How relationship between India and Canada has been deteriorating dgtl
India Canada Relation
প্রাণের বন্ধু থেকে চরম শত্রু! ভারত-কানাডা সম্পর্ক অবনতির নেপথ্যে কি শুধুই নিজ্জর হত্যাকাণ্ড?
কানাডায় প্রচুর সংখ্যক ভারতীয় বাস করেন। সে দেশে প্রবাসী ভারতীয়ের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৩.৭ শতাংশ। তার মধ্যে অন্তত ৭ লক্ষ ৭০ হাজার শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষ রয়েছেন।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৩১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
একটির ঠিকানা উত্তর আমেরিকা, অন্যটির এশিয়া। দুই দেশের মধ্যে দূরত্ব ১১ হাজার ৪৬২ কিলোমিটার। শিক্ষা, সংস্কৃতি, বাণিজ্য— সব ক্ষেত্রেই ভারতের সঙ্গে কানাডার সম্পর্কের বাঁধন জমজমাট।
০২২৩
কানাডায় প্রচুর সংখ্যক ভারতীয় বাস করেন। দেশটির মোট জনসংখ্যা ৩ কোটি ৭০ লক্ষ। তার মধ্যে অন্তত ১৪ লক্ষ ভারতীয় আছেন। উচ্চশিক্ষা কিংবা চাকরির সূত্রে ভারত থেকে তাঁরা কানাডায় গিয়েছেন। কানাডায় প্রবাসী ভারতীয়ের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৩.৭ শতাংশ।
০৩২৩
কানাডায় প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে অনেকেই শিখ ধর্মাবলম্বী। সেখানে ৭ লক্ষ ৭০ হাজার শিখ রয়েছেন। যা দেশের মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ। ভারতে শিখদের অনুপাত কানাডার চেয়ে কম। ভারতের মোট জনসংখ্যার বিচারে শিখদের সংখ্যা মাত্র ১.৭ শতাংশ।
০৪২৩
কানাডায় ট্রুডোর সরকার গঠনে শিখদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শিখরা কানাডার রাজনীতিতেও যথেষ্ট সক্রিয়। কানাডার হাউস অফ কমন্সে ১৮ জন শিখ সাংসদ রয়েছেন। শতাংশের বিচারে যা ভারতের চেয়েও বেশি। তাই ট্রুডো বা কানাডার কোনও রাজনৈতিক দলই শিখদের চটাতে চান না।
০৫২৩
বাণিজ্যের বিচারেও ভারত-কানাডা সম্পর্ক যথেষ্ট মজবুত। পণ্য আমদানি এবং রফতানির মাধ্যমে এই দুই দেশ একে অপরের উপর নির্ভরশীল। ২০২২ সালে কানাডা-ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক আদানপ্রদানের পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি।
০৬২৩
কানাডা থেকে মূলত সার এবং কয়লা, কোক, ব্রিকেটের মতো শক্তি উপাদান আমদানি করে ভারত। ভারত থেকে কানাডায় যায় ভোগ্যপণ্য, যানবাহন, বিমান তৈরির সরঞ্জাম, বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি এবং পোশাক।
০৭২৩
কানাডা সরকারের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালে ভারত এবং কানাডার মধ্যে মোট ৯০০ কোটি ডলার (আমেরিকান) মূল্যের বাণিজ্যিক আদানপ্রদান হয়েছিল। পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় যা ছিল ৫৭ শতাংশ বেশি।
০৮২৩
ওই বছর কানাডা থেকে ভারতে সবচেয়ে বেশি এসেছিল জীবাশ্ম জ্বালানি (১০০ কোটি ডলার মূল্যের)। এ ছাড়া, প্রায় ৭৫ কোটি ডলারের সার এবং ৩৯ কোটি ডলারের কাঠের সরঞ্জাম কানাডা ভারতে রফতানি করেছিল।
০৯২৩
কানাডা থেকে ভারতে বিনিয়োগও কম হয় না। ভারতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের তালিকায় ১৭ নম্বরে আছে জাস্টিন ট্রুডোর দেশ। ২০০০ সাল থেকে ভারতের বাজারে ৩৬০ কোটি ডলারের বেশি লগ্নি কানাডা থেকে এসেছে।
১০২৩
শিক্ষার খাতেও কানাডার সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ নিবিড়। ভারতের অনেক ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডায় যান। মেধাবী ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের কদর আছে কানাডাতে।
১১২৩
কানাডায় পড়তে যাওয়া বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। ২০১৮ সাল থেকে ভারত কানাডায় বিদেশি পড়ুয়া সরবরাহের সবচেয়ে বড় উৎসে পরিণত হয়েছে।
১২২৩
