Husband has gone 20 years without speaking to his wife since she upset him in Japan dgtl
Couple
ছেলেমেয়েকে বেশি সময় দেওয়ায় গোসা! অভিমানে স্ত্রীর সঙ্গে ২০ বছর কথা বন্ধ, মান ভাঙে ‘বিশেষ’ উপায়ে
সন্তানদের বেশি বেশি সময় দিচ্ছেন স্ত্রী। আর স্বামী বঞ্চিত হচ্ছেন স্ত্রীসঙ্গ থেকে। এই অভিমানে একটানা ২০ বছর ধরে স্ত্রীর সঙ্গে একটিও কথা বলেননি স্বামী। শেষ পর্যন্ত অভিমান মিটল। জানেন, কী ভাবে?
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:৫১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকবেন, আর ঝগড়াঝাঁটি হবে না, তা আবার হয় নাকি! বাংলাই শুধু নয়, পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে চলে যান, দম্পতির কিচিরমিচির শুনতে পাবেন, ষোলো আনা নিশ্চিত। কারণে-অকারণে খিটিমিটি থেকে চিৎকার-চেঁচামেচি, দাম্পত্য কলহ না হলে নাকি সম্পর্কই পোক্ত হয় না।
০২১৯
কলহের প্রকারভেদের উপর নির্ভর করে কথা বলা কত দিন বন্ধ থাকবে। কিন্তু সেই ঝগড়া বা কলহ একসময় মিটেও যায় দ্রুত। এক-দু’দিন কথা বলা বন্ধ থাকতে পারে, কিন্তু ওই শেষ। আবার সব আগের মতোই হয়ে যায় সংসারে। গড়গড়িয়ে চলতে থাকে বাড়ির গাড়ি।
০৩১৯
গুণীজনেরা বলে থাকেন, দাম্পত্যে ঝগড়া হল অনেকটা স্যুপে নুনের মতো। পরিমাণ মতো না হলে বড্ড পানসে ঠেকে। আবার বাড়াবাড়ি হয়ে গেলে পুরো খাবারই মাটি। তাই তাঁদের পরামর্শ, পরিমিত পরিমাণে নুন থুড়ি ঝগড়াঝাঁটি জুটির সম্পর্ককে আরও মধুর করে তোলে।
০৪১৯
তবে সব সময় যে ঝগড়া ভালয় ভালয় মিটে যায়, তেমনটি নয়। কান পাতলেই শোনা যায়, স্বামীর উপর রাগ করে স্ত্রী তাঁর সঙ্গে নাকি কথা বলেননি টানা দু’দিন। আবার, স্ত্রীর উপর রাগ দেখিয়ে একটানা ২৪ ঘণ্টা বোবা সেজেছেন স্বামী, তেমন খবর পাড়ায় খুঁজলে দু’একটা পেয়েই যাবেন।
০৫১৯
স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া মিটতে হপ্তা পেরিয়ে গিয়েছে, এমন খবরও হামেশাই পাওয়া যায়। কিন্তু মিটেছে এটাই তো আসল ব্যাপার! জানেন কি, এ ব্যাপারে বিশ্বরেকর্ড কাদের দখলে?
০৬১৯
নির্ঘাত ভাবছেন বাঙালি! কিন্তু সঠিক উত্তর হল দাম্পত্য কলহে বাঙালিকে বলে বলে বিশ গোল দিতে পারেন জাপানিরা। তেমনই এক জাপানি দম্পতি ওটোউ এবং কাটাইয়ামা ইয়ুমি। এই স্বামী-স্ত্রীতে হেলায় গুঁড়িয়ে দিয়েছেন যাবতীয় রেকর্ড। দাম্পত্য কলহের ক্ষেত্রে তাঁরাই কিংবদন্তি।
০৭১৯
খবরে প্রকাশ, স্ত্রীর উপর রাগ করে ওটোউ একটানা ২০ বছর একটিও কথা বলেননি স্ত্রী কাটাইয়ামার সঙ্গে। অথচ, তাঁরা থাকছেন একই ছাদের নীচে! তিন সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে। বাইরে থেকে দেখলে হাসিখুশিতে ভরা সংসার। কিন্তু ভিতরে ভিতরে গুমোট!
