২০১৮ সলে কেম্ব্রিজ ইনস্টিটিউট অফ ক্রিমিনোলজির ডেপুটি ডিরেক্টর ম্যানুয়েল এইজ়নার এক বিশেষ কাজে হাত দেন। তিনি মধ্যযুগের ইংল্যান্ডের বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের খতিয়ান নিয়ে একটি ডিজিটাল মানচিত্র তৈরি করেছিলেন। এই মানচিত্রে হত্যার স্থানগুলিকে চিহ্নিত করা ছিল। সেই চিহ্নিত জায়গাগুলিতে ক্লিক করলেই জানা যাবে কী ভাবে, কাকে, কারা, কী কারণে হত্যা করেছিলেন।
এই মানচিত্র তৈরি করতে তাঁর স্ত্রী এবং স্টেফানি ব্রাউন নামে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ইতিহাসবিদের সাহায্য নিয়েছিলেন এইজ়নার। বিভিন্ন হত্যারহস্যের ইতিহাস ঘাঁটতে ঘাঁটতে এইজ়নার ফোর্ডের ঘটনায় এসে থমকান। ফোর্ডকে কারা হত্যা করেছিলেন জানা গেলেও এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কী কারণ কাজ করেছিল, তা জানতে তিনি উৎসুক হয়ে পড়েন।
কোন অপরাধে এলাকে এ হেন শাস্তি দেওয়া হয়েছিল? উত্তর খুঁজতে গিয়ে এইজ়নার ও তাঁর গবেষক দল জানতে পারেন, এলা সমসাময়িক লন্ডনে এক রকম মক্ষীরানি হিসেবে জীবনযাপন করতেন। অসংখ্য নাইট, অভিজাত, প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং এমনকি গির্জার ক্ষমতাশালী সন্ন্যাসীদের সঙ্গেও তাঁর শরীরী সম্পর্ক ছিল। এই ব্যাভিচারের কারণেই তাঁর শাস্তিবিধান করা হয়।
এর পরে যে প্রশ্নটি এইজ়নারদের ভাবায়, তা হল এই যে, এলা কেন ফোর্ডকে হত্যা করার জন্য ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করবেন? আবার শুরু হয় অনুসন্ধান। বিস্তর নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, এলার গোপন প্রেমিকদের তালিকায় সন্ন্যাসী ফোর্ডও ছিলেন। এলার শাস্তিবিধানের সময় অবশ্য তাঁর কী ভূমিকা ছিল, তা জানা যায়নি। তবে অনুমান করা যায় যে, এলাকে গির্জার রোষ থেকে বাঁচাতে ফোর্ড কোনও উদ্যোগ নেননি। এবং তিনি নিজেও এই বিতর্কিত বিষয় থেকে দূরে থাকেন। অপমানিতা এলা প্রতিশোধস্পৃহা চরিতার্থ করতেই ফোর্ডকে লোক লাগিয়ে হত্যা করান।
সাম্প্রতিকতম প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে এই ‘ইন্টার্যাক্টিভ’ মানচিত্রকে নির্মাণ করা হয়েছে। লন্ডন, ইয়র্ক এবং অক্সফোর্ড— এই তিনটি শহরে মধ্যযুগের ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডগুলিকেই এই মানচিত্রে স্থান দেওয়া হয়েছে। হত্যাকাণ্ডগুলি যে সব স্থানে ঘটেছিল, সেই জায়গাগুলিকে হত্যার অস্ত্র বা হত্যাপদ্ধতির প্রতীক দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই চিহ্নগুলিতে মাউস নিয়ে গিয়ে ক্লিক করলেই সংশ্লিষ্ট হত্যাকাণ্ডের বিশদ পাওয়া যাবে।
মধ্যযুগে ঘটে যাওয়া অপরাধকে আজ চিহ্নিত করা ও সেগুলির বিশদ সংগ্রহ করা খুব সহজ কাজ নয়। কিন্তু সেই দুরূহ কাজটিই সম্ভব করে দেখিয়েছেন এইজ়নার ও তাঁর দল। কাজটি করতে সেকালের তিনটি শহরের বিশদ মানচিত্র, শহরবাসীদের জীবনযাপনের ধাঁচ, নাগরিক ক্ষমতা কাঠামো, বাসিন্দাদের অপরাধ প্রবণতা, বিচারপ্রক্রিয়া ও শাস্তির ধরন ইত্যাদি বহু কিছু নিয়েই মাথা ঘামাতে হয়েছিল তাঁদের।
এইজ়নার মধ্যযুগীয় অপরাধের বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন ২০১২ সাল নাগাদ। প্রথমে খেলাচ্ছলেই তিনি ও তাঁর স্ত্রী ব্যপারটা শুরু করেন। এইজ়নারের স্ত্রী রান্নাঘর থেকেই চতুর্দশ শতকের বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিবরণ পড়ে শোনাতেন। অন্য দিকে, লন্ডন শহরের একটি বড়স়ড় মানচিত্র নিয়ে তাতে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলির জায়গায় পিন বসিয়ে দিতে থাকেন এইজ়নার।
হত্যাকাণ্ডগুলির ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত জানার জন্য এইজ়নার সমকালীন ইংল্যান্ডের ‘করোনারস রোল’ এবং আইনি নথিপত্র ব্যবহার করেছেন। ‘করোনার’রা ছিলেন সেই সময়ের এক ধরনের বিশেষজ্ঞ বিচারক, যাঁরা অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত করে তার ব্যাখ্যা করতেন। কোনও হত্যাকাণ্ড ঘটলে করোনাররা সংশ্লিষ্ট এলাকার ১২ থেকে ৫০ জন বাসিন্দাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিষয়টির তত্ত্বতালাশ করতেন এবং সেই সব তথ্য নথিবদ্ধ করতেন। এই নথিগুলিই ‘করোনারস রোল’ নামে পরিচিত। এই নথিগুলিতে মৃতের পরিচয়, হত্যার সময়, হত্যাস্থল, কী ভাবে হত্যা করা হয়েছে, হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রের চরিত্র ইত্যাদি বিষয়ে বিশদ লেখা থাকত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy