খুব কম সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ক্যাট। আত্মজীবনীও লিখে ফেলেন তিনি। শৈশবে তিনি কতটা ভয়াবহতার মধ্যে সময় কাটিয়েছেন, বইয়ে সে কথা উল্লেখ করেন তরুণী। বিভিন্ন পত্রিকা থেকে শুরু করে টেলিভিশন চ্যানেলের শোয়েও তাঁর মুখ দেখা যায়।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৪ ১১:০২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
বিলাসিতায় পরিপূর্ণ ছিল তরুণীর জীবন। হলি তারকাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকার পাশাপাশি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল তাঁর। দুঃস্থ তরুণীদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে সমাজমাধ্যমে সচেতনতামূলক ভিডিয়ো পোস্ট করতেন তিনি। অভিযোগ, তরুণী তাঁর অনুগামীদের ‘ক্রীতদাসে’ পরিণত করতেন। তাঁদের দেহব্যবসায় নামার জন্য জোরও করতেন তিনি। চলতি মাসে সেই তরুণী প্রভাবী ক্যাট টরেসকে আট বছরের হাজতবাসের নির্দেশ দিল আদালত।
০২১৫
বিবিসি সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ ব্রাজিলে শৈশব কাটিয়েছিলেন ক্যাট। ছোটবেলা থেকেই নানা রকম হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন তিনি। তাই খুব কম বয়সে ব্রাজিল থেকে আমেরিকায় চলে যান তিনি। অর্থের কোনও সমস্যা কোনও দিনই ছিল না তাঁর। আমেরিকায় গিয়ে নিউ ইয়র্কে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে ভাড়া থাকতে শুরু করেন তরুণী।
০৩১৫
নিউ ইয়র্কের অ্যাপার্টমেন্টে ক্যাটের সঙ্গে থাকতেন তাঁর রুমমেট লুজ়ার টোয়ারস্কাই। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লুজ়ার বলেন, ‘‘ক্যাটের বহু খ্যাতনামী ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ ছিল। ওঁদের সঙ্গে কিছু দিন সময় কাটানোর জন্যও টাকা পেতেন ক্যাট। আমার তো মনে হয়, নিউ ইয়র্কে সেই বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে থাকার খরচও ওই খ্যাতনামীরাই দিতেন।’’
০৪১৫
লুজ়ারের দাবি, হলি তারকাদের সংস্পর্শে থাকার পর আয়াহুয়াস্কা নামে এক মাদকদ্রব্য গ্রহণ করতে শুরু করেন ক্যাট। ওই মাদকের নেশায় হ্যালুসিনেট করতে থাকেন ক্যাট। ধীরে ধীরে ক্যাটের আচার-আচরণেও পরিবর্তন হয় বলে দাবি করেন লুজ়ার।
০৫১৫
খুব কম সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ক্যাট। আত্মজীবনীও লিখে ফেলেন তিনি। শৈশবে তিনি কতটা ভয়াবহতার মধ্যে দিন কাটিয়েছেন, সে কথা বইয়ে উল্লেখ করেন। বিভিন্ন পত্রিকা থেকে শুরু করে টেলিভিশন চ্যানেলের শোয়েও তাঁর মুখ দেখা যেত।
০৬১৫
কানাঘুষো শোনা যায়, জনপ্রিয় হলি অভিনেতা লিওনার্দো দিক্যাপ্রিয়োর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন ক্যাট। সমাজমাধ্যমে ক্যাট তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন। জীবনদর্শন নিয়ে নানা ধরনের উপদেশ দিতেন তিনি। কিন্তু সবই করতেন অর্থের বিনিময়ে।
০৭১৫
অতিরিক্ত সাড়ে ১২ হাজার টাকা দিলে অনুগামীদের সঙ্গে সরাসরি কথাও বলতেন তরুণী। শৈশবে কঠিন পরিস্থিতি পার করার পর ক্যাট যে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছেন, সেই কাহিনি থেকেই অনুপ্রাণিত হতে শুরু করেন অন্য মহিলারা। আর এই অবস্থারই সুযোগ নিতে শুরু করেন ক্যাট।
০৮১৫
ক্যালিফোর্নিয়ার জ্যাক নামে এক তরুণের সঙ্গে আলাপ হয় ক্যাটের। তাঁকে বিয়ে করে টেক্সাসে পাঁচ বেডরুমবিশিষ্ট একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকতে শুরু করেন তিনি। তার পর সচেতনতামূলক ভিডিয়ো বানানোর নামে অন্য তরুণীদের সঙ্গে আলাপ করতেন ক্যাট। এমনকি তাঁদের কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিতেন তিনি।
০৯১৫
