How collected tax is distributed among the states by Centre dgtl
Tax distribution system in India
কোন রাজ্যকে কত কর ফেরত দেয় কেন্দ্র? ‘ধনী’ দক্ষিণের টাকাতেই কি ‘গরিব’ উত্তরের শ্রীবৃদ্ধি?
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কর বণ্টনে বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি। অভিযোগ, তাদের কাছ থেকে যে পরিমাণ কর কেন্দ্র সংগ্রহ করছে, তার সিকি ভাগও ফেরত দেওয়া হচ্ছে না।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
বাজেট হল সরকারের আয় এবং ব্যয়ের পরিকল্পনার হিসাব। একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সরকার কোন খাতে কত আয় করবে এবং কোন খাতে কত ব্যয় করবে, তার রূপরেখা তৈরি করে বাজেট পেশ করা হয়।
০২২৩
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এ বারের বাজেট পেশ করার পর দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি বিশেষ একটি অভিযোগ তুলেছে। কেরল, কর্নাটকের মতো রাজ্যগুলি ওই অভিযোগে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে।
০৩২৩
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কর বণ্টনে বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছে দক্ষিণ ভারত। তাঁদের অভিযোগ, তাঁদের কাছ থেকে যে পরিমাণ কর কেন্দ্র সংগ্রহ করছে, তা তাঁদের ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। অসম ভাবে তা বণ্টন করা হচ্ছে।
০৪২৩
কেন্দ্র বিভিন্ন রাজ্য তথা দেশের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দু’ভাবে কর সংগ্রহ করে। একটি হল প্রত্যক্ষ কর। যার অন্যতম উৎস আয়কর। অন্যটি হল পরোক্ষে সংগৃহীত কর। যার প্রধান উৎস জিএসটি।
০৫২৩
কেন্দ্রের কর সংগ্রহের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে, দেশের ৭০ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর আসে মূলত চারটি রাজ্য থেকে। অর্থাৎ, মোট সরাসরি সংগৃহীত করের ৭০ শতাংশ ওই চার রাজ্যের অবদান।
০৬২৩
এ ছাড়া, দেশের পাঁচটি রাজ্য এমন রয়েছে, যাদের কেন্দ্রকে দেওয়া করের পরিমাণ বেশ কম। মোট সংগৃহীত জিএসটি-র খুবই কম অংশ আসে ওই পাঁচ রাজ্য থেকে।
০৭২৩
২০২২-২৩ সালে কেন্দ্র মোট সাড়ে ১৬ লক্ষ কোটি টাকা কর সংগ্রহ করেছিল। তার মধ্যে মহারাষ্ট্র থেকেই পাওয়া গিয়েছিল ৬.১৪ লক্ষ কোটি টাকা। দিল্লি এবং কর্নাটক থেকে ২ লক্ষ কোটি, তামিলনাড়ু থেকে এক লক্ষ কোটি টাকা কর এসেছিল।
০৮২৩
ওই বছরেই জিএসটি বাবদ কেন্দ্র পেয়েছিল ৭.৭ লক্ষ কোটি টাকা। মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, গুজরাত এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে পাওয়া গিয়েছিল মোট জিএসটি-র ৪৫ শতাংশ।
০৯২৩
২৮টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে চাহিদা, প্রয়োজন অনুযায়ী করের টাকার অংশ ভাগ করে দেয় কেন্দ্র। সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সবচেয়ে কম কর দিয়ে সবচেয়ে বেশি টাকা ফেরত পায় বিহার। তারা সরকারকে যে পরিমাণ কর দেয়, তার ৭.০৬ গুণ বেশি ফেরত পায়।
১০২৩
একই ভাবে, মহারাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি কর দিয়ে সবচেয়ে কম কর ফেরত পায় কেন্দ্রের থেকে। কর বণ্টনের সময়ে তাদের দেওয়া হয় মাত্র ০.০৮ শতাংশ।
