পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মোচপোলের বাসিন্দা সামসুল আলির বাড়িতেই চলত বাজি তৈরির কারখানা। স্থানীয়দের অভিযোগ, বেআইনি ভাবে চলত বাজির কারবার। পুলিশ, প্রশাসনকে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি। কারখানার মালিক কেরামত আলি। স্থানীয়দের দাবি, তিনি থাকতেন পাশের গ্রামে।
০৩১৯
সামসুলের ভাইপো মফিজুল ইসলাম জানিয়েছে, তাঁর কাকার বাড়ি লাগোয়া বাগানে দিনের বেলা তৈরি হত বাজি। আর দু’টি ঘরে চলতে প্যাকেজিংয়ের কাজ। সেই দুই ঘরই এখন ধুলোয় মিশেছে। মৃত্যু হয়েছে সামসুলের।
০৪১৯
বিস্ফোরণের ধাক্কায় সামসুলের বাড়ির একটি দেওয়ালও অবশিষ্ট নেই। ভেঙে পড়েছে ছাদ। তুবড়ে গিয়েছে স্টিলের আলমারি। তার দরজা উধাও।
০৫১৯
ওই ধ্বংসস্তূপের থেকেই উঁকি দিচ্ছে ফ্রিজের দরজা। বাকি অংশের হদিস মেলেনি। মফিজুল জানিয়েছেন, কাকা সামসুলের অবস্থা একেবারেই ভাল ছিল না। বাসের কন্ডাক্টর ছিলেন। দিনমজুরি করতেন। এই বাজির কারখানা ভাড়া দিয়েই চলত সংসার। কষ্ট করে কিনেছিলেন ফ্রিজ, কিছু আসবাব। কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।
০৬১৯
বিস্ফোরণের তীব্রতায় বেঁকে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে বাড়ির জানলা, দরজার গ্রিল। কোনওটি আবার ভেঙে টুকরো হয়ে ছড়িয়ে রয়েছে। যে ফ্রেমের গায়ে আটকে ছিল গ্রিলগুলি, তাদের আর চিহ্ন নেই। মাটিতে শুয়ে রয়েছে কালো কোলাপসিব্ল গেট।
এদিক ওদিক ছড়িয়ে থাকা গ্রিলের পাশেই পড়ে রয়েছে খোলা বই। বইয়ের কিছু পাতা ছিড়ে গিয়েছে। সে সব কার বই, জানা যায়নি।
০৯১৯
সামসুলের বাড়ির ভগ্নস্তূপের মধ্যেই জ্বল জ্বল করছে লাল, রুপোলি, সোনালি রাঙতায় মোড়া বাজি। কয়েকশো তাজা বাজি পড়ে রয়েছে ধ্বংসস্তূপে। স্থানীয়রা দাবি করেছেন, ওগুলো ‘আলুবোমা’, যা বেআইনি ভাবে তৈরি করা হত সামসুলের বাড়িতে। ছড়িয়ে রয়েছে বাজির প্যাকেটও।
১০১৯
দলা পাকানো জামাকাপড়ের মাঝেই এককালের বাজি কারখানায় পড়ে রয়েছে বাচ্চার স্কুলের জুতো। জানা গিয়েছে, আহতদের মধ্যে রয়েছে আট বছরের এক বালক। এ জুতো তার কি না, জানা যায়নি।
১১১৯
বিস্ফোরণের আঁচ পড়েছে সামসুলের পাশের বাড়িতেও। উড়ে গিয়েছে দেওয়াল। টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে আসবাব। একটি ঘরে শুধু দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা আলনা। তাতে এখনও ঝোলানো রয়েছে জামা-কাপড়।
ওই বাড়ির বাসিন্দা এক মহিলাও গুরুতর জখম হয়েছেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
১৪১৯
এখনও হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে আট জনের। তাঁরা হলেন, ২০ বছরের রেশমা খাতুন, ১৭ বছরের মাসুমা খাতুন, ৪০ বছরের আশুরা বিবি, সারিনা বিবি, ১৪ বছরের সানাউল আলি, ৫০ বছরের শমসের আলি, ৫২ বছরের সাইদুল আলি। আহতদের মধ্যে একটি ৮ বছরের বালকও রয়েছে।
মৃতদের মধ্যে রয়েছেন সামসুল, যাঁর বাড়িতে ছিল কারখানা। মারা গিয়েছেন কারখানার মালিক কেরামত আলির ছেলে রবিউল আলি। কলেজপড়ুয়া রবিউল বাবার কারখানায় কাজ করতেন। জাহিদ আলি নামে মুর্শিদাবাদের এক ব্যক্তি ও তাঁর ছেলেরও মৃত্যু হয়েছে।
১৭১৯
রবিবার বিস্ফোরণের ঘটনার পর এলাকায় গিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী রথীন ঘোষ। তিনি দাবি করেছিলেন, বিস্ফোরণের ঘটনার নেপথ্যে স্থানীয় এক আইএসএফ নেতা রয়েছেন। তিনি মুর্শিদাবাদ থেকে লোক এনে বাজি তৈরি করাচ্ছিলেন।
১৮১৯
পাল্টা আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে কেরামতের নাম তোলেন নওশাদ। তিনি দাবি করেন, কেরামতকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।