Human Trafficking: Uzbek girl shares her horrific experiences how she was trafficked dgtl
Human Trafficking
‘বিকেল তিনটে থেকেই যৌনপেশা শুরু করতে হত, মেটাতে হত একের পর এক গ্রাহকের লালসা’
আশিয়া বলেন, “আমাকে প্রথমে মারধর করা হয়। তার পর ধর্ষণ। তার পর জোর করে যৌনপেশায় নামানো হয়। আমার যিনি বস ছিলেন, তাঁর কাছে আমার মতো আরও অনেক তরুণী এবং অল্পবয়সি মেয়েদের দেখেছিলাম।”
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:১০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
ছোটবেলাতেই বাবা মারা গিয়েছিল। মা অসুস্থ। ফলে সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল ছোট মেয়েটিকে। আর্থিক অনটনে পড়াশোনাটাও মাঝপথে ছাড়তে হয়েছে। বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করে যেটুকু আয় হত, তা দিয়ে সংসার চালানোর পর মায়ের চিকিৎসা করানো অসম্ভব হয়ে পড়েছিল।
০২১৮
নিজের কষ্টের কথা পরিচিত এক মহিলাকে জানিয়েছিলেন আশিয়া (পরিবর্তি নাম)। তখন ওই মহিলা আশিয়াকে দুবাইয়ে কাজের টোপ দেন। প্রচুর টাকা উপার্জনের স্বপ্ন দেখান। দৈনিক ভাস্কর-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মহিলার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। সুদূর উজবেকিস্তান থেকে নেপাল হয়ে দিল্লি পৌঁছন আশিয়া। কিন্তু তাঁর কপালে যে ভয়ানক দুর্ভোগ জুটতে চলেছে, সেটা ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারেননি আশিয়া।
০৩১৮
দৈনিক ভাস্কর-কে আশিয়া জানিয়েছেন, উজবেকিস্তানের আন্দিজান নামে একটি ছোট শহরে জন্ম তাঁর। পনেরো বছর বয়সেই তাঁর বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তিন মাসের মধ্যে সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। স্বামী ডিভোর্স দিয়ে দেন।
০৪১৮
আশিয়ার কথায়, “মায়ের হার্টের অসুখ বেড়েই চলেছিল। তাঁর চিকিৎসার জন্য টাকা জোগাড় করতে আইনুর নামে পরিচিত মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি বলেন, এক পরিবারে বাচ্চা দেখাশোনার কাজ করতে হবে। ভাল টাকা পাওয়া যাবে। আমি রাজি হয়ে যাই। তার পর আমার পাসপোর্ট নিয়ে দুবাইয়ের টিকিট কেটে দেওয়া হয়। দুবাই পৌঁছনোর পর আমাকে বলা হয়, অন্য একটি শহর থেকে আবার বিমান ধরতে হবে।”
০৫১৮
আশিয়া জানান, এর পর সেই নির্দেশ মতো দুবাইয়ের ওই শহরে পৌঁছন। সেখানে তাঁকে বলা হয়, যে মহিলার বাচ্চাদের দেখাশোনা করতে হবে, তাঁর কাছে বাসে চেপে যেতে হবে। তাঁর কথায়, “আমি কোন শহরে আছি, কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। শুধু এটাই শুনেছিলাম ‘ম্যাডাম’-এর কাছে যেতে হবে। আর আমি সেখানে যাচ্ছি।”
০৬১৮
দৈনিক ভাস্কর-কে আশিয়া জানিয়েছেন, বাসে করে তাঁকে এক নতুন শহরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে এক ম্যাডামের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর ছোট ছোট সন্তানদের দু’দিন ধরে দেখোশোনা করার কাজ করেন। তখনও আশিয়ার বিশ্বাস ছিল যে, তিনি দুবাইতেই রয়েছেন।
০৭১৮
আশিয়া বলেন, “দু’দিন পরে আমাকে একটি বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। ছোট ছোট পোশাক কিনে দেওয়া হয়। বুঝতেই পারছিলাম না, কেন আমাকে এ ধরনের পোশাক কিনে দেওয়া হচ্ছে! এর পর রাতে জানানো হয়, আমার সমস্ত নথিপত্র তাঁদের কাছে রয়েছে এবং আমি ভিসা ছাড়াই ভারতে রয়েছি। শুধু তাই-ই নয়, আমাকে বলা হয়, বাচ্চা দেখাশোনা নয়, যৌনকর্মী হিসাবে কাজ করতে হবে এখন থেকে। মাসটা ছিল ২০২২-এর জানুয়ারি।”
০৮১৮