ব্রাজিলের বাসিন্দা অ্যানা ছিলেন ক্যাটের অনুগামী। বস্টনের একটি ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করতেন তিনি। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘ধীরে ধীরে আমি পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলাম। ক্যাটের সমস্ত কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতাম। ক্যাটের কথায় ২০১৯ সালে ওর সহকারী হিসাবে কাজ করার জন্য পড়াশোনা ছেড়ে নিউ ইয়র্ক চলে গিয়েছিলাম আমি। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর আমার স্বপ্নের দুনিয়া ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।’’
১০১৫
অ্যানা বলেন, ‘‘জামাকাপড় কাচা থেকে শুরু করে রান্না করা, ঘর পরিষ্কার করা, ক্যাটের পোষ্যদের যত্ন নেওয়া আমার কাজ ছিল। তার পরিবর্তে আমায় পারিশ্রমিক দেওয়া কথা ছিল ক্যাটের। কিন্তু ও আমায় কোনও টাকা দেয়নি। যা ভেবেছিলাম, বাস্তব তার বিপরীত ছিল। ক্যাটের ঘর খুব নোংরা থাকত। ঘর ছিল দুর্গন্ধে ভরা। ওর ডাকে আমায় সব সময় সাড়া দিতে হত। একা একা স্নান করতেও পারত না ক্যাট। আমি ঘুমোনোর সময় পর্যন্ত পেতাম না। ক্যাটের নজর এড়িয়ে ওই ফ্ল্যাটের জিমে চলে যেতাম। সেখানে গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে ঘুমোতাম। ক্যাটের ঘরে আমায় সোফায় ঘুমোতে হত। সেই সোফায় ওর বিড়ালেরা শৌচকর্ম করত। সহ্য করতে না পেরে তিন মাস পর প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাই আমি।’’
১১১৫
অ্যানা একাই ক্যাটের অত্যাচারের শিকার হননি। ২০২২ সালে ব্রাজিলের দুই তরুণীর নিখোঁজ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। তাঁদের পরিবারের সদস্যেরা তদন্তকারী সংস্থা এফবিআইকে জানান, ক্যাট ওই দুই তরুণীকে বন্দি করে রেখেছেন। খবর পাওয়ামাত্র ওই দুই তরুণীকে নিয়ে টেক্সাস ছেড়ে মেইনে চলে যান ক্যাট। অভিযোগ, সেখানে গিয়ে সমাজমাধ্যমে দুই তরুণীকে দিয়ে জোর করে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করাতেন তিনি। ক্যাটের সঙ্গে তাঁরা যে ভাল রয়েছেন, ভিডিয়োয় সেই দাবি করেন দু’জন।
১২১৫
পার্ল (নাম অপরিবর্তিত) নামে এক তরুণীকে বন্দি করে রেখেছিলেন ক্যাট। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ক্যাটের নির্দেশ না মানলে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ভয় দেখাতেন তিনি। পার্ল বলেন, ‘‘ঘর থেকে বেরোনোর জন্য, এমনকি শৌচালয় যাওয়ার জন্যও ক্যাটের অনুমতি নিতে হত।’’
১৩১৫
পার্লের অভিযোগ, ‘‘আমায় জোর করে দেহব্যবসায় নামিয়েছিল ক্যাট। প্রতি দিন দেড় থেকে আড়াই লক্ষ টাকা উপার্জন না করলে আমায় বাড়ি ঢুকতে দিত না। ভয়ঙ্কর তন্ত্রের চর্চা করত ক্যাট। আমি প্রতিবাদ জানালেই ভয় দেখাতে শুরু করত। এমন বহু রাত গিয়েছে, যখন আমি রাস্তায় ঘুমিয়েছি।’’
১৪১৫
তদন্তে নেমে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে দুই তরুণীকে উদ্ধার করে ব্রাজিলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ক্যাটকেও আট বছর হাজতবাসের নির্দেশ দেয় আদালত।
১৫১৫
ব্রাজিলের এক কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দেন ক্যাট। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘লোকে বলে আমি নাকি ভুয়ো গুরু। কথার জালে ফাঁসিয়ে কাউকে দিয়ে আমার যা খুশি করানোর ক্ষমতা রয়েছে বলে দাবি করেন তাঁরা। গুচ্ছ গুচ্ছ মিথ্যা কথা শুনলে হাসি পায় আমার। তোমার যা ইচ্ছা, তুমি তাই বিশ্বাস করবে। আমি যদি বলি আমার মধ্যে যিশুর বাস, তুমি তাই মানবে। আমার ভিতর শয়তানকে দেখার ইচ্ছা থাকলে তুমি তাই দেখবে। সবই মানুষের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।’’