এক দিকে, এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ‘শেষ দেখে ছাড়ার’ হুমকি দিয়েছে কানাডা। অন্য দিকে, সোমবার কানাডায় এক ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কারের জবাবে ভারতও চুপ করে বসে থাকেনি।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:১২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
কানাডার নাগরিক তথা খলিস্তানপন্থী সংগঠন ‘খলিস্তান টাইগার ফোর্স’ (কেটিএফ)-এর প্রধান হরদীপ সিংহ নিজ্জরের (৪৫) হত্যাকাণ্ডের জেরে আচমকাই টানাপড়েন শুরু হয়েছে সে দেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সমীকরণে। দু’দেশের সরকারই ‘শঠে শাঠ্যং’ নীতি নিয়েছে।
০২১৬
এক দিকে, এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ‘শেষ দেখে ছাড়ার’ হুমকি দিয়েছে কানাডা। অন্য দিকে, সোমবার কানাডায় এক ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কারের জবাবে ভারতও চুপ করে বসে থাকেনি। কানাডার এক শীর্ষ কূটনীতিককে মঙ্গলবার পাঁচ দিনের মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।
০৩১৬
চলতি বছরের ১৮ জুন কানাডার সারে এলাকায় গুরু নানক শিখ গুরুদ্বার সাহিব চত্বরের পার্কিং লটে দু’জন অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীর গুলিতে নিহত হন নিজ্জর। ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ওই গুরুদ্বারের প্রধান ছিলেন তিনি। এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ভারতের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ কানাডার। স্বাভাবিক ভাবেই যে অভিযোগ খণ্ডন করেছে ভারত।
০৪১৬
নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি কানাডীয় পুলিশ। তবে অগস্টে একটি বিবৃতি জারি করে তারা জানিয়েছিল, হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিন জন সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। যে গাড়িতে করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান অভিযুক্তেরা, সেটির বিবরণও প্রকাশ্যে আনা হয়েছে।
০৫১৬
ভারতের বাইরে শিখদের সবচেয়ে বেশি বসতি রয়েছে কানাডায়। সে দেশে ৭ লক্ষ ৭৭ হাজার শিখ সম্প্রদায়ভুক্তের বসবাস। কানাডার দাবি, এই হত্যাকাণ্ডে নেপথ্যে ভারতের ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং’ (র)-এর কানাডীয় প্রধানের হাত রয়েছে।
০৬১৬
সোমবার কানাডার পার্লামেন্টে এক জরুরি অধিবেশনে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে কড়া মন্তব্য করেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেন, ‘‘কানাডীয় নাগরিক হরদীপ সিংহ নিজ্জরের হত্যাকাণ্ড এবং ভারত সরকারের এজেন্টদের মধ্যে সম্ভাব্য যোগসূত্রের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগগুলি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে খতিয়ে দেখছে কানাডীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলি।’’
০৭১৬
ট্রুডোর মন্তব্য, ‘‘কানাডার মাটিতে এক জন কানাডীয় নাগরিকের হত্যাকাণ্ডে বিদেশি সরকারের কোনও এজেন্ট জড়িত থাকলে তা আমাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘিত করা। যা গ্রহণযোগ্য নয়।’’ জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন চলাকালীন এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।
০৮১৬
এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের তলানিতে পৌঁছনো হবে বলে সোমবার জানিয়েছেন কানাডার বিদেশমন্ত্রী মেলানি জোলি। সেই সঙ্গে হুমকি দিয়েছেন, ‘‘আমরা আজ (সোমবার) এক (ভারতীয়) কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছি। তবে এর শেষ দেখে ছাড়ব।’’
০৯১৬
নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকের কাছে উত্থাপন করবেন ট্রুডো, তা-ও জানিয়েছেন জোলি।
১০১৬
ভারতের বিরুদ্ধে কানাডার অভিযোগ নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে আমেরিকা। সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেন, ‘‘কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো যে অভিযোগের উল্লেখ করেছেন, তা নিয়ে আমরা গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন।’’
১১১৬
ভারতীয় কূটনীতিকের বহিষ্কারের পর পাল্টা পদক্ষেপ করেছে নয়াদিল্লি। সাউথ ব্লকে কানাডার হাইকমিশনার ক্যামেরন ম্যাককে-কে তলব করেছে বিদেশ মন্ত্রক। এর আগেই অবশ্য এক কানাডীর কূটনীতিককে পাঁচ দিনের মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
১২১৬
নিজ্জরের বিরুদ্ধে অবশ্য আগে থেকেই ‘সক্রিয়’ ছিল ভারত। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘কেটিএফ’কে ইউএপিএ ধারায় জঙ্গি সংগঠন বলে ঘোষণা করে বিদেশ মন্ত্রক। তাদের দাবি, পঞ্জাবে জঙ্গি কার্যকলাপের পুনরুজ্জীবনে এবং দেশের সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানোই নিজ্জরের এই সংগঠনের লক্ষ্য।
১৩১৬
২০২১ সালে পঞ্জাবের জালন্ধরে এক পুরোহিতের উপর হামলার নেপথ্যেও নিজ্জরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। তাদের দাবি, ওই ঘটনার তদন্তে নেমে দেখা গিয়েছে যে বিদ্রোহ ছড়ানোর উদ্দেশ্যে উস্কানিমূলক বিবৃতি দিয়েছিলেন নিজ্জর। সমাজমাধ্যমে আপত্তিমূলক পোস্ট, ছবি, ভিডিয়ো ছড়িয়েছিলেন।
১৪১৬
নিজ্জরকে গ্রেফতার করতে চলতি বছরের জুলাইয়ে ১০ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল এনআইএ। পুরোহিতের উপর হামলার সঙ্গে সম্পর্কিত এবং নিজ্জরকে গ্রেফতারিতে সাহায্য করতে পারে, এমন কোনও তথ্য দিতে পারলে ওই অর্থমূল্যের পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল তদন্তকারী সংস্থাটি।
১৫১৬
১৯৯৭ সালে পঞ্জাব ছেড়ে কানাডায় পাড়ি দিয়েছিলেন নিজ্জর। ২০২০ সাল থেকে সারের গুরুদ্বারে প্রধান হিসাবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। ট্রুডোর দেশের সংসার পেতেছেন। যদিও ভারত সরকারের কাছে ‘ওয়ান্টেড’ তিনি।
১৬১৬
২০১৮ সালে যে ‘ওয়ান্টেড’ তালিকা মোদীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন পঞ্জাবের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহ, তাতে নাম ছিল নিজ্জরের। ঘটনাচক্রে, সে সময় ভারত সফরে এসেছিলেন ট্রুডো।