ-এ-মাহ্, গ্রেট টেবল হিরেও নাকি উত্তোলন করা হয়েছিল এই অঞ্চল থেকে। এই গ্রেট টেবল হিরে বসানো রয়েছে ইরানের শাসকের মুকুটে।
১৩১৮
পোল্যান্ডের ড্রেসডেন গ্রিন হিরে, ভিয়েনার জাদুঘরে রাখা কিছু হিরেও নাকি উদ্ধার করা হয়েছিল কৃষ্ণা নদীর গর্ভ এবং তীরবর্তী অঞ্চল থেকে।
১৪১৮
ভারতীয় সর্বেক্ষণ বিভাগ জানিয়েছে, কৃষ্ণা এবং তুঙ্গভদ্রার সঙ্গম থেকে ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় খননকার্য চালিয়ে মিলেছে হিরে। বিশেষত কোল্লুরু-পারতলা এলাকায় সব থেকে বেশি হিরে উত্তোলন করা হয়েছে। কোহিনুরও সেখান থেকেই উত্তোলন করা হয়েছে।
১৫১৮
স্থানীয় ইতিহাসবিদদের উষ্মা, কৃষ্ণা নদী এবং আশপাশের অঞ্চল থেকে হিরে খোঁজার বিষয়ে তেমন পদক্ষেপ করা হয় না। এই নিয়ে উদাসীনতা রয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে সে ভাবে কোনও চেষ্টাই করা হয়নি বলে অভিযোগ তাঁদের।
১৬১৮
২০১৩ সালে একটি বেসরকারি সংস্থা কৃষ্ণা অববাহিকা থেকে হিরে উদ্ধার করে। স্বাধীনতার পর সেই প্রথম। কোহিনুর এবং হোপ হিরে যেখানে মিলেছিল, সেখান থেকেই উদ্ধার করা হয়েছিল এই হিরে।
১৭১৮
আমেরিকান বহুজাতিক সংস্থার সহায়ক সংস্থা সেই হিরে উদ্ধার করে। সংস্থার প্রধান ডি জনার্দন রাও জানিয়েছিলেন, ওই হিরের মানও খুব ভাল। ২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে খননকার্য চালানোর জন্য সরকারের অনুমোদন চেয়েছিল সংস্থাটি। যদিও তার পর বিষয়টি আর খুব একটা এগোয়নি বলেই জানা গিয়েছে।
১৮১৮
২০১৯ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুলে চাষ করার সময় একটি হিরে খুঁজে পান এক কৃষক। সেই হিরের দাম প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। স্থানীয় এক গয়না ব্যবসায়ী তাঁর থেকে সাড়ে ১৩ লক্ষ টাকায় সেই হিরে কিনে নেন। কুর্নুলও কৃষ্ণা অববাহিকারই অংশ। মাঝেমধ্যেই স্থানীয়দের হিরে খুঁজে পাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। স্থানীয়দের অনেকেরই বিশ্বাস, ভাগ্য প্রসন্ন হলে কৃষ্ণা নদীতে ডুব দিলে মিলতে পারে হিরে! সেই বিশ্বাসে ডুব দিয়ে চলেছেন মানুষ। তবে সকলের ক্ষেত্রে ভাগ্য ততটাও প্রসন্ন নয়।