এ ছাড়া উত্তরাখণ্ড ১.২৯ শতাংশ, পশ্চিমবঙ্গ ০.৮৭ শতাংশ, পঞ্জাব ০.৬৯ শতাংশ, কেরল ০.৫৭ শতাংশ, অন্ধ্রপ্রদেশ ০.৪৯ শতাংশ, তেলঙ্গানা ০.৪৩ শতাংশ, তামিলনাড়ু ০.২৯ শতাংশ, গুজরাত ০.২৮ শতাংশ, হরিয়ানা ০.১৮ শতাংশ এবং কর্নাটক ০.১৫ শতাংশ কর ফেরত পায় কেন্দ্রের থেকে।
১৩২৩
কর বণ্টনের এই তালিকায় প্রথম ১১টি রাজ্য ভৌগোলিক ভাবে ভারতের উত্তর দিকে রয়েছে। দ্বাদশ দেশ হিসাবে তালিকায় দক্ষিণ ভারতের প্রথম রাজ্য হল কেরল।
১৪২৩
শেষ আটটি রাজ্যের মধ্যে উত্তর ভারতের মাত্র দু’টি রাজ্য রয়েছে। সেগুলি হল হরিয়ানা এবং গুজরাত। দক্ষিণ ভারতের সব রাজ্যের নামই তালিকায় শেষের দিকে। সবচেয়ে বেশি কর দিয়েও সবচেয়ে কম কর ফেরত যায় তাদের কাছে।
১৫২৩
দেখা যাচ্ছে, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, পঞ্জাব, বিহার, ওড়িশা, সিকিম, অসমের মতো রাজ্য সরকারকে যে পরিমাণ কর দেয়, তার চেয়ে বেশি কর ফেরত পায়।
১৬২৩
রাজ্যবাসীর গড় আয়ের উপর সেই রাজ্যের সংগৃহীত করের পরিমাণ নির্ভর করে। বিহারে জনপ্রতি গড় রোজগার ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। তেলঙ্গানায় সেই গড় আয় তিন লক্ষ টাকা।
১৭২৩
এই ব্যক্তি প্রতি গড় আয়ের পরিমাণের উপরেই কেন্দ্রের কর বণ্টন নির্ভর করে। অর্থাৎ তেলঙ্গানার চেয়ে কেন্দ্রের কাছ থেকে বিহারের বেশি অর্থ সাহায্য প্রয়োজন। সেই কারণেই বিহারে বেশি পরিমাণ কর ফেরত দেওয়া হয়।
১৮২৩
রাজ্যগুলির মধ্যে আয়ের ব্যবধান কমানোই কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্য। কর বণ্টন সেই ভাবনা থেকেই করা হয়ে থাকে। কিন্তু দক্ষিণের রাজ্যগুলি এই ব্যবস্থায় আপত্তি তুলেছে।
১৯২৩
দক্ষিণের রাজ্যগুলির বক্তব্য, দীর্ঘ দিন ধরে তারা কর বণ্টনে কেন্দ্রের বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছে। এই ব্যবস্থার কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। কেন্দ্র তাদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না বলে অভিযোগ।
২০২৩
কেন দক্ষিণের অভিযোগ সত্ত্বেও কেন্দ্র এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করছে না? বিশ্লেষকদের দাবি, উত্তর ভারতের ভোটব্যাঙ্কও এ ক্ষেত্রে অন্যতম নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নিয়েছে।
২১২৩
উত্তরপ্রদেশ, বিহারের মতো রাজ্যগুলির জনসংখ্যা দক্ষিণের রাজ্যগুলির চেয়ে বেশি। এই রাজ্যগুলির ভোটব্যাঙ্কের দিকে তাকিয়ে থাকে শাসকদল। নির্বাচনে যা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাই এই রাজ্যগুলির জন্য বরাদ্দ কখনওই খুব একটা কমে না।
২২২৩
গত ১ ফেব্রুয়ারি আগামী অর্থবর্ষের অন্তর্বর্তী বাজেট সংসদে পেশ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। তার পরেই কর বণ্টন নিয়ে এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে সরব হন দক্ষিণের একাধিক নেতা।
২৩২৩
মহারাষ্ট্রের উদ্ধব ঠাকরে থেকে শুরু করে কেরলের পিনারাই বিজয়ন কিংবা কর্নাটকের ডিকে শিবকুমার, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দেগেছেন সকলে। তাঁদের দাবি, দক্ষিণের করের উপর নির্ভর করে ‘উত্তরের গাড়ি চালাচ্ছে’ কেন্দ্র। দক্ষিণ তার প্রাপ্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।