সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই ড্রোন ভারতের শত্রুদের ভয়ের কারণ হয়ে উঠতে পারে। তেমনই ১২০টি ড্রোন প্রথম ধাপে এল ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২৪ ১৬:১৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
ভারতীয় সেনাবাহিনীর সংসারে এল নয়া সদস্য। সেই সদস্যের আক্রমণে নিমেষে বানচাল হয়ে যাবে শত্রুপক্ষের বিভিন্ন কৌশল। নজর এড়িয়ে এই অস্ত্র অতর্কিতে হানা দিতে পারে শত্রুপক্ষের ঘাঁটিতে।
০২১৬
যুদ্ধে এখন ড্রোনের ব্যবহার বেড়েছে। ড্রোনে মজুত অস্ত্র বিপক্ষের অস্ত্রকে ধ্বংস করতে পারে। দূর থেকে এই সব ড্রোন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এমনই এক ড্রোন এ বার ভারতীয় সেনার অস্ত্রভান্ডারের শক্তি বৃদ্ধি করবে।
০৩১৬
নতুন অস্ত্রের নাম নাগাস্ত্র-১। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই ড্রোন ভারতের শত্রুদের ভয়ের কারণ হয়ে উঠতে পারে। তেমনই ১২০টি ড্রোন প্রথম ধাপে এল ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে।
০৪১৬
নাগপুরের সোলার ইন্ডাস্ট্রিজের ‘ইকোনমিক এক্সপ্লোসিভ লিমিটেড’ নামে এক সংস্থা এই ড্রোন তৈরি করেছে। নাগাস্ত্র হল এক ধরনের ‘লয়টারিং মিউনেশন’। একে ‘আত্মঘাতী ড্রোন’ও বলা হয়।
০৫১৬
এই ড্রোনটি নির্দিষ্ট এলাকায় সকলের নজরের আড়ালে অনেক ক্ষণ ধরে আকাশে ঘোরাঘুরি করতে পারে। তবে যত ক্ষণ পর্যন্ত না লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করে ‘লক’ করছে তত ক্ষণ পর্যন্ত হামলা চালাবে না। লক্ষ্যবস্তুর চারপাশে ঘোরাফেরা করবে।
০৬১৬
এই ড্রোনের নাম কেন নাগাস্ত্র দেওয়া হল? সাপ যখন ছোবল মারে, তার আগের মুহূর্তে সে ফণা তুলে লক্ষ্যবস্তুর চারপাশে ঘোরাঘুরি করে। লক্ষ্যবস্তু স্থির করতে পারলে তবেই ছোবল মারে। সেই ভাবনা থেকেই ড্রোনের নামকরণ করা হয়েছে।
০৭১৬
ভারতীয় সেনা নাগপুরের ওই সংস্থাকে ৪৮০টি নাগাস্ত্র তৈরির বরাত দিয়েছিল। তার মধ্যে প্রথম ধাপে ১২০টি ড্রোন পেল সেনাবাহিনী। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক উচ্চপদস্থ সেনা আধিকারিক জানিয়েছেন, ড্রোনগুলি সংগ্রহ করার আগে যথাযথ পরীক্ষা করে দেখা হয়। সেই পরীক্ষা সফল হওয়ার পরেই নাগপুরের সংস্থাকে সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়। আপতত সেনাবাহিনীর এক অস্ত্রাগারে ১২০টি ড্রোন রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
০৮১৬
সেনা সূত্রে খবর, এক একটি নাগাস্ত্রের ওজন আনুমানিক ন’কেজি। দু’মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে লক্ষ্যবস্তু স্থির করে হামলা চালাতে পারে ড্রোনগুলি। ৩০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে হামলা চালাতে পারে এগুলি। এক ঘণ্টা আকাশে উড়তে পারে নাগাস্ত্র। দু’কেজির মতো ওজন বহন করার ক্ষমতা ধরে এক একটি ড্রোন।
০৯১৬
প্রতিটি ড্রোনে উচ্চমানের জিপিএস ব্যবহার করা হয়েছে। রাতের অন্ধকারেও এই ড্রোন নজরদারি চালাতে পারে। প্রস্তুতকারক সংস্থার মতে, লক্ষ্যবস্তু স্থির করার পর প্রায় নির্ভুল হামলা চালানোর ক্ষমতা রাখে নাগাস্ত্র।
১০১৬
নাগাস্ত্রের ক্ষমতা এখানেই শেষ নয়। এই ড্রোন ওড়ানোর ক্ষেত্রে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন জওয়ানদের। লক্ষ্যবস্তুর উপর আঘাত করে তা সেখানেই ধ্বংস হয়ে যায়।
১১১৬
তবে চাইলেই নাগাস্ত্রকে আঘাত হানার আগে ফিরিয়ে আনা যায়। যদি কোনও মিশন বাতিল করা হয় বা লক্ষ্যবস্তু স্থির করতে ব্যর্থ হয় নাগাস্ত্র, তা হলে সেগুলি ফিরিয়ে আনতে পারবে সেনাবাহিনী।
১২১৬
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান প্রথম আত্মঘাতী উপায়ে হামলা চালানোর পন্থা নিয়েছিল। আমেরিকার রণতরী ধ্বংস করতে জাপান এমন পন্থা অবলম্বন করত। সামরিক ভাষায় এই পন্থাকে ‘কামিকাজে মোড’ বলে।
১৩১৬
কী ভাবে হামলা চালানো হত? জাপানের সেনাবাহিনী এই হামলায় যুদ্ধবিমান ব্যবহার করত। আমেরিকার রণতরীর উপর উড়ে যেত সেগুলি। তার পর সোজা গিয়ে ধাক্কা মারত যুদ্ধজাহাজে। রণতরীর সঙ্গে সঙ্গে বিমানটিও ধ্বংস হত।
১৪১৬
সেই ধারণাকেই ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে ‘আত্মঘাতী ড্রোন’ তৈরির ক্ষেত্রে। সম্প্রতি বিশ্বে নানা ক্ষেত্রে যুদ্ধে ড্রোন হামলার প্রচলন করা হচ্ছে। ইজ়রায়েল এবং ইরানের অশান্তিতে ড্রোনের ব্যবহার দেখা গিয়েছিল।
১৫১৬
গত ১৩ এপ্রিল মধ্যরাতে ইজ়রায়েলে প্রায় ২০০টি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। যদিও আমেরিকা এবং জর্ডনের মতো দেশের সহায়তায় শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থার সাহায্যে প্রায় ৯৯ শতাংশ ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিহত করেছিল ইজ়রায়েল। পরে ইরান দাবি করেছিল, ইজ়রায়েল সেনা ইরানের ভূখণ্ডে ড্রোন হামলা চালিয়েছিল।
১৬১৬
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও ড্রোনের ব্যবহার দেখা গিয়েছে। এ বার তেমনই ড্রোন ভারতীয় অস্ত্রভান্ডারের শক্তি বৃদ্ধি করল। যা পাকিস্তান এবং চিনের কাছে চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে বলেও মত বিশেষজ্ঞদের।