কানাডিয়ান ব্যুরো অফ ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কানাডায় ভারতীয় ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩ লক্ষ ২০ হাজার। যা কানাডার মোট বিদেশি পড়ুয়ার ৪০ শতাংশ।
১৩২৩
তাৎপর্যপূর্ণ হল, গত ২০ বছরের পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে, ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষ কানাডায় গিয়েছেন এবং সেখানেই থিতু হয়েছেন। মূলত উচ্চশিক্ষা এবং কর্মসংস্থানই তাদের উদ্দেশ্য।
১৪২৩
কানাডার সঙ্গে ভারত সরকারের সম্পর্ক দুই দেশের বাণিজ্যিক স্বার্থেই ছিল মজবুত। কিন্তু আচমকা গত কয়েক দিনে সেই সম্পর্কে কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা দিয়েছে। কানাডার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অনেকটা অবনতি হয়েছে।
১৫২৩
কানাডার মাটিতে খলিস্তানপন্থী শিখ আন্দোলনকারী হরদীপ সিংহ নিজ্জরকে হত্যা করা হয়েছিল গত জুন মাসে। তিনি ছিলেন খলিস্তানপন্থী সংগঠন ‘খলিস্তান টাইগার ফোর্স’ বা কেটিএফের প্রধান তথা কানাডার সারের গুরু নানক শিখ গুরুদ্বার সাহিবের প্রধান।
১৬২৩
দুই অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ী ৪৬ বছরের নিজ্জরকে গুরুদ্বার চত্বরে গুলি করে খুন করেন। কানাডা সরকারের দাবি, এই হত্যাকাণ্ডে ভারতের ‘হাত’ রয়েছে। পার্লামেন্টের জরুরি অধিবেশনে তেমনই দাবি করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী ট্রু়ডো।
১৭২৩
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ভারতীয় এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করে ট্রুডো সরকার। কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দাবি, নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারতীয় এজেন্টদের যোগ থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে তাঁর কাছে। এ বিষয়ে জি২০ সম্মেলনে তাঁর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথা হয়েছে বলেও জানান ট্রুডো।
১৮২৩
ভারতের পক্ষ থেকে কানাডার অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক’ এবং ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। কূটনীতিককে বহিষ্কারের বিষয়েও কড়া সমালোচনা করেছে নয়াদিল্লি।
১৯২৩
কানাডার ঢিলের বদলে পাটকেল ছুড়তেও দেরি করেনি ভারত। এ দেশে নিযুক্ত কানাডার এক সিনিয়র কূটনীতিককে বহিষ্কার করে পাঁচ দিনের মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০২৩
গত কয়েক বছর ধরেই কানাডা এবং ভারতের সম্পর্কের অবনতির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। ২০২০ সালে ভারতে কৃষক আন্দোলন চলাকালীন সরকারবিরোধী সেই আন্দোলনকে সমর্থন করে বার্তা দিয়েছিলেন ট্রুডো। কৃষি আইনের বিরুদ্ধে চলা আন্দোলন নিয়ে কানাডায় ভারতীয়দের কাছে উদ্বেগও প্রকাশ করেছিলেন তিনি। যা দিল্লি ভাল চোখে দেখেনি।
২১২৩
কানাডা খলিস্তানপন্থীদের সমর্থন করে তাদের আশ্রয় দেয় বলে অভিযোগ ভারতের। এনআইএ-র তরফে বুধবার বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং দুষ্কৃতী নেটওয়ার্কে জড়িত ৪৩ জনের তালিকা কানাডা সরকারকে পাঠানো হয়েছে।
২২২৩
অভিযোগ, ভারতে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা অনেকেই কানাডায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। কানাডায় খলিস্তানপন্থী বিক্ষোভকারীদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গত মার্চ মাসে ভারত সরকার কানাডার হাইকমিশনারকে তলবও করেছিল।
২৩২৩
খলিস্তান সমস্যাই ভারত-কানাডা সম্পর্কের অবনতির মূল কারণ। যদিও ট্রুডো এর আগে অনেক বার ভারতকে আশ্বস্ত করে দাবি করেছিলেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে কানাডা সমর্থন করে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে দুই দেশের সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার।