Induben Rajput, A Gujrati woman making profits by selling homemade Vada Pav after an accident injured her spine dgtl
Vada Pav
Triumph in Life: দুর্ঘটনায় বিছানা নিলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, বড়া-পাও বিক্রিতে মাসে ১.২৫ লক্ষ আয় গুজরাতি মহিলার
২০১৭ সালে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় শিরদাঁড়ার একাধিক হাড়ে চিড় ধরে গিয়েছিল ইন্দুবেনের। সেখানকার স্নায়ুতেও সমস্যা দেখা দিয়েছিল।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২২ ১৫:১৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
বছর পাঁচেক আগে এক পথদুর্ঘটনায় শিরদাঁড়ায় গুরুতর আঘাতে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন। সংসার খরচের উপর চেপে বসে তাঁর চিকিৎসার খরচও। আর্থিক সমস্যা মেটাতে সে অবস্থা থেকেই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন গুজরাতের ইন্দুবেন রাজপুত। শুরু করেছেন বড়া-পাওয়ের ব্যবসা। আজকাল মাসে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা আয় করছেন মধ্যবিত্ত পরিবারের ওই বধূ।
০২২০
২০১৭ সালে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় শিরদাঁড়ার একাধিক হাড়ে চিড় ধরে গিয়েছিল ইন্দুবেনের। সেখানকার স্নায়ুতেও সমস্যা দেখা দিয়েছিল। চিকিৎসকদের পরামর্শ ছিল, পুরোপুরি শয্যাশায়ী হয়ে থাকতে হবে। তা না হলে তাঁর পিঠের সমস্যা চিরকালের জন্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
০৩২০
ইন্দুবেনের এই শারীরিক অবস্থায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছিল গুজরাতের মেহসানার ওই পরিবারে। স্বামী সরকারি অফিসে কেরানির কাজ করেন। তিন মেয়ের পড়াশোনার খরচ সামলে কোনও মতে সংসার চলে। তাই কিছু দিন হল যাবতীয় সঞ্চয় ঢেলে দর্জির দোকান দিয়েছিলেন ইন্দুবেন। সে ব্যবসা শুরু হতে না হতেই দুর্ঘটনায় বিছানা নিতে হয়েছিল ইন্দুবেনকে।
০৪২০
সংবাদমাধ্যমের কাছে ৪৪ বছরের ইন্দুবেন বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার পর আমাদের জীবন একেবারে তছনছ হয়ে যায়। সমস্ত সঞ্চয় ফুরিয়ে গিয়েছিল। আমার স্বামী অফিসে ওভারটাইম করতে শুরু করেছিলেন, আর আমি সারাদিন বিছানায় পড়ে থাকতাম। নিজেকে এত অসহায় মনে হচ্ছিল সে সময়... ।’’
০৫২০
দুর্ঘটনার জেরে স্বাভাবিক জীবনে ছেদ পড়েছিল ইন্দুবেনের। তাঁর কথায়, ‘‘কারও সাহায্য ছাড়া বাড়ির বাইরে যেতে পারতাম না। কয়েক পা হাঁটার পরেই শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতাম।’’
০৬২০
শিরদাঁড়ার সমস্যা মেটাতে ইন্দুবেনের অস্ত্রোপচার করতে হয়েছিল। তবে তার পরেও চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হত। সেই খরচের বোঝা চেপে বসেছিল ইন্দুবেনের পরিবারে। তিনি বলেন, ‘‘আমার মেয়েরা বেসরকারি স্কুলে পড়ে। সে খরচের পাশাপাশি সংসারের পাঁচটা মুখে অন্ন জোগাতে হয়। স্বামীর একার রোজগারে কোনও ভাবেই আমারা কুলিয়ে উঠতে পারছিলাম না। এক সময় মনে হয়েছিল যেন একটা অন্ধকার টানেলে রয়েছি, যেখানে আলোর আভাসও নেই।’’
০৭২০
ইন্দুবেন জানিয়েছেন, অর্থকষ্টের জেরে তিনি আশাহত হলেও স্বামী-সন্তানেরা হাল ছাড়েননি। তাঁদের প্রচেষ্টায় ‘চিলি অ্যান্ড চিজ’-এর যাত্রা শুরু হয়। ঘরোয়া রেসিপিতে তৈরি বড়া পাও-সহ নানা মুখরোচক খাবারের দোকান।
০৮২০
নিজের মহল্লা ছাড়িয়ে ইন্দুবেনের নাম ছড়িয়েছে বৃহত্তর পরিসরে। ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে রিয়্যালিটি শোয়ের অতিথি হিসাবে ডেকেছিলেন রণবীর সিংহ। বলিউড অভিনেতার পাশে বসে ‘দ্য বিগ পিকচার’-এ নিজের ঘুরে দাঁড়ানোর কথা শুনিয়েছেন ইন্দুবেন।
০৯২০
গুজরাতি মহল্লায় মুম্বইয়া বড়া-পাওয়ের ব্যবসা করার কথা মাথায় এল কী ভাবে? ইন্দুবেন বলেন, ‘‘আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা মহারাষ্ট্রের কোলাপুরে। গুজরাতি পরিবারের হলেও ছোটবেলায় বোধ হয় ঢোকলার থেকে বেশি বড়া-পাও খেয়েছি। আমার মা তাঁর নিজস্ব রেসিপিতে দারুণ বড়া-পাও তৈরি করতেন। বাজারচলতি স্বাদের থেকে তার স্বাদ-গন্ধ আলাদা!’’
