How did the three trains meet accident in Odisha, what happens after that dgtl
Odisha Train accident
অনেক প্রশ্নেরই উত্তর নেই এখনও! জটপাকানো তিনটি ট্রেনের ছবি নানা জনের ক্যামেরায়
শুক্রবার সন্ধ্যায় বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছে ঠিক কী হয়েছিল? মালগাড়িকে পিছন থেকে গিয়ে ধাক্কা দিয়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস? না কি বাস্তবে ঘটেছিল অন্য কিছু?
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
বালেশ্বরশেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৩ ২১:০১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
সমান্তরাল রেললাইনের উপর জট পাকিয়ে রয়েছে দু’টি ট্রেন আর একটি মালগাড়ি। মালগাড়ির উপর উঠে গিয়েছে একটি ট্রেনের ইঞ্জিন। উল্টে পড়ে রয়েছে বেশ কিছু কামরা। দলাপাকানো কামরা থেকে ভেসে আসছে গোঙানি। শুক্রবার সন্ধ্যা প্রায় ৭টা থেকে এই ছবিই ধরা পড়েছে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায়। আপাত ভাবে যা দেখে মনে হয়েছে, দু’টি ট্রেন এবং একটি মালগাড়ির সংঘর্ষ। যদিও শনিবার দুপুর পর্যন্ত ভারতীয় রেলের তরফে মালগাড়ির কথা জানানো হয়নি। শেষে শনিবার সন্ধ্যায় রেলের বিবৃতিতে মালগাড়িতে ধাক্কার কথা স্বীকার করা হয়। বালেশ্বর স্টেশন থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছে আসলে কী হয়েছিল? কী ভাবে ঘটেছিল দুর্ঘটনা? সেই নিয়ে কিন্তু এখনও রয়ে গিয়েছে অনেক প্রশ্ন।
০২২৩
সংবাদমাধ্যমে যে সব ছবি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে, মালগাড়ির কামরার উপর উঠে গিয়েছে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন। আপাত ভাবে দেখে মনে হবে, মালগাড়িকে ধাক্কা দিয়ে তার উপর উঠে চেপে বসেছে করমণ্ডলের ইঞ্জিন। মালগাড়িকে কি পিছন থেকে ধাক্কা দিয়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস? উঠেছে প্রশ্ন।
০৩২৩
ভারতীয় রেলের তরফে দাবি করা হয়েছে, বালেশ্বর জেলার বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছে দু’টি ট্রেনের পাশাপাশি সংঘর্ষ ঘটেছিল। মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেনি। শনিবার দুপুর পর্যন্ত মালগাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষের কথাও তারা বলেনি।
০৪২৩
তা হলে বাহানগা স্টেশনের কাছে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ঠিক কী হয়েছিল? শুক্রবার দুপুর সওয়া ৩টে নাগাদ হাওড়ার অদূরে শালিমার স্টেশন থেকে ছেড়েছিল আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস। প্রায় ৪ ঘণ্টা পরে ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানগা বাজারের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ২৩ কামরার ট্রেনটি।
০৫২৩
স্থানীয় একটি সূত্রের দাবি, প্রথমে করমণ্ডল এক্সপ্রেস তীব্র গতিতে গিয়ে ধাক্কা মারে একই লাইনে আগে আগে চলতে-থাকা একটি মালগাড়ির পিছনে। দুর্ঘটনার অভিঘাতে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনটি মালগাড়ির উপরে উঠে যায়। ২৩টি কামরার মধ্যে ১৫টি কামরা লাইন থেকে ছিটকে পড়ে পাশের ডাউন লাইনে এবং নয়ানজুলিতে।
০৬২৩
সেই লাইন দিয়ে তখন আসছিল ডাউন বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। ট্রেনটি সেই বেলাইন কামরাগুলির উপর এসে পড়ে। হাওড়াগামী সেই ট্রেনটিরও দু’টি কামরা লাইনচ্যুত হয়।
০৭২৩
যদিও রেল প্রথমে এই মালগাড়ির সঙ্গে করমণ্ডলের সংঘর্ষের কথা মানেনি। তাদের একটি সূত্রের তরফে শুক্রবার দাবি করা হয়, কোনও কারণে প্রথমে আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়। সেটি গিয়ে পড়ে পাশের ডাউন লাইনে। সেই লাইন ধরে তখন আসছিল ডাউন বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। সেটি এসে ধাক্কা মারে করমণ্ডলের লাইনচ্যুত কামরাগুলিকে। সেই ধাক্কার কারণে করমণ্ডলের ইঞ্জিন তৃতীয় লাইনে দাঁড়িয়ে-থাকা মালগাড়ির উপরে উঠে যায়।
০৮২৩
করমণ্ডল এক্সপ্রেসে মূলত পশ্চিমবঙ্গ থেকে বহু মানুষ দক্ষিণের রাজ্য কর্নাটক, তামিলনাড়ুতে চিকিৎসা করাতে যান। অনেকেই মনে করছেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডলেও থাকতে পারেন বহু রোগী এবং তাঁর পরিবার। বালেশ্বরের কাছে এই দুর্ঘটনার কারণে দক্ষিণ ভারতগামী বহু ট্রেন বাতিল করা হয়।
০৯২৩
রেলের তরফে জানা গিয়েছে, শনিবার দুপুর পর্যন্ত দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন ২৮৮ জন। আহত অন্তত ৬৫০ জন। এর পর প্রশ্নের মুখে পড়ে রেলের ‘কবচ’ পদ্ধতিও।
১০২৩
রেলের তরফে ঘোষণা করা হয়, করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার পিছু এককালীন ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। গুরুতর আহতদের এককালীন ২ লক্ষ টাকা এবং অল্প চোট-আঘাত যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদের এককালীন ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে।
১১২৩
শনিবার সকাল ৮টার মধ্যেই বালেশ্বরে পৌঁছন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে তদন্তের কথাও জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘একেবারে গোড়ায় গিয়ে এই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করবে রেল। রেলওয়ে সেফটি কমিশনার (দক্ষিণ-পূর্ব সার্কল) স্বতন্ত্র ভাবে তদন্ত করবেন।’’ তবে আপাতত উদ্ধারকাজকেই যে অগ্রাধিকার দিচ্ছে রেল, তা-ও জানিয়েছেন তিনি। শনিবার সকালে দুর্ঘটনাস্থলে যান ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক।
১২২৩
শুক্রবার সন্ধ্যায় বালেশ্বরের কাছে দুর্ঘটনার কারণে শনিবার সকালে হাওড়া, খড়্গপুর, শালিমার থেকে বাতিল হয় বহু ট্রেন। সেগুলির মধ্যে অন্যতম, ২২৮৯৫/২২৮৯৬ হাওড়া-পুরী-হাওড়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, ১২৭০৩ হাওড়া-সেকন্দরাবাদ ফলকনুমা এক্সপ্রেস, ১২২৪৫ হাওড়া-বেঙ্গালুরু দুরন্ত এক্সপ্রেস, ২০৮৮৯/২২৮৯০ হাওড়া-তিরুপতি-হাওড়া হমসফর এক্সপ্রেস।
১৩২৩
শুক্রবার রাতেই টুইট করে দুর্ঘটনার কথা লেখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জরুরি ভিত্তিতে কন্ট্রোল রুম চালু করার কথাও জানান। শনিবার সকালে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান প্রাক্তন রেলমন্ত্রী। সেখানে বর্তমান রেলমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। রেলমন্ত্রীর সামনেই তিনি অভিযোগ করেন, রেলের কাজে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘মনে হয় রেলের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আরও যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন।’’
১৪২৩
রেল দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে যাঁরা এ রাজ্যের বাসিন্দা, তাঁদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। গুরুতর আহতদের ১ লক্ষ টাকা এবং তুলনামূলক কম আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা জানান তিনি। সঠিক তদন্তের দাবিও করেছেন মমতা।
১৫২৩
দুর্ঘটনার কারণে বালেশ্বরের বাহানগায় আটকে পড়েন যশবন্তপুর এবং করমণ্ডল এক্সপ্রেসের বহু যাত্রী। চোখের সামনে এই দুর্ঘটনা দেখে আতঙ্কিত ছিলেন তাঁরা। অনেকেই জখম হয়েছেন। তাঁদের হাওড়ায় ফেরানোর জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে রেল।
১৬২৩
প্রথমে ২০০ জন যাত্রীকে নিয়ে হাওড়ায় আসে বিশেষ একটি ট্রেন। রেল সূত্রে খবর, আরও ১০০০ যাত্রীকে নিয়ে হাওড়া ফিরেছে স্যর এম বিশ্বেশ্বরায়-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। খড়্গপুর স্টেশনে যাত্রীদের জল, চা এবং খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। অন্য একটি বিশেষ ট্রেন আটকে পড়া যাত্রীদের নিয়ে শনিবার সকাল ৯টা নাগাদ ভদ্রক থেকে চেন্নাইয়ের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।
১৭২৩
হাওড়া স্টেশনে যাত্রীরা নামার পর তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। রাখা হয়েছিল অ্যাম্বুল্যান্সও। তবে রেলের আধিকারিকদের তরফে জানানো হয়েছে, যাঁরা হাওড়া পৌঁছেছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ গুরুতর অসুস্থ নন।
১৮২৩
শনিবার দুপুরে বাহানগা বাজার স্টেশনে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন তিনি। পরে বালেশ্বর হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সঙ্গে দেখা করেন। ট্রেন দুর্ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের বার্তা দেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। দোষীদের কড়া শাস্তি দেওয়া হবে।’’
১৯২৩
রেলের প্রাথমিক রিপোর্ট জানিয়েছে, সিগন্যালের ত্রুটির কারণেই হয়েছে দুর্ঘটনা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওই যৌথ পরিদর্শন রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। ওই যৌথ পরিদর্শন রিপোর্টে বলা হয়েছে, আপ মেন লাইনে সবুজ সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু করমণ্ডল এক্সপ্রেস সেই লাইনে ঢোকেনি। ট্রেন ঢুকেছিল লুপ লাইনে। সেখানে আগে থেকে একটি মালগাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। তার সঙ্গে সংঘর্ষে করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়।
২০২৩
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, করমণ্ডল এক্সপ্রেস যখন লাইনচ্যুত হয়, তখন ডাউন লাইন দিয়ে বালেশ্বরের দিকে যাচ্ছিল বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। সেই ট্রেনের দু’টি বগি লাইনচ্যুত হয়। মেন লাইনে সবুজ সিগন্যাল পাওয়ার পরেও করমণ্ডল এক্সপ্রেস কী ভাবে লুপ লাইনে ঢুকে পড়ল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। মনে করা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে সিগন্যাল দেওয়ায় কোনও গোলমাল হয়ে থাকতে পারে। তার জেরেই করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ২৩টি কামরার মধ্যে ১৫টি লাইনচ্যুত হয়।
২১২৩
বালেশ্বরের দুর্ঘটনায় আগেই সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। শনিবার দুপুরে নবান্নের তরফে একটি বুলেটিন প্রকাশ করা হয়। তাতে জানানো হয়েছে, দুপুর ১২টা পর্যন্ত বালেশ্বরে মোট ৭০টি অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হয়েছে। রাজ্য থেকে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়েছেন ৩৪ জন চিকিৎসক। আহত যাত্রীদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনতে পাঠানো হয়েছে ১০টি বাস। চিকিৎসার সামগ্রী নিয়ে গিয়েছে ২০টি মিনি ট্রাকও।
২২২৩
শেষ পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে ২০টি অ্যাম্বুল্যান্সে করে ১২০ জন যাত্রীকে রাজ্যে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এই যাত্রীদের মধ্যে আহত ১১ জনকে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছে ৫ জনকে। ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে ৬ জনকে। আহতদের মধ্যে দু’জনকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
২৩২৩
রাজ্য সরকার ঘটনাস্থলে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দু’টি দলকে পাঠিয়েছে। উদ্ধারকাজে তদারকি করার জন্য রাজ্যের চার জন আইএএস আধিকারিক, চার জন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং এক জন এসিডিপিও বালেশ্বরে গিয়েছেন। নবান্নে সর্ব ক্ষণের জন্য যে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে, তা তদারকি করছেন আইএএস আধিকারিকেরা।