এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৪
গত দু’বছর ধরে করোনার দাপট দেখছে বিশ্ব। বিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে একটি ভাইরাস যে মানুষের জীবন-জীবিকা বিপর্যস্ত করে দিতে পারে তা ছিল কল্পনাতীত।
০২১৪
১৫১৮ সালে এমনই এক বিচিত্র ‘সংক্রামক’ রোগের মুখোমুখি হয় মানুষ। অদ্ভুত সেই রোগের নাম ‘ডান্সিং প্লেগ’। মূলত মহিলাদের মধ্যেই এই রোগ দেখা গিয়েছিল। রোম সাম্রাজ্যের আলসেসের (বর্তমানে ফ্রান্স) স্ট্রাসবুর্গ শহরে ছড়িয়ে পড়েছিল এই অসুখ।
০৩১৪
এই রোগের লক্ষণ হল, এক বার কেউ নাচ শুরু করলে দিনভর নাচতে থাকে। তার পর অন্যদের মধ্যে সংক্রমণের মতো ছড়িয়ে পড়ে এই নাচের ইচ্ছা।
০৪১৪
শহরে প্রায় ৫০ থেকে ৪০০ মহিলা রাস্তায় দিনভর নাচতে থাকেন। নাচতে নাচতে একাধিক মহিলা মারা গিয়েছেন, এমন দাবিও করেন কিছু ইতিহাসবিদ। তবে এই বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে।
০৫১৪
তবে এমন রোগ যে স্ট্রাসবুর্গ শহরে ছড়িয়ে পড়েছিল তার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। সেই সময়ের চিকিৎসকদের নথি, স্থানীয় সংবাদপত্র ও শহর প্রশাসনের নথি থেকে এর স্বপক্ষে প্রমাণ মেলে।
০৬১৪
সেই সব তথ্য থেকে জানা যায় ১৫১৮ সালে মূলত মহিলাদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ দেখা গিয়েছিল। ঐতিহাসিক নথি থেকে জানা যায় সে বছর জুলাই মাসে এক মহিলা হঠাৎ নাচতে শুরু করেন। তার পর একে একে অন্য মহিলারা তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়ে নাচতে থাকেন।
০৭১৪
যিনি প্রথম নাচতে শুরু করেন তাঁর নাম ফ্রাউ ট্রফিয়া। তবে এই নাম নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। তাঁর সঙ্গে যাঁরা নাচতে শুরু করেন তাঁদের সংখ্যা নিয়েও যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে।
০৮১৪
তবে এমনটা নতুন নয়। ১১ শতকের মধ্যযুগে এমন রোগ নজরে আসে কোলবিগ স্যাক্সনিতে। তবে তখন তাকে ‘শয়তানের’ প্রভাব বা ‘ঈশ্বরের শাস্তি’ বলে মনে করা হয়েছিল।
০৯১৪
১৫ শতকে এক মহিলাকে ট্যারান্টুলা কামড়ে দেয়। তার বিষে খিঁচুনি দেখা দেয় মহিলার মধ্যে। যা কিছুটা নাচের মতোই ছিল। প্রতিকার হিসাবে এক ধরনের মৃদু সঙ্গীত বাজানো হয়েছিল বলে ঐতিহাসিক নথি থেকে জানা যায়।
১০১৪
এই গণনাচের কারণ হিসাবে দু’টি ব্যাখ্যা ওঠে আসে। প্রথমটি হল, ছত্রাকের বিষক্রিয়া। এই ছাত্রকের গুঁড়ো পাউরুটির মধ্যে সে সময় ব্যবহার করা হত।
১১১৪
মেডিক্যাল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’-এ লেখক জন ওয়ালার যুক্তি, ‘‘এই তত্ত্বটি ঠিক নয়। কারণ কোনও ছত্রাকের বিষক্রিয়ার প্রভাবে একসঙ্গে এত মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে নাচতে পারেন না।”
১২১৪
অন্য ব্যাখ্যা হল, এটি হল গণ হিস্টিরিয়া। এ ক্ষেত্রে এক জনের উদ্ভট আচরণ দ্রুত অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘ মানসিক চাপের কারণে এমনটা হতে পারে বলে মত চিকিৎসকদের একাংশের। মনে করা হয় আলসেসের বাসিন্দারা সেই সময় দীর্ঘ মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন।
১৩১৪
এই গণ হিস্টিরিয়ার নজির রয়েছে গণেশের দুধ খাওয়ানোর ঘটনাতেও। সেই সময় ভারতের মানুষ বাটি বাটি দুধ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন মন্দিরে।
১৪১৪
যুক্তি, পাল্টা যুক্তি... ডান্সিং প্লেগ নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। বিতর্ক রয়েছে রোগের কারণ নিয়েও। সাতশো বছর পরেও অদ্ভুত এই রোগ নিয়ে, এবং এই রোগের নিরাময় নিয়ে রয়ে গিয়েছে নানা প্রশ্ন।