Intelligence officials claimed Indian govt order killings in Pakistan and abroad dgtl
Research and Analysis Wing
বিদেশের মাটিতে খুন ভারতের একের পর এক শত্রু! ‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা’র পন্থা নিয়েছে নয়াদিল্লি?
‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর এক প্রতিবেদনে ভারতের এক গোয়েন্দাকর্তাকে উদ্ধৃত করে দাবি করা হয়েছে, ইজ়রায়েলের গুপ্তচর সংগঠন মোসাদ এবং রাশিয়ার গুপ্তচর সংস্থা কেজিবির দ্বারা ‘অনুপ্রাণিত’ হয়েছে র।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:১৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
পথের কাঁটা সরাতে অন্য দেশে গিয়ে গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে ভারত! সম্প্রতি কানাডার তরফে এমনই অভিযোগ তোলা হয়েছিল। যথারীতি তা খারিজ করে দেয় নয়াদিল্লি। জানিয়ে দেওয়া হয়, অন্য দেশের সার্বভৌমত্ব খর্ব হয়, এমন কোনও কাজ করে না তারা।
০২১৬
সম্প্রতি ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য গার্ডিয়ান’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ভারত এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা আধিকারিকদের উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে, বিদেশের মাটিতে ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসবাদীদের নিকেশ করছে এ দেশের গুপ্তচর সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (র)।
০৩১৬
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরেই শোরগোল পড়ে যায়। যদিও বিদেশি সংবাদপত্রটির ওই দাবি উড়িয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানায়, প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ ভুয়ো ও ভারত-বিরোধী প্রচারের অঙ্গ। বিদেশের মাটিতে হত্যা করা কখনওই ভারত সরকারের নীতি নয়।
০৪১৬
প্রতিবেদনে দুই প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সূত্রকে উদ্ধৃত করে দাবি করা হয়েছে, ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী হামলার পরেই নীতি বদলায় ভারত। দেশের জন্য বিপজ্জনক, এমন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিদেশে ঢুকে হত্যা করা শুরু হয়।
০৫১৬
ওই প্রতিবেদনে পাকিস্তানের গোয়েন্দারা দাবি করেছেন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে গুপ্তচরদের একটি শাখাকে পরিচালিত করছে ভারত। তারাই নাকি স্থানীয় সমাজবিরোধী এবং গরিব যুবকদের হাতে মোটা টাকা গুঁজে দিয়ে পাকিস্তানের মাটিতে একের পর এক সন্ত্রাসবাদীকে নিকেশ করছে।
০৬১৬
অভিযোগ, গুপ্তহত্যার জন্য বেশ কিছু সন্ত্রাসবাদীকেও ভাড়া করেছে ভারত। সে ক্ষেত্রে যাঁকে হত্যা করা হচ্ছে, তাঁর সঙ্গে অন্য গোষ্ঠীর ঝামেলা ছিল বলে দেখানো হচ্ছে।
০৭১৬
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতের এক গোয়েন্দাকর্তা ‘গার্ডিয়ানের’ ওই প্রতিবেদনে দাবি করেছেন যে, ইজ়রায়েলের গুপ্তচর সংগঠন মোসাদ এবং রাশিয়ার গুপ্তচর সংস্থা কেজিবির দ্বারা ‘অনুপ্রাণিত’ হয়েছে র। প্রসঙ্গত, ওই দুই সংস্থা বিদেশের মাটিতে গুপ্তহত্যা চালানোর জন্য কুখ্যাত।
০৮১৬
আরও একটি ঘটনাও নাকি এই ‘গুপ্তহত্যা’র বিষয়ে সাহস জুগিয়েছে ভারতকে। তা হল তুরস্কের সৌদি দূতাবাসে সাংবাদিক-লেখক জামাল খাশোগিকে হত্যা করা। ওই গোয়েন্দাকর্তার কথায়, “ওই ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে র-এর এক শীর্ষ আধিকারিক বলেছিলেন, সৌদি আরব পারলে আমরা পারব না কেন?”
০৯১৬
পাকিস্তানের গোয়েন্দারা ওই প্রতিবেদনে দাবি করেছেন যে, ২০২০ থেকে গুপ্তহত্যার মাধ্যমে পাকিস্তানের মাটিতে ২০ জনকে হত্যা করেছে ভারত। গুপ্তহত্যার ঘটনা বেড়েছে ২০২৩ সালে। নিহতদের প্রায় প্রত্যেককে খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি করা হয়েছে।
১০১৬
সম্প্রতি প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ‘সিএনএন নিউজ় ১৮’-কে বলেন, ‘‘যদি জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যায়, তা হলে আমরা ওদের শেষ করার জন্য পাকিস্তানে ঢুকব।’’ বিহারের জামুই এবং রাজস্থানের চুরুর জনসভা থেকে একই মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তার পরেই এই বিষয়ে জল্পনা আরও বেড়েছে।
১১১৬
পাকিস্তান এই বছরের শুরুতে দাবি করেছিল, তাদের মাটিতে দু’জন নাগরিককে হত্যার সঙ্গে ভারতীয় গোয়েন্দারা জড়িত রয়েছেন। যদিও ভারতের পাল্টা দাবি ছিল, ‘মিথ্যা এবং বিদ্বেষপূর্ণ’ প্রচার চালাতে ওই কথা বলছে পাকিস্তান।
১২১৬
সম্প্রতি কানাডায় খলিস্তানপন্থী সন্ত্রাসবাদী হরদীপ সিংহ নিজ্জরকে ভারতীয় এজেন্টরা হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ করেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ভারত অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করে। কিন্তু তাতে দু’দেশের সম্পর্কের শৈত্য বিন্দুমাত্র কমেনি।
১৩১৬
আবার নিষিদ্ধ খলিস্তানপন্থী সংগঠন শিখ ফর জাস্টিস (এসএফজে)-এর নেতা গুরুপতবন্ত সিংহ পান্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে নিখিল গুপ্ত নামে এক ভারতীয়কে দোষী সাব্যস্ত করে আমেরিকা। গত বছরের জুন মাসে চেক প্রজাতন্ত্রে গ্রেফতার হন নিখিল।
১৪১৬
গত বছরের সেপ্টেম্বরে খুন হন লস্কর-ই-তৈবার শীর্ষ কমান্ডার রিয়াজ় আহমেদ। পাকিস্তানের অভিযোগ, সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেটস বা আইএস-এ যোগ দিতে ইচ্ছুক কিছু যুবকের সঙ্গে টেলিগ্রাম চ্যানেলের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন ভারতের গুপ্তচর সংস্থার এজেন্টরা।
১৫১৬
রিয়াজ়কে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় বছর কুড়ির মহম্মদ আবদুল্লাকে। পাকিস্তানের তদন্তকারীদের সামনে তিনি দাবি করেন যে, সফল ভাবে ‘অপারেশন’ করতে পারলে তাকে আফগানিস্তানে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল ভারত।
১৬১৬
ভারত তাদের বিরুদ্ধে গুপ্তহত্যা চালানোর অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন মোদীর শাসনে আগ্রাসী বিদেশনীতি নিয়ে চলছে ভারত। পশ্চিমি দেশগুলির একাংশ যেমন অন্য দেশে ঢুকে বিচার-বহির্ভূত হত্যাকে ‘জাতীয় সুরক্ষা’ নামক বর্ম পরিয়ে রাখে, ভারতও সেই কাজই করছে বলে মত তাঁদের। তবে এ ক্ষেত্রে এখনও সরকারি ভাবে রা কাড়েনি নয়াদিল্লি।