How Jaykirshan Sharma fought depression and became an motivational speaker dgtl
Depression
চাকরির পর পা-ও হারান! নিজেকে শেষ করতে চাওয়া যুবক এখন অনুপ্রেরণামূলক বক্তা, আয় কোটিতে
৩৮ বছর বয়সি জয়কিষণ বর্তমানে এক জন প্রশিক্ষক, যিনি মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখার প্রশিক্ষণ দেন। পাশাপাশি তিনি এক জন আন্তর্জাতিক মানের অণুপ্রেরণামূলক বক্তা। একটি সংস্থাও রয়েছে জয়কিষণের।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২৩ ১৬:২৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর এক চিঠিতে চলে গিয়েছিল চাকরি। কয়েক দিন পর ভয়ানক দুর্ঘটনায় হারিয়ে ফেলেন হাঁটাচলার ক্ষমতাও। বৃদ্ধি পেতে থাকে ঋণের বোঝা। চাপ সহ্য করতে না পেরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন জয়কিষণ শর্মা। হতাশার কারণে বার বার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। কিন্তু তাঁর আত্মঘাতী হওয়ার ইচ্ছা বদলে দিয়েছিল মেয়ের হাসি। আট বছর পর সেই জয়কিষণ এখন এক সংস্থার মালিক। আয় করেন কোটি কোটি টাকা।
০২১৮
৩৮ বছর বয়সি জয়কিষণ বর্তমানে এক জন প্রশিক্ষক, যিনি মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখার প্রশিক্ষণ দেন। পাশাপাশি তিনি এক জন আন্তর্জাতিক অণুপ্রেরণামূলক বক্তা। একটি সংস্থাও রয়েছে জয়কিষণের। এটি এমন একটি সংস্থা যা মানুষকে মানসিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে জীবনে অনুপ্রেরণা খুঁজে পেতে সাহায্য করে। কিন্তু জীবনে হতাশ হয়ে কেন নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন জয়কিষণ? কোন পথেই বা আবার মূলস্রোতে ফিরে এলেন?
০৩১৮
জয়কিষণের জন্ম আমদাবাদে। ২০০৬ সালে দিল্লির একটি কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি আমদাবাদে ফিরে যান। তাঁর বাবা চেয়েছিলেন, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে অস্ট্রেলিয়া যাক ছেলে।
০৪১৮
বিজ়নেস স্টাডিজ় নিয়ে স্নাতকোত্তর করতে ২০০৭ সালে দুই বছরের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান জয়কিষণ। সেখানে পড়াশোনা করার সময় তাঁর বাবা মারা যান। বাবার শেষকৃত্য করতে দেশে ফেরেন জয়কিষণ। এর পর তাঁর আর অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু মায়ের অনুরোধে আবার তিনি অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যান।
০৫১৮
স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পরে জয়কিষণ অস্ট্রেলিয়ার একটি গ্যাস সংস্থায় ভাল বেতনের চাকরিতে যোগ দেন। পড়াশোনার জন্য তিনি যে ঋণ নিয়েছিলেন তা মিটিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বাড়িতে মায়ের কাছেও নিয়মিত টাকা পাঠাতেন জয়কিষণ।
০৬১৮
অস্ট্রেলিয়ায় উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে পথ চলতে শুরু করেছিলেন জয়কিষণ। বিয়ে করেন ২০১০ সালে। ২০১৪ সালে স্বপ্নের বাড়ি তৈরির জন্য অস্ট্রেলিয়ায় জমিও কিনে নেন তিনি।
০৭১৮
এমন সময় জয়কিষণের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যান। নতুন বাড়ি ভাড়া নিয়ে মেলবোর্নে চলে আসেন তিনি। সেখানেই জন্ম নেয় তাঁর কন্যা। কিন্তু তাঁর জীবনে যে কঠিন সময় আসতে চলেছে, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না জয়কিষণের।
০৮১৮
২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর অফিস পৌঁছনোর পর জয়কিষণকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁর চাকরি আর নেই। এক দিনে তাঁর সুখের জীবন ছারখার হয়ে যায়। পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়।
০৯১৮
জয়কিষণের যখন চাকরি যায়, তখন তাঁর মাথায় বিপুল ঋণের বোঝা। স্ত্রী, শিশুকন্যাকে নিয়ে আরও ছোট একটি বাড়ি ভাড়া নেন তিনি। চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে শুরু করেন।
১০১৮
এরই মধ্যে নভেম্বরের গোড়ার দিকে চাকরি পেতে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন জয়কিষণ। চোখ খোলে হাসপাতালে।
১১১৮
চিকিৎসরা জয়কিষণকে জানান, তাঁর কোমর থেকে নীচের অংশ অসাড় হয়ে গিয়েছে। তিনি আর কোনও দিন হাঁটাচলা করতে পারবেন না বলেও জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা।
১২১৮
প্রায় প্রতি দিনই বকেয়া ঋণ মেটানোর জন্য জয়কিষণের বাড়ির কড়া নাড়তে শুরু করেন ব্যাঙ্ককর্মীরা। তাঁর জীবন গ্রাস করতে শুরু করে হতাশা। এরই মধ্যে জয়কিষণের মা তাঁর বকেয়া ঋণের অনেকটা মিটিয়ে দেন।
১৩১৮
এই কথা জানার পর আরও হতাশ হয়ে পড়েন জয়কিষণ। বেশ কয়েক বার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। চিকিৎসকের পরামর্শে এর পর জয়কিষণকে উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা কাটানোর ওষুধ দেওয়া হয়।
১৪১৮
এক সাক্ষাৎকারে জয়কিষণ জানান, এক দিন হুইল চেয়ারে বসে মেয়েকে বাড়ির মেঝেতে খেলতে দেখেন। খেলতে খেলতে মেয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে হাসতেই তিনি সব দুঃখ ভুলে যান। হতাশা কাটিয়ে আবার নতুন উদ্যমে বাঁচার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। মনস্থির করেন নিজের চেষ্টায় আবার উঠে দাঁড়ানোর।
১৫১৮
২০১৯-এর ডিসেম্বরের এক সকালে জয়কিষণ ঘুম থেকে উঠে দেখেন যে তিনি তাঁর পায়ের পাতা নাড়াতে পাচ্ছেন। উচ্ছ্বসিত হয়ে তিনি চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করেন। চিকিৎসকরাও তাঁকে তাঁর চেষ্টা চালিয়ে যেতে বলেন।
১৬১৮
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আবার হাঁটতে শুরু করেন জয়কিষণ। এর পরই তিনি তাঁর সংস্থা শুরু করে। যেখানে তিনি মানসিক ভাবে হতাশ হয়ে পড়া মানুষদের নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন।
১৭১৮
পরের কয়েক মাস জীবনকে আবার সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায় মন দেন জয়কিষণ। কিছু কাজ হাতে পেয়ে বাড়িতে বসেই উপার্জন শুরু করেন তিনি। পরের বছরের মধ্যেই তিনি তাঁর নামে থাকা ৬১ লক্ষ টাকার ঋণ মিটিয়ে দেন।
১৮১৮
২০২১ সাল থেকে অণুপ্রেরণামূলক বক্তা হিসাবে কাজ করতে শুরু করেন জয়কিষণ। তিনি যে বিষয়গুলির উপর কথা বলেন তার মধ্যে রয়েছে মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ, মননশীলতা, ইতিবাচকতা ইত্যাদি। বর্তমানে সংস্থা চালিয়ে এবং অনুপ্রেরণামূলক বক্তা হিসাবে কোটি কোট টাকা উপার্জন করেন তিনি।