How China may react on India and Nepal’s close relation dgtl
India China Nepal Relation
ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব গাঢ় হচ্ছে প্রতিবেশীর, ছোট্ট দেশকে নজরে রাখছে চিন
হিমালয়ের উপর ছোটখাটো এই দেশ ভারত এবং চিনের সঙ্গে বরাবরই নিরপেক্ষ সম্পর্ক বজায় রেখে চলে। কিন্তু সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে তার ‘ঘনিষ্ঠতা’ প্রকাশ্যে এসেছে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৪৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
একটি দেশের আয়তন ৩২,৮৭,০০০ বর্গ কিলোমিটার। আর একটি দেশের আয়তন ৯৫,৯৭,০০০ বর্গ কিলোমিটার। এই দুই বিশাল আয়তনের মাঝে ছোটখাটো এলাকা জুড়ে মাথা তুলেছে অন্য একটি পাহাড়ি দেশ। আয়তন মাত্র ১,৪৭,৫১৬ কিলোমিটার।
০২১৯
কথা হচ্ছে নেপালকে নিয়ে। যার দক্ষিণ, পশ্চিম এবং পূর্ব দিক জুড়ে ভারত। উত্তরে চিন। দুই পড়শি দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক মোটেই ভাল নয়। সেই টানাপড়েনের আঁচ এসে লাগে নেপালেও।
০৩১৯
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নেপাল ঝঞ্ঝাহীন, নিরপেক্ষ নীতিই গ্রহণ করে এসেছে। দেশটি সাতেও থাকে না, পাঁচেও থাকে না। চিন-ভারত দ্বন্দ্বেও ‘মধ্যবর্তী’ নেপালের কোনও ভূমিকা দেখা যায় না।
০৪১৯
নিরাপত্তার স্বার্থেই নিরপেক্ষ নেপাল। তার দুই পড়শিই তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী। তাই চিন, ভারত উভয়ের সঙ্গেই নেপাল সদ্ভাব বজায় রেখে চলে। উভয়ের কাছ থেকেই পায় সাহায্য।
০৫১৯
সম্প্রতি, ভারতের সঙ্গে নেপালের কিছুটা ‘ঘনিষ্ঠতা’ চোখে পড়েছে, যা নিয়ে চর্চা চলছে আন্তর্জাতিক মহলে। এই ‘ঘনিষ্ঠতা’কে মোটেই ভাল চোখে দেখবে না চিন। তারা রুষ্ট হলে নেপালের উপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
০৬১৯
গত ৩১ মে ভারতে এসেছিলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল ওরফে প্রচণ্ড। ৩ জুন পর্যন্ত ছিলেন। ভারত-নেপাল পারস্পরিক সম্পর্ক, সহযোগিতার বিষয়ে কথাবার্তা বলে গিয়েছেন তিনি। তার পর থেকেই দুই দেশের ‘ঘনিষ্ঠতা’ নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে।
০৭১৯
প্রচণ্ডের ভারত সফরকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন, ভারত এবং নেপালের মধ্যে সীমান্তকে কেন্দ্র করে যে বিবাদ রয়েছে, তা ‘বন্ধুত্বের আবহেই’ মিটিয়ে ফেলা হবে।
০৮১৯
এ ছাড়া, ভারতের ভূখণ্ডের উপর দিয়ে নেপাল বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানি করবে। সেই মর্মেও কথা হয়েছে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের। ৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ভারতের উপর দিয়ে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশে।
০৯১৯
ভারত নেপালের মধ্যে যাত্রী চলাচল এবং বাণিজ্যের সুবিধার জন্য রেল সংযোগের উন্নতি, আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য নতুন চেকপোস্ট, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম আন্তঃসীমান্ত পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন তৈরির পরিকল্পনা প্রভৃতি মোট সাতটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে দুই দেশের মধ্যে।
১০১৯
প্রচণ্ডের সঙ্গে বৈঠকের পর মোদী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘‘আমরা আমাদের সম্পর্ককে হিমালয়ের উচ্চতায় নিয়ে যাব।’’ আবার প্রচণ্ড এই ভারত সফরকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন।
১১১৯
ভারত-নেপাল সম্পর্কের উন্নতি হলেও প্রচণ্ডের এই ভারত সফরকে খুব একটা ভাল চোখে দেখছে না তাঁর দল নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিএন) সেন্ট্রাল কমিটির সদস্যেরা। অনেকে এতে অন্য আশঙ্কা করছেন।
১২১৯
সিপিএন নেতাদের একাংশ মনে করছেন, প্রচণ্ডের এই সফরের ফলে ভারতের সঙ্গে নেপালের ‘ঘনিষ্ঠতা’ চোখে পড়ছে। তা চিনেরও নজর এড়াচ্ছে না। পরবর্তী কালে এর ফলে বিপদ হতে পারে।
১৩১৯
সিপিএন নেতা পরশুরাম তামাং জানিয়েছেন, নেপালের মতো হিমালয়ান দেশের হাতিয়ার তার নিরপেক্ষতা। দীর্ঘ দিন ধরেই নেপাল জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে এসেছে। এই পর্যায়ে এসে তা বদলে ফেললে বিপদ বাড়বে।
১৪১৯
বস্তুত, হিমালয় পর্বতমালার মাঝে অবস্থিত ছোট্ট দেশটির উপর চিনের প্রভাব অপরিসীম। দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয়েও হস্তক্ষেপ করতে দেখা গিয়েছে বেজিংকে। তারা নেপালে উন্নয়নমূলক কাজও করে থাকে।
১৫১৯
চিনের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ ম্যান্ডারিন ভাষায় কথা বলে। নেপালের তরাই অঞ্চলে ওই ভাষার একাধিক প্রশিক্ষণ স্কুল খুলেছে চিন। নেপালের মাধেশি গোষ্ঠীর মানুষদের ওই ভাষার প্রশিক্ষিত করছে তারা। ভবিষ্যতে তাঁদের শ্রমিক হিসাবে কাজে লাগানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।
১৬১৯
নেপালে রাস্তাঘাট, গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথ, রেললাইন নির্মাণে চিনের ভূমিকা রয়েছে। চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে নেপালকে।
১৭১৯
চিন থেকে নেপালে বাণিজ্যিক আদানপ্রদান বৃদ্ধির উদ্দেশে চিনের ব্যাঙ্কগুলিকে তরাই অঞ্চলে শাখা খোলার অনুমতি দিয়েছে নেপাল। দুই দেশের মধ্যে অর্থনীতি এবং বাণিজ্য সংক্রান্ত একাধিক চুক্তি রয়েছে।
১৮১৯
তাইওয়ান বিতর্কেও চিনের পক্ষেই নেপাল। তাইওয়ানকে চিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে স্বীকার করে তারা। চিনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজার রাখতেই এই অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছে।
১৯১৯
ভারতের সঙ্গে নেপালের ঘনিষ্ঠতায় চিন রুষ্ট হলে অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক এবং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে নেপালের সমস্যা হতে পারে। চিন অসহযোগিতা করলে নেপালের আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। সেই কারণেই প্রচণ্ডের ভারত সংক্রান্ত নীতিতে খুশি হতে পারছেন না তাঁরই দলের একাংশ।