আশিয়া জানান, তাঁকে ধমকি দেওয়া হয় যদি যৌনপেশায় না নামেন, তা হলে গ্রেফতার করিয়ে দেওয়া হবে। তাঁর কথায়, “বেশ কিছু দিন পর জানতে পেরেছিলাম আমি দুবাইয়ে নেই। সেখান থেকে নেপাল হয়ে আমাকে দিল্লিতে নিয়ে আসা হয়েছে।”
০৯১৮
আশিয়া বলেন, “আমাকে প্রথমে বেধড়ক মারধর করা হয়। তার পর ধর্ষণ। তার পর জোর করে যৌনপেশায় নামানো হয়। আমার যিনি বস ছিলেন, তাঁর কাছে আমার মতো আরও অনেক মহিলা, তরুণী, যুবতী এবং অল্পবয়সি মেয়েদের দেখেছিলাম। উজবেকিস্তান-সহ বিভিন্ন দেশ থেকে তাঁদেরও একই ভাবে কাজের টোপ দিয়ে তুলে আনা হয়েছিল।”
১০১৮
আশিয়ার দাবি, বিকেল তিনটে থেকেই যৌনপেশা শুরু করতে হত। একের পর এক গ্রাহকের লালসা মেটাতে হত। এ ভাবে টানা চলত পর দিন সকাল ৬-৭টা পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে ৭-৮ জন গ্রাহক আসতেন। কোনও কোনও দিন দশ জনেরও বেশি গ্রাহক হত। আশিয়ার কথায়, “কত রকমের মানুষ আসত আমার কাছে! প্রত্যেকের আলাদা আলাদা চাহিদা মেটাতে মেটাতে ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। কিন্তু ‘আর পারছি না’ এই কথাটা বললেই চরম মার জুটত।”
১১১৮
আশিয়া বলেন, “বসের যদি মনে হত যে, আমাদের আর ইচ্ছা নেই বা বারণ করছি, তা হলেই চলত অকথ্য অত্যাচার। মারধর তো ছিলই, সঙ্গে সিগারেটের ছ্যাঁকাও দেওয়া হত। শরীরের ক্লান্তি দূর করার জন্য শরীর খারাপের বাহানা দিতে হত। শুধুমাত্র ঋতুস্রাবের সময়ই একটু বিশ্রাম পেতাম।”
১২১৮
আশিয়া জানান, ভুয়ো ঋণের জালে জড়িয়ে রাখা হয় মেয়েদের, যাতে সেই ঋণ শোধ করতে না পেরে তাঁরা জীবনভর বন্দি হয়ে থাকেন। দিনরাত কাজ করেও কোনও টাকা জোটে না তাঁদের। আশিয়ার কথায়, “এক মাসের শেষে আমাকে বলা হয়েছিল ১২ লক্ষ টাকা আয় করেছি। তার মধ্যে ৬ লক্ষ টাকা আমার বস নেবে। বাকি ৬ লক্ষ টাকা আমার। কিন্তু সেই টাকাও দেওয়া হয়নি। আমাদের সব সময় মাদক খাইয়ে রাখা হত। সেই মাদকের টাকাও আমাদের কাছ থেকে নেওয়া হত।”
১৩১৮
আশিয়া বলেন, “ভারতের ভাষা না জানার জন্য গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলতে পারতাম না। অনেক গ্রাহক রেগে যেতেন। এক অসরকারি সংস্থা আমাকে উদ্ধার করে। তাদের সঙ্গেই রয়েছি। দিল্লি আদালতে মামলা চলছে। দ্রুত এই মামলা শেষ হলে বাড়িতে ফিরতে চাই।”
১৪১৮
আশিয়া বলেন, “গ্রাহকদের কাছে আমাদের সুন্দর করে তোলার জন্য প্রত্যেক মেয়ের ঘাড়ে কাঁকড়া বিছের ট্যাটু করিয়ে দেওয়া হত। অনেকের আবার সারা শরীরে এই ট্যাটু খোদাই করা থাকত।”
১৫১৮
এ বছরের জুলাইয়ে দিল্লির মালবীয় নগরে একটি যৌনচক্রের পর্দাফাঁস করে পুলিশ। সেখান থেকে ১০ জন উজবেকিস্তানের তরুণীকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ।
১৬১৮
ইউনাইটেড নেশনস অফিস অব ড্রাগ অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি)-এর রিপোর্ট বলছে, ভারত-সহ পশ্চিম এশিয়ার দেশিগুলিতে মধ্য এশিয়া এবং তাইল্যান্ড থেকে সবচেয়ে বেশি মেয়ে পাচার হয়। উজবেকিস্তান, কিরঘিজস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং কাজাকিস্তান থেকে মেয়েদের দুবাই বা আফগানিস্তানে নিয়ে আসা হয়। এখান থেকে প্রথমে নেপাল, তার পর সড়কপথে ভারতে নিয়ে আসা হয়।
ভারতে পৌঁছনোর পর বিভিন্ন দালালের হাতে বিক্রি করে দেওয়া হয় সেই সব মেয়েকে। দিল্লির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) বিচিত্র বীর জানিয়েছেন, যৌনচক্রের মূল হোতা তুর্কমেনিস্তানের নাগরিক আহমেদ এবং অজিজা। মালবীয় নগরে উদ্ধার হওয়া ১০ উজবেক তরুণীকে নেপাল হয়ে ভারতে নিয়ে আসা হয়েছিল। গত ৬ মাসে এমন ৮০০ মেয়েকে নিয়ে আসা হয়। তাঁদের মধ্যে ৫০০ জন উজবেক আর নাইজিরীয়।