০৮১৯
ওটোউ এবং কাটাইয়ামার সন্তানের বয়স যখন ১৮ বছর, তখন তিনি পণ করেন, মা-বাবাকে একে অপরের সঙ্গে কথা বলতে দেখবেন। কারণ, তাঁর জন্মের দু’বছর আগে থেকেই যে কথা বন্ধ স্বামী-স্ত্রীর! নিজের জীবনে কখনও বাবা-মায়ের কথোপকথন শোনেননি ছেলে ইয়োশিকি।
০৯১৯
বাড়িতে মা-বাবার দ্বন্দ্ব মেটানোর চেষ্টা কম করেননি ইয়োশিকি। মা কাটাইয়ামাকে মানিয়েও নিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কাটাইয়ামা যতই স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে যান, স্রেফ হুঁ-হাঁ করেই এড়িয়ে যান ওটোউ। ফলে কথোপকথন আর হয়ে ওঠেনি।
১০১৯
এ বার জেনে নেওয়া যাক, কী এমন হয়েছিল, যে ওটোউ টানা দু’দশক কথা বলেননি নিজের স্ত্রীর সঙ্গে! একটি টিভি অনুষ্ঠানে এ নিয়ে একটি লম্বা চিঠি লিখেছেন ইয়োশিকি। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, মা-বাবার ঝগড়ার কারণ।
১১১৯
ছেলের কথায়, বাবা ওটোউয়ের রাগ ছিল, মা কাটাইয়ামা সন্তানদেরই নিজের সমস্ত সময় দেন। স্বামী তাঁর সঙ্গই পান না। সেই অভিমানই গত ২০ বছর ধরে জমে জমে হিমালয় হয়ে উঠছে। যে হিমালয় টপকে কথা পৌঁছয়নি অন্য দিকে।
১২১৯
দক্ষিণ জাপানের ছবির মতো সুন্দর শহর নারায় বাড়ি ইয়ুমি পরিবারের। শহরের সকলেই সম্ভ্রান্ত পরিবারের। রোজগারও মন্দ নয়। স্বভাব-মিশুকে জাপানিদের এই শহরে যেন একমাত্র সমস্যা ইয়ুমি দম্পতির নিজেদের মধ্যে কথা না বলা। এ দিকে ইয়োশিকি পণ করেছেন, মা-বাবা নিজেদের মধ্যে কী করে কথা বলেন, তা শুনবেনই।
১৩১৯
অনেক ভেবে একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন ইয়োশিকি। ওটোউ এবং কাটাইয়ামার বিবাহবার্ষিকীর দিনকে বেছে নেন ছেলে। তার পর নারা পার্কে দম্পতির প্রথম ‘ডেট’-এর আয়োজন করেন ছেলেমেয়েরা। ঠিক করেন, সেখানেই দু’জনকে মুখোমুখি বসানো হবে। ২০ বছর পর নিজেদের মধ্যে কথা বলবেন মা-বাবা।
১৪১৯
ওই টিভি অনুষ্ঠানেই ইয়োশিকি জানিয়েছেন, প্রথমে গোটা ব্যাপারটি নিয়ে ভাইবোনেরা খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলেন। বাবা যদি রেগেমেগে চলে যান। মায়ের যদি অপছন্দ হয়। সব ভয়কে জয় করে পার্কে শেষ পর্যন্ত মুখোমুখি বসানো হয় একই বাড়ির দুই প্রবীণ সদস্যকে, যাঁরা ২০ বছর ধরে নিজেদের মধ্যে একটিও কথা বলেননি।
১৫১৯
মা-বাবা কী বলেন, তা শোনার আগ্রহ দমন করতে পারেনি ছেলেমেয়েরা। তাই গোপনে একটি মাইক লাগানো হয়েছিল পার্কের বেঞ্চের গায়ে। ব্লুটুথ দিয়ে সেই মাইকের রেকর্ড হওয়া সমস্ত আওয়াজ চলে যাচ্ছিল দূরে অপেক্ষমান ছেলেমেয়েদের কানে।
১৬১৯
অতঃপর, মুখোমুখি বসেন ওটোউ এবং কাটাইয়ামা। কাটাইয়ামার মুখে তখন স্মিত হাসি। যদিও একই রকম গোমড়া ওটোউ। ও দিকে ব্লুটুথ কানে লাগিয়ে মা-বাবার ব্যক্তিগত কথোকপথন শুনছেন ছেলেমেয়েরা।
১৭১৯
সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রথম কথা বলেন কাটাইয়ামা। লাজুক স্বরে নিজের স্বামীকে বলেন, ‘‘মনে আছে, শেষ কবে আমরা কথা বলেছিলাম?’’ সঙ্গে সঙ্গে ওটোউয়ের জবাব, ‘‘তুমি তো বাচ্চাদের নিয়ে এমন ব্যস্ত হয়ে পড়লে...’’
১৮১৯
তার পরেই বলে ফেলেন ‘আসল কথা’। ওটোউ বলে ওঠেন, ‘‘আসলে, এত দিন তুমিই তো মুখ বুজে সমস্ত সহ্য করেছ। আমি তোমাকে জানাতে চাই, সব কিছুর জন্য আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ।’’ শুনে নতুন বৌয়ের মতো মুচকি হেসে ওঠেন প্রৌঢ়ত্বের সিঁড়িতে পা দেওয়া কাটাওয়ামা।
১৯১৯
আচমকাই বেঞ্চ ছেড়ে উঠে দাঁড়ান ওটোউ। আবেগ ভরা গলায় তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ইয়ুমি, এত দিন তুমি কতই না কষ্ট করেছ। আমি তোমাকে জানাতে চাই, সব কিছুর জন্য আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। আই লভ ইউ!’’