১০২০
২০১৯ সালে ১৬,০০০ টাকায় একটি ছোট্ট দোকান ভাড়া করেন ইন্দুবেনরা। শুরু হয় ‘চিলি অ্যান্ড চিজ’। এর আইডিয়াটা তাঁর মেয়েরাই দিয়েছিলেন। গুজরাতি মহল্লায় ছোটবড় সব ধরনের খাবারের স্টল, রেস্তরাঁ থাকলেও তাঁরাই সাহস দিয়েছিলেন ইন্দুবেনকে— ঘরোয়া খাবারের ফুড জয়েন্ট খুলতে হবে।
১১২০
আর্থিক জোর না থাকায় স্বাদেই যে বাজিমাত করতে হবে, তা বুঝেছিলেন ইন্দুবেন। ফলে গোড়া থেকেই মায়ের রান্নার রেসিপিতে ভরসা রেখেছিলেন তিনি। ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে।
১২২০
গোড়ায় শুধুমাত্র বড়া-পাও বিক্রি করতেন ইন্দুবেন। তবে পরে মেনুতে আরও খাবার জুড়ে দেন। বড়া-পাওয়ের পাশাপাশি স্যান্ডউইচ, পিৎজা এবং বার্গারও তৈরি করতে শুরু করেন।
১৩২০
কমবয়সিদের কাছে ‘চিলি অ্যান্ড চিজ’-এ টেনে আনতে রেসিপিতে নতুনত্ব এনেছেন ইন্দুবেন। তৈরি করেছেন পুদিনা এবং সেজওয়ান বড়া-পাও। দামও সাধ্যের মধ্যে। ৩০ থেকে ৭৯ টাকায় নানা স্বাদের বড়া-পাও পাওয়া যায় ইন্দুবেনের ফুড জয়েন্টে।
১৪২০
প্রতি দিন সকাল ১১টায় তাঁর ফুড জয়েন্ট খোলেন ইন্দুবেন। তবে তার আগে থেকেই কাজ শুরু করে দেন তিনি। সকাল ৯টা নাগাদ বাজারে তাজা শাকসব্জি কিনতে যান। সেখান থেকে ফিরে এসে বড়া-পাওয়ের জন্য আলু সিদ্ধ করতে শুরু করেন। পুর হিসাবে নানা স্বাদের চাটনি তৈরি করাও তাঁর দৈনন্দিন কাজের অঙ্গ।
১৫২০
শারীরিক সমস্যা সত্ত্বেও ব্যবসা সামলাতে কঠোর পরিশ্রম করছেন ইন্দুবেন। তার ফলও পাচ্ছেন। ইন্দুবেন জানিয়েছেন, প্রতি দিন দোকানে গড়ে ৩০-৪০টি অর্ডার পান। গত মাসে ১.২৫ লক্ষ টাকার মুনাফা করেছেন ইন্দুবেন। তবে তার বেশির ভাগেই ব্যবসায় বিনিয়োগে বেরিয়ে গিয়েছিল। হাতে পড়েছিল ৮,০০০ টাকা। তা নিয়েই বাড়ি ফিরেছেন ইন্দুবেন।
১৬২০
ফু়ড জয়েন্ট থেকে আয় নিয়েও সন্তুষ্ট ইন্দুবেন। তিনি বলেন, ‘‘ফুড জয়েন্ট খোলার সঙ্গে সঙ্গে ৪০,০০০ টাকা মুনাফা হয়েছিল আমাদের। তবে কিছু দিনের মধ্যেই কোভিডের জন্য কার্ফু শুরু হয়েছিল। ফলে আমাদের ব্যবসা মার খেয়েছিল। সপ্তাহের পর সপ্তাহ এক জনও খরিদার পাইনি। ফলে ৮,০০০ টাকা ঘরে নিয়ে যাওয়াটাও আমার কাছে বড় বিষয় ছিল।’’
১৭২০
গোড়ার দিকে লোকমুখে এবং নেটমাধ্যমে প্রচারের জোরেই ইন্দুবেনের ফুড জয়েন্টের কথা জানতে পেরেছেন অনেকে। তবে রণবীরের শোয়ে মুখ দেখানোর পর থেকে দোকানে বিক্রি বেড়েছে বলে মনে করেন ইন্দুবেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই শোয়ের পর থেকে ভাগ্য বদলে যায়। এক সময় মনে হত, প্রচারের জোর না থাকায় হয়তো ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে। তবে ওই শোয়ে রণবীর যে ভাবে আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন, তাতে কাজ হয়েছে। শোয়ের শেষে বাড়ি ফেরা মাত্র আত্মীয়স্বজনদের ফোনের পর ফোন...। এমনকি অপরিচিতরাও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।’’
১৮২০
ইন্দুবেনের তৈরি সিম্বা বড়া-পাওয়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। রণবীর নিজেই বড়া-পাওয়ের ওই নাম দিয়েছেন। সেই বড়া-পাওয়ের ভক্ত রাজকুমার পটেল বলেন, ‘‘রণবীর স্পেশালের কথা শুনেই ছুটে এসেছি। এখানকার খাবারের স্বাদ একেবারেই আলাদা।’’
১৯২০
আপাতত স্বামী-সন্তানদের সাহায্যেই দোকান চালাচ্ছেন ইন্দুবেন। সেই সঙ্গে রয়েছে শারীরিক সমস্যাও। তিনি বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত দোকানের জন্য কাজের লোক রাখতে পারিনি। আমার পিঠের ব্যথাও যায়নি। এখনও অনেক ক্ষণ বসে থাকতে পারি না। তবে বেশির ভাগ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বলে কাজ চালিয়ে নিতে পারছি।’’
২০২০
এ কাহিনি শোনার পর অনেকের মত, বহু জনেরই অনুপ্রেরণা হতে পারে ইন্দুবেনের এই লড়াই।