Indian Navy quietly launch forth Nuclear Missile Submarine into water dgtl
Nuclear Missile Submarine
চুপিসারে সমুদ্রে ডুব, সবার অলক্ষে ‘নিঃশব্দ ঘাতক’ জলে নামাল ভারত
পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী আরও একটি ডুবোজাহাজ হাতে পেতে চলেছে ভারতীয় নৌসেনা। চুপিসাড়ে সেই জলযানের সমুদ্র ট্রায়াল শুরু করেছে নয়াদিল্লি।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ১৩:০১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
এক দিকে খলিস্তান ইস্যুতে কানাডা ও আমেরিকার সঙ্গে কূটনৈতিক যুদ্ধ। অন্য দিকে চিনের সঙ্গে লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি) সীমান্ত সংঘাতে ইতি। এ সবের মাঝে ফৌজি প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখছে না ভারত। আর তাই সবার অলক্ষে পরমাণু হামলায় সক্ষম ডুবোজাহাজ জলে নামাল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।
০২২০
চলতি বছরের অক্টোবরে বিশাখাপত্তনমের শিপ বিল্ডিং সেন্টার (এসবিসি) থেকে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ওই ডুবোজাহাজের সামুদ্রিক ট্রায়াল শুরু হয়েছে। যা শেষ হলে এই শ্রেণির আরও একটি ডুবোজাহাজ হাতে পাবে ভারতীয় নৌসেনা।
০৩২০
পরমাণু ডুবোজাহাজের দু’টি শ্রেণি রয়েছে। যার একটি হল ‘শিপ সাবমার্সিবল ব্যালেস্টিক নিউক্লিয়ার’ বা এসএসবিএন। এই ধরনের ডুবোজাহাজগুলি এক দিকে যেমন পরমাণু শক্তিচালিত, তেমন আণবিক হামলাতেও সক্ষম।
০৪২০
নৌসেনা সূত্রে খবর, সামুদ্রিক ট্রায়ালে নবনির্মিত ওই ডুবোজাহাজের শক্তিপরীক্ষা করা হবে। সেখানে সব কিছু ঠিক থাকলে জল ফৌজের অস্ত্রাগারে চলে আসবে ওই এসএসবিএন। যা ভারত মহাসাগরীয় ও ইন্দো প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় নয়াদিল্লিকে আরও শক্তি দেবে বলেই দাবি করেছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা।
০৫২০
এ বছরের ২৯ অগস্ট পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রবাহী দ্বিতীয় ডুবোজাহাজ নৌসেনার হাতে তুলে দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। যার পোশাকি নাম ‘আইএনএস অরিঘাট’। সামুদ্রিক ট্রায়াল চলা এসএসবিএনটির নামকরণ করা হয়েছে ‘আইএনএস অরিদমন’। যা আগামী বছর থেকে ভারতের জল-যোদ্ধারা ব্যবহার করতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
০৬২০
গত ৯ অক্টোবর কেন্দ্রের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটি নৌসেনার ডুবোজাহাজ তৈরির পরিকল্পনায় ছাড়পত্র দিয়েছে। যাতে জল-যোদ্ধার আরও দু’টি পরমাণু শক্তিচালিত ‘হামলাকারী’ ডুবোজাহাজ (অ্যাটাক সাবমেরিন) তৈরির কথা বলেছেন।
০৭২০
পরমাণু শক্তির হামলাকারী ডুবোজাহাজ থেকে আণবিক আক্রমণ শানানো যায় না। কিন্তু আকারে ছোট এই জলযানগুলি মাসের পর মাস জলের নীচে থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, নিঃশব্দে শত্রুর যুদ্ধজাহাজ ডোবাতে এগুলি সিদ্ধহস্ত।
০৮২০
ভারতীয় নৌসেনার যুক্তি, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় ‘দাদাগিরি’ চালায় চিনের পিপলস্ লিবারেশন আর্মির জলযোদ্ধারা। তা ছাড়া বেজিংয়ের হাতে বেশি সংখ্যায় ডুবোজাহাজ রয়েছে। সেটা মোকাবিলার জন্য এখন থেকে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন নৌসেনা অফিসারেরা।
০৯২০
অন্য দিকে, নতুন পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী ডুবোজাহাজের জলে নামানোর বিষয়টি যথাসম্ভব গোপন রেখেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এর কোড নাম ‘এস ৪*’। সূত্রের খবর এর সামদ্রিক ট্রায়াল শুরু হয়েছে গত ১৬ অক্টোবর।
১০২০
এ বছরের ১৫ অক্টোবর তেলঙ্গানা ভিকারাবাদ জেলার দামাগুন্ডম বনাঞ্চলে খুব কম কম্পাঙ্কের নৌঘাঁটি উদ্বোধন করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। ভারতীয় নৌবাহিনীর কৌশলগত সম্পদের সঙ্গে যোগযোগ ও নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে।
১১২০
সূত্রের খবর, ওই ঘাঁটি উদ্বোধনের একদিনের মাথাতেই সমুদ্রে প্রথমবার ডুব লাগায় এস ৪*। যার ৭৫ শতাংশই সম্পূর্ণ দেশীয় উপকরণে তৈরি করা হয়েছে। নবনির্মিত ডুবোজাহাজটিতে রয়েছে ‘কে-৪’ পরমাণু ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র।
১২২০
আইএনএস অরিদমনের ক্ষেপণাস্ত্রগুলির সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নিখুঁত নিশানায় শত্রু দেশের উপর হামলা চালাতে সক্ষম। এর জন্য ডুবোজাহাজটির মধ্যে উল্লম্ব লঞ্চার রাখা হয়েছে।
১৩২০
এই শ্রেণির প্রথম ডুবোজাহাজ ২০১৬ সালের অগস্টে হাতে পায় ভারতীয় নৌসেনা। যার নাম ‘আইএনএস অরিহান্ত’। এতে রয়েছে ৭৫০ কিলোমিটার পাল্লার ‘কে-১৫’ পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র। পরবর্তীকালে আরও উন্নত প্রযুক্তির ডুবোযান নির্মাণ শুরু করে নয়াদিল্লি।
১৪২০
অরিহান্তের পর নৌসেনায় যুক্ত হয়েছে অরিঘাট। বর্তমানে ওই ডুবোজাহাজটিও কে-৪ পরমাণু ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে নিঃশব্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে সমুদ্রের বিপুল জলরাশির নীচে। এ ছাড়া রাশিয়া থেকে লিজ়ে পাওয়া একটি পরমাণু শক্তিচালিত ‘হামলাকারী’ ডুবোজাহাজ রয়েছে নৌসেনার হাতে।
১৫২০
রাশিয়ার ওই ডুবোজাহাজ ২০২৮ সাল পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবে নয়াদিল্লি। জলযোদ্ধাদের অস্ত্রাগারে শামিল করার সময়ে যার কোড নাম দেওয়া হয়েছিল ‘এস ১’। সেই মতো পরবর্তীকালে আইএনএস অরিহান্ত, আইএসএস অরিঘাট ও আইএমএস অরিদমনের কোড নাম রাখা হয়েছে যথাক্রমে এস ২, এস ৩ এবং এস ৪।
১৬২০
ভারতীয় নৌসেনায় আইএনএস অরিদমন পুরোদস্তুর কাজ শুরু করলে এই শ্রেণির আরও একটি ডুবোজাহাজ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে নয়াদিল্লির। ছ’হাজার টনের ওই এসএসবিএনের পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা বাড়িয়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটার করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
১৭২০
২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রতিরক্ষা বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে নৌসেনার হাতে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি বিমানবাহী রণতরী ‘আইএনএস বিক্রান্ত’ তুলে দেন তিনি।
১৮২০
সমর বিশেষজ্ঞদের কথায়, চিনা যুদ্ধপোতগুলিতে ‘ডং ফেং ২১’ এবং ‘ডং ফেং ২৬’-এর মতো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। যুদ্ধ বাধলে তা ভারতের বড়সড় লোকসান করতে পারে। ওই সময়ে বেজিংয়ের রণতরী ডোবানোর প্রয়োজন হবে।
১৯২০
আর সেই কারণেই ডুবোজাহাজের সংখ্যা বাড়াতে চাইছে নয়াদিল্লি। পাশাপাশি, প্রস্তুতি চলছে তৃতীয় বিমানবাহী রণতরী নির্মাণের। যা ঘরের মাটিতেই তৈরি করবে ভারত। তবে সেটি কবে নাগাদ হাতে পাওয়া যাবে তা স্পষ্ট নয়।
২০২০
এ বছরের ডিসেম্বরে অবশ্য আরও একটি ডিজেল চালিত হামলাকারী ডুবোজাহাজ হাতে পারে নৌসেনা। যার নাম ‘আইএনএস ভ্যাগশির’। এই নিয়ে কালভেরি ক্লাসের ষষ্ঠ ‘নিঃশব্দ ঘাতক’ হাতে পেতে চলেছেন ভারতের জলযোদ্